দেশটা নয়তো কারো বাপের ভিটা, করবে মন চাইলে যখন যেটা
স্বাধীনতা পেয়েছি আজ ৪০টি বছর অতিবাহিত হলো।
এ স্বাধীনতাকে ঘিরে প্রতি বছর আমাদের দেশে নানা কর্মসূচী উদযাপিত হয়। আলোচনা সভা, সেমিনার সিম্পোজিয়াম, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ নানা ধরণের আয়োজন। অধিকাংশ অনুষ্ঠান স্বাধীনতার মুল চেতনা হতে থাকে যোজন যোজন দুরে । স্বাধীনতা মানেই হলো অনুষ্ঠানের নামে রাস্তায় বাস-ট্রাক আটকিয়ে নিরব চাঁদাবাজি অথবা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের নামে অশ্লীলতার মহড়া কিংবা আলোচনা সভা, সেমিনার-সিম্পোজিয়ামের মাধ্যমে নেতা-নেত্রীর গুণকীর্তন করা।
কিন্তু যা কিছুই করি আসলে সত্যিকার অর্থে স্বাধীনতার জন্য একটিও অর্থবহ নয়।
স্বাধীনতা যে চেতনা থেকে রুপলাভ করেছে তা কি আমরা আদৌ পেয়েছি?
আমরা কি পেরেছি স্বজাতির আলোয় আলোকিত হয়ে পৃথিবীর মানচিত্রে সভ্য দেশ হিসেবে দাঁড়াতে?
তবে কি পেরেছি জনগণের মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠিত করতে?
নাকি পেরেছি ধর্মীয় মুল্যবোধ নিয়ে স্বাধীনভাবে চলাফেরা করতে?
স্বাধীনতার পর দেশের অর্থনীতির চাকাকে সচল করতে কি পেরেছি?
শিক্ষিত জনগোষ্ঠীর উপযুক্ত কর্মসংস্থান নিশ্চিত করণে এমন কি করতে আমরা পেরেছি ?
উল্লেখিত সকল প্রশ্নের উত্তর যদি “না” হয় তাহলে সে জাতিকে স্বাধীন বলাটা নেহায়েত ধোঁকা ছাড়া কিছুই নয় ।
মুখে স্বাধীনতা বলা আর সকল কর্মকান্ডে পরনির্ভরশীলতা অবলম্বন করা এটা নিছক মুর্খতা। এটা স্বাধীনতা নয়।
যখন যা মনে আসে তাই করা অথবা যা ইচ্ছা হয় তা বাস্তবায়ন করার নাম স্বাধীনতা নয়।
উদাহরণস্বরুপ কেউ তার হাত ডানে কিংবা বামে, উপরে কিংবা নীচে যেখানে ইচ্ছা সেখানে প্রসারিত করতে পারে এটা তার স্বাধীনতা কিন্তু হাত ডানে-বামে অথবা উচুঁ-নিচু করতে গিয়ে কারো নাকে কিংবা মাথায় যদি লাগে তবে সেটাকে স্বাধীনতা বলেনা। এটা স্বাধীনতার নামে উশৃঙ্খলতা-হঠকারীতা।
আমরা স্বাধীন দাবী করলেও পরাধীনতা আমাদের বেষ্টন করে আছে। তবে পূর্বে পরাধীনতা ছিল এক ধরণের আর এখন আরেক ঢংয়ের। আগে আমরা অন্যের অধীনে শাসিত হতাম আর এখন নিজেরা নিজেদের দ্বারা শাসিত হচ্ছি।
আমরা শিক্ষাঙ্গনে স্বাধীন নই, সাংস্কৃতিক অঙ্গনে স্বাধীন নই। স্বাধীন নই রাষ্ট্রীয় জগতে। এ যেন এক অদৃশ্য শক্তির শাসনের মহড়া। কেন স্বাধীন মুসলিম দেশ হওয়া সত্ত্বেও আমাদের শিক্ষার্থীদের রবি ঠাকুরের গান প্রত্যেহ পাঠ করতে বাধ্য করানো হয়। অগণিত মসজিদ-মাদরাসার দেশ এ ভূমিতে কেন আজ সাংস্কৃতিক অঙ্গনে পাশ্চাত্যের সভ্যতাবিবর্জিত রুচিহীন অশ্লীল অনুষ্ঠান বল্গাহীনভাবে স¤প্রচার করা হয়।
অসংখ্য পীর-আউলিয়ার এ পুণ্যভূমিতে কেন রাষ্ট্রীয়ভাবে মনগড়া বিধানের পরিবর্তে ইসলামের শ্বাশ্বত বিধান প্রতিষ্ঠিত নয়। শত শত ইমাম, খতিব, হাফেজ, আলেম, মুফতী থাকার পরেও কেন জাতীয় মসজিদের খতীব একজন গ্রহণযোগ্য ব্যক্তি নয়।
বরং স্বাধীনতার পর একের পর জনগণের ভোট ভিক্ষা নিয়ে যারাই ক্ষমতায় বসেছে তারাই এ জাতির সাথে করেছে গাদ্দারী করেছে প্রতারণা। কখনোই এদের দ্বারা জনগণের নূন্যতম মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়নি, পায়নি উপযুক্ত চাকুরী ঐ হতদরিদ্র পরিবারের বি.এ পাশ করা ছেলেটি বরং বদলে গেছে নির্বাচিত ব্যক্তির ভাগ্যের চাকা। আগে যদি ছিল এক তলা বাড়ি ক্ষমতায় গিয়ে হয়েছে ১০তলা অথবা ৫টি বাড়ি।
হয়েছে রাতারাতি আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ। এই স্বাধীনতাতো আমরা চাইনি যা আমরা পেয়েছি। এ স্বাধীনতা অর্জনের জন্যেতো এক সাগর রক্ত বিসর্জনের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধ সংঘটিত হয়নি। অসংখ্য মা-বোনদের ইজ্জত এ স্বাধীনতা অর্জনের জন্যতো হারাইনি। বরং ঐ সকল মা-বোন ও শহীদদের সাথে প্রতিনিয়তই করছি প্রতারণা।
সুতরাং সত্যিকার স্বাধীনতা ফিরিয়ে আনতে আজ সময় এসেছে আরেকটি সংগ্রামের, আরেকটি আন্দোলনের, একটি সফল বিপ্লবের। এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার নামে পরাধীনতার শিকল ভাঙ্গার সংগ্রাম। সকল মুক্তিকামী স্বাধীনতাকামীদের বন্দিত্বের শৃঙ্খল হতে মুক্তি দেবার সংগ্রাম। এবারের আন্দোলন স্বাধীনতার নামে সকল প্রতারণার ব্যবসা বন্ধের আন্দোলন । দল-মত নির্বিশেষে এ দেশকে লুটেরাদের কবল হতে রক্ষার আন্দোলন।
এ বিপ্লব সৃষ্টিকর্তার সকল আহকাম সৃষ্টির মাঝে প্রতিষ্ঠার বিপ্লব। আর এজন্য প্রয়োজন একদল পরীক্ষিত নিয়ন্ত্রিত জনবল । যারা হবে নৈতিকতার পরীক্ষায় উত্তীর্ণ, যোগ্যতার বলে বলীয়ান, সাহসিকতার মূর্তপ্রতীক, ধৈর্য্যরে পাহাড় ও সাহাবীদের চেতনা লালনকারী। নিয়মতান্ত্রিকতার পথ বেয়ে তাদের দ্বারাই পেতে পারে এ জাতি কাঙ্খিত স্বাধীনতা, প্রকৃত মুক্তির পথ, সঠিক পথের দিশা। পরাধীনতার শিকল হতে জাতিকে মুক্তি দিবার প্রাকটিস তাদেরকেই করতে হবে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।