ঈসায়ী প্রথম শতাব্দির শেষের দিকে মধ্য ভারতীয় আর্য ভাষগুলোর বিভিন্ন অপভ্রংশ থেকে যে আধুনিক ভারতীয় ভাষাগুলোর উদ্ভব ঘটে, তাদের মধ্যে বাংলা অন্যতম। কোন কোন ভাষাবিদ তারও আগে, ৫০০ ঈসায়ী শতাব্দির মধ্যে বাংলার জন্ম হয় বলে মনে করেন। তবে তখন পর্যন্ত এবং বাংলা ভাষা কোনো সুস্থির রূপ ধারণ করেনি। সে সময় এর বিভিন্ন লিখিত ও ঔপভাষীক রূপ পাশাপাশি বিদ্যমান ছিলো। পরবর্তী সময়ে ৬ষ্ঠ শতাব্দির দিকে মাগধী অপভ্রংশ থেকে বাংলা ভাষার জন্ম হয়েছে বলে মনে করেন ভাষাবিজ্ঞানিগণ।
উপমহাদেশে বিভিন্ন শক্তিশালী ভাষা থাকলেও সে সময় থেকেই বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষ বাংলাকে মাতৃভাষা হিসেবে ব্যবহার করতে শুরু করে। এর ধারাবাহিকতায় তৎকালীন ভারতবর্ষের নির্দিষ্ট অঞ্চলের ব্যপক সংখ্যক মানুষের ইতিহাস-ঐতিহ্য, সাহিত্য-সংস্কৃতির একমাত্র মাধ্যম হয়ে ওঠে বাংলা। ১৯৪৭ এ ভারত বিভক্তির মাধ্যমে পাকিস্তান নামক যে রাষ্ট্রটির জন্ম হয়, তাতে বাংলা ভাষাভাষীর সংখ্যাই ছিলো অধিক। বৃহত্তর জনগোষ্ঠির ভাষা বাংলার পাশাপাশি সহাবস্থান করছিলো উর্দূ। পাকিস্তানের শাষন ব্যবস্থা একতরফাভাবে পরিচালিত হওয়ায় উর্দূ ভাষাই প্রশাসনিক ক্ষেত্রে ব্যভহৃত হতো।
উপমহাদেশের বৃটিশ শাষিক অঞ্চলগুলো ১৯৪৭ ও ১৯৪৮ সালে স্বাধীনতা লাভ করে চারটি সার্বভৌম রাষ্ট্রে পরিণত হয়। ভার, বার্মা (বর্তমানে মায়ানমার), সিংহল (বর্তমান শ্রীলংকা) ও পাকিস্তান। (বর্তমান বাংলাদেশ তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান হিসেবে ১৯৭১ এর ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত অখন্ড পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত ছিলো) নবগঠিত তৎকালীন পাকিস্তানের ৬ কোটি ৯০ লাখ জনসংখ্যার মদ্যে বাংলাভাষী ছিলেন ৪ কোটি ৪০ লাখ। যারা সবাই ছিলেন পূর্ব পাকিস্তানের অধিবাসী। কিন্তু সরকার, প্রশাসন ও সামরিক বাহিনীতে পশ্চিম পাকিস্তানীদের ছিলো সংখ্যাধিক্য।
১৯৪৭ সালে করাচিতে অনুষ্ঠিত জাতীয় শিক্ষা সম্মেলনের একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণাপত্রে উর্দূকে উভয় পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা হিসেবে সুপারিশ করা হয়। প্রচার মাধ্যমে ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কেবল উর্দূ ব্যবহারের প্রস্তাব করা হয়। পাকিস্তান পাবলিক কমিশন বাংলাকে তাদের অনুমোদিত বিষয় তালিকা থেকে বাদ দেয় এবং মুদ্রা ও ষ্ট্যাম্প হতেও বাংরা অক্ষর লুপ্ত হয়।
১৯৪৮ সালের ১৯ মার্চ মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ ঢাকায় আসেন। ২১ মার্চ ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে ভাষা আন্দোলনকে ষড়যন্ত্র হিসেবে উল্লেখ করে ঘোষণা করেন, উর্দূই হবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা।
অন্যকোনো ভাষা নয়। যারা জনগণের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির চেষ্টা করছে, তারা পাকিস্তানের শত্রু। কখনোই তাদের ক্ষমা করা হবে না। জিন্নাহর এই ঘোষনায় তাৎক্ষণিক বিক্ষোভ মিছিল করে প্রতিবাদ জানায় ছাত্র জনতা। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের সরকার খাজা নাজিমুদ্দিনও জিন্নার পদাঙ্কা অনুসরণ করে রাষ্ট্রভাষা বাংলার বিরোধিতা করেন।
ভাষা আন্দোলনের পক্ষে জোড়দার ভূমিকা পালন করে রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ ও তমদ্দুন মজলিশ। রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে মূলত কার্যকরী ভূমিকা পালন করেন ছাত্র-ছাত্রীবৃন্দ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে কেন্দ্র করে এই আন্দোলন ঘনিভূত হয়। বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার অব্যহত আন্দেলনের প্রেক্ষিতে ১৯৪৯ সালের ৯ মার্চ খাজা নাজিমুদ্দিনের উদ্যোগে পাকিস্তান সরকার বাংলাকে আরবী হরফে প্রচলেন একটি অবাস্তব প্রস্তাব দেন। এ প্রস্তাবের মূল লক্ষ্য ছিলো হিন্দুয়ানী বাংলা অক্ষর থেকে অবমুক্ত করে ইসলামি সংস্কৃতির সাথে সম্পর্কযুক্ত আরবী অক্ষরের সাথে বাংলাকে সম্পৃক্ত করা।
এ লক্ষ্যে গঠিত ১৬ সদস্য বিশিস্ট কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন মওলানা আঁকরম খাঁ। কিন্তু ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহসহ সকল ভাষাতত্ববিদ আরবী হরফে বাংলা লেখার এই উদ্ভট প্রস্তাবটি প্রত্যাখ্যান করেন।
ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ বলেন, আমাদের যদি দ্বিতীয় রাষ্ট্রভাষার কথা বিবেচনা করতে হয়, তবে আমরা উর্দূর কথা বিবেচনা করতে পারি। রাজনৈতিক স্বার্ত হাসিলের জন্য আন্দোলনের গোড়া থেকেই একশ্রেণীর নেতৃবৃন্দ এর বিরোধিতা করতে থাকে। কিন্তু ছাত্র জনতার আন্দোলন ও সচেতন রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের অব্যাহত প্রচেষ্টায় বিরোধী শক্তি বারবার ছিটকে পরে।
উনিষশো সাতচল্লিশে শুরু হওয়া আন্দোলন অব্যাহতভাবে চলতে থাকে। পাকিস্তান সরকারের কোন হুমকি বা ষড়যন্ত্রই এর গতিরোধ করতে পারেনি।
১৯৫২ সালের ৩০ জানুয়ারি রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের ডাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সর্বাত্মক ধর্মঘট পালিত হয়। একই দিনে মাওলানা ভাষানীর সভাপতিত্বে আওয়ামী মুসলিম লীগের সভায় ছাত্রদের পাশাপাশি আন্দোলনে আওয়ামী মুসলিম লীগের সরাসরী অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়। ৩১ জানুয়ারি মাওলানা ভাসানীর সভাপতিত্বে পূর্ব পাকিস্তানের সকল রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবীদের সম্মেলনে কাজী গোলাম মাহবুবকে আহ্বায়ক করে সর্বদলীয়, রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয়।
সদ্য গঠিত সর্বদলীয় পরিষদ ২১ ফেব্রুয়ারি সমগ্র পূর্ব পাকিস্তানের সাধারণ ধর্মঘট আহ্বান করে। ১৮ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তান সরকার ২১ ফেব্রুয়ারি সাধারণ ধর্মঘট প্রতিরোধে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও তৎসংলগ্ন এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করে এবং সকল প্রকার সভা সমাবেশ নিষিদ্ধ ঘোষনা করে।
২১ ফেব্রুয়ারি সকাল এগারোটায় কাজী গোলাম মাহবুব, আল আহাদ, আব্দুল মতিন, গাজীউল হক প্রমূখের নেতৃত্বে ছাত্র-ছাত্রীদের সমাবেশ শুরু হয়। বেলা ১২ থেকে ৩টা পর্যন্ত উপস্থিত ছাত্রনেতাদের মধ্যে আব্দুল মতিন ও গাজিউল হক ১৪৪ ধারা ভাঙার পক্ষে মত দিলে ছাত্র ছাত্রীরা স্বতঃস্ফুর্তভাবে মিছিল নিয়ে পূর্ব বাংলা আইন পরিষদ (বর্তমান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে জগন্নাথ হলের অন্তর্গত) অভিমুখে যাত্রা করার উদ্যোগে নেয়। এ সময় পুলিশ লাঠিচার্য ও গুলিবর্ষণ করে।
পুলিশের গুলিতে ঘটনাস্থলেই রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ছাত্র আবুল বরকত এবং রফিক উদ্দীন ও আব্দুল জব্বার নামের তিন তরুণ নিহত হন। পরে সচিবালয়ে কর্মরত আব্দুস সালাম হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন। এ সময় অলিউল্লাহ নামের নয় বছরের একটি শিশুও পুলিশের গুলিতে নিহত হয়। পরদিন ২২ ফেব্রুয়ারি ছাত্র জনতা শান্তিপূর্ণ শোক মিছিল বের করলে পুলিশ আবার গুলি চালায়। পুলিশের গুলিতে শফিউর রহমানসহ চারজন ঘটনাস্থলেই নিহত হন।
সেদিন থেকেই রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন সর্বস্তরের মানুষের অংশ গ্রহণে বাঁধভাঙ্গা জোয়ারের মত উথলে ওঠে। উপায়ন্তর না দেখে মুখ্যমন্ত্রী নুরুল আমিন তড়িঘড়ি করে বাংলাকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব আনেন এবং তা সর্বষম্মভাবে পাশ হয়। ১৯৫৪ সালের ৭ মার্চ তৎকালীন যুক্তফ্রন্ট সকারের উদ্যোগে বাংলাকে একটি রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকার করে একটি প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়। ১৯৫৬ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তান জাতীয় সংসদে বাংলা এবং উর্দূকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষার স্বীকৃতি দিয়ে সংবিধান পাশ হয় এবং ৩ মার্চ থেকে স্বীকৃতি দানকারী সংবিধান কার্যখর হয়। এর মাদ্যমে ১৯৪৭ সালের সেপ্টেম্বরে তমদ্দুন মজলিশ মায়ের ভাষায় কথা বলার যে আন্দোলন শুরু করেছিলো, তা সাফল্যের মুখ দেখে।
বাঙালিরা তাদের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠিত করতে পারে।
ঢাকা মেডিকলে কলেজের ছাত্ররা ২৩ ফেব্রুয়ারি রাত শেষে শহীধ মিনার তৈরির কাজ শুরু করে। শেষ হয় ২৪ ফেব্রুয়ারি ভোরে। ঐ দিনই "শহীদ বীরের স্মৃতিতে" শিরোনামে দৈনিক আযাদ পত্রিকায় খবরটি ছাপা হয়। শহীদ শফিউলের পিতা সেদিন সকালে আনুষ্ঠানিকভাবে শহীদ মিনারের উদ্বোধন করেন।
২৬ ফেব্রুয়ারি উদ্বোধন করেন আযাদ সম্পাদক আবুল কালাম শামসুদ্দীন। আর এ দিনই সরকারী পুলিশ ও সেনাবাহিনী কলেজের ছাত্র হোষ্টেল ঘেরাও করে শহীদ মিনারটি ভেঙে ফেলে। এরপর ঢাকা কলেজে একটি শহীদ মিনার নির্মিত হলে সরকারের নির্দেশে সেটাও ভেঙে ফেলা হয়।
অবশেষে সাংাবিধানিকভাবে বাংলাকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা স্বীকৃতি দেবার পর ১৯৫৭ সালে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের কাজ মুরু হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মাহমুদ হোসেনর নেতৃত্বে গঠিত কমিটির তত্ত্বাবধানে ১৯৬৩ সালে এর নির্মাণ কাজ শেষ হয়।
২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস করার বিষয়টি প্রথমে ভাবেন কানাডা প্রবাসী জনাব রফিকুল ইসলাম ও আব্দুস সালাম। এ ব্যপারে ১৯৯৮ সালের জানুয়ারিত জাতিসংঘের মহাসচিব কফি আনানের কাছে একটি চিঠি লেখেন। জাতিসংঘ থেকে দিকনির্দেশনা পেয়ে তারা বিষয়টি প্যারিসে অবস্থিত ইউনেসকোর সদর দফতরে প্রেরণ করেন। প্যারিস থেকে জানানো, তোমাদের বিষয়টি খুবই ইন্টারেষ্টিং এ ধরনের প্রস্তাব পেলে ইউনেসকো তা আলোচনা করে থাকে.......... তবে তা কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠির পক্ষ থেকে পেলে চলবে না। ইউনেসকোর কোনো সদস্য রাষ্ট্র কর্তৃক উপস্থাপন করতে হবে।
এরপর রফিকুল ইসলাম ও আব্দুস সালাম বিষয়টি সবিস্তারে ব্যাখ্যা করে বাংলাদেশ শিল্প মন্ত্রণালয়ে পাঠান। শিল্পমন্ত্রী তাৎক্ষণিকভাবে প্রধানমনন্ত্র্্রী শেখ হাসিনার নজরে আনেন। শেখ হাসিনা প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য নির্দেশ দেন। শিল্প মন্ত্রণালয় ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করার জন্য ইউনেস্কোর ৩০তম সাধারণ সম্মেলনে আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব পেশ করা হয়। সম্মেলনে প্রস্তাবটি উত্থাপিত হলে মহাপরিচালকের মতামতের ভিত্তিতে বিষয়টি অনিশ্চয়তার দিকে ঢলে পড়তে থাকে।
কিন্তু অধিবেশনে যোগদানকারী বাংলাদেশ প্রতিনিধি দল, শিল্পমন্ত্রী জনাব সাদেক, ফ্র্রান্সে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি সৈয়দ মোফাজ্জম আলী ও ইউনেস্কো মহাপরিচালকের বিশেষ উপদেষ্টা জনাব তোফাজ্জল হকের কুঠনৈতিক প্রজ্ঞা ও দক্ষতা এ ব্যাপারে মূল্যবান ভুমিকা পালন করে। যার ফলে পরিবর্তিত প্রস্তাবটি বিবেচনার জন্য যথাযথ সংস্থা কমিশন-২ তে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এব্যাপারে পাকিস্তানসহ ২৮ সদস্য রাষ্ট্র বাংলাদেশকে লিখিত সমর্থন জানায়।
ইউনেস্কার টেকনিক্যাল কমিটি কমিশন-২ ২২ নভেম্বর বাংলাদেশের প্রস্তাবটি অধিবেশনে উপস্থাপন করে। সেখানে বিভিন্ন দেশের প্রায় পাঁচশ প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন।
কারো কোনো আপত্তি না থাকায় সভাপতি তিনবার হাতুড়ি পিটিয়ে প্রস্তাবটি গৃহিত বলে ঘোষণা করেন। এরপর ৪ হানুয়ারি ২০০০ তারিখে ইউনেস্কার মহাপরিচালক কাইচিরো মাটসুরা একটি চিঠিতে সকল সদস্য রাষ্ট্রের কাছে প্রতি বছর ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতি মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালনের আহ্বান জানান। এতে বাংলা ভাষা যেমন সারাবিশ্বে পরিচিতি পেয়েছে, তেমনি শহীদদের আত্মার প্রতিও সম্মান জানানো হয়েছে।
বর্তমান বিশ্বের ৭০০ কোটি মানুষ প্রায় ৬ হাজার ভাষার কথা বলে। ভাষা তত্ত্ববিদগণ মনে করেন, আগামী ১০০ বছরের মধ্যে প্রায় ৩০০০ ভাষা পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত হয়ে যাবে।
বর্তমান বিশ্বে প্রায় ৩০ কোটি মানুষ বাংলায় কথা বলে। এবং ভাষাভাষীর দিক থেকে বিশ্বে বাংলা ভাষা ৪র্থ স্থানে রয়েছে। প্রতিবছর সারা বিশ্বে ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালিত হয়। বাংলাদেশসহ ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, ত্রিপুরা, মনিপুর, বিহার ও উড়িষ্যা এবং মায়ানমারের আরাকান রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীও বাংলা ভাষায় কথা বলে। আমাদের জন্য নিঃসন্দেহে গর্বের বিষয় হলো, ভারতের আসামে এবং আফ্রিকার একটি দেশ সিয়েরা লিয়নে বাংলাকে দ্বিতীয় সরকারী ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে।
প্রচার মাধ্যম রেডিও, টিভি ও ইন্টরনেটের মাধ্যমে সারা বিশ্বে বাংলা ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। বাংলাদেশ ও ভারত ছাড়াও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, বৃটেন, চীন, জার্মানী, রাশিয়া, ইরান, সৌদি আরব, পাকিস্তান, জাপান, ফিলিপাইন প্রভৃত দেশ থেকে প্রতিদিনই বাংলা রেডিও অনুষ্ঠান সম্প্রচার করা হয়। বিভিন্ন্ন দেশে বাংলা ভাষায় সংবাদ পত্রও প্রকাশিত হয়। জাপান ও অস্ট্রেলিয়াসহ আরো অন্যান্য দেশে ভাষা শহীদদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে নির্মাণ করা হয়েছে শহীদ মিনার। বিশ্বব্যাপি বাংলা ভাষার দ্রুত সম্প্রসারণ আমাদেরকে আশার আলো দেখায়।
এ ভাষার মাধ্যমে বাঙালি জাতি সারা বিশ্বের কাফে সুপরিচিত হয়ে উঠবে। কিন্তু তার জন্য প্রয়োজন আমাদেও আত্মসচেতনতা। বর্তমানে বাংলাদেশে ইংরেজি ও হিন্দির আগ্রাসন আশঙ্কাজনকহারে বাড়ছে। বর্তমান প্রজন্ম ইংরেজি ও হিন্দির প্রতি আগ্রহী হওয়ার পাশাপাশি বাংলার প্রতি একরকম বীতশ্রদ্ধ হয়ে উঠছে। তাতে অদূর ভবিষ্যতে বাংলা ভাষার অস্তিত্বের সংকট দেখা দেওয়ার কথাটিও এড়িয়ে যাওয়া যায় না।
তাই আমাদের প্রাণের ভাষাকে টিকিয়ে রাখতে হলে আমাদেরকেই উদ্যোগী হতে হবে। যথাযথভাবে বাংলা শেখা ও রাষ্ট্রের সর্বষ্তরে বাংলার অবাধ ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। তাহলেই হয়তো বিশ্বের একমাত্র ভাষাভিত্তিক রাষ্ট্র বাংলাদেশ বিশ্বের দরবারে তার নিজস্বতা নিয়ে মাথা তুলে দাঁড়াতে পারবে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।