আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সব সম্ভবের দেশ: চীন- ২ [বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে]

ভুল করেছি,প্রায়শ্চিত্য করবো না, তা তো হয় না পর্ব-১ ৬. চাইনিজরা যে কোন বিদেশীকে তাদের বাপ-মায়ের দেয়া নামে না ডেকে নিজেদের পছন্দমত উচ্চারণ করতে সুবিধা হয় এরকম একটা নাম দিয়ে দেয়। আমাদের বাংলাদেশীদেরও রাশিয়ান এবং নরডিক কান্ট্রির লোকজনের নাম উচ্চারণ করতে কষ্ট হয় কিন্তু তারপরও আমরা চেষ্টা করি বিদেশীদের তাদের আসল নামে ডাকতে। আর এরা একটু চেষ্টাও করে না, টুক করে এমন একটা নাম দিয়ে দেয় যার সাথে আসল নামের উচ্চারনের কোন মিলই নাই। যেমন- হিলারী ক্লিনটনকে বলে শি-লা-নি, এদিক থেকে অবশ্য আমি ভাগ্যবান: আমাকে ডাকে হা-পি বলে, হাবিব নামের সাথে কিছুটা হলেও মিল আছে এবং উচ্চারন সহজ কিন্তু কাউকে কাউকে এমন নাম দেয় যে ঐ বিদেশী নিজেই চাইনিজদের দেয়া নাম উচ্চারন করতে পারে না!!! মানুষ কত অনুষ্ঠান কত আয়োজন করে নাম রাখে যেমন- মুসলিম সমাজে আকিকা করার মধ্য দিয়ে, হিন্দু ও খ্রিষ্টান সমাজেও একই অবস্হা আর এরা কিনা টুক করে সেটা চেঞ্চ করে ফেলে। শুধু মানুষের নাম চেঞ্চ করেই ক্ষান্ত দেয় না, জায়গার নামও যেমন- বাংলাদেশকে বলে মং-চিয়া-লা, New York কে নিউ-ইউয়ে।

এমনকি কোম্পানির নামও HP হুইপু, অ্যাপল কে ফিং-গুয় । ৭. বক্ষবন্ধনী: আমাদের দেশে মেয়েরা টাইট বক্ষবন্ধনী ব্যাবহার করে বড়কে ছোট বানানোর জন্য আর চাইনজ মেয়েরা ভিতরে ফোমযুক্ত মোটা শক্ত কাপড়ের বক্ষবন্ধনী ব্যাবহার করে ছোটকে বড় বানানোর জন্য। এখানকার দোকানে এমনকি ফুটপাতের হকাকরা দড়িতে ক্লিপ লাগিয়ে এধরনের বক্ষবন্ধনী ঝুলিয়ে রাখে। বিচিত্র দুনিয়া, আজব মানুষ। ৮. বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাবগুলোতে [মেশিন শপ] কোন স্হায়ী টেকনিশিয়ান নিযুক্ত নেই [দেশে আমরা যাদেরকে মামা বলে ডাকি] আন্ডার গ্র্যাজুয়েটের ছাত্ররাই মেশিন শপের মামার দায়িত্ব পালন করে থাকে।

মেঝে ঝাড়ু দেওয়া, সবার কাছে ইন্সট্রুপেন্টগুলো বুঝিয়ে দেয়া আবার বুঝে নিয়ে গুছিয়ে রাখা। ল্যাবগুলোতে গ্র্যাজুয়েট, পিএইচডি এর যে ছাত্ররা কাজ করতে যায় তাদেরকে আন্ডার গ্র্যাজুয়েটের দায়িত্বপালনরত ছাত্রের কথা শুনতে হয়। একদিন আমার ল্যাবমেট মেশিন শপে সিগারেট মুখে দিয়ে কাজ করছিল এমন সময় আন্ডার গ্র্যাডের এক ছাত্র এসে বলল- বিড়ি ফেলে দেন, ও সাথে সাথে ফেলে দিল। এখন চিন্তা করুন এটা যদি ঢাবিতে হয় জুনিয়র ছেলে এসে সিনিয়র ভাইকে বলছে বিড়ি ফেলে দিতে !!! ৯. চাইনিজ বিয়ের অনুষ্ঠান শুরু হয় খুব ভোর বেলা। তবে যদি কারো দ্বিতীয় বিয়ে হয় তাহলে বিয়ের অনুষ্ঠান দুপুর বেলা হয়।

আমার থিছিছ সুপার ভাইজার উনার ছেলের বিয়েতে দাওয়াত দিয়েছিল সেখানে আমরা বর পক্ষ ভোর সাড়ে ৬টায় কনের বাড়িতে পৌছেছি। সেখানে আনুষ্ঠানিকতা শেষে কমিউনিটি সেন্টারে এসে খাওয়া দাওয়া সহ সকল আয়োজন শেষ হয়েছে সকাল সোয়া ১০ টায়। এটা শুনে একজন মজা করে জিজ্ঞেস করেছিল চাইনিজদের বাসর রাত তাহলে সকাল ১০ টায় শুরু? চাইনিজদের অভ্যাস দুপুর বেলা কিছু সময়ের জন্য ঘুমানো তাই বাসর রাত না বলে একে বাসর দিন বলা যেতে পারে ১০. চাইনিজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে সকল ধরনের প্রতিষ্ঠানে এমনকি সরকারী উচ্চপদে আসীন হওয়ার আগে তাকে ডেপুটি হিসেবে কাজ করতে হয়। যেমন- বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাবগুলোতে একজন করে লিডার/ক্যাপ্টেন থাকে। পূর্ববর্তী লিডারের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগের কয়েকমাস হবু লিডার কিছুদিন দায়িত্ব পালন করে, এসময়টাতে আসল লিডার তাকে গাইড করে।

হবু লিডার যদি ঠিকমত দায়িত্ব পালন করতে পারে তবেই সে পূর্ণাঙ্গ লিডার হিসেবে নিযুক্ত হয়। এবছর আমার ল্যাবের যারা গ্র্যাজুয়েশন কমপ্লিট করে জব শুরু করেছে এরমধ্যে যে ছেলেটি লিডার ছিল সে অন্যদের তুলনায় অনেক বেশি বেতনের ভাল একটা কোম্পানীতে জব পেয়েছে কারন এরা তাদের CV তে এই টিম লিডারশিপের কথা উল্লেখ করে। যে লিডার হয় তাকে ল্যাবের সব কাজ করতে হয় এমনকি ফ্লোর ধোঁয়া মোছা পর্যন্ত!!! এগুলো যে শুধু বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পসের ভিতরেই তা না বরং সর্বত্র যেমন চীনের প্রেসিডেন্ট হওয়ার আগে তাকে ভাইস-প্রেসিডেন্ট হিসেবে কাজ করতে হয়। আর আমাদের কে যে কোন দিক দিয়ে লিডার হয়, উড়ে এসে জুড়ে বসে ঐকাজে এক্সপেরিয়েন্স থাকুক বা না থাকুক। বাপে নেতা ছিল তাই সন্তানও নেতা, জামাই মারা গেলে বউ নেতা, বড় ভাই মারা গেলে ছোট ভাই নেতা!!! সব সম্ভবের দেশ: চীন-১ পর্ব-৩ ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.