ঘটনাটি আমাদের প্রিয় চিত্রশিল্পী হাশেম খানের। ১৯৫২ সালে তিনি স্কুলের ছাত্র। সপ্তম বা ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়েন। গ্রামে থাকেন। সেখানে পত্রিকা পৌঁছায় দুইদিন পরে।
ভাষা আন্দোলনের খবর তাঁদের কাছেও পৌঁছাল। পাড়ার বড় ভাইয়েরা বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্র ভাষা করার দাবীতে মিছিল করছিল। সেখানে হাশেম খান তাঁর কিছু বন্ধু বান্ধবও অংশ গ্রহণ করেন। সবাই মিলে মিছিলে স্লোগান দিচ্ছিলেন, “রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই’’। কিন্তু বার বার মিছিলের ছন্দ পতন হচ্ছিল হাশেম খানের এক বন্ধুর কারণে।
যখনই সবাই বলছিল, ‘’ “রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই’’ তখন সে বলছিল, ‘’ বাংলা ভাষার রাষ্ট্র চাই’’। এতে মিছিলের সৌন্দর্য্য নষ্ট হচ্ছিল। বড় ভাইয়েরা বার বার তাকে সাবধান করে দিচ্ছিল, ঠিক মত স্লোগান দিতে না পারলে মিছিল থেকে বের করে দেওয়া হবে। ছেলেটি বার বার আশ্বাস দিচ্ছিল এর পরের বার আর ভুল হবে না। কিন্তু আবারও মিছিলের নেতা যতবারই, ‘’ রাষ্ট্রভাষাআআআ’’ বলে নেতৃত্ব দিচ্ছিল, অন্যদের সাথে কণ্ঠ মিলিয়ে ’’ বাংলা চাইইই’’ না বলে সে ‘’ বাংলা ভাষার রাষ্ট্র চাই’’ বলে স্লোগান দিয়ে যাচ্ছিল।
আরো কয়েক দফা সাবধান করে দেবার পরেও যখন কাজ হল না তখন সেই ছেলেটিকে মিছিল থেকে বের করে দেওয়া হল। সেই সাথে বন্ধুকে দল থেকে বাদ না দেবার অনুরোধ করার জন্য হাশেম খানকেও।
মিছিল থেকে বের করে দেবার জন্য হাশেম খান বন্ধুর উপর চটে যান, ‘’কী হত রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই বললে? বাংলা ভাষার রাষ্ট্র চাই বলার কী দরকার ছিল?’’ বন্ধুটি তখন মিষ্টি হেসে হাশেম খানকে জানায়, আমাদের এখন দরকার একটা বাংলা ভাষার রাষ্ট্র। হাশেম খানের ছোট্ট মাথায় এত কিছু ঢোকে না। বন্ধুর উপর রাগ হয়।
এরও অনেক বছর পরে আসে ১৯৭১। ৯ মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পরে আসে স্বপ্নের স্বাধীনতা। স্বাধীন দেশে অমর একুশে পালন করতে গিয়ে শিল্পী মনে পড়ে যায় সেই ছোট্টবেলার বন্ধুটির কথা। ১৯৫২ সালেই কী করে সে বুঝছিল, আমাদের এখন দরকার একটা বাংলা ভাষার রাষ্ট্র। এত দূরদৃষ্টি ছিল তার?
আমার মায়ের ভাষা ছিল বাংলা।
কিন্তু বর্তমান আধুনিক মায়েদের ভাষা হয়ে গিয়েছে না বাংলা-না হিন্দি-না ইংরেজী। তার উপর বিষফোঁড়ার মত রইল এফ.এম রেডিওর আরজে, আইসি-করসি মার্কা নাটক আর অশ্লীল ব্লগীয় ভাষা। স্বাধীনতার ৪০ বছর পরে আজ আমাদের সত্যিই প্রয়োজন একটি ‘’ বাংলা ভাষার রাষ্ট্র’’।
(হাশেম খানের এই স্মৃতিকথাটি আমি পড়ি সাপ্তাহিক ২০০০ এর একটি সংখ্যায়)
৯ ফাল্গুন, ১৪১৭
২১শে ফেব্রুয়ারি, ২০১১ ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।