জীবনটা যেন এক বর্ণীল প্রজাপতি
পর্ব-০১
পর্ব-০২
রিকশায় বসিয়া তরুণী রাস্তার দুই পার্শ্বের বাটীসমুহ ও কাঁচাবাজারের দৃশ্যাবলী অবলোকন করিতে করিতে চলিল। তাহার নিজ এলাকা। এইখানে তাহার জন্ম হইয়াছে। এইখানেই তাহার শিশুকাল হইতে তরুণীকাল পর্যন্ত জীবনকাল অতিবাহিত হইয়াছে।
বাড়ি হইতে পঞ্চাশ ভাগ পথ অতিক্রম করিবার পর তরুনীর মনে উদয় হইলো তাহার নিকট সকলই বিশাল নোটের কথা।
টাকা যে ভাংতি করিতে ভুলিয়া গিয়াছে তাহাও মনে পরিয়া গেলো। রিকশার ভাড়া প্রদান করা যে বিপদের হইবে তাহা লইয়া সে চিন্তিত হইয়া উঠিলো। এতক্ষণে নিজের এলাকা ছাড়িয়া বহুদূর আসিয়া পরিয়াছে। এইস্থানে কেহ তাহাকে চেনে না। এইক্ষণে একমাত্র উপায় থাকে যেইখানে যাইতেছে সেইস্থানে যদি ভাংতি মিলে।
অথবা যদি রিকশাওয়ালা অতখানি সময় সহ্য করিয়া দাঁড়াইয়া থাকে। তাহা না হইলে আজকে সম্মুখে মহা বিপদ হইবে। তাহা হউক, যখন উহা ঘটিবে তখনই দেখা যাইবে।
অতঃপর আবারো সে রাস্তার দুই পার্শ্বের দোকানপাট অবলোকন করিতে লাগিলো। এক্ষণে তাহার রিকশাযান ঢাকা শহরের বড় রাস্তায় আসিয়া উঠিয়াছে।
তাহাকে দেখিতে যে কোন দিবসে এক লম্বা সুপুরুষ যুবকের আগমনের কথা সে শুনিয়াছে। পাত্র নিজের দুইখানা ছবি পাঠাইয়াছে। সাথে পরিবারের সকলের বৃত্তান্ত। তরুণীর মাতার সহিত সেই পাত্র কয়েকবার কথাবার্তা বলিয়াছে। তাহার নিজের মাতা নাই।
দুই বৎসর পূর্বে তিনি তাহার নব্বই বৎসর অধিক বয়সী স্বামী ও এক পুত্র, এক কন্যা রাখিয়া গত হইয়াছেন। তাহাদের নিজেদের বাড়ি রহিয়াছে। পুরাতন ঢাকায়। পাত্র তাহার কনিষ্ঠ ভগ্নীর সম্প্রতি বিবাহ দিয়াছেন। পাইলটের সহিত।
ভগ্নী জামাতা এতদিন বাহিরে বাহিরে থাকিবার কারণে বধুকে নিজ বাটীতে লইয়া যান নাই। এইবার নিজের নিকটে লইয়া যাইতে চাহিতেছেন। বৃদ্ধ পিতার সার্বক্ষণিক দেখাশোনা ও পরিচর্যার হেতু উপস্থিত হইয়াছে। পাত্র মহোদয় সারাদিন চাকরীজনিত কারণে বাটীর বাহিরে অবস্থান করেন। সারাদিন পিতার সহিত একজন আপনার কেহ থাকিলে নিশ্চিন্ত হইতে পারেন বলিয়া এতদিনে তিনি বিবাহ করিতে ইচ্ছা পোষণ করিয়াছেন।
অথচ বিবাহ তাহার আরও কয়েক বৎসর পূর্বেই আবশ্যক হইয়াছিলো। কোন এক সুন্দরীর পাণি গ্রহণ করিতে চাহিয়াও সেই সুন্দরীর সম্মতি আদায় করিতে না পারিয়াই তাহার বোধকরি এইরকম বিবাহের বয়স অতিক্রান্ত হইতে চলিতেছে। এই গোপন খবর যাহার মাধ্যমে তরুণী ও তরুণীর মাতার কানে আসিয়াছে সে এক অন্য কাহিনী।
পাত্র চলতি সপ্তাহের রবিবার আসিবে বলিয়া কথা রাখিবার পরেও আসিতে পারে নাই। তরুণীর মাতা অদ্যাবধি অধীর আগ্রহে বসিয়া রহিয়াছেন।
যদিও তাহার কন্যার ধারনা হইয়াছে, তিনি আসিবেন না। কারণ হিসাবে যাহা মনে হইয়াছে; পাত্র ধবল কন্যা খুঁজিতেছেন বিবাহের জন্যে। সে তো ধবল নহে। তাহাকে সকলে ধবলের নিকটবর্তী শ্যামল কহিয়া থাকে। উজ্জ্বল বর্ণের শ্যামল বর্ণ তাহার।
এই কথা পাত্রকে তাহার মাতা কয়েকবার করিয়া বলিয়াছে।
মাতা কহিতেছে, “পাত্রকে তোমার গায়ের বর্ণের কথা কয়েকবার বলিয়াছি। তাহার পরেও পাত্র আসিতে চাহিয়াছে। আমি নিজ কর্ণে শ্রবণ করিয়াছি। সুতরাং পাত্র আসিবে।
“
মাতার এইরূপ কথার পরে তরুণীর বুঝিয়া লইয়াছে পাত্র তাহাকে তাহার আসল রূপে অবলোকন করিতেই বোধ করি নির্দিষ্ট করিয়া কোন দিন ধার্য করিয়া তাহাদিগকে জানাইতেছে না। তাহাকে তাইলে দেখিতে আসিবেই। যদি তাহাই করিবে বলিয়া পাত্র মনস্থির করিয়া থাকে, তাহা হইলে তাহাকেও তো পূর্ব প্রস্তুতি লইয়া রাখা কর্তব্য।
“দিদি, কোন পার্শ্বে থামিবো?” রিকশা গন্তব্যস্থলে আসিয়া পৌঁছিয়াছে।
“বাম পার্শ্বে রাখিতে পারেন।
আপনার নিকটে কি পাঁচশত টাকার ভাংতি হইবে?”
রিকশাওয়ালা না সূচক জবাব প্রদান করিলে তাহাকে কিয়দক্ষণ অপেক্ষা করিতে বলিয়া তরুণী সৌন্দর্য্য বাটীতে প্রবেশ করিলো। প্রবেশ করিয়াই লম্বা লম্বা লাইন দেখিতে পাইলো। “এই রে! সারিয়াছে! এই লম্বা লাইন পার হইয়া টাকা খুচরা হইতে হইতে যদি রিকশাওয়ালা অগ্নিশর্মা হইয়া ছুটিয়া আসে তাহা হইলেই সর্বনাশ হইয়া যাইবে। ” ভাবিয়া তরুণী লাইনে খাড়াইলো।
তাহার পরে, যতখানি দেরী হইবে বলিয়া ধারনা করিয়াছিলো ততখানি দেরী হইবার পূর্বেই তাহার কাজ সমাধা হইতেই সে ছুটিয়া গিয়া রিকশাওয়ালার পাওনা পরিশোধ করিয়া এই এতক্ষণে নিশ্চিন্ত হইতে পারিলো।
তাহার পরে তরুনী আবারো সৌন্দর্য্য বাটীতে প্রবেশ করিলো। মুখমন্ডল পরিস্কার করিবার কক্ষের দিকে আগাইয়া গিয়া কি কাজ করিতে আসিয়াছে বলিতেই ‘তাহাকে কয়েকজনের পরে ডাকিবে’ বলিয়া বসিতে বলা হইলো। সে অপেক্ষা করিতে লাগিলো।
(চলিবে...)
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।