সাফকথা
আবার চাঙ্গা ইয়াবার বাজার। এবার কৌশল পাল্টিয়েছে ব্যবসায়ীরা। মোবাইল ফোনে কথাবার্তা বলেই কেনাবেচা চলছে ইয়াবা ট্যাবলেট। বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ইয়াবা আসক্ত ছাত্রদেরও নতুন ক্রেতার কাছে ইয়াবা বিক্রির কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে।
ট্যাবলেট বিক্রির অর্থ থেকে নির্দিষ্ট কমিশন পাচ্ছে ইয়াবা আশক্ত ওই ছাত্ররা।
সমপ্রতি উত্তরা ও বাড্ডা থানায় গ্রেপ্তার হওয়া ৫ ইয়াবা ব্যবসায়ী জিজ্ঞাসাবাদে এসব তথ্য জানিয়েছে পুলিশকে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারাও স্বীকার করেছেন গ্রেপ্তার এড়াতে মোবাইল ফোনেই ইয়াবা ব্যবসা চলছে। ঢাকার কয়েকজন চিহ্নিত ইয়াবা ব্যবসায়ী গ্রেপ্তারের পর জামিনে বেরিয়ে এসে আবার ইয়াবা ব্যবসা শুরু করেছে। তবে তারা এখন আর আগের মতো কোনো নির্দিষ্ট জায়গায় থাকছেন না। মোবাইল ফোনে চেনা ক্রেতার কাছেই বিক্রি করছেন ইয়াবা ট্যাবলেট।
উত্তরা থানার উপ-পরিদর্শক পারভেজ ইসলাম ১০ই সেপ্টেম্বর ২ জনকে গ্রেপ্তার করেন ২৫০ পিস ইয়াবাসহ। গ্রেপ্তারকৃতরা জানায়, তারা ইয়াবা বিক্রির জন্য ৩টি মোবাইল ফোন নম্বর দিয়ে এর যে কোন একটিতে ফোন করতে বলেন ক্রেতাকে। ফোন করে পরিচিত কারও নাম বললে নির্দিষ্ট স্থানে ইয়াবা ট্যাবলেট নিতে আসতে বলা হয়। সেখান থেকে দাম পরিশোধ করে ট্যাবলেট কিনে নিয়ে যায় ক্রেতা। বাড্ডা থানায় গ্রেপ্তারকৃত ২ ইয়াবা ব্যবসায়ী জানায়, তারা ইয়াবা মামলায় এর আগেও দু’বার গ্রেপ্তার হয়েছিল।
সমপ্রতি জেল থেকে জামিনে বেরিয়ে এসেছে। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বাড্ডা থানার উপ-পরিদর্শক তোহিদুল ইসলাম বলেছেন, দু’জনেই বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইয়াবা আশক্ত ছাত্রদের মাধ্যমে ইয়াবা ব্যবসা চালিয়ে আসছিল। ঢাকা তাদের নির্দিষ্ট কোন ঠিকানা পাওয়া যায়নি। তারা দু’জনেই তাদের পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে জীবনযাপন করছিল। গ্রেপ্তারের পর এদের পরিবারের সদস্যদের জানানো হলেও তারা কোন আগ্রহ দেখায়নি।
তাদের উভয়ই এখন জেলহাজতে আছে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের ঢাকা মেট্রো উপ-অঞ্চলের (নারকোটিক্স) সহকারী পরিচালক মজিবুর রহমান পাটোয়ারী বলেছেন, সমপ্রতি ইয়াবাসহ গ্রেপ্তারকৃতরা মোবাইল ফোন ব্যবহার করে ইয়াবা ট্যাবলেট কেনাবেচার কথা স্বীকার করেছে। বর্তমানে প্রতিটি ট্যাবলেট বিক্রি হচ্ছে ৪শ’ থেকে ৭শ’ টাকায়। নারকোটিক্সের গুলশান পরিদর্শক হেলাল উদ্দীন বলছেন, ইয়াবা সম্রাট আমিন হুদা, ইয়াবা সুন্দরী নিকিতা ও তার বোন পুষ্পিতাসহ অনেক ইয়াবা ব্যবসায়ী জামিনে বেরিয়ে এসে আবার ব্যবসায় নেমে পড়েছে। তবে তারা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ফাঁকি দিতে মোবাইল ফোনে কথা বলে ক্রেতা সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে এরপরই ট্যাবলেট বিক্রি করছে।
এদেরকে গ্রেপ্তারের বিশেষ কৌশল নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি। হেলাল উদ্দীন জানিয়েছেন, একজন প্রথম সারির মডেল মোবাইল ফোনে ইয়াবা ব্যবসার বিশাল নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছেন এমন তথ্য পাওয়া গেছে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, মিয়ানমার থেকে টেকনাফ সীমান্তে আসছে ইয়াবা। সেখান থেকে নারী মাদক পাচারকারীরা এখন ইয়াবা বহন করে ঢাকা নিয়ে আসছে। র্যাব সদর দপ্তরের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার সোহায়েল বলেন, র্যাবে অভিযানে বেশকজন বড় মাপের ইয়াবা ব্যবসায়ী গ্রেপ্তার হওয়ার পর মাঝখানে ইয়াবা বেচাবিক্রি কিছুটা কমেছিল।
সামপ্রতিক সময়ে আবারও ইয়াবার বেচাকেনা বেড়েছে। র্যাব-৪ এর উপ-অধিনায়ক মেজর তারিকুল ইসলাম বলছেন, আগস্ট মাসে ৩ ইয়াবাসেবী যুবককে তিনশ’ পিস ইয়াবা ট্যাবলেটসহ গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। ৩ যুবকই উচ্চশিক্ষিত। নর্থসাউথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করে তারা একটি বিদেশী প্রতিষ্ঠানে চাকরিরত। জিজ্ঞাসাবাদে তারা ইয়াবা ব্যবসার সঙ্গে জড়িত থাকার কথাও স্বীকার করে।
কোথা থেকে ইয়াবা আসছে এ প্রশ্নে তারা র্যাবকে জানায়, ইয়াবার দরকার পড়লে তারা একটি বিশেষ মোবাইল নম্বরে ফোন করেন। ঢাকার ইস্টার্ন মল্লিকা মার্কেটের পেছনে মোটরসাইকেলে এসে ইয়াবা দিয়ে যায় একজন যুবক। মেজর তারিক বলেন, ওই যুবককে গ্রেপ্তারের জন্য ফাঁদ পাতা হয়েছিল। কিন্তু তারা আগেই জেনে ফেলায় ওই স্থানে আর ইয়াবা বেচাকেনা হয় না। র্যাবের জনসংযোগ শাখা জানিয়েছে, গত এক মাসে তারা প্রায় আড়াইহাজার ইয়াবা ট্যাবলেট উদ্ধার করেছেন।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফত উদ্ধার করেছে প্রায় ৭শ’ ইয়াবা ট্যাবলেট। এর বাইরে বিভিন্ন থানা পৃথকভাবে প্রায় এক হাজার ইয়াবা ট্যাবলেট উদ্ধার করেছে। শুধুমাত্র ইয়াবা সেবন ও ব্যবসার সঙ্গে জড়িত থাকায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে গত এক মাসে গ্রেপ্তার হয়েছে প্রায় ৫০ জন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।