আকাশ ভরা গাঙচিল কফিশপ (তৃতীয় পর্ব)
আলো আঁধারি
রাত তিনটা। এখনো ঘুমাইনি। সকালে অফিস তবুও ঘুমাইনি। এই না ঘুমিয়ে থাকা ইচ্ছাকৃত নয়। গত চার মাস যাবত আমার এই নির্ঘুম রাত্রি জাগরণ।
শুধু রাত্রি নয় দিবস জাগরণও বলা যায়। কোন ভাবেই ঘুম আসে না আমার। নির্দিষ্ট কিছুর দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকি। উদ্দেশ্য চোখে ক্লান্তি সৃষ্টি করা। চোখের পাতা ভারি করা।
তারপর একসময় ঘুমের রাজ্যে তলিয়ে যাওয়া। কিন্তু কোন লাভ হয়নি। ঘুম ধরা দেয়নি। খুব বেশি কথা বলতাম তখন নিজের সাথে। রাত্রি দিন বোঝাপড়া করতাম।
ঝগড়া করতাম। রাগের আতিশয্যে চেয়ার টেবিল ছুড়ে মারতাম। একটার পর একটা দিয়াশলাইয়ের কাঠি জ্বালাতাম। তাতে না কি রাগ কমে। রাগ কমেনি বরং বেড়েছে যখন নিশাতের নির্লিপ্ততা ক্রমশ বেড়ে গেছে।
নিজেকে খুব অপমানিত মনে হতো। প্রকৃতির দুষ্টচক্রে প্রতিনিয়ত হেরে যাওয়া এই আমি নীরব শুধু প্রকৃতির সাথেই অভিমানে বুঁদ হয়ে থাকতাম। কাউকে বলতে পারতাম না আমাকে এক গ্লাস ঠাণ্ডা জল এনে দাও। পরম আদরে এনে দেয়া এক গ্লাস বিষও আমি অমৃত ভেবে খেয়ে নিতাম। প্রত্যাশা শুধু এ টুকুই ছিল কেউ একজন পাশে থাকুক।
ঠাণ্ডা জল না হোক এক গ্লাস বিষ অন্তত এনে দিক। ছিল না কেউ। থাকার কথা দিয়েও হারিয়ে গেছে কেউ আর কেউ পাশে থাকতে চাওয়ার আকুলতাকে নিস্তব্ধতার আড়ালে ঢেকে রেখেছে। তাই আজ আর কোন কথা দেয়ায় বিশ্বাস নেই আমার। বিশ্বাস নেই কোন নীরবতাকে সম্মতি মনে করে শারদ রোদে শুভ্র মেঘের বুকে রঙ্গিন ঘুড়ি উড়ানোর।
রাতগুলো দিনগুলো তাই আমার কাছে এক রঙের কাগজের ঘুড়ি। সুতো নেই, নাটাই নেই শুধু ছেঁড়া ঘুড়ি পড়ে আছে আমার শূন্য ঘরে।
ক্যাফে মেঙ্গোতে নিশাত আর আমার দেখা হওয়ার চার মাস পেরিয়ে গেছে। এই চার মাসে প্রায় প্রতিদিনই আমি অফিস শেষ করে ক্যাফেতে গিয়েছি। নেটবুক খুলে বসে থেকেছি।
কবিতা লিখেছি অসংখ্য। রোদেলাকে নিয়ে লেখা স্মৃতিগুলো দিয়েছি 'পানকৌড়িতে'। সম্পাদক সাহেব বিশেষ যত্ন নিয়ে সেগুলো ধারাবাহিক উপন্যাস আকারে প্রতি মাসে ছাপছেন। সম্পাদক নিয়ামুল হোসেন বেশ ভাল বন্ধু হয়ে গেছেন। প্রায় সময় অফিসে যেতে বলেন।
সবসময় যাওয়া হয় না তবে গেলে উনার জন্য নতুন কিছু না কিছু লেখা নিয়ে যেতে হয়। উনি খুব আগ্রহ নিয়ে কবিতা পড়েন। সম্পাদক সাহেবের বদৌলতে প্রতিমাসেই একটা করে কবিতা বের হচ্ছে 'পানকৌড়ি' থেকে। তিনি সেদিন একটা পরিসংখ্যানও দেখালেন কিভাবে দিন দিন পানকৌড়ির সার্কুলেশন উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। নতুন নতুন কবি সাহিত্যিকরা লেখা পাঠাচ্ছেন।
চিঠিপত্র কলামে নিয়মিত চিঠি আসছে যেখানে আমার কবিতা নিয়ে অনেক আলোচলা, বিশ্লেষণ থাকছে।
দেখা হলেই সম্পাদক সাহেব কবিতার বই বের করার তাগাদা দেন। আমি লজ্জায় কোন কথা বলতে পারি না। লেখালেখি করি ঠিক আছে কিন্তু বই বের করার কথা ভাবিনি কখনো। আর আমার বই পড়বেই বা কে?
সম্পাদক সাহেব স্মিত হেসে বলেন, ‘আপনি শুধু অনুমতি দেন আমরাই ছাপবো আপনার কবিতার বই’।
দীর্ঘ দিনের রাত্রি জাগরণের কারণে আমার চোখে মুখে একটা ক্লান্তি ফুটে উঠেছে যেটা আমি নিজেও বুঝতে পাড়ছি। সম্পাদক সাহেব সেদিন বলেই দিলেন, ‘কবি সাহেব, চোখে মুখে এতো বিষণ্ণতা কেন? এই বার একটা বিয়ে করুন। অনেক দিন তো কোন বিয়ের দাওয়াত পাচ্ছি না’।
এ কথা বলেই তিনি ঘর কাঁপিয়ে হো হো করে হাসতে লাগলেন। বেশ হাসিখুশি আর মন ভুলো মনের মানুষ তিনি।
হাসা শেষ হলে ভুলেই গেলেন একটু আগে কি জানতে চেয়েছিলেন।
ক্যাফে মেঙ্গোর গত চার মাসের অপেক্ষা শেষ হয়েছিলো সেদিন ফুলার রোডে। একটু সময়ের জন্য নিশাতকে দেখলাম। সময়ের হিসাবে ১০ সেকেন্ড হবে হয়তো। এই ১০ সেকেন্ডেই যেন কতো কথা বলা হয়ে গেল।
দীর্ঘ দিনের ক্লান্তিকর অপেক্ষা শেষ হল। এই তৃষিত চোখে হঠাৎ রাজ্য জুড়ে ঘুম চলে এলো। গত চার মাসে ৪/৫ দিন পর পর দিন রাত মিলিয়ে ৩/৪ ঘণ্টা ঘুমিয়েছি। সেখানেও বিশৃঙ্খলা। ভাঙ্গা ভাঙ্গা ঘুম, আহ তবুও তো ঘুম!!!
আমি অফিস শেষে গাড়িতে করে বাড়ি ফিরছি।
আজ ক্যাফেতে না যাওয়ার প্ল্যান। গাড়ি ফুলার রোডে ঢুকতেই নিশাতের চোখে আটকা পড়লাম। কিছুক্ষণ তবুও অনেক প্রশান্তি। নিশাত চোখ সরিয়ে নিলো। আমিও অনেক দূর এগিয়ে এসেছি।
পেছনে তাকিয়ে দেখি নিশাত গট গট করে হেঁটে চলে যাচ্ছে। সেদিনের ঘটনায় যতোটা না বেশি কষ্ট পাচ্ছি নিজেকে প্রত্যাহিত হতে দেখে তার চেয়ে বেশি হীনমন্যতায় ভুগছি নিশাতের চোখে আমার প্রতি বিরক্তির দেখা পেয়ে। এটাও সত্য নিশাতের প্রতি আমার চাওয়াটা ভুল কোন চাওয়া ছিল না। নিশাতের নির্লিপ্ততা দেখে খুব বেশি অপরাধী মনে হচ্ছে নিজেকে।
২.
বছর খানেক পরের ঘটনা।
পানকৌড়িতে লেখা আমার উপন্যাস ‘অপেক্ষা’র শেষ পর্ব প্রকাশিত হয়েছে। পাঠক খুব ভাল ভাবে গ্রহণ করেছে উপন্যাস ‘অপেক্ষা’।
আমার ঠিকানায় পাঠকের অনেক চিঠি আসে। মেইল আসে। সে সব চিঠি মেইলে ‘অপেক্ষা’র ঘটনা প্রবাহের মাঝে পাঠক নিজেকে দাঁড় করিয়ে ভেবে নিয়েছেন এই উপন্যাস তারই জীবন কাহিনী।
এমনই অসংখ্য মেইলের জবাব দিয়েছি। তবে একটা মেইলে শুধু এ টুকু লেখা ছিল- সত্যি কি এই নগরে অষ্টপ্রহর প্রেম থাকে না?
মেইলকারি একজন পাঠিকা। মেইল আইডি অস্পষ্ট তবুও চিনতে বাকি রইলো না পাঠিকা কে হতে পারে। উত্তর দিলাম, রোদেলা আজ এতো দিন পর? কেমন আছো?
খুব স্বাভাবিক একটা রিপ্লে পেলাম, কাল কি ক্যাফে মেঙ্গোতে আমরা দেখা করতে পারি?
পাঁচ বছরেরও বেশি সময় পরে রোদেলার সাথে দেখা হবে। সে কি আগের মতোই আছে? এতো দিন পর আমাকে দেখে সে কি করবে? হাসবে? না কি লুকিয়ে চোখের অশ্রু মুছবে?
আমারা দেখা করবো বলে ঠিক করলাম।
শুক্রবার বিকেল ৫ টা। আমি ক্যাফে মেঙ্গোতে আমার বসে থাকার জায়গায় বসে আছি। আমার সামনে নেটবুক। কফিতে চুমুক দিতে গিয়ে দেখি রোদেলা ক্যাফেতে ঢুকছে। জলপাই রঙের একটা শাড়ি পড়েছে।
মাথার চুল খুলে রেখেছে। একটা চিকন রজনীগন্ধার মালা ঝুলিয়ে রেখেছে ঘাড়ে। হাতে কিছু লাল গোলাপ নিয়ে কফিশপের এদিক ওদিক আমাকেই খুঁজছে। কি অপূর্ব সুন্দর। রোদেলাকে ডাকতে ইচ্ছে করছে না।
মনে হচ্ছে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখি রোদেলা আমাকে খুঁজছে। খুঁজে খুঁজে না পেয়ে ক্লান্ত হয়ে বসে পড়েছে আমারই পাশের টেবিলে যেখানটায় নিশাত তার বয়ফ্রেন্ডকে নিয়ে বসে থাকত।
রোদেলা আমাকে দেখেছে। খুব ধীর পায়ে আমার দিকে এগিয়ে আসছে। আমি তাকাতে পাড়ছি না ওর দিকে।
আমার চোখে জ্বালা করছে। এতো সুন্দর করে তোমাকে সৃষ্টি করার কি আবশ্যকতা ছিল সৃষ্টিকর্তার?
কেমন আছো নীরব? স্নিগ্ধ হেসে কথাটা বলেই খুব পরিচিতের মতো বসে পড়লো আমার সামনের চেয়ারে। হাত ভর্তি গোলাপ এগিয়ে দিল আমার দিকে। আমি হাত বাড়িয়ে রোদেলার ভালবাসা গ্রহণ করলাম। রক্তিম আলোয় আমরা আবারো হারিয়ে গেলাম আমাদের ফেলে আসা সময়ের প্রতিটি মুহূর্তে।
আমি একটু দ্বিধান্বিত। কি বলব, কি বলা উচিত। এতো পুরনো মানুষের সাথে এতো দীর্ঘ সময় পরে দেখা হলে আগের সেই আন্তরিকতার রঙ বদলে যায়। তবে রোদেলা ঠিক আগের মতোই আছে। আমাকে নিশ্চুপ দেখে এই তো ঠিক আগের মতো বিরক্তি নিয়ে চোখ ছোট করে তাকিয়ে আছে আমার দিকে।
নীরব, তোমার ‘অপেক্ষা’ আমি পড়েছি খুব মন দিয়ে। কখনোই ভাবিনি তুমি আমাকে এতোটা মিস করো। এতোটা ভালবাস।
তোমার ফিরে আসার জন্য কি আমার এই ‘অপেক্ষা’ই প্রয়োজন ছিল না কি তোমার প্রতি আমার ভালবাসাই মুখ্য ছিল?
ভালবাসা না থাকলে এই ‘অপেক্ষা’ রচিত হতো না নীরব।
রোদেলার কথায় আকুতি দেখে দমে গেলাম।
অযথাই কেনই বা এই দূরে যাওয়া? সময়ের ভালবাসাকে আজ কেন অসময়ে মূল্য দেয়া? আজ কি আমি তোমাকে আগের মতো ভালবাসতে পারব?
একসময় মনে হয়েছিলো তুমি আমাকে ভালবাস না নীরব। আমি প্রতিদিন অপেক্ষায় থেকেছি। তুমি আমার খোঁজ নাওনি। কথা বলনি। আমি খুব বেশি হাসিখুশি এটা তুমি জানো।
অনেকেই আমার কাছে এসেছে কিন্তু সবাই কোন উদ্দেশ্য নিয়েই এসেছে একমাত্র তুমি ছাড়া। ভুল করেছি যখন আজ ক্ষমা আমাকে চাইতেই হবে।
সব কিছু যেন ঘুমের ঘোরে ঘটে যাচ্ছে। আমি জানি না রোদেলা কি বলছে। এই ৫ বছরে কি সে বিয়ে করেনি? করে থাকবে নিশ্চয়ই তবে আজ এতো কথা কেন বলতে এসেছে।
হতভম্বের মতো বলেই ফেললাম, তোমার হাজব্যান্ড কোথায়? কি করেন উনি?
অট্টহাসিতে ফেটে পড়লো রোদেলা। রোদেলার হাসির ঝির ঝির শব্দে হৃদয়ের খুব গভীরে একটা চিকন ব্যাথার অস্তিত্ব টের পাচ্ছি।
হাসি থামিয়ে রোদেলা বলল, আমাকে কেউ কবিতায় কবিতায় ভালবাসুক এই আশায় এখনো বিয়ে করিনি।
এ কথা বলেই আমার নিঃসাড় হাতের উপর হাত রাখল রোদেলা। কতো পুরনো এ স্পর্শ! কি করে ভুলে যাই আমি?
৩.
রোদেলার সাথে সংসার জীবন আমার ৮ বছরের।
একদিনও মনে হয়নি আমরা এক সময় পরস্পর কাছাকাছি বসে থাকতাম নির্দিষ্ট কিছু অভ্যাসে। যে জীবন কিছু নির্জনতা কাটিয়ে এসেছে সে জীবনের রঙ্গিন কিছু সকাল প্রত্যাশিত। এর ব্যতিক্রম হওয়া সুখের নয়। আমরা সুখে আছি। হাসিতে আছি।
আমাদের এই অনাবিল আনন্দে মাত্রা দিয়েছে আমাদের ছোটো ঋসব। প্রথম ডাক থেকে শুরু করে বাবুর হাটিহাটি পা পা করে আমাদের ঘরময় ঘুরে বেড়ান, আধো আধো বলে রাজ্যের কথা বলার চেষ্টা এক স্বর্গীয় সুখে ছায়া দিয়ে রেখেছে আমাদেরকে। আমরা ভাল আছি। পুরনো জীর্ণতা দেখে ভয়ে কাঁপন জাগানো সময়ে শূন্য হাত ধরার কোন এক জনের অপেক্ষায় যে দীর্ঘ দিবস রজনী কুরে কুরে খেয়েছে আমাদের, ভোরের আলোর স্নিগ্ধতায় আমরা ভুলে গেছি সময়ের সে সব বিষাক্ত নখ দংশনের যন্ত্রণা। আমরা ভাল থাকার জন্য ভাল থেকেছি একসময় আর আজ আমরা ভাল আছি পরস্পরকে ভালবেসে।
চাকরি ছেড়ে দিয়ে নিজেই একটা ফার্ম করেছি। বেশ ভাল চলছে। রোদেলাও মাঝেমাঝে অফিসে সময় দেয়। পানকৌড়ির গণ্ডি পেরিয়ে আমার লেখা কবিতা দেশের অন্যান্য পত্রিকা, ম্যাগাজিনেও ছাপা হচ্ছে। বেশ লাগে ভাবতে।
কখনো কখনো নিজেকেই হিংসে করতে ইচ্ছে হয়।
সেদিন অফিসের ঠিকানায় একটা বিয়ের কার্ড এলো। রোদেলার নাম লিখা কার্ডে। রাতে রোদেলার হাতে কার্ড হস্তগত করতেই জানা গেল তার কাজিনের বিয়ে এবং আমাকে যেতেই হবে। আগামীকাল বিয়ে অথচ আগামীকালই কানাডা থেকে কিছু লোক আসবে অফিসে।
যদিও অফিসের সিইও তাদের রিসিপ্সনের জন্য আছেন তবুও মিটিঙে আমার উপস্থিতি খুবই জরুরী। রোদেলাকে না করে দেয়ায় সে চুপ করে আমার সামনে থেকে চলে গেল। রোদেলার এই আচরণটা নতুন। আমার কাছে কোন বিষয়ে না শুনলে সে কোন প্রতিবাদ করে না। জোর খাটায় না তবে বিমর্ষ হয়।
রোদেলার এই বিমর্ষ থাকাটা একদম ভাল লাগে না আমার। বাধ্য হয়েই ওকে বললাম, হ্যাঁ আমি যাচ্ছি তোমার সাথে।
রোদেলার চোখে মুখে হঠাৎ আনন্দের ঝিলিক দেখা গেল। বলল, চা খাবে? চা করে নিয়ে আসি?
বিয়ের আসর। মস্ত বড় ষ্টেজ সাজানো হয়েছে।
আলোকসজ্জা চোখে পড়ার মতো। রোদেলা আমাকে নিয়ে গিয়ে পরিচয় করিয়ে দিল তার কাজিন তিথির হবু বর রিকের সাথে। চেহারাটা অনেক চেনা। বিয়ের পোষাকে রিককে দেখে বোঝার কোন উপায় নেই যে, এই সে রিক, যার জন্য নিশাত কফিশপে একা একা বসে থাকত আর মাঝে মাঝে চোখের জল ফেলত। আচমকা প্রশ্নটা আমার ভেতর এলোমেলো করে দিল।
নিশাত কোথায় তাহলে? তবে কি রিকের জন্য নিশাতের অপেক্ষায় থাকতে দেখে নিশাতকে উদ্দেশ্য করে বলা আমার কথাটা সত্যি হয়ে গেল? নিশাত কি রিকের জন্যই অপেক্ষা করে আছে? যেমনটা ভেবেছিলাম রিক আর নিশাতকে কফিশপে প্রথম দেখার পর!
রিক হাত বাড়িয়ে দিল। বলল, হাই, অ্যাম রিক।
আমি নীরব।
'আপনাকে কোথাও হয়ত আগে দেখেছি নীরব সাহেব' কথাটি বলে উত্তরের আশায় আমার দিকে চেয়ে রইলো রিক।
এই প্রশ্ন আমিও করতে পারতাম কিন্তু সে কথা এড়িয়ে গেলাম।
কোন আবশ্যকতা নেই এই আনন্দের দিনে পুরনো কথা রিককে মনে করিয়ে দেয়ার। বেশ কাব্য করেই বললাম, পৃথিবীটা ছোট হয়ে আসছে, হয়ত জীবনের কোন সফরে দেখা হয়েছিল, বাই দ্যা ওয়ে কেমন আছেন আপনি?
'ভালো, অনেক ভালো। আপনি কিন্তু বেশ কাব্যিক ধরনের মানুষ, রোদেলা আপু তো ঠিক আপনার বিপরীত, বেশ চঞ্চল দেখছি তাকে। '
এই তো আগের রিক। কথাবার্তায় একটু বেশি আন্তরিকতার ছাপ অথচ মনে দুরন্তপনা।
বললাম, হুম, আমার শ্যালিকাও কিন্তু আপনার মত ছটফটে। আপনাদের জমবে ভালো।
বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হতে দেরি নেই। আমাদের বাবু ঋসব হাত ধরে টানাটানি করছে। সে এখানে থাকবে না।
তার মার কাছেও যাবে না। আমাকে কোলে নিতে বলছে আর খুব মিষ্টি করে বলছে, বাবা এখানে এতো আলো কেন? আমি আলো ধরব।
ঋসবের কথা শুনে অবাক হলাম। এই শিশুরা অনেক গুরুত্ব পূর্ণ কথা বলে। আমরা বড়রা প্রায়ই যা বুঝতে পারি না।
ঋসবকে কিভাবে বোঝাই বাবা সবাই আলোর অভিযাত্রী। আমাদের অন্ধকারেই বসবাস কিন্তু এই আলো পেলে আমরা অন্ধকারের কথা ভুলে যাই।
কোথায় আছে নিশাত? সেদিন নিশাত আমাকে একা রেখে কফিশপ থেকে চলে গেছে। কোন উত্তর জানায় নি। আমিও নিশাতের সামনে দাঁড়ানোর সুযোগ কিংবা সাহস পাইনি।
নিশাত কি এখনো রিকের জন্যই অপেক্ষা করছে? সে কি আমাকে ক্ষমা করে দিয়েছে? না কি এসব কিছুই ঘটেনি। নিশাত নিজের মতো করে সাজিয়ে নিয়েছে নিজের জীবন। এক জীবনে মানুষ কি কারো জন্য শুধু অপেক্ষা করে কাটিয়ে দিতে পারে? হয়তো পারে না।
ঋসবের কথায় তাকিয়ে দেখি সে আমার হাত ধরে টানছে আর বলছে, বাবা আমি আলো ধরব।
রোদেলা ঋসবকে আমার কোলে তুলে দিয়ে বলল, যাও না ওকে একটু ঘুড়িয়ে নিয়ে এসো।
ঋসবকে কোলে নিয়ে সামনে এগিয়ে গেলাম। ঋসব আলো ধরবে। আমরা সবাই আলো ধরতে চাই। বিভিন্ন রঙ্গের মিশেলে এক আলো, এক জীবন।
তুমি হয়তো বদলে যাও নি
বদলে গেছে আকাশের রঙ
একই আকাশে বিভিন্ন রঙ
বিভিন্ন রঙ মিলে তুমিই আলো...
নিশাতের কথাঃ চেনা অচেনা নির্লিপ্ততা...
রিকের কথাঃ সূর্যাস্তে ভালোবাসার রোদন।
...
প্রচ্ছদঃ বোকা ছেলে ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।