বাংলাদেশের নাগরিক হতে পেরে আজ আমি গর্বিত। গর্বে আমার উদর আজ ফেপে উঠেছে, ডাক্তার বলেছে যত দ্রুত সম্ভব অপারেশান করাতে হবে। এখন দেখা যাক আমি কেন এত গর্বিত-
• বাংলাদেশ এমন একটি দেশ, যে দেশে জাতীয় গাছ নির্ধারণের জন্য মন্ত্রীসভা ডাকা হয়। জাতীয় গাছ আবার আম গাছ। কারণ এ গাছের সংখ্যা বেশি।
এ গাছের তো কাঠও হয় না। আচ্ছা দেশে তো দোয়েল পাখির সংখ্যা খুবই কম, সে তুলনায় কাকের সংখ্যা অনেক বেশি। তাহলে কাককে জাতীয় পাখি কেন করা হবে না সরকারকে কারণ প্রদর্শন করতে নির্দেশ দিতে হাই কোর্টকে অনুরোধ করছি। দেশে এখন রয়েল বেঙ্গল টাইগার বিলুপ্ত। গরুর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি, তাহলে গরুকে কেন জাতীয় পশু করা হবে না প্রশ্ন রইল।
• আমাদের দেশ সম্ভবত পৃথিবীর একমাত্র দেশ যে দেশে নাতনীর টিজিং এর প্রতিবাদ করতে গিয়ে নানাকে প্রাণ দিতে হয়। গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে আমাদের নাম ওঠানো উচিত।
• বাংলাদেশ পৃথিবীর একমাত্র দেশ যে দেশে বেসরকারী টিভি চ্যানেলকে বাধ্যতামূলক সরকারী বস্তাপচা সংবাদ দেখাতে বাধ্য করা হয়। আমাদের বেসরকারী চ্যানেলের পরিচালকেরাও কম যান না। তারা তাদের নিজস্ব সংবাদ প্রদর্শনের পর সরকারী বস্তাপচা সংবাদ দেখান।
এতে অবশ্য মানুষের উপকারই হয়, তারা সরকারের মিথ্যাচারিতা সম্পর্কে জানতে পারেন। ব্যাপারটা সরকারের জন্য হিতে বিপরীতই হল বলে মনে হচ্ছে।
• বাংলাদেশ পৃথিবীর একমাত্র দেশ যে দেশে ATN Bangla-এর মত নির্লজ্জ টেলিভিশন চ্যানেল রয়েছে। ইভা রহমানের মত রাস্তার গায়িকারা আবিরাম গান গেয়ে চলেছেন, আর নির্লজ্জের মত ATN Banglaও তা গর্বের সাথে প্রচার করছে।
• বাংলাদেশ পৃথিবীর একমাত্র দেশ যে দেশে হরতাল ডাকা হয় এ কারণে যে বিরোধীদলীয় নেত্রীকে তার প্রাসাদ থেকে অপসারণ করা হয়েছে, যে প্রাসাদে একজন মানুষের জন্য ৬১ জন চাকর রয়েছে।
আলেকজান্দার দি গ্রেট, জ়ুলিয়াস সিজার এদেরও এতো জন চাকর ছিল কিনা সন্দেহ। যে দেশে মানুষ এখনো রাস্তায় ঘুমায় সে দেশের স্থলচ্যুত রাজ-রাণিদের এ ধরনের আচরণ দেখতে খুব ভাল লাগে।
• বাংলাদেশ এমন একটি দেশ যে দেশে বিজ্ঞাপনের নামে মানুষকে প্রতারিত করা হয়। নিডো গুড়ো দুধের বিজ্ঞাপনের সময় নিচে লিখা হয় “এই বিজ্ঞাপনটি শুধুমাত্র বাংলাদেশের জন্য প্রযোজ্য। ” তার মানে শুধুমাত্র বাংলাদেশের বাচ্চারাই নিডো দুধ খেলে ১ ইঞ্চি বেশি বড় হবে।
পৃথিবীর অন্যান্য দেশের বাচ্চাদেরকে কেন অযৌক্তিকভাবে ১ ইঞ্চি বেশি লম্বা হওয়া থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে।
• আমাদের দেশ একমাত্র দেশ যে দেশ ১৯৭৫ সালে এক মহান ব্যক্তি যে স্বপ্নগুলো দেখে গেছেন তা অনুযায়ী ২০১০ সালে পরিচালিত হয়। ১৯৭২ থেকে ১৯৭৫ পর্যন্ত একজন ব্যক্তি যতগূলো স্বপ্ন দেখে গেছেন, আমার মত ১০০ জনও যদি ২০ বছর ধরে ঘুমায় তবুও এত সপ্ন দেখতে পারবে না। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের স্বাধীনতা দিবসে তো দেখলাম না মহাত্যা গান্ধীকে তারা দেবতার আসনে বসিয়ে পূজা করছে। আমি স্বাধীনতা দিবসে ওদের অনেকগুলো আনুষ্ঠান দেখলাম, কোন কোন অনুষ্ঠানে তো মহাত্যা গান্ধীর নামটাও নেয়া হল না।
তার মানে কি ওরা অকৃতজ্ঞ জাতি। কিন্তু দেশ প্রেমিক জাতি হিসেবে আমি ওদের অনেক সুনাম শুনেছি। লাগে রাহো মুন্না ভাই ছবির একটা ডায়ালগ(বাংলাকৃত) মনে পড়ছে, “রাস্তায় মাহাত্যা গান্ধীর যত পোষ্টার আছে ছিড়ে ফেল, তার যত স্ট্যাচু আছে ভেঙ্গে ফেল, তাকে কথাও রাখতে হলে নিজের মনের গভীরে রাখো। ” আমরা কি শেখ হাসিনাকে অরণ্যে রোদন করেও বলতে পারি না,”প্রিয় বঙ্গবন্ধুকে কোথাও রাখতে হলে তার ছবি আমাদের হেড অব দা ডিপার্টমেন্টের রুমে না রেখে নিজের মনে রাখো না! ”
আমার গুরুত্ত্বপূর্ণ সময় নষ্ট করে এই লেখাটি লিখলাম, যারা পড়বে তাদেরও গুরুত্ত্বপূর্ণ সময় নষ্ট হবে। জানি যতই লিখি কোনো লাভ হবে না, এদেশের মানুষের কোন পরিবর্তন হবে না, মানুষের মূল্যবোধ জাগ্রত হবে না।
গুটিকয়েক মানুষ এক কদম এগিয়ে দুই কদম পিছিয়ে যাবে।
এই লেখাটা ২০১০ সালের ১৮ই নভেম্বর লিখেছিলাম, ২০২০ সাল পর্যন্ত যদি বেচে থাকি ২০২০ সালে এ রকম আরেকটা লেখা লিখব। আশা করি তখন এই লেখাটা যেন কপি পেস্ট না করতে হয়। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।