নিপুণ লেখনীর শানিত গর্জন / লিখব আজ নিপুণ কথন ছোটবেলার গল্প করি না অনেকদিন । আমার ছোটবেলা এমনই এক ছোটবেলা, যেটা নিয়ে লিখতে বসলে শেষ করাটা হবে নিতান্তই ব্যর্থ চেষ্টা!
আমি যখন স্কুলে পরতাম, তখন কোন কিছুই নিজের পছন্দে কিনতাম না । সবসময়ই বাবার পছন্দই আমার পছন্দ ছিল । বাবা না চাইতেই সব এনে দিতো, নিজের হাজার সীমাবদ্ধতা সত্বেও । আমিও একান্ত বাধ্য ছেলে ছিলাম ।
বাবা যা বলতো, তাই ছিল শিরোধার্য । পূজার জামা-কাপড়েও বাবার পছন্দই আমার পছন্দ ছিল । অবাক হই এখন এই ভেবে যে, বাবা যে জামাটা নিয়ে এসে বলতো- "দেবু, এই জামাটা কেমন হয়েছে দেখতো । এটায় তোরে মানাবে ভালো। ", আমি সেটাতেই নিজেকে সুন্দর দেখতাম ।
এর সবচেয়ে বড় কারণ, আমি বাবার ভক্ত ছিলাম । বাবার ছিল কবি ও সাহিত্যিক, শিল্পী- এককথায় সুন্দরের পূজারী । তাঁর পছন্দের সাথে দ্বিমত করার কারণ আমি কিছুতেই খুঁজে বের করতে পারতাম না । তাই, এটা জেনেই বাবা যখন যেমন সামর্থ্য থাকতো, তখন তেমন জামা-কাপড় কিনে আনতো । আর সেটা পড়েই আমি ঘুরতে বের হতাম ।
মুরুব্বিরা প্রশংসা করতো, বলতো- "বাবুদা, আপনার ছেলেটার মতো ছেলে পাওয়া যায় না আজকাল । আজকালকার ছেলেদের পোশাক দেখেছেন? কেমন একটা ইয়ো ভাব নিয়ে চলে!" বাবা গর্বের সাথে বলতো, "আমার দেবু সবসময় আমার পছন্দের মার্জিত জামা-কাপড় পড়ে । ও সবার থেকে আলাদা । "
নতুন জামা-কাপড়ের প্রতি আমার অন্যরকম একটা টান ছিল । নতুন কিছু পেলেই আমি সেটাকে রাতে ঘুমানোর সময় বালিশের পাশে রেখে ঘুমাতাম ।
অর্থাৎ, ঘুমের সময়টুকুও সেটাকে কাছে রাখতে চাইতাম । একবার হয়েছে কি, নতুন জুতা কিনে দিয়েছে বাবা । আমার তো বাতিক- জুতা পায় দিলাম না প্রথম দিন । যথারীতি পাদুকা মহারাজের স্থান হল আমার শিয়রে বালিশের পাশে! ওমা, সে কী ভোগান্তি! গন্ধে যে আর ঘুম আসে না! জুতার গন্ধ বলে কথা! শেষমেশ বাবা বুঝতে পেরে খাটের কাছে এসে বলেছিল, "বাবা, জুতাটা নাহয় আজকে পায়ের কাছেই রাখ! নাহলে তো ঘুমাতে পারবিনা!আর বিয়ের পর বউটাকেও এমন আদরে রাখিস!" বলেই বাবা-মা একচোট হেসে নিয়েছিল দুজন । আমিও লজ্জা পেয়ে করণীয় কাজটি সেরে তবেই ঘুমাতে পেরেছিলাম! ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।