বিশ্বটাকে সুন্দর করে সাজানোর জন্যই এত কথা বলি.. ।
'ছোট বেলার কথা'-পড়াশুনা,খেলা আর দুষ্টুমি করতে করতেই কেটে যেত সময়। সকাল থেকে ঘুমের আগ পর্যন্ত নিয়মিত রুটিন কাজ। হঠাৎ করেই গ্রাম থেকে শহরে চলে এলাম পরিবারের সবাই। না একেবারেই হঠাৎ করে নই।
অনেক ভেবে, চিন্তা করে। আমাদের পড়াশুনার ভালর জন্য শহরের নামি স্কুলে ভাল পরিবেশে পড়ার জন্য চলে আসা।
খুব কঠিন আমার জীবনের সেই সব দিনগুলো। নিজের শৈশবের বন্ধুদের ফেলে আসা,নিজের মত আকাশে উড়ার সেই সব দিন গুলো মনে পড়তো। তাই সপ্তাহে একদিন চলে যেতাম গ্রামে।
সারাদিন কাটিয়ে আবার চলে আসতাম।
কিছু দিনের মাঝেই নতুন বন্ধু পেয়ে গেলাম। বাসার কাছেই বাসা তাই ঘনিষ্ট হতে সময় লাগে নি। তিন জন মেয়ে বন্ধু আর দুইজন ছেলে বন্ধু পেয়ে যারপরনায় খুশি। একসাথে সবাই স্কুলে যেতাম আর পড়াশুনা খেলাধুলা করে সময় কাটাতাম।
ক্রিকেট খেলছিলাম বন্ধুদের সাথে একদিন বাসার পিছনে,কোথ থেকে যেন একটি মেয়ে এসে একেবারে ব্যাটের সামনে পরলো! খেলা থামিয়ে দিতে হল। অদ্ভুত চাহুনি আর নরম কন্ঠ শুনে কি যেন হয়ে গেল মনের ভিতরে। যদিও তখন এত কিছু বুঝতাম না বা বুঝিনি!
পাশেই ছিল সুবিশাল বাগান। যেখানে অনেক ফুল,বিশেষ করে গোলাপ। তার একটি ফুল খুব ভাল লেগেছে কিন্তু আনতে পারছে না।
ভয়ে! কারণ সেই বাগানের মালিকের অবস্থান গল্পের সেই দৈত্যের মতই ভয়াবহ। কাওকে ফুল নিতে দেয় না। কি করা, বুঝার আগেই টুপ করে বাগানে ঢুকে গেলাম আর সেই ফুলটি নিয়ে এলাম আমার মনের ভিতরে অদ্ভুত আবেগ সৃষ্টি করা একজনের জন্য।
কিভাবে কি হয়ে গেল বুঝতেই পারলাম না। সবাই হা করে আমার দিকে যখন তাকিয়ে ছিল তখন আমি ধরায় আসলাম।
মেয়েটি ফুল নিয়ে চলে গেল। কিছুই বললো না!
জানতে পারলাম মেয়েটি আমাদেরই আত্বীয়। আমার থেকে দুই ক্লাস নিচে পড়ে। আর নাম নাবিলা হাসান। বাসা আমার বাসার কাছেই।
প্রায় দিন বসে থাকতাম মেয়েটিকে দেখার জন্য। কেন আমি নিজেও জানি না। স্কুল থেকে আসতাম,খেয়ে দেয়ে খেলতাম। একদিন ওদের বাসায় গিয়েছিলাম আমার বোনের সাথে। পরিচিত হয়ে আসলাম।
বাসার কাছেই নদী তাই বিকেলে ঘুরতে যেতাম মাঝে মাঝেই। ও যেত ওর ছোট ভাইকে নিয়ে। আমরা একসাথে খেলতাম কানামাছি আর গুল্লাছুট। অনেক ভাল লাগত তার মুখের মিষ্টি কথা গুলো। যেন মুখস্ত করা বুলি আওরাচ্ছে পাখি।
একদিনের ঘটনা। মা আমার হাতে কিছু পিঠা দিয়ে আমাকে বললো,ওদের বাসার কাছেই অন্য এক আত্বীয়ের বাসায় দিয়ে আসতে। আমি আচ্ছা বলে-
ওর বাসায় পিঠা দিয়ে আসলাম! ওদের বাসায় পিঠা দেয়ার পর মনে পরলো যে পিঠা মা তাদের বাসার পাশেই অন্য আত্বীয়কে দিতে বলেছিলেন!কি আর করা তাদের কাছে তো আরা আমি পিঠা ফিরত চাইতে পারি না! তাই চলে আসলাম বাসায় আর মিথ্যা বললাম যে পিঠা দিয়ে এসেছি।
কি থেকে যেন কি হয়ে যাচ্ছিল সব দিকে। মনোযোগ কমে গেল।
কিন্তু বুঝতে পারছিলাম না কিছুই।
আরো একদিন আমার ব্যাগের সব রঙিন কলম ওকে দিয়ে স্কুলে স্যারের হাতে কলম না আনার জন্য খেলাম পিটুনী।
প্রতিদিন অপেক্ষায় থাকতাম ওকে দেখার জন্য। নদীর পাড়ে হাটতাম বিকেল বেলা। বসে থাকতাম পড়ার টেবিলে গল্পে মশগুল হয়ে।
বুঝতে পারছিলাম বড় হওয়া এটাকেই বলে। নিজের বড় হওয়াটা অনুভব করে নিজেকে নিয়ে গর্ববোধ করতাম। সবকিছুই ভাল লাগতো। গ্রামে যাওয়া কমে গেল। পড়ার সময় পড়তাম আর অন্য সময় ভাবতাম।
ভাবনার জগতে দোল খেতাম আর পাখি হয়ে উড়ে যেতাম। কিন্তু প্রায় ১ বছর পর কিভাবে যেন আমি তাকে হারিয়ে ফেললাম!সেই উচ্ছলতা নেই আর আমাদের মাঝে। নেই ভাললাগার অদ্ভুত শিহরণ। নাবিলাকে নিয়ে একটি কবিতা লেখেছিলাম-
ফুল আর পাখি তুমি আর আমি সাথী
ভুল করে যেওনা ভুলে পাশাপাশি যেন থাকি।
পরর্বতীতে এই কবিতাটি যেন উল্টে গেল!
‘’তুমি আর আমি নই ফুল আর পাখি
সারাক্ষণ যেন ভুল করে হলেও দুরে থাকি’’
কেউ কাওকে আর তেমন পাশে পেতাম না।
হঠাৎ করেই সব পরির্বতন হয়ে গেল। কেন?
কিছুই বুঝলাম না। আর ভাবতেও চাইতাম না। মনে হচ্ছিল স্বপ্ন শেষ! ঘুম থেকে উঠে স্কুলে যাওয়ার জন্য তৈরি হতে হবে। সব কিছু আবার আগেও মতই হয়ে গেল।
নাবিলার বাবা বাসা নিয়ে চলে গেল অনেক দুরে,নতুন অফিসে,নতুন স্থানে। সেখানে হইতো তার অনেক বন্ধু হবে। কিন্তু আমার মত পাবেনা কাউকে নিশ্চয়!
বিমান বন্দরে হাটছিলাম । ইমিগ্রেশনের জন্য অপেক্ষা করছিলাম, কে যেন ডাকলো। তাকিয়ে ঠিকই চিনতে পারলাম।
১১ বছর পর! অনেক বদলে গিয়েছে। সেই পাখির বুলি আর নেই,আইস ক্রিমের মত নরম প্রান্জল লাগছিল ঠিকই। আমাকে বললো-
কেমন আছেন রণক?
অবাক হয়ে গেলাম আপনি ডাক শুনে! ইতস্তত করেই বললাম ‘ভাল আছি’
আপনি কেমন আছেন? নিজের মুখ দিয়ে ওকে আপনি করে ডেকে নিজেকেই অপরিচিত লাগছিল আর অবাক হয়ে গেলাম মানুষের মনের কারিশমা দেখে। কি অদ্বুত আমরা। এভাবেই সব স্মৃতি ভুলে যাচ্ছি নিয়মিত।
আর পুরোনো পাখির মুখে নতুন বুলি শুনে বিস্মিত হয়ে বসে আছি বিমান বন্দরে।
কিছুক্ষণের মাঝেই যান্ত্রিক পাখির ডানায় চড়ে পাড়ি জমাবো সুইডেনে। আর আমার ছোট বেলার পাখি-যাকে ছোটবেলায় বিদায় দিতে পারিনি তাকে সিংগাপুর যাবার জন্য অপেক্ষায় থাকা ‘বরের’ সাথে, বলতে হচ্ছে-
‘ভাল থাকবেন নাবিলা’।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।