সারাবিশ্বেই চলছে বিশ্বমন্দা। স্বভাবতই এর প্রভাব স্বল্পোন্নত দেশ বাংলাদেশেও পড়ছে। আর এ থেকে পরিত্রাণও ছিলো রীতিমতো চ্যালেঞ্জ। কিন্তু । আশার কথা হচ্ছে এর বিশ্বমন্দার ফলেও গত অর্থবছরে প্রবাসীদের প্রেরিত অর্থের পরিমাণ ৬.০৩% বৃদ্ধি পেয়ে ১১৬৫০.৩১ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে দাঁড়িয়েছিল।
সর্বশেষ প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী ২০১১-১২ অর্থবছরের জুলাই-মার্চ সময়ে প্রবাসীদের প্রেরিত অর্থের পরিমাণ পূর্ববর্তী বছরের একই সময়ের তুলনায় ১০.৬৭% বৃদ্ধি পেয়ে ৯৫৩০.২১ মিলিয়ন ডলারে দাঁড়ায়। উল্লেখ্য মার্চ, ২০১২ মাসে প্রবাসীদের প্রেরিত অর্থের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১১০৭.৪৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। মার্চ ২০১২ মাসে রপ্তানি আয়ের পরিমাণ দাঁড়ায় ১৯৮২.২৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। সর্বশেষ প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী ২৪ এপ্রিল ২০১২ তারিখে বৈদেশিক মুদ্রা মজুদের পরিমাণ ১০০০৪.০৮
মিলিয়ন মার্কিন ডলারে দাঁড়িয়েছে, পূর্ববর্তী বছরের একই সময়ে যার পরিমাণ ছিল ১১১৭৪.৭৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। বিশ্বব্যাপী মার্কিন ডলারের বিনিময় হার এবং স্বর্ণমূল্যের অস্থিতিশীলতার কারণে বৈদেশিক মুদ্রা বাজারে কিছুটা ¯স্থিতিশীল অবস্থা বিরাজ করছে।
সর্বশেষ প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী টাকা-ডলার ভারিত গড় (বিরমযঃবফ ধাবৎধমব ৎধঃব) বিনিময় হার ২৪ এপ্রিল ২০১২ তারিখে দাঁড়ায় ৮১.৮২৯৭ টাকা পূর্ববর্তী বছরের একই সময়ে এবং ৩০ জুন ’১১ এ যার পরিমাণ ছিল যথাক্রমে ৭২.৮৭১৮ ও ৭৪.২৩২৯ টাকা। আন্তঃব্যাংক কলমানি মার্কেটের ভারিত গড় হারে সাম্প্রতিক সময়ে স্থিতিশীলতা পরিলক্ষিত হচ্ছে। সর্বশেষ প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী ২৪ এপ্রিল ২০১২ তারিখের আন্তঃব্যাংক কলমানি মার্কেটের ভারিত গড় হার দাঁড়িয়েছে ১৪.০৫%; পূর্ববর্তী বছরের একই সময়ে এবং ৩০ জুন ’১১ শেষে এ হার ছিল যথাক্রমে ১০.৫৩% ও .২৪%।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের সার্বিক মূল্য সূচক ২৪ এপ্রিল ২০১২ তারিখে দাঁড়ায় যথাক্রমে ৫৩৫৭.০১ ও ১৫৮৪৬.৯০ যা পূর্ববর্তী বছরের একই সময়ে ছিল যথাক্রমে ৬০৭৬.৩২ ও ১৭০৫০.৬৪।
আমদানি : ২০১০-১১ অর্থবছরে আমদানি ব্যয় ৪১.৮% বৃদ্ধি পেয়েছিল।
সর্বশেষ প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী জুলাই-ফেব্রæয়ারি ১০-১১র তুলনায় আমদানি ব্যয় অর্থবছর ’১১-১২ এর জুলাই-ফেব্রুয়ারি সময়ে ১৪.৫৩% বৃদ্ধি পেয়েছে। সর্বশেষ প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী ’১১-১২ অর্থবছরের জুলাই-ফেব্রুয়ারি সময়ে পূর্ববর্তী অর্থবছরের তুলনায় ঋণপত্র ব্যবস্থাপনা ভিত্তিক আমদানি ৭.৫৪% হ্রাস পেয়েছে অপরপ্রান্তে এ সময়ে ঋণপত্র নিষ্পত্তি ভিত্তিক আমদানি ১৩.৬২% বৃদ্ধি পেয়েছে। আলোচ্য সময়ে খাতওয়ারী ঋণপত্র ¯’াপনার তথ্য পর্যালোচনা থেকে দেখা যায় যে ভোগ্যপণ্য, মূলধন পণ্য এবং শিল্পের কাঁচামাল আমদানি মূল্য যথাক্রমে ৭২.৫৯%, ২৬.৮৭% ও ৮.৬৪% হ্রাস পেয়েছে। অপরদিকে, পেট্রোলিয়ামের আমদানি মূল্য ৯৭.৫০% বৃদ্ধি পেয়েছে। আলোচ্য সময়ে খাতওয়ারী ঋণপত্র নিষ্পত্তির তথ্য পর্যালোচনা থেকে দেখা যায় ভোগ্যপণ্যের আমদানি মূল্য ৩৬.৮৩% হ্রাস পেয়েছে।
অপরদিকে মূলধন পণ্য , শিল্পের কাঁচামাল এবং পেট্রোলিয়ামের আমদানি মূল্য যথাক্রমে ১৯.৮২%, ১২.৬১%, এবং ৪৯.৬৩% বৃদ্ধি
রপ্তানি : সর্বশেষ প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী জুলাই-মার্চ ২০১১-১২ সময়ে রপ্তানি আয় পূর্ববর্তী বছরের একই সময়ের তুলনায় ০.৩৬% বৃদ্ধি পেয়ে ১৭৮৮৬.০৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে দাঁড়ায়। ২০১০-১১ অর্থবছরে রপ্তানি আয় পূর্ববর্তী বছরের তুলনায় ৪১.৪৭% বৃদ্ধি পেয়েছিল। সর্বশেষ প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী অর্থবছর ’১১-১২ জুলাই- ফেব্রুয়ারি সময়ে উদ্বৃত্তের পরিমাণ ৬৮১.০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার পূর্ববর্তী বছরের একই সময়ে যার পরিমাণ ছিল ৯৯৯.০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। ২০১০-১১ অর্থবছরে পঁৎৎবহঃ ধপপড়ঁহঃ নধষধহপব -র উদ্বৃত্তের পরিমাণ ছিল ৯৯৫.০ মিলিয়ন ।
রাজস্ব : সর্বশেষ প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী ফেব্রুয়ারি ২০১২ মাসে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড কর্তৃক রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ ফেব্রুয়ারি ২০১১ মাসের তুলনায় ২৫.৪০% বৃদ্ধি পেয়ে ৭৩১৬.৪৫ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে।
২০১১-১২ অর্থবছরের জুলাই-ফেব্রুয়ারি সময়ে রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ পূর্ববর্তী বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৭.২৪% বৃদ্ধি পেয়ে ৫৩৭৪৩.২৩ কোটি টাকায় দাঁড়ায় পূর্ববর্তী বছরের একই সময়ে যার প্রবৃদ্ধি ছিল ২৮.২৪%। উল্লেখ্য, ২০১০-১১ অর্থবছরে রাজস্ব আয় ২৭.৪৮% বৃদ্ধি পেয়েছিল।
জাতীয় সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ : সর্বশেষ প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী মার্চ ২০১২ মাসে জাতীয় সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগের পরিমাণ ২৯.১২ কোটি টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে মার্চ ২০১১ মাসে যার পরিমাণ ২৪.০৪ কোটি টাকা বৃদ্ধি পেয়েছিল। ২০১১-১২ অর্থবছরে জুলাই-মার্চ সময়ে জাতীয় সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগের পরিমাণ দাঁড়ায় ২১.০১ কোটি টাকা যেখানে পূর্ববর্তী অর্থবছরের একই সময়ে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল ২৬৩৬.৯২ কোটি টাকা।
মুদ্রা সরবরাহ, অর্থ ও ঋণ পরি স্থিতি : ২০১০-১১ অর্থবছরে দেশের রিজার্ভ মুদ্রা ও ব্যাপক অর্থ সরবরাহ যথাক্রমে ২১.০৯% ও ২১.৩৪% বৃদ্ধি পেয়েছে।
এ সময়ে মোট অভ্যন্তরীণ ঋণ ও বেসরকারি খাতে ঋণ বৃদ্ধি পেয়েছে যথাক্রমে ২৭.৪১% ও ২৫.৮৪% যা উক্ত অর্থবছরের জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার (৬.৬৬%) এবং মূল্যস্ফীতির প্রেক্ষিতে মোটামুটি সন্তোষজনক। সর্বশেষ প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী ২০১১-১২ অর্থবছরে জুলাই-ফেব্রুয়ারি সময়ে রিজার্ভ মুদ্রা, ব্যাপক অর্থ সরবরাহ, মোট অভ্যন্তরীণ ঋণ ও বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধির পরিমাণ যথাক্রমে ১.৮৬%, ৯.১৪%, ১২.৮৮%, ১১.৬৮% বৃদ্ধি পেয়েছে। বার্ষিক ভিত্তিতে ফেব্রুয়ারি, ২০১২ মাসে ফেব্রুয়ারি ’১১ মাসের তুলনায় রিজার্ভ মুদ্রা, ব্যাপক অর্থ সরবরাহ, মোট অভ্যন্তরীণ ঋণ ও বেসরকারি খাতে ঋণ যথাক্রমে ১০.৭২%, ১৮.১৯%, ২৪.১৩% এবং ১৯.৫৫% বৃদ্ধি পেয়েছে।
মূল্য পরিস্থিতি: সর্বশেষ প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী মার্চ ২০১২ মাসে ১২ মাসের গড় ভিত্তিক ও পয়েন্ট-টু-পয়েন্ট ভিত্তিক মূল্যস্ফীতির হার দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ১০.৯২ শতাংশ ও ১০.১০ শতাংশ; গত অর্থবছরের আলোচ্য সময়ে এ হার ছিল যথাক্রমে ৮.৩৬ শতাংশ ও ১০.৪৯ শতাংশ। প্রধানতঃ আন্তর্জাতিক বাজারে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি, স্থানীয় বাজারে জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধি এবং অভ্যন্তরীণ চাহিদার প্রসার মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধি পাওয়ার মূল কারণ বলে প্রতীয়মান হয়।
শ্রেণীবিন্যাসিত ঋণ ও মূলধন পরিস্থিতিঃ বাণিজ্যিক ব্যাংকসমূহের মোট ঋণে শ্রেণীকৃত ঋণের অংশ ডিসেম্বর ২০১১ শেষে দাঁড়িয়েছে ৬.১২% যা ডিসেম্বর ২০১০ শেষে ছিল ৭.২৭%। নীট ঋণে শ্রেণীকৃত নীট ঋণের অংশ ডিসেম্বর ২০১১ শেষে দাঁড়িয়েছে ০.৭০% যা ডিসেম্বর ২০১০ শেষে বাণিজ্যিক ব্যাংকসমূহ ব্যাসেল-২ নীতিমালার আওতায় নির্দেশিত ন্যূনতম আবশ্যকীয় মূলধন সংরক্ষণ করতে সক্ষম হয়েছে।
কৃষি ও শিল্প ঋণঃ আমাদের অর্থনীতির মূল ভিত্তি কৃষি খাত। এ খাতে নতুন নতুন পণ্য উৎপাদনের জন্য কৃষি ঋণ বিতরণের উ”চতর প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করার পদÿেপ নেয়া হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক ২০১১-১২ অর্থবছরে ১৩৮০০.০ কোটি টাকা কৃষিঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে যা পূর্ববর্তী অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রা ১২৬১৭.৪০ কোটি টাকার তুলনায় প্রায় ৯.৩৭ শতাংশ বেশি।
উলেøখ্য, ২০১০-১১ অর্থবছরে কৃষিঋণ বিতরণ লক্ষ্যমাত্রার ৯৭% অর্জিত হয়েছিল। সর্বশেষ প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী মার্চ, ২০১২ মাসে কৃষিঋণ বিতরণ ও আদায়ের পরিমাণ যথাক্রমে ১৫০০.৬০ কোটি এবং ৭৪৯.৩৭ কোটি টাকা। ২০১১-১২ অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে কৃষিঋণ বিতরণ ও আদায়ের পরিমাণ হয়েছে যথাক্রমে ৯১৮৯.৪৯ কোটি এবং ৮৮৮১.৯৭ কোটি টাকা পূর্ববর্তী অর্থবছরের একই সময়ে যার পরিমাণ ছিল যথাক্রমে ৯১৫৪.৬৯ কোটি এবং ৯০২৭.৯২ কোটি টাকা। ২০১১-১২ অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে কৃষিঋণ বিতরণ লক্ষ্যমাত্রার ৬৬.৫৯% অর্জিত হয়েছে। ২০১০-১১ অর্থবছরে শিল্পখাতে মেয়াদী ঋণ বিতরণ ২৪.৩% বৃদ্ধি পেয়েছিল।
সর্বশেষ প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী ২০১১-১২ অর্থবছরের দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে শিল্পখাতে মেয়াদী ঋণ বিতরণ ও আদায়ের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ৯৮৬৭.৮৪ কোটি ও ৮৩৬০.৯৮ কোটি টাকা যা পূর্ববর্তী অর্থবছরের একই সময়ে ছিল যথাক্রমে ৯৪৫০.১৯ কোটি ও ৬৫৩৩.৮৮ কোটি। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।