আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সব সম্ভবের অসম্ভব এ বঙ্গে

স্বপ্নের নির্বোধ ফেরিওয়ালা... একটি অভিজ্ঞানপত্র, সমকালীন দায় ও বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবীরা দেশ, কাল জাতিভেদে যে কোনো সমাজে সাধারণ পেশা বা দায়িত্ব থেকে বুদ্ধিজীবীদের দায় সবচেয়ে বেশি। কেননা জাতির বিবেকের ভূমিকা পালন করেন তাঁরা। বিশেষত যেখানে তৃতীয় বিশ্বে দুর্বল আইনের শাসন, প্রশ্নবিদ্ধ ও পক্ষপাতমূলক বিচার ব্যবস্থা, প্রশাসন ভয়ংকর দলীয়করণের শিকার সে অবস্থায় বিবেকবান মানুষ হিসেবে চিহ্নিত এই গোষ্ঠীর উচ্চকিত কন্ঠে প্রতিবাদী হওয়ার বিকল্প নেই। তা না হলে মুক্ত ও প্রগতিশীল সমাজ বিনির্মাণ কঠিন হয়ে যাবে। দৌরাত্ম বাড়বে অকর্মণ্যের।

তৃতীয় বিশ্ব যে দেশগুলোকে বলা হচ্ছে উন্নত বিশ্বের নব্য উন্নয়ন দর্শনের(!) প্রায়োগিক উর্বর ক্ষেত্র সেখানে অসৎ আমলা, ক্ষমতালিপ্সু সেনাবাহিনী, দূর্নীতিগ্রস্ত রাজনীতিবিদদের পাশাপাশি জ্ঞান-গরীমায় সমাজের প্রাগ্রসর শ্রেণী যারা বুদ্ধিজীবী হিসেবে অধিক পরিচিত তাদের নিয়ে আলোচনা কিছুটা জটিল ও কঠিনতো বটেই। বুদ্ধিজীবী পরিভাষাটি কী অর্থ বহন করে, কারা বুদ্ধিজীবী, কী তাঁর চরিত্র, কী তাঁর দায়িত্ব -বিষয়টি খতিয়ে দেখা, জনসম্মুখে উপস্থাপন করা এবং বিশদভাবে আলোচনা করার কোনো তাত্ত্বিক দায় এই আলোচনায় নেই। তবে সংক্ষেপে কিছু দিকের প্রতি আলোকপাত না করে পারা গেলো না। ইতালীয় বামপন্থী চিন্তাবিদ এন্তনিও গ্রামসি ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, উকিল, ঋণ পরামর্শক সকলকেই বুদ্ধিজীবী বলে অভিহিত করেছেন। যাদের কাজ হলো ক্ষমতামুখী প্রতিষ্ঠান বা রাষ্ট্রের পক্ষে বুদ্ধি প্রয়োগ করে নিজস্ব স্বার্থ অর্জন।

অন্যদিকে, ফরাসী জুলিয়ান বেন্ডা প্রমুখের সংজ্ঞানুযায়ী বুদ্ধিজীবীদেরকে সমাজের সংখ্যালঘু, মহৎ হৃদয় মানুষ বলে মনে করা হয়, যার দায়িত্ব ক্ষমতা ও কতৃত্বের বিরুদ্ধে দাঁড়ানো। বুদ্ধিজীবীর পরিচয় প্রসঙ্গে এডওয়ার্ড ডব্লিউ সাঈদ প্রথাগত মতামত এবং বামপন্থী চিন্তাধারার মাঝামাঝি অবস্থান গ্রহণ করে নিজস্ব মতামত তুলে ধরেছেন। উল্লেখ্য, গত শতকে নানা ঘনঘটায় অস্থির, ক্রম পরিবর্তনকামী বিশ্বের বুদ্ধিবৃত্তিক আবহে এডওয়ার্ড সাঈদ ছিলেন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন সৃষ্টিশীল চিন্তাবিদদের একজন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ডামাডোলের পর বিশেষত ষাট ও সত্তরের দশকের শৃঙ্খলবিনাশী মুক্তিকামী মানুষের বিশ্বে যখন ক্ষমতা ও কতৃর্ত্বের কাছে ব্যক্তির আত্মসমর্পণ অহোরাত্রি ঘটছে তখন সাঈদের বুদ্ধিবৃত্তিক বিপ্লব কাঁপিয়ে তোলে পশ্চিমের সাংস্কৃতিক আধিপত্যকে। প্রাচ্যকে প্রতিচ্যের নিকট সাঈদই তোলে ধরেন এক নতুন মহিমায় ও উচ্চতায়।

সাঈদের মতে ,বুদ্ধিজীবীর মেধা, সততা ও দায়িত্ববোধ তাকে অন্য মানুষদের থেকে আলাদাভাবে চিহ্নিত করে। বুদ্ধিজীবী তাই নিঃসঙ্গ মানুষ। "বুদ্ধিজীবী ...পরবাসী, সংখ্যালঘু, অ-পেশাদার এমন এক ভাষার অধিকারী, যা ক্ষমতার মুখের উপর সত্য উচ্চারণ করে" । সাঈদ মনে করেন পরিচ্ছন্ন মানবিক বোধ, অবিচ্ছিন্ন সততা, চিন্তার তীব্রতা এবং সজাগ চৈতন্য - এ হলো বুদ্ধিজীবীর আজন্ম সম্বল। প্রকৃত বুদ্ধিজীবী ক্ষমতা ও কতৃত্বের কাছে দায় অনুভব করেন না।

তাঁর দায় বুদ্ধিবৃত্তিক চৈতন্যের নিকট। তৃতীয় বিশ্বে বুদ্ধিজীবীদের ভূমিকা অনন্য ও অগ্রগণ্য। কেননা এখানকার শাসক শ্রেণীরা সাধারণত পিতৃতান্ত্রিক কিংবা পেশীতান্ত্রিক উত্তরাধিকারে হয়ে থাকেন চরম অজ্ঞ ও মুর্খ। ক্ষমতার অধিষ্ঠিত হওয়ার সংগ্রামে তারা নি:শেষ করে দেয় তাদের সব সময় ও শক্তি। তারা যখন ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয় বা হওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয় সে ইশতেহারও তৈরী করে দেন দল সংশ্রব এক শ্রেণীর বুদ্ধিজীবী।

হয় তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, নয় সাংবাদিক, আইনজীবী ও অবসরপ্রাপ্ত আমলারা। সে ইশতেহার /অঙ্গীকারনামার সাথে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের সংশ্রব থাকে না বললেই চলে। তাই ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়ার পর এসব প্রতিশ্রুতির ফুলঝুরি বাস্তবায়নের দায় যাদের কাঁধে বর্তায় তাঁরা সেগুলো বাস্তবায়নে পুরোপুরি ব্যর্থ হিসেবে চিহ্নিত হন। উদাহরণ হিসেবে যদি দেখি বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের নেতৃত্বে গঠিত মহাজোট সরকারের জন্যও ক্ষমতায় আরোহণের সাড়ে তিন বছরের মাথায় সেই প্রতিশ্রুতিগুলো বাস্তবায়ন এখন অবাস্তব হয়ে উঠছে। কিন্ত দলসংশ্রব এবং কার্যত: অথর্ব পরামর্শক শ্রেণী তাদের কাঙ্খিত জায়গায় আসীন।

যাদের কথা ছিল সাধারণ বা প্রান্তিক মানুষদের পাশে দাড়ানো। কিন্তু তারা সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন দু:সহ ব্যথায় ব্যথিত না হয়ে অনুগত ও একান্ত আস্থাভাজন শ্রেণী হিসাবে ক্ষমতার উচ্ছিষ্ঠ নিয়ে আহ্লাদিত ও উল্লসিত। সাম্প্রতিক সময়ের বাংলাদেশের দিকে যদি আমারা দৃষ্টিপাত করি তবেঁ লক্ষ্য করবো আমারা খুব অস্থিতিশীল এবং আতঙ্কজনক পরিস্থিতির দিকে ক্রম ধাবমান হচ্ছি। ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মহাজোট সরকার যে 'দিন বদলের' প্রতিশ্রুতি দিয়ে এসেছিল সরকারের শেষ মুহূর্তে এসে মনে হয় দিন বদল হয়েছে ঠিকই তবেঁ সাধারণ মানুষ জনের নয়। কিছু অসাধারণ মানুষের শুধু দিন নয় গ্রহ বলয়ের বিশেষ আহ্নিক গতির ফলে রাত্রির গভীর অন্ধকারও বদলে গেছে তাদের কীর্তির আলোয়।

শুধু অভাজনরা রইলো পড়ে। দেশজুড়ে সাধারণ মানুষের জীবনের নিরাপত্তা নেই। সরকারের শরীক জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হু.মু. এরশাদের ভাষায়, 'মানুষ ঘরে থাকলে খুন হয়, বাইরে গেলে গুম হয়' (বিবিসি বাংলা, ২৯ এপ্রিল,২০১২)। ফারুক ওয়াসিফ তাঁর এক লেখায় বলেছেন, চিলি, কম্বোডিয়া, মেক্সিকো,নিকারগুয়া, আর্জেন্টিনা, ফিলিপাইন এসব দেশেও ক্রসফায়ার পর্ব শেষে গুম, হত্যা শুরু হয়। বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে সে দৃশ্যই বিদ্যমান।

আইন শৃঙ্খলা রক্ষার নামে তৈরী সরকারের বিশেষ বাহিনী র্যানবের 'ক্রসফায়ার' (একই গৎ বাঁধা গল্পে) এ যাবত হাজার দেড়েক মানুষের নির্মম মৃত্যু হয়েছে। এই নির্মম, নিষ্ঠুর, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড সভ্যসমাজে মানুষের মানবাধিকারের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। এছাড়া সম্প্রতি আইন ও শালিস কেন্দ্র (আসক)-এর তথ্য মতে গত ২৭ মাসে বাংলাদেশে ১০০ মানুষ গুম হয়ে গেছে। তাদের মধ্যে বড় অংশ বিরোধীদলের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত, শ্রমিক সংগঠনের নেতা, ব্যবসায়ীও রয়েছেন। অনেকেরই ক্ষত, বিক্ষত, ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন লাশ পথে ঘাঠে, ঢাকার আশে পাশের নদী শীতলক্ষ্যা, বালু, তুরাগ ও বুড়িগঙ্গাসহ দেশের অন্যান্য নদীতে পাওয়া গেছে।

দুই দশক আগে প্রতিবাদী কবি রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহ বলেছিলেন, "থামাও, থামাও এই মর্মঘাতী করুণ বিনাশ,/এই ঘোর অপচয়, রোধ করো হত্যার প্লাবন। /... কারা তবেঁ সুখী হয়, নীলিমায় ওড়ায় ফানুস!/কারা এই দুঃসময়ে চড়ে ফেরে অলীক জাহাজ?/ঘরভরা মৃত্যুহিম, লোকালয় ভয়ার্ত শ্মশান। /গান নেই, পাখি নেই, শব্দ নেই- নিঃশব্দ থামাও/এ ভীষণ বেদনার রক্ত চোখ, ডাকাত নৈঃশব্দ্য.../...লোকালয়ে গান হোক-জনপদ, নিসর্গ জানুক/এখনো পাখিরা আছে, গান আছে জীবনের ভোরে/" (নিঃশব্দ থামাও, 'রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহর শ্রেষ্ঠ কবিতা') একটি অভিজ্ঞানপত্র ও নির্বোধ চৈতন্য এতসব পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষ দেশি-বিদেশী সব সংবেদনশীল মানুষ বাংলাদেশে রাজনৈতিক অস্থিতিশীল পরিস্থিতি, ক্রসফায়ার, গুম, সন্ত্রাস নিয়ে চরম উদ্বিগ্ন তখন এদেশের প্রধান নাগরিক সমাজ সমুদ্র বিজয়ে উপর্যুপরি সম্বর্ধনা পাওয়া প্রধানমন্ত্রীকে আবারো সম্বর্ধনা দিচ্ছেন। দেশের প্রধান কবি প্রধানমন্ত্রী কে নিয়ে রচনা করছেন অভিজ্ঞানপত্র, 'সুনীল জলধিতে সমুদ্রবিজয়ের ইতিহাসস্রষ্টা জাতীয় নিশানের অগ্রবাহক গণতন্ত্রবিধায়ক দিকদিকনন্দিত দেশগৌরব... ...জাতিপ্রাণ দেশকন্যা আপনি আছেন আমাদের প্রতি প্রদক্ষেপে। ...আপনার অর্জন এই সুনীল বাংলা, এই বিশাল বাংলার সকল পেশাজীবী কর্মজীবী শিল্পী সাহিত্যিক শিক্ষক বিদ্বৎজন সবার পক্ষ থেকে আমারা আপনাকে অভিনন্দিত করি।

' (সমকাল,২৯ এপ্রিল, ২০১২)। ঠিক এ মুহুর্তে তাই হুমায়ুন আজাদ কেই মনে পড়ছে। তাঁর ভাষায়, ' কী শোচনীয় অর্থ বিরহিত শূণ্যগর্ভ স্তবস্তুতি'। কোনো রাষ্ট্রের এরকম দুর্যোগকালীন মুহুর্তে প্রয়োজন জাতির বিবেকসম্পন্ন কিছু পথ প্রদর্শক। স্থূল স্তাবক নন।

কিন্ত ওরা জানে প্রাপ্তি ও স্বীকৃতির ঐ হলো মোক্ষম ও মোলায়েম অস্ত্র। এটার প্রয়োগ সেই ঐতিহাসিক রাজ দরবার থেকে চলে আসছে বংশ পরম্পরায়। বাঙলাদেশের প্রধান প্রথা বিরোধী, বহুমাত্রিক লেখক হুমায়ুন আজাদ তাঁর 'আমার অবিশ্বাস' গ্রন্থে বলছেন, 'বাঙলা ভাষা এক সময় “সমৃদ্ধ” হয়ে উঠেছিল জিন্নাহ বা কায়েদে আজমকে আশ্রয় করে। কবি, প্রাবন্ধিক, কথা সাহিত্যিক নাঠ্যকাররা পাগল হয়ে গিয়েছিলেন ওই ব্যক্তির অলোকিক মহিমায়। তার ওই ভদ্রলোকের এতো স্তুতি করেছিলেন, যা অনেক দেবতার ভগ্যেও জোটেনি।

একই প্রবন্ধ থেকে জানা যায় স্বাধীন বাংলাদেশের প্রধান মহিলা কবি বেগম সুফিয়া কামালও সে স্তুতি ও বন্দনার মিছিলে মুখর ছিলেন। তাঁর পদ্যের নাম “হে মহান নেতা”, “হে সিপাহসালার” “হে মশালধাবী; “হে অমর প্রাণ” "নিভীক মহাপ্রান” ইত্যাদি। তিনি লিখেছিলেন এ ধরনের চরণমালা: "তসলীম লহ, হে অমর প্রান! কায়েদে আজম জাতির পিতা!/মুকুট বিহীন সম্রাট ওগো! সকল মানব মনের মিতা/তোমার মুখের কালাম শুনিল; আজাদ , আমরা আজাদ জাতি/নিমিষে দাঁড়াল ঝান্ডা উড়ায়ে সম্মুখে আধার গহিন রাতি / (হে ওমর প্রাণ) কায়েদে আজম ! আমরা তোমার দান, শির পাতি নিয়া বক্ষ রক্তে রাখিয়াছি সম্মান। (হে সিপাহ সালার)। " উল্লেখ্য, ইনিই পরবর্তিতে মুক্তিযুদ্ধের মহান চেতনার দাবিদার প্রধানতমদের সারিতে জায়গা করে নেন অন্যান্যদের মতো অবলীলায়।

আরো অবাক খবর, মুক্তিযুদ্ধের সুতিকাগার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁর নামে ছাত্রীদের হল হচ্ছে। অথচ, বাঙ্গালীর মুক্তি সংগ্রামের দুর্দিনের প্রধানতম কাণ্ডারি, অসামান্য রাষ্ট্রনায়ক তাজ উদ্দিন আহমদের স্মৃতি ও কৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো হল হয় না। সব সম্ভবের অসম্ভব এ বঙ্গে এসব ভাবতে আমাদের খানিকটা অবাক লাগে, বিস্ময় লাগে বৈকি। এই দেশ কি আজ মৃত্যু উপত্যকা? সাম্প্রতিক সময়ে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে গেছে অস্বাভাবিক ও অসহনীয়ভাবে। কোথাও শান্তি নেই, নিত্য দূর্ঘটনা কবলিত রাস্তা, ফুটপাত, জলপথ,নিরাপত্তা নেই, মায়ের কোল, সুরক্ষিত এলাকা গুলশান, বনানী, জাতীয় সংসদ এলাকা, কোথাও না।

সীমান্তে নির্বিচারে মানুষকে মারা হচ্ছে। তারপরও কোথাও কোনো প্রতিবাদ নেই, বিক্ষোভ নেই। তারপরও এন্তনিও গ্রামসির সংজ্ঞায়নে পড়া বাংলাদেশের সুবিধা আদায়ে ব্যতিব্যস্ত বুদ্ধিজীবীরা স্তুতি ও প্রশস্তি গাইছেন নিজ নিজ রক্ষণভাগে নিরাপদ অবস্থানে থেকে। দেশের সর্বত্র/অন্যান্য প্রান্তে একই অবস্থা বিরাজমান। সাধারণ মানুষের এতোসব দুর্বিপাকে তাঁরা সব আশ্চর্য নিরব।

কেবলি সরব হয়ে উঠেন কিভাবে জনগণকে 'ফুটন্ত কড়াই থেকে জ্বলন্ত চুলোয়' নিক্ষেপ করা যায় সে লক্ষ্যে। গত এক মাসের ঢাকা শহরের দৃশ্য যদি দেখি, হযরত আলী সশস্ত্র ছিনতাইকারিদের প্রতিবাদ করতে যেয়ে খুন হন, মহাজোট সরকারের সদ্য সাবেক রেলমন্ত্রীর এপিএসের টাকা কেলেঙ্কারী ফাঁসের নায়ক ড্রাইভার আজম নিখোঁজ (দুবৃত্ত আমালাদের কথা উহ্যই রইল), ইলিয়াস আলীর সাথে তাঁর ড্রাইভার আনসার আলী গুমের শিকার, হরতালের সময়ে মধ্যাহ্নের আহার শেষে ক্লান্ত ঘুমন্ত চালক বদর আলী অগ্নিদগ্ধ হয়ে ছাই, পিকেটারদের হামলায় নিহত রংপুরের গাড়ি চালক আব্দুর রশীদ, ইলিয়াস আলী গুমের প্রতিবাদ সংঘর্ষে তাঁর নির্বাচনী এলাকা সিলেটের বিশ্বনাথে পুলিশ ও সরকারদলীয় মানুষের হামলায় নিহত মনোয়ার হোসেন, জাকির ও হোসেন ও আরো একজনের লাশ বলে দেয় এই দেশ এখন মৃত্য উপত্যকা। এদের খোজ খবর না রাখেন কোনো রাজনীতিবিদ, না কোনো বিদ্বৎসমাজ, বুদ্ধিজীবী সম্প্রদায়। তারপরও শাসক শ্রেণী বলছে দেশ ভালো আছে, বিরোধী দল লাগাতার সংসদ বর্জন করেও আমাদের গণতন্ত্র সুসংহত, এগোচ্ছে। শেয়ার মার্কেট ও এমএলএম, ডেসটিনিসহ আরো নানা ছদ্মখাতের মাধ্যমে সরকারের প্রভাবশালী মহলের যোগসাজশে লোপাট হয়ে গেছে হাজার হাজার কোটি টাকা।

সাংসদ, মন্ত্রী মহোদয়, এপিএস ও তাদের নানা বন্ধনে আবদ্ধ স্বজনদের বায়বীয়(!) দূর্নীতির কথা নাহয় নাই বললাম। নিজের জীবনের সবটুকু সঞ্চয় বিনিয়োগ খুইয়ে সর্বশান্ত হয়ে পথে বসে গেছে মধ্যবিত্ত শেণী। দেশে এতোসব ঘণঘটার পরও যখন রাষ্ট্রের বিবেক বলে পরিচিত শ্রেণী শাসকদের মন তুষ্টিতে নির্লজ্জ্ব তোষামোদে মেতে উঠেন তাহলে প্রান্তিক মানুষদের আরো বিড়ম্বনা, আরো গঞ্জনা, আরো ধ্বংস, বিনাশ, বঞ্চনা সইতে হবে বৈকি। প্রান্তিক মানুষের সুরে বলতে হয়, আমারা কেবল দেখছি, আমারা কেবল শুনছি, আমারা কেবল বুকের ভেতর নিয়ত গুমরে মরছি। কবি জীবনানন্দের ভাষায় বলতে হয়, "অদ্ভুত আধার এক এসেছে পৃথিবীতে আজ, যারা অন্ধ সবচেয়ে বেশি আজ চোখে দেখে তাঁরা; যাদের হৃদয়ে প্রেম নেই, প্রীতি নেই, করুণার আলোড়ন নেই/ পৃথিবী আজ অচল তাদের সু পরামর্শ ছাড়া/ যাদের গভীর আস্থা আছে আজো মানুষের প্রতি/ এখন যাদের কাছে স্বাভাবিক বলে মনে হয় মহৎ সত্য বা রীতি কিংবা শিল্প অথবা সাধনা/ শকুন ও শেয়ালের খাদ্য আজ তাদের হৃদয়/" ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.