জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল করে হাইকোর্টের রায় ঘোষণার পর পরই রাজধানীসহ সারা দেশে যানবাহনে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে বিক্ষোভ করেছে দলটির নেতা-কর্মীরা। গতকাল বেলা আড়াইটায় রায় ঘোষণার পর থেকে এসব হামলার ঘটনা ঘটে। এ ছাড়া হাইকোর্টের দেওয়া এ রায়ের প্রতিবাদে আগামী ১২ ও ১৩ আগস্ট ৪৮ ঘণ্টা লাগাতার হরতালেরও ডাক দিয়েছে জামায়াতে ইসলামী। দলের ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল রফিকুল ইসলাম খান গতকাল এক বিবৃতিতে এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন। সেই সঙ্গে আগামীকাল শনিবার দেশব্যাপী বিক্ষোভ কর্মসূচিও ঘোষণা করা হয়েছে।
বিবৃতিতে দলের ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল রফিকুল ইসলাম খান বলেন, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী দেশের প্রধান ইসলামী দল। সংবিধানের ৩৮ অনুচ্ছেদের অধীনে জামায়াত একটি রাজনৈতিক দল হিসেবে কাজ করার অধিকার রাখে। গতকাল রায় ঘোষণার পর রাজধানীতে জামায়াত-শিবিরের বিক্ষুব্ধ কর্মীরা লাঠিসোঁটা নিয়ে ঝটিকা মিছিল বের করেন। তারা ৩০-৩৫টি যানবাহনে হামলা চালান। এ সময় একটি গাড়িতে আগুন দেন।
বেশ কয়েকটি স্থানে বোমাবাজির ঘটনা ঘটে। রাজপথে বিকাল থেকে যানবাহন কমে যায়। আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে। ঈদের কেনাকাটা করতে যাওয়া লোকজন দ্রুত ঘরমুখো হতে থাকেন। সন্ধ্যার পর প্রায় ফাঁকা হয়ে যায় রাজধানী।
এদিকে, যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় সারা দেশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সতর্ক রাখা হয়েছে। সকাল থেকেই হাইকোর্টের চারপাশে কঠোর নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়া হয়। রায় ঘোষণার পর রাজধানীতে অতিরিক্ত পুলিশ ও র্যাব মোতায়েন করা হয়। চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশি চালানো হয় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে। পুলিশের সাঁজোয়া যান টহল দেয় রাজধানীর সড়কগুলোয়।
জানা গেছে, বেলা ৩টার পর থেকে রাজধানীর কমলাপুর, মগবাজার ও ধানমন্ডিসহ বিভিন্ন স্থানে ঝটিকা মিছিল করে জামায়াত। এ সময় ক্ষুব্ধ নেতা-কর্মীরা লাঠিসোঁটা নিয়ে গাড়ি ভাঙচুর করেন। রাস্তায় টায়ার জ্বালিয়ে আগুনসহ ককটেল ফাটিয়ে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করা হয়। প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, কমলাপুরে জামায়াত-শিবির মিছিল বের করলে পুলিশের সঙ্গে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে গাড়ি ভাঙচুরসহ রাস্তায় টায়ার জ্বালিয়ে আগুন দেয় জামায়াত-শিবির।
তবে এ ঘটনায় কাউকে আটক করতে পারেনি পুলিশ। বিকাল সোয়া ৪টার দিকে ধানমন্ডিতে তিনটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায় জামায়াত-শিবির। একই সময়ে মগবাজারে ঝটিকা মিছিল করে। এ সময় তারা রাস্তা অবরোধসহ গাড়ি ভাঙচুরের চেষ্টা করে। সন্ধ্যা সোয়া ৭টার দিকে যাত্রাবাড়ী ধোলাইপাড় এলাকায় ঝটিকা মিছিল করে জামায়াত-শিবির।
তারা রাস্তায় পেট্রল ঢেলে আগুন দেওয়াসহ কাঠের গুঁড়ি ফেলে অবরোধ করে। ক্ষুব্ধ নেতা-কর্মীরা ৪-৫টি গাড়ি ভাঙচুরসহ সিরাজদিখান নামে একটি পরিবহনে আগুন ধরিয়ে দেন। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পেঁৗছালে জামায়াত-শিবির নেতা-কর্মীরা পালিয়ে যান। ওয়ারী বিভাগের ডিসি ইলিয়াছ শরীফ জানান, ইফতারের সময় জামায়াত-শিবির ধোলাইপাড়ে গাড়ি ভাঙচুরসহ যাত্রীবাহী বাসে আগুন ধরিয়ে দেন। বিভিন্ন স্থান থেকে আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-
বগুড়া : জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিলের রায় ঘোষণার পর পরই সাতমাথা এলাকায় ঝটিকা মিছিল বের করে জামায়াত-শিবির।
এ সময় তারা ৪-৫টি মাইক্রোবাস, সিএনজিচালিত অটোরিকশা ভাঙচুর করে। তারা হকার্স মার্কেটের সামনে একটি বিআরটিসি বাস, মাইক্রোবাস, একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশা ভাঙচুর ও তিনটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে চলে যায়। প্রথম বাইপাস সড়কের ঝোপগাড়ী নামক স্থানে ১টি যাত্রীবাহী বাসে আগুন দেওয়া ও সড়ক অবরোধ করা হয়। অন্যদিকে শহরের দ্বিতীয় বাইপাস রোডের সাবগ্রামে মিছিল থেকে ২টি ট্রাক ভাঙচুর করা হয়। যশোর : বেলা ৩টার দিকে শহরের চিত্রা মোড়ে বিক্ষোভ মিছিল করে জামায়াতে ইসলামী।
একই সময়ে যশোর-খুলনা মহাসড়কের রুপদিয়ায় এবং যশোর-মনিরামপুর সড়কের বেগারিতলায় সড়কের ওপর গাছের গুঁড়ি ও টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করে জামায়াত। বেগারিতলায় ২টি গাড়ি ভাঙচুর করে তারা। এ ছাড়া চৌগাছা, বাঘারপাড়া ও অভয়নগরে বিক্ষোভ মিছিল করে জামায়াত। চাঁদপুর : নিবন্ধন বাতিলকে কেন্দ্র করে জামায়াত-শিবির কর্মীরা মিশনরোড এলাকায় মিছিল বের করে শহরে প্রবেশের চেষ্টা চালালে পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ২ রাউন্ড গুলি বর্ষণ করে।
এ সময় পুলিশ দেশীয় অস্ত্রসহ সদর জামায়াতের আমির জাহাঙ্গীর আলমসহ ১২ নেতা-কর্মীকে আটক করে। নাটোর : বেলা সাড়ে ৩টায় চকরামপুর থেকে জামায়াত মিছিল শুরু করে মাদ্রাসা মোড় হয়ে আবার চকরামপুরে এসে শেষ করে। বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে সিংড়া, গুরুদাসপুর, বাগাতিপাড়া ও বড়াইগ্রাম উপজেলা জামায়াত। নোয়াখালী : বেলা ৩টায় জামায়াত-শিবির মাইজদী শহরে ঝটিকা মিছিল করে। এ সময় পুলিশ একজনকে আটক করে।
সেনবাগ উপজেলা শহরে জামায়াত ও শিবির ঝটিকা মিছিল করে। সিরাজগঞ্জ : বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিম সংযোগ মহাসড়কের কাশেম মোড়ে মহাসড়ক অবরোধ এবং শহরে ঝটিকা মিছিল করে জামায়াত-শিবির। বেলা সাড়ে ৩টায় জামায়াত-শিবির শহরে ঝটিকা মিছিল এবং বড় বাজারে সমাবেশ করে। গাইবান্ধা : পলাশবাড়ী উপজেলায় ঢাকা-রংপুর মহাসড়ক ও গাইবান্ধা-পলাশবাড়ী সড়কে জামায়াত-শিবির অবরোধ করে ২০-২৫টি গাড়ি ভাঙচুর করে। এ সময় কিছু যাত্রী আহত হন।
জয়পুরহাট : ছাত্রশিবির জয়পুরহাট-বগুড়া মহাসড়কের পল্লী বিদ্যুৎ এলাকায় সড়ক অবরোধ করে। কুষ্টিয়া : জামায়াত-শিবির কুষ্টিয়া-রাজবাড়ী আঞ্চলিক মহাসড়ক অবরোধ ও ১০টি যানবাহন ভাঙচুর করে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।