"আমারে ফিরায়ে লহো অয়ি বসুন্ধরে, কোলের সন্তানে তব কোলের ভিতরে"-শ্রী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
রোজার ঈদের পর পর আমরা প্ল্যান করেছিলাম তিনজন ব্লগার মিলে একটি গল্প লিখব। তিনজন তিনটি চরিত্র, তিনটি পরিবেশ এবং তাদের মধ্যকার ভালোবাসা এবং আবেগ নিয়ে লিখব। অবশেষে আমরা তিনজন মিলে শেষ করলাম আমাদের সেই গল্প। গল্পএ আমরা কতটুক সফল হয়েছি সেটার মানদন্ড পাঠকের হাতে, তবে আমরা তিনজন এইটুক বলতে পারি আমরা পূর্ণ তৃপ্তি নিয়ে এবং পুরো উদ্যমে কাজ করেছি এই গল্পটি সফল ও সুন্দর করার জন্য। আমাদের প্ল্যান ছিল কুরবানির ঈদের আগে গল্পটি শেষ করার।
আমরা শেষ করেছি আমাদের গল্প কফিশপ। কিন্তু গল্পটি আমাদের তিনজনের মাঝে অন্যরকম একটি মায়ার সৃষ্টি করেছে। আসলে কষ্ট হচ্ছে, ত্রিনিত্রি আপু অলরেডি ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন কফিশপ গল্পটি শেষ হওয়াতে তিনি অত্যাধিক মনঃক্ষুণ্ণ। কি আর করার, সব কিছুর-ই শেষ আছে। তাই আমাদেরও ইতি টানতে হয়েছে।
আজকে বসলাম কফিশপ গল্পের পেছনের আমাদের মজার, ব্যাস্ততার, আড্ডার গল্পগুলো পাঠকদের জানাতে। আমি আছি দেশের বাইরে, ত্রিনিত্রি আপু আছেন ঢাকায়, আর নীরব ভাই সিলেটে। তিনজন তিন প্রান্তে থেকে আসলে এত সুন্দর একটি কমিউনিকেশনের মাধ্যমে গল্পটি শেষ হবে ভাবতেই পারিনি। এ জন্য প্রথমেই ধন্যবাদ জানাচ্ছি ব্লগার নীরব ভাইকে আর ত্রিনিত্রি আপুকে, গল্পের দুই তৃতীয়াংশই তো তারা। ধন্যবাদ শাহী ভাইকে এমন চমৎকার একটি প্ল্যান দেয়ার জন্যে।
ধন্যবাদ ব্লগার বোকা ছেলে ভাইয়াকে সুন্দর একটি প্রচ্ছদ করে দেয়ার জন্য। ধন্যবাদ সব পাঠককে সঙ্গে থেকে উৎসাহ দিয়ে যাওয়ার জন্য। তাহলে শুরু করা যাক “কফিশপ-আমাদের গল্প.........”
ব্লগে একটি "একটি গোলাপী ছাতা, অতঃপর গোলাপী ভালোবাসা" গল্পটি দেয়ার পরে ব্যাপক সাড়া পেয়েছিলাম। তারপরে যখন " চিরকুট অথবা বোকা মেয়েটি ! " গল্পটা দিলাম তখন এত সাড়া পেয়েছিলাম যে নিজেও বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। ব্লগে লেখালেখির প্রথম থেকে যারা আমাকে সাপোর্ট দিয়ে যাচ্ছেন তাদের মধ্যে ব্লগার দাইফ ভাইয়া এবং ব্লগার কামরুল হাসান শাহী ভাই অন্যতম।
“চিরকুট অথবা বোকা মেয়েটি” ব্লগে দেয়ার পরে শাহী ভাই হঠাত করেই একদিন মেসেজ দিলেন একটি জয়েন্ট গল্প লিখে ফেলার জন্য। কিন্তু জয়েন্ট গল্প লেখার ব্যাপারে আমার পূর্ব কোন অভিজ্ঞতা ছিল না। তিনি ব্লগার যৌবনদা এবং নীল ত্রিস্তানের “তুই কি আমার হবি?” নামের প্রথম জয়েন্ট গল্পটির লিঙ্ক দিলেন। দেখা গেলো জয়েন্ট গল্পের ব্যাপারে আমার থেকে শাহী ভাইয়ের উৎসাহ বেশী। আমি তাকে বললাম আমি কার সাথে লিখব? শাহী ভাই তিনজনকে সাজেস্ট করলেন, প্রথমত শায়মা আপু, শায়মা আপু যেহেতু চমৎকার রোমান্স তার লেখায় আনতে পারেন সেহেতু সেই হবে বেস্ট।
কিন্তু দেখা গেলো ব্লগের বাইরে শায়মা আপুর সাথে আমার কিংবা শাহী ভাইয়ের কারো যোগাযোগ নেই। দ্বিতীয়ত শাহী ভাই সাজেস্ট করলেন সরলতাকে, দেখা গেলো সরলতার সাথেও আমাদের কোন যোগাযোগ নেই। তারপরে তিনি বললেন ত্রিনিত্রি আপুর কথা। যেহেতু ত্রিনিত্রি আপু খুব ফ্রাঙ্ক বিহেভিয়ারের মেয়ে সুতরাং তিনি রাজি হবেন এবং সব বিষয়ে তার অত্যাধিক কৌতূহল। অন্তত কৌতূহলের বশে হলেও তিনি রাজি হবেন।
কিন্তু শাহী ভাই মাঝখানে বল্লেন,”ত্রিনিত্রি আর বড়বিলাইকে আমার কার্টুন কার্টুন মনে হয়। প্রেমের গল্প কতখানি পারবে? পরে দেখা যাবে তোমাকে সহ ডুবাইবে। “
ত্রিনিত্রি আপুর "বৃষ্টিভেজা পথ" নামের একটা রোম্যান্টিক গল্প ( আমার জানা মতে তার ব্লগে সেই একটাই রোম্যান্টিক গল্প ছিল) আমার দারুন লেগেছিল। আমি সেই গল্পের লিঙ্ক দিয়ে ঠান্ডা করলাম শাহী ভাইয়ের মাথা। এরপর শুরু হলো ইমোশনাল অত্যাচারের পালা, ত্রিনিত্রি আপুকে অত্যন্ত ইমশনাল মেসেজ দিলাম।
মেসেজটা এমন,
“ত্রিনিত্রি আপু, ইদানিং ব্লগে আমি মোটামুটি ভালোই সাড়া পাচ্ছি। ব্লগার কামরুল হাসান শাহী ভাই আমার প্রতিভায় ঈর্ষান্বিত হয়ে আমাকে একটি জয়েন্ট গল্প লিখতে বলছেন। তিনি তিনজনের নাম বললেও শায়মা আপু এবং সরলতা দুইজনের নাম ছারা আমি কিছুই জানি না। তাই আপু এখন আপনিই একমাত্র ভরসা। এখন আপনি না করে দিলে ভীষণ বিপদে পড়ে যাব, বাধ্য হয়ে আমাকে নতুন কোন মেয়ে ব্লগার খুঁজতে হবে, কিন্তু আমি তেমন কাউকে চিনি না।
আপু কাজটা দারুন হবে এটুক বলতে পারি। আমি এর আগে দুজনের একটি জয়েন্ট গল্পের লিঙ্ক দিচ্ছি। প্লিজ আপু ডিসিশন জানাবেন। “
মেসেজ লিখে ত্রিনিত্রি আপুকে সেন্ড করে দেয়ার পর পরই শাহী ভাই আমাকে মেসেজ দিলেন, “ডেমোন, আমি ত্রিনিত্রির উপরে তেমন ভরসা পাচ্ছি না। “ আমার চোখ কপালে! বলে কি! আমি তো ইমোশনাল মেসেজ আপুকে সেন্ড করে দিয়েছি! যাইহোক, শেষে সিদ্ধান্ত হলো ত্রিনিত্রি আপুই নায়িকার চরিত্র লিখবে।
কিন্তু আমরা ঘ্যান ঘ্যান প্যান প্যান প্রেমের গল্প না লিখে একটু ডিফ্রেন্ট ভাবে একটি প্রেমের গল্প লিখব। কিন্তু আমি চাচ্ছিলাম অনেক বেশী ডিফ্রেন্ট যা ব্লগে হয়নি আগে। দুইজন মিলে আগে লিখেছে। অন্যরকম কিছু একটা করা দরকার। শাহী ভাই বললেন, “ লুলকবি ( নীরব ০০৯ ) কে নিয়ে গল্প লিখে ফেলো ডেম্ন, ত্রিভুজ প্রেমের গল্প, লুল তোমাকে খুব ভালো জানে।
“ তার কথা শুনে হাসতে হাসতে হেচকি উঠার উপক্রম। শেষে সিদ্ধান্ত হলো নীরব মিয়াকে সুপার সাব এর একটি চরিত্র দেয়া হবে। নীরব ভাইকে এই প্রপোজ দেয়ার পরে তিনি কিছু বলার ভাষা না পেয়ে একটি খুশির ইমোটিকনস দিয়ে ফেললেন।
তারপরেই আমাকে মেসেজ দিলেন,”কফিশপ নিয়া গল্প লিখবা, আমাকে কিসের রোল লিখতে হবে?”
আমি- “বেয়ারা, কফিশপের বয়, নায়ক নায়িকা কফি খেতে আসবে, আপনি তাদের কফি দিবেন। “
নীরব ভাই- “ডেমন তুই আমাকে এমন একটা রোল দিতে পারবি? (কান্নার ইম এটাচ ছিল সাথে)”
আমি- “আরে লেখকরা সব পারে, আমি তো প্রেসিডেন্ট থেকে শুরু করে রিকশাওয়ালার চরিত্র নিয়ে পর্যন্ত উত্তম পুরুষে মানে আমি নিজেকে কল্পনা করে লিখতে পারবো।
আপনি পারবেন না কেন?”
নীরব ভাই- “কেমন দেখায় না? ( মন খারাপে চিমসে যাওয়ার ইম) অন্য কোন চরিত্র দেয়া যায় না?”
আমি- “আমি ডিরেক্টর, আমি যেইটা বলবো সেইটাই হবে, আপনাকে ভালো একটা চরিত্র দেয়া হয়েছে, দুষ্টামি করলাম, আপনি একজন কর্পোরেট অফিসারের ভূমিকায় লিখবেন, যেখানে আপনার চরিত্রটি থাকবে একজন কর্পোরেট পারসন যে দুইটি ছেলে মেয়েকে নিয়ে লিখবে, আপনার লেখায় কবিতা থাকবে। “
নীরব ভাই- “কেমন কর্পোরেট? আমার তেমন ধারনা নেই। “
আমি- “এত চিন্তা করেন কেন? দেশে এমনিতেই চাকরীর অভাব, আপনেরে গ্রামিন ট্রামিন একটায় ঢুকায়া কর্পোরেট বানায়া দিমু। “
নীরব ভাই- ( ঠোঁট প্রশস্ত করে হাসির ইম )
আমি- ( ফেবুর একটা ইম আছে, সেইটা অবজ্ঞার ইম মনে হয় আমার কাছে, আমি যাদের পছন্দ করি তাদের সেই ইমটা দেই। নীরব ভাইকে অত্যাধিক মাত্রায় দেই)
দেখা গেলো নীরব ভাই তিন পায়ে খাড়া (পাঠক দোয়া করে তৃতীয় পায়ের বৃথা সন্ধান করিবেন না, সেন্সেটিভ )।
কিন্তু সমস্যা হইল ত্রিনিত্রি আপু তখনো মেসেজের রিপ্লে করে নাই। আমি ভয়ে অস্থির কি না কি রিপ্লে দেয়। নীরব মিয়া আমারে আরও ভয় দেখায়, “ত্রিনিত্রি আপি জীবনেও প্রেমের গল্প লিখতে রাজি হবে না। “
গল্পের প্লট শোনার পরে নীরব ভাইয়ের সাথে আরেকটি কনভারসেশনের নমুনা দেখা যাক-
নীরব ভাই- “দিমুন সোনা, ত্রিনিত্রি আপুর সাথে প্রেম করবে কে? তুমি না আমি?”
আমি- “ছি ছি ছি, এইসব কি বলেন? ত্রিনিত্রি আপু আমাদের দুজনেরই সিনিয়র, তার সাথে প্রেম করব কেন? প্রেম হবে গল্পের নায়িকার সাথে। “
নিরব ভাই- “ হে হে, আইচ্ছা কে প্রেম করবো?”
আমি- “ আমরা দু’জন মিলে প্রেম করবো।
“
নীরব ভাই- “এক মেয়ের সাথে!”
আমি- “সমস্যা কি?”
নীরব ভাই- (মিট মিট হাসির ইম)
পরদিন ত্রিনিত্রি আপুর মেসেজ দেখে আমি হতভম্ব। তিনি গল্প লিখবেন এবং আমি যে খসড়া আইডিয়া দিয়েছিলাম গল্পের প্লটের ব্যাপারে তিনি সেই প্লট চেঞ্জ করে দুর্দান্ত এক প্লট সাজিয়ে আমাকে রিপ্লে দিলেন। এমনকি আমি প্লটে কফিশপ হিসাবে হেলভেশিয়ার কথা লিখেছিলাম, তিনি বললেন ক্যাফে ম্যাঙ্গো দারুন হবে। আমি অবাক হয়ে দেখলাম আমার থেকে ত্রিনিত্রি আপুর কৌতূহল বেশী। আর নীরব ভাই পুরাই নীরব, দুনিয়ার তামাম অলস-দের প্রতিনিধি।
রোজার ঈদে সিলেটে দেখা হয়েছিল সাকিন, নীরব ভাই আর ত্রিনিত্রি আপুর। ব্লগার সুরঞ্জনা আপুর বাসায় তারা ঈদে খেয়েও এসেছে। আমি যেহেতু দেশের বাইরে, তাই ব্লগে দেয়া সুরঞ্জনা আপুর খাবারের ছবি দেখে চোখ জুড়াইছি। যাইহোক, তখন নীরব ভাই এবং ত্রিনিত্রি আপু কথা বলেন এবং আমাদের ডিসিশন হয় ঈদের পরে লেখা শুরু করার।
ত্রিনিত্রি আপু তিনজনের একটা ফেসবুক মেসেজ করলেন।
এখন পর্যন্ত সেই ফেসবুক মেসেজে আমাদের তিনজনের প্রায় দুই হজারের উপরে মেসেজ জমা। সেখানে আমাদের গল্প আর গল্পের প্লট নিয়ে আলোচনা শুরু হলো। ফাঁকে ফাঁকে মজার আলোচনা। গল্পের চেয়ে বেশী আমরা সেখানে অন্যসব বিষয় নিয়েই বেশী আড্ডা দিয়েছি। আমাদের প্ল্যানটা এমন ছিল,
আমাদের গল্পটা পাঠকের কাছে অবশ্যই বাস্তবমুখী এবং বিশ্বাসযোগ্য হতে হবে, সেজন্য আমি লিখব একটি ফাউল টাইপের তাংফাং পোলার কথা, যে পরে দেশের বাইরে চলে যাবে।
আমার লেখা থাকবে ব্লগের ইয়ং ছেলে মেয়েদের জন্য যারা এইটাইপের ড্যাম কেয়ার ভাব পছন্দ করে , ত্রিনিত্রি আপু লিখবে একটি মেডিকেলের মেয়েকে নিয়ে যে খুব আবেগ দিয়ে ভালোবেসে যাবে সেই তাংফাং পোলাটারে (হায়রে ছিঁচকাঁদুনে অবলা নারী ), আর নীরব ভাই লিখবেন বোকাসোকা একজন কর্পোরেট হিসেবে , যে হবে একটু ভাবুক টাইপের। মাঝে মাঝে কবিতা লিখবে, যারা ব্লগে একদম নির্মল সাহিত্যপ্রেমী তাদের খুশি করে দেয়ার গুরুদায়িত্ব দেয়া হয়েছিল নীরব-৪২০ এর হাতে। আমি লিখব আমার আসল নামে- “রিক”, নীরব ভাই লিখবে তার নামে- “নীরব”, ত্রিনিত্রি আপুর নাম “ত্রিনিত্রি” দিলে সবাই গল্প রেখে নাম নিয়া হাসাহাসি শুরু করবে, তাই ত্রিনিত্রি আপুর লেখা চরিত্রের নাম দেয়া হল “নিশাত”
পরামর্শ হল যে, আমি লিখব সবার আগে, তারপরে সেখান থেকে ঘটনা গুলো লিখবে ত্রিনিত্রি আপু, আর আমাদের দুইজনেরটা দেখে লিখে ফেলবে নীরব ভাই। দেখা গেলো ত্রিনিত্রি আপু এত এক্সাইটেড যে তিনি আমার আগেই লিখে আমার কাছে প্রথম পর্ব পাঠিয়ে দিলেন। আমি ত্রিনিত্রি আপুর গল্প পড়ে পুরাই টাশকিত।
শাহী ভাই কিভাবে কার্টুন বললো! আমি প্রথম পর্ব পড়ে পুরাই নিশাত নামের মেয়েটার জন্য ফিদা হয়ে গেলাম! ত্রিনিত্রি আপু যে এত চমৎকার লিখবে সেটা ভাবতেই পারিনি। আমি পুরা দশ মিনিট টাশকি খায়া বসে রইলাম।
সেদিন রাতেই প্রথম পর্ব লিখে ত্রিনিত্রি আপুকে পাঠিয়ে দিলাম। নীরব ভাইকে বললাম প্রথম পর্ব লিখে ফেলতে, সে বললো সে ঈদের ছুটিতে বাড়ি যাচ্ছে। পড়লাম বিপদে, আমরা চাচ্ছিলাম যত তারাতারি সম্ভব ব্লগে দিতে।
দেখা গেলো নীরব ভাই এমন অলস যে সে মুড না আসলে লিখতে পারে না। মুড আসলে উছিলা, আমার মনে হয় পুরনো কোন সৃতি যখন তাকে খুন্তি দিয়ে খোঁচাতে শুরু করে, তখন সে লিখতে বসে। যাইহোক, তিনি বাড়িতে যেয়ে আর ফিরে আসার নাম নেই। মেজাজ পুরাই সপ্তমে। আমি আর ত্রিনিত্রি আপু ততদিনে দ্বিতীয় পর্ব লিখে ফেলেছি।
অথচ নীরব ভাই লাপাত্তা। শেষে যখন সে ফিরে এলো তখন রাখালের মত একটা লাঠি নিয়ে গরু তাড়ানোর ভঙ্গিতে নীরব ভাইকে তাড়া দিতে শুরু করলাম। কিন্তু তার মুড আর আসে না, লেখাও আসে না। পড়লাম বিপদে। শেষে একদিন প্রথম পর্ব পাঠালেন।
আমি না পড়েই বললাম ভালো হয় নাই, মেজাজ খারাপ করা লেখা। নীরব ভাই বললেন ভালো করে পড়ে দেখ, এর থেকে ভালো আমি লিখতে পারি না। শেষে পড়া শুরু করলাম, দেখলাম অসাম একটা লেখা দিয়েছে।
অক্টোবরের এক তারিখ থেকে পোষ্ট করবো বলে ঠিক করা ছিল, কিন্তু দেখা গেলো ত্রিনিত্রি আপু পরীক্ষায় আটকে গেছে। দেখা গেলো তিনি আজকে মেসেজ দিয়ে বলছেন বরিশালে এক্সাম দিচ্ছি, আমার পরদিন মেসেজ দিয়ে বললেন মাত্র সিলেটে এক্সাম দিলাম।
ত্রিনিত্রি আপু এত কাজের মাঝেও কমিউনিকেশন ঠিক রেখেছেন। তিনিই সব থেকে বেশী পরিশ্রম দিয়েছেন গল্পের বিষয়ে, আর নীরব মিয়া আলসেমি করে আমাকে টেনশনের উপরে রেখেছে। যাইহোক, অক্টোবরের ৬ তারিখে ত্রিনিত্রি আপুর এক্সাম শেষ হওয়ার কথা। ৭ তারিখ থেকে পোষ্ট দেয়া হবে বলে ডিসিশন নেয়া হলো। এর মাঝে আবার নীরব ভাই বললেন তিনি বাড়ি যাচ্ছেন শারদীয় উৎসবে।
৯ তারিখ তিনি আসবেন, এর আগে পোষ্ট সম্ভব না। শেষে ডিসিশন হলো ১০ তারিখ থেকে আমরা পোষ্ট শুরু করবো। এর মাঝে বেঁধে গেলো আরেক ঝামেলা। ত্রিনিত্রি আপু ব্লগার বোকা ভাইকে দিয়ে যে প্রচ্ছদ বানালেন সেইটা আমাদের কারো পছন হলো না। একমাস তাগাদা দিয়ে তাকে দিয়ে যে প্রচ্ছদ বানানো হলো সেটা খুব সাধারন একটা প্রচ্ছদ, যে প্রচ্ছদ দেখলে পাঠক ভাববে আমরা তিনজন রাস্তায় দাঁড়িয়ে পার্টনারশিপে কফি বিক্রি করি।
এই সেই প্রচ্ছদ-
শেষে বোকা ভাই তিন দিনের মধ্যে আমাদের এই প্রচ্ছদটি পাঠিয়ে দিলেন। অসম্ভব সুন্দর এই প্রচ্ছদটি দেখা মাত্র পছন্দ হয়ে গেলো।
শেষে ৯ তারিখে নীরব ভাই চলে এলেন। ১০ তারিখে আমরা প্রথম পোষ্ট করে ফেললাম এবং প্রথম পোস্টেই ব্যাপক সাড়া পাওয়া গেলো। আমাদের ধারনা ছিল জয়েন্ট গল্প এবং পর্বভিত্তিক হওয়াতে পাঠক পড়বে না, কিন্তু দেখা গেলো সবাই খুব প্রিফার করছে গল্পটা।
দ্বিতীয় পর্ব দেয়া হলো সপ্তাহ খানেক পড়ে। দ্বিতীয় পর্ব যেহেতু আমি আর ত্রিনিত্রি আপু আগেই লিখে ফেলেছিলাম তাই নীরব ভাইকে তাড়া দিতে শুরু করলাম। কিন্তু পালের গোদা নড়েনা। শেষে যেদিন গল্প পোষ্ট করবো, তার আগের রাতে সে গল্প সেন্ড করলো। তৃতীয় পর্ব পোষ্ট করতে যেয়ে দেখি সামু ব্লগ ডেড ।
সাইটের কাজ চলছে তাই পোষ্ট করা যাচ্ছে না। পরের দিন শেষে পোষ্ট করলাম।
তৃতীয় পর্ব দেয়ার পরে ডিসিশন নেয়া হলো ‘রিক’-কে শুধু ছ্যাকা দিয়েই লেখকেরা ক্ষান্ত হবেন না, তারা তাকে অন্য একটি মেয়ের সাথে বিবাহ পর্যন্ত দিবেন। আমি খুশি হয়ে বললাম,”রিকের বিয়ে হয়ে গেলে নিশাতের কি হবে? নিশাতের সাথে তো দেখা করানো দরকার শেষে, এককাজ করি, নিশাত কে একটা ক্লাইমেক্সের দিকে ঠেলে দেই, সে রিকের বিয়ে বাড়িতে বুয়াদের সাথে প্লেট ধুইবে আর রিক-কে দেখবে। কিন্তু রিক সেদিকে ভ্রুক্ষেপই করবে না।
এটা দারুন ক্লাইমেক্স, পাঠক কান্নাকাটি করবে। “ নিশাতের জন্য এই করুণ প্রস্তাবে নীরব ভাই রাজি হলেও অনির্দিষ্ট কারনে ত্রিনিত্রি আপু রাজি হন নাই।
শেষ পর্ব দিয়ে নিশ্চিন্ত হতে পারলাম। শেষ পর্যন্ত কথা রাখতে পেরেছি। এখন গল্পের গুনগত মান যাচাইয়ের কাজ পাঠককেই করতে হবে।
গল্পটি পড়ে সুচিন্তিত মতামত জানাবেন সবাই আশা করছি।
কফিশপ গল্পটির শেষটা আমি আর নীরব ভাই চেয়েছিলাম মিলিয়ে দিতে। কিন্তু ত্রিনিত্রি আপু কিছুতেই মিলনাত্মক গল্প লিখবে না। মিলনাত্মক গল্পে নাকি তা এলার্জি! তিনি চান নিশাত রিক এবং নীরব দুই জনকে ছ্যাকা দিবে, এবং নিজেও কষ্ট পাবে। তিনি চাইছেন টোটাল ছ্যাকা টু দি পাওয়ার ইনফিনিটি।
শাহী ভাই মাঝে মাঝে আমার কাছে মেসেজ করে গল্পের অগ্রগতি জানতে চাইতেন, যখন তাকে বললাম শেষে ছ্যাকা চাইছে ত্রিনিত্রি আপু তিনি বললেন, “ত্রিনিত্রি এমন ক্যা? ওরে মাইর দেয়া লাগবে। ছ্যাকা কেন (হতাশার ইম)? “ আমি শাহী ভাইকে আশ্বস্ত করলাম যে ছ্যাকা হবে না, মিলিয়ে দেয়া হবে, কিন্তু আমারো মনে হলো ছ্যাকা হলেই গল্পটা পরিপূর্ণ হবে, যদি মিলিয়ে দেয়া হয় তাহলে আমাদের মূলনীতি বাস্তবতা অবজ্ঞা করে নাটকীয়তার আশ্রয় নেয়া হবে। শেষে আমরা ছ্যাকা নিলাম গল্পের এন্ডিং হিসেবে, কিন্তু এন্ডিংটায় ছ্যাকার চেয়ে বেশী রিক, নিশাত, এবং নীরব নামের চরিত্রের সমস্ত বিষাদ ঢেলে দিতে চেয়েছি।
নীরব ভাই এবং ত্রিনিত্রি আপুর সাথে আগে থেকেই খুব ভালো রিলেশন ছিল। এই গল্পটি লেখার বদৌলতে তাদের দুজনের মত ইন্টেরেস্টিং দুটি চরিত্রের সাথে খুব ভালো পরিচিত হতে পেরেছি।
অবশ্য নীরব ভাইয়ের সাথে অনেক আগে থেকেই রিলেশন খুব ভালো। প্রথমে ব্লগে তার প্র পিক দেখে ভাবলাম বাচ্চা পোলা লিখতে আসছে মনে হয়, কিন্তু পরে দেখলাম তিনি আমার থেকে ভালোই সিনিয়র। যাইহোক, তার সাথে এতই বেশী কথা হয় যে, আমি যদি নাও বলি আমার মন খারাপ তিনি বুঝে ফেলেন। আর ত্রিনিত্রি আপুর কথা কি বলবো, সেরা আপুদের মধ্যেও সেরা। অসম্ভব ফ্রাঙ্ক এবং আড্ডাপ্রিয়।
আমি প্রচুর বানানে মিসটেক করি। ত্রিনিত্রি আপু নিজেই সেইগুলো কারেকশন করে পাঠিয়ে দিতেন। আমার কোথাও কোন এডিট লাগলে ত্রিনিত্রি আপু এডিট করে দিয়েছেন। আসলে নীরব ভাই এবং ত্রিনিত্রি আপুর মত চমৎকার দুইজন সহলেখক পাওয়াতে এমন একটি গল্প আজ আমরা দাঁড় করাতে পেরেছি। আমি কৃতজ্ঞ দুইজনের কাছেই এত স্নেহ করার জন্য।
শুভকামনা এবং খুব সুন্দর ভবিষ্যৎ কামনা করছি আপনাদের জন্য।
নীরব ভাই এবং ত্রিনিত্রি আপু- গল্পে আমার লেখা অংশটুক আপনাদের দুজন কে-ই ডেডিকেট করছি। আর আমাদের এই গল্পটি সামহোয়্যারইন ব্লগের সকল পাঠককে ডেডিকেট করছি।
আমাদের গল্পের একটি ই-বুক ভার্শন করা হয়েছে। কেউ যদি গল্পটির একটি সম্মিলিত ভার্শন নিজের কাছে রাখতে চান তবে ডাউনলোড করতে পারেন।
ই-বুকটির বিশেষত্ব হলো সেটা উপন্যাস এবং গল্প দুই ভাবেই পাঠক নিতে পারবে।
কফিশপ- ই বুক ডাউনলোড লিন্ক।
আমাদের সাথে থাকায় সকল ব্লগার এবং পাঠক কে অনেক অনেক ধন্যবাদ। সম্মিলিত কিংবা সিন্ডিকেট ব্লগিং যাই বলা হোক, ভালো কিছু দিতে পেরেছি সেটাই আমাদের কাছে আনন্দের। শুভকামনা সবার জন্য।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।