সাদ আহাম্মেদ
হাতে ঘড়ি নেই, কিন্তু সময় আন্দাজ করতে পারি ছটার বেশি হয়নি। চারদিকে ভোরের নীলচে আলো উকিঝুকি দিচ্ছে। আমি ক্যাম্পাসে বসে আছি হাতে গরম কফির মগ নিয়ে। অনেকদিন পর গায়ে আমার প্রিয় সাদা জ্যাকেট চড়িয়েছি। কেন জানিনা অনেক ভালো লাগছে শীতের সঙ্গী হতে পেরে।
মিষ্টি মধুর শীতল হাওয়ায় একটু পরপর পুলকিত হচ্ছি। চোখ বন্ধ করে যখন আমার আশেপাশের স্বর্গীয় জগতটা অনুভব করার চেষ্টা করছিলাম তখন তিথী এসে হাজির হলো। আমার একদম ভালো লাগেনি এই জাদুকরী স্নিগ্ধতায় কেউ এসে ব্যাঘাত ঘটানোতে। মুখে চরম বিরক্তি নিয়ে আমি তিথির থেকে চোখ সরিয়ে নিয়ে কফির মগে চুমুক দিলাম। তিথি আমার বিরক্তিকে উপক্ষা করে পাশে বসে হাই তুলে জিজ্ঞেস করলো, “এত ভোরে ওঠো কি করে?”
আমি মুখে স্বাভাবিক ভদ্রতা বজায় রেখে হালকা হেসে বললাম, “প্রতিদিন সকালে যখন ঘুম থেকে উঠি তখন আমি অন্য এক জগতকে খুব কাছ থেকে অনুভব করতে পারি।
ওই জগতের নেশায় বলতে পারো ঘুম আমাকে তাড়াতাড়ি মুক্তি দেয়। কিন্তু তুমি এত সকালে কি করছো?”
তিথি কোন কথা বলেনা। আমার দিকে কেমন যেন মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে কি কি ভাবে। তার হাতে ধরা ছোট্ট জেলীর কৌটা থেকে ক্রীম নিয়ে মুখে ছোয়ায়। তারপর আবার তার ভ্রূ জোড়া বাকিয়ে আমার দিকে কেমন করে যেন তাকায়।
আমার এসব ভালো লাগেনা, কখনো ভালো লাগেনি। আমি জানিনা সে কেন এটা বোঝেনা। তাকে একজন ক্লাসমেটের বেশি আর কিছু কখনোই মনে হয়নি, হবে বলেও মনে হয়না। তিথী আবার আমাকে জিজ্ঞেস করে, “কিছু খাবে?আমার স্টকে কিছু ভাপা পিঠা আছে। নিয়ে আসবো?”
আমি কফিতে আরেকটা চুমু দিয়ে বললাম, “না”।
"
কফি শেষ হলে তিথীর থেকে বিদায় নিয়ে আমি ক্যাম্পাস দিয়ে হাটতে থাকি। মাথায় এখন ঘুরপাক খাচ্ছে ওর কথা যার জন্য বহুদিন হলো আমি রাতে ঘুমাতে পারিনা। ওর শেষ চিঠিটা আমাকে আবার পড়তে হবে। আচ্ছা আমি কেন চিঠিটাকে শেষ চিঠি বলি?ওটা কি ওর প্রথম দেয়া চিঠিও ছিলোনা?ও তো শুধু ওই একটাই চিঠি আমায় দিয়েছিলো। নিজেকে তুচ্ছ লাগছে, অনেক তুচ্ছ।
আমি অনুভব করতে পারি, আমার চোখ আবার ভিজে যাচ্ছে। আমি বুঝতে পারিনা, আজকাল আমি এমন হয়ে গেছি কি করে! আমি জানিনা কবে আমার মুক্তি হবে, আমি এখন সব হারিয়ে জীবনের আলো খুজছি।
ওকে প্রথম দেখি ২০০৯ সালের শেষ দিকে। বন্ধুরা মিলে কাবাব খাবো বলে সন্ধ্যালগ্নে ধানমন্ডি পুরনো স্টারের সামনে জড়ো হবে বলে প্ল্যান করেছি। আমি একটু আগেভাগেই এসে পড়েছি।
হঠাৎ করে মাথার ওপর দিয়ে মনে হলো অনেকগুলো পাখি উড়ে গেলো। আমি মুখ তুলে আকাশের দিকে চাইতেই পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর আর পবিত্র মুখটি আমার নজরে এলো। আমি তাকিয়ে রইলাম সে অপ্সরার দিকে সর্বোচ্চ একাগ্রতা নিয়ে। আমি কি তখন এই পৃথিবীতে ছিলাম? ছিলাম কি প্রাচীন শহর ঢাকার এক ক্ষুদ্র কোণে যেখানে ভালোবাসা ফেরি হয় দিনে দুপুরে, রাতের আধারে, কিন্তু কেউ তা একবারো হৃদয় দিয়ে ছুয়ে দেখেনা অথবা তাকে যত্ন করে একটিবারো হৃদয়ে লালন করেনা। আমি তখন স্টার কাবাব নামক খাদ্যবিলাসের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা এক প্রকান্ড অট্টালিকার সর্বোচ্চ স্তরে বাস করা এক সাদা পরীর উদাসীনতা উপভোগ করছি ঝরে যাওয়া লাল সূর্যের দিকে।
এরপর বিশ্বাস করুন আর নাই করুন, আমি টানা এগারো মাস প্রতিদিন ক্লাস শেষ করে সেই সুউচ্চ অট্টালিকার পাশে দাঁড়িয়ে তার জন্য অপেক্ষা করেছি। কখনো হয়তো তার দেখা পেয়েছি, কখনো পাইনি। অবাক করা ব্যাপার হলো সে কখনো আমাকে একটিবারও তাকিয়ে দেখেছে বলে মনে হয়নি। সে শুধু সূর্যের দিকে তাকিয়ে থাকতো আর কি যেন ভাবতো। তাকে আমি কখন কিভাবে ভালবেসে ফেলেছি জানিনা।
অনেক সস্তা শোনাচ্ছে হয়ত আমার অনুভূতি, কিন্তু আমি এর থেকে ভালোভাবে এই কথাটা আর বলতে পারতাম না। আমার উচ্চরিত ভালোবাসা শব্দটা আজকালকার ফাস্টফুড শপে বসে মুরগীভাজা খাওয়া অথবা বোটানিক্যাল গার্ডেনে বসে বিশেষ ভালোবাসার চর্চা থেকে অনেক অনেক আলাদা। আমি তাকে পাওয়ার জন্য ভালোবাসিনি, তাকে ছুয়ে দেখার জন্যও নয়। আমি ভালোবেসেছি তাকে ভালোবাসার জন্য। তাকে আমি মনে মনে ডাকি “প্রিয়তা” বলে।
“প্রিয়তা” শব্দের অর্থ কি জানিনা, কেন এই নামটাই মনে হয়েছে তাও জানিনা। শুধু মনে পড়ে তাকে দেখার পর প্রথম রাতে যখন উদভ্রান্তের মত ঘুমাতে যাই তাকে ভাবতে ভাবতে, আমি মনে মনে বলেছিলাম “প্রিয়তা আপনি ভালো থাকুন, জগতের সকল শোভিত পুষ্প তার সুবাস নিয়ে আপনাকে জড়িয়ে ধরে থাকুক। অম্লান থাক আপনার শুভ্রতা। ”
আসল ঘটনায় ফিরে যাই। এগারো মাস অপেক্ষার পর হঠাৎ করে একদিন প্রিয়তা আমার দিকে তাকালো।
কিন্তু কেন যেন মনে হলো তার দৃষ্টিতে অনেক অনেক কান্না জমে ছিলো। আমি তার চোখে চোখ রাখতে পারিনি। আমি হতবিহবল হয়ে ভাবছিলাম, কিছু কি ভুল হলো? একটু পর একটা ছোট্ট মেয়ে আমার হাতে এসে একটি চিঠি দিয়ে গেলো, দু পাতার একটি চিঠি। দুপাতার সেই একটি চিঠি যা আমার জীবনকে আমূলে বদলে দিলো। সেই চিঠি আমি সারাদিন হাতে নিয়ে বসে ছিলাম,আমি সারাটি রাত কেদেছি ওই চিঠি পড়ে।
রাতে যখন আমার আব্বা আম্মা খাওয়ার জন্য ডাকাডাকি করছিলো আমি তখন নিশ্চুপ ছিলাম আর ভাবছিলাম কেন এমন হলো?সেই চিঠির শেষবাক্যটি ছিলো, “আর কখনো আসবেন না এখানে, কোনদিন নয়। ”
আমি গত দু বছরে আর কখনো ওদিকে যাইনি, কখনো আর যাবোনা।
আমার ক্লাসমেট ঈশিতার বিয়ে আজ। আমি অনেকদিন পর সামাজিক হওয়ার আশায় তার বিয়েতে দেখা দিলাম। বন্ধুরা আমাকে আজকাল কবি বলে ডাকে।
বড় বড় চুল আর শশ্রুমন্ডিত মুখমন্ডল আমার কবি পরিচয় দেয় বৈকি, কিন্তু কবিতার ক-ও যে আমি জানিনা তা তাদের বুঝায় কে?ঈশিতার বাবা মা আমাকে দেখে একটু ভড়কেও গেলো মনে হলো। ঈশিতার বাবা আমাকে আড়ালে ডেকে বললেন, “বাবা অর্ক, তোমার বয়সে আমি দশটা ছ্যাকা খেয়ে দুট প্রেম করতে পেরেছিলাম। তোমরা ইয়ং জেনারেশন এত সহজে ভেঙ্গে পড়ো কেন?চিয়ার আপ। ”
আমি হাসিমুখে বললাম, “অবশ্যই আঙ্কেল। আমি সবসময়ই চিয়ার্ড আপ হয়ে আছি।
দাড়ি রেখেছি বিপ্লবী ভাব ধরার জন্য, আর কিছু না। ”
আঙ্কেল হা হা করে সজোরে হেসে দিলেন। আমিও ওই সুযোগে কেটে পড়লাম। ঈশিতার সাথে দেখা করতে যাবো তার আগেই তিথী সামনে উপস্থিত। আমাকে দেখে যেন স্বস্তি পেলো এমন ভাব করে বললো, “একটু ওদিকে যাবে?”
আমি বললাম “ঠিক আছে।
”
আমি যখন তিথীকে নিয়ে বিয়েবাড়ির হট্টগোল থেকে বেরিয়ে একটা নিশ্চুপ কোণে যেয়ে বসলাম তখন টপটপ বৃষ্টির ফোটা আমাকে ঘিরে ধরলো। আমি অত্যন্ত বিরক্ত তিথীর সাথে এই সময় একা একা হাটাহাটি করার জন্য। বুঝতে পারছি যে “না” শব্দটা আপ্ত করার জোর প্রচেষ্টা চালাতে হবে। নীরবতা প্রথম ভঙ্গ করলো তিথী নিজেই। আমাকে অবাক করে দিয়ে জিজ্ঞাসা করলো, “তোমার আমাকে এত বিরক্ত লাগে কেন?”
আমি বললাম “আমার কাউকেই ভালো লাগেনা তিথী।
”
“মেয়েটা কে জানতে পারি?”তিথী আমার দিকে সরাসরি তাকিয়ে জিজ্ঞাসা করলো।
আমি কিছু বললাম না। আমার কিছু বলার ইচ্ছাও নাই। আমি তিথীর থেকে দূরে যেতে চাচ্ছি। আবার অনেক খারাপ লাগছে।
তিথী নামের মেয়েটা আমাকে ভার্সিটির প্রথম দিন থেকে অন্যভাবে দেখে আমি জানি। আমাকে আমার বন্ধুরা অনেকবার বলেছে যে এত ভালো একটা মেয়েকে আমি কেন এভাবে অবহেলা করি। আমি বন্ধুদেরকে বলি “ওকে অবহেলা করার মত যোগ্যতা আমার নাই। ওকে ওইভাবে দেখার মত ক্ষমতাও নাই”। "
আমার মনে আছে টানা তিনদিন ক্লাসে যাইনি বলে একদিন তিথী আমার এক বন্ধুকে নিয়ে আমার বাসায় চলে এসেছিলো।
আমাকে দেখে তার চোখে যে জল এসেছিলো, সেই জলেমগ্ন ভালোবাসা উপেক্ষা করার মত শক্তি কোথায় পেয়েছি জানিনা। একবার সে আমাকে কি যেন একরকম পিঠা খেতে সেধেছিলো। আমি না করায় হঠাৎ করে সে অনেক রেগে গিয়েছিলো মনে পড়ে। সবগুলো পিঠা নিয়ে ফেলে দিয়েছিলো পাশের ডাস্টবিনে। আমি ভয় পাচ্ছি আজকে আবার কি করে বসে।
তিথী হঠাৎ করে আমার একটা হাত ধরে ফেলে। আমি ঘটনার আকস্মিকতায় থমকে দাড়াই। ও আমাকে জিজ্ঞেস করে, “তোমার আমাকে অনেক নির্লজ্জ মনে হয় তাই না?”
আমি নির্বিকার হয়ে বললাম, “না”।
তিথী আমার হাত আরো শক্ত করে ধরে বলে “আমি তোমাকে ছাড়া কখনো আর কাউকে চাইনি, বিশ্বাস করো। আমি তোমাকে বলছিনা তোমার আমাকে ভালোবাসতে হবে।
কখনো বলবোও না। আমি শুধু বুঝতে চাই, কেন তুমি আমাকে এত অবহেলা করো?”
আমি অন্ধকার ল্যাম্পপোস্টের নিচে দাড়িয়ে ভেজা ভেজা রাস্তায় চাদের জ্বলজ্বলে ভাস্কর্যের দিকে মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে থাকি। আমি তিথীকে বলি প্রিয়তার কথা। আমি আর কখনো কাউকে তার কথা বলিনি। আজ বললাম আরেক নারীকে যে আমায় ভালোবাসে, হয়তো অতটাই যতটা আমি প্রিয়তাকে বেসেছি।
একটা অদ্ভুত কথা বলি শুনুন। আমার প্যান্টের ডান পকেটে আমি এখনো প্রিয়তার চিঠি রেখে দিয়েছি। আমি কখনো চিঠিটাকে হাতছাড়া করিনা। করবোও না। তবে আজ তিথীকে পড়তে দেবো।
তিথীকে চিঠিটা যখন দিলাম তখন বুকে সূক্ষ্ম চিনচিনে ব্যথা হচ্ছিলো। তিথী চিঠিটা পড়তে থাকেঃ
“আমি জানিনা আপনি কে। তবে বোধহয় বুঝতে পারি কেন এভাবে প্রতিদিন আমার বাড়ির নিচে দাঁড়িয়ে আমাকে দেখেন। আমি যখন প্রথম আপনাকে দেখি তখন অনেক ভালো লেগেছিলো কেউ আমার দিকে এভাবে তাকিয়ে থাকে ভেবে। পরে অনেক কষ্ট হয়েছিল যখন মনে হয়েছিলো আমি আপনাকে কখনো সম্পর্কে জড়াতে পারবোনা।
কারণ আমার অনেক সমস্যা আছে। আমি জন্ম থেকে কথা বলতে পারিনা এবং কানে শুনতে পাইনা। ভালো ভাবে বললে আমি বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী। একারণে আমাকে আমার আব্বু আম্মু কোথাও নিয়ে যায়না, কেউ আমাকে ছোটকাল থেকে একবারো হয়তো ভালোবাসেনি। আমি প্রায় দিন, প্রায় রাতে কারো একটি ভালোবাসার কথা শোনার চেষ্টা করি, কাউকে একবার আমার অনেকগুলো জমে থাকা কষ্টের কথা বলার চেষ্টা করি।
কিন্তু পারিনা। আমি প্রায় দিন তাই উপরে বসে থাকা সৃষ্টিকর্তাকে প্রশ্ন করি, আমাকে কেন দুনিয়াতে পাঠানো হলো?যদি পাঠানোই হলো তবে কেন অনুভূতি দেয়া হলো?এই অনুভূতি প্রকাশ করতে না পারার যন্ত্রণা কি তিনি বুঝতে পারেন? আমি কখনো কারো কাছেই এর সদুত্তর পাইনি।
আমি আপনাকে এই কথাগুলো বললাম কারণ আমি চাইনা আপনি আমার জন্য কখনো কষ্ট পান। আপনি কি জানেন আমি যে আড়াল থেকে সবসময় আপনাকে গভীর মমতা নিয়ে দেখি?আমার অনেক ভালো লাগে যখন দেখি আপনি রোদ-বৃষ্টি সব ভুলে গিয়ে আমার জন্য দাঁড়িয়ে থাকেন। আমি মনে হয় আপনাকে অনেক ভালোবেসেও ফেলেছি।
যাকে আপনি ভালোবাসেন তাকে কি কখনো আপনি কষ্ট দিতে পারবেন?আমি যে আপনাকে ভালোবাসি একথা বলার সামর্থ্য আমার নাই, আমি আপনার থেকে ভালোবাসি কথাটা শোনার ক্ষমতাও রাখিনা। আমি প্রায় রাতে অনেক অনেক কাদি জানেন। আপনার আমার জন্য অপেক্ষারত ওই চোখে যে ভালোবাসা আমি দেখি তাকে আমি কখনোই ভুলতে পারবোনা। কিন্তু আপনাকে নিজের সাথে জড়াতেও তো পারবোনা।
আমার একটা কথা রাখবেন?আপনি আর এদিকে আসবেন না।
আপনাকে দেখলে আমার এখন প্রতি রাতে মরে যেতে ইচ্ছা করে। আমি একগাদা ঘুমের ওষুধ জমা করে রেখেছি। যেদিন আর সহ্য হবেনা সেদিন সবার থেকে বিদায় নেবো। আমার কথা ভুলে যান। আর কখনো আসবেন না এখানে, কোনদিন নয়।
”
তিথী আমাকে চিঠিটা ফেরত দিলে আমি তাকে বললাম, “তিথী জানো আমি আর কখনও ওদিকে যাইনি। আমি চাই সে বেচে থাকুক। তার দুচোখ দিয়ে সে পৃথিবীটা দেখুক। সে একদিন বুঝতে পারুক এই সুন্দর পৃথিবীটা শুধু শুনতে পারা বা বলতে পারার জন্য নয়। পরম করুণাময় তার অপার সৌন্দর্যচেতনা দিয়ে এই পৃথিবীকে ছবির মত সাজিয়ে রেখেছেন।
আমি চাই প্রিয়তা যেন তা অনুভব করে, দু চোখ ভরে শুষে নেয় সবকিছু”
তিথী আমাকে সে রাতে আর কিছু বলেনি। ভার্সিটির বাকী সময়েও আর কখনো কোন কথা বলেনি। একবারের জন্যও না। আমিও আর কখনো এগিয়ে যাইনি।
তিথীর সাথে আবার আমার কথা হলো কনভোকেশনের সময়।
ও নিজেই আমাকে হাত দিয়ে ডাকলো। হাসিমুখে জিজ্ঞেস করলো, কেমন আছো?
আমিও একইভাবে জবাব দিলাম “ভালো। ”
তিথী অনেকক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে কিসের জন্য যেন অপেক্ষা করলো। তারপর বললো, “তোমাকে একটা কথা জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছা করেছে সবসময়। ”
আমি জিজ্ঞেস করলাম “কি কথা?”
তিথী খুব সিরিয়াস হয়ে আমাকে বললো “তুমি প্রিয়তাকে এভাবে একা ছেড়ে দিলে কেন?”
আমি মূঢ় হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম।
মুখে কোন কথা আসছিলোনা। গত সাড়ে তিন বছরে যে ভাবনা একবারও মাথায় আসেনি তা আজকে এভাবে তিথীর একটা প্রশ্নে জোরেশোরে বের হয়ে আসলো। আমি ঘড়ির দিকে তাকালাম। ঘড়িতে তখন দুপুর ২টা বেজে ১০ মিনিট। আমি দৌড়িয়ে একটা সিএনজিতে উঠলাম।
ডেস্টিনেশনঃ ধানমন্ডি স্টার। পথে যেতে যেতে বারবার ভাবছিলাম একটাই কথা, আমি এত বোকা কেন?
আমি আবারো প্রিয়তার বাড়ির নিচে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছি। আমি জানি ও আসবে। ওকে আসতেই হবে। আমি জানি প্রিয়তা আমাকে দেখে দৌড়িয়ে আমার কাছে ছুটে আসবে।
আমি যদিও জানি ও কিছু শুনতে পাবেনা তবুও বলবো, “আমি আমার জীবনের সবকিছু দিয়ে আপনাকে চাই, সবকিছু দিয়ে”।
আমি জানি প্রিয়তা কিছু না শুনেও অনুভব করবে আমার বলা প্রতিটা ভালোবাসার কথা। আমি জানি ও সজোরে মাথা নেড়ে কান্না ভেজা নয়নে আমাকে জানাবে সেও আমাকে চায়। অনেক অনেক।
********************************************************************
প্রিয়তা এসেছিলো কিনা জানিনা।
না এসে থাকলে হয়তো অর্ক নামের সেই ছেলেটা এখনো ধানমন্ডি স্টার কাবাবের সাথে লাগোয়া লাল বাড়ির নিচে দাঁড়িয়ে থাকে কারো অপেক্ষায়। আর যদি প্রিয়তা এসে থাকে, প্রার্থনা করি যেন তারা নিজেদের ভালোবাসাগুলো বুঝে নিতে পারে।
********************************************************************
আমি নিশ্চিত জানি, আমার এই সস্তা লেখা অত্যন্ত কষ্ট করে যারা শেষ পর্যন্ত পড়বেন তারা অনেকেই হয়তো অতি বিরক্ত হবেন এবং আমার মুন্ডুপাত করবেন। তাদের কাছে ক্ষমাপ্রার্থী। লেখাটা বহুদিন ধরে আমার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছিলো।
অবশেষে তাকে কীবোর্ডের কী টেপাটেপি করে প্রকাশ করতে পারার জন্য আমি যারপরনাই আনন্দিত। আপনাদের জানাতে চাই, আমি সস্তা মাপের লেখক হলেও আমার লেখায় বর্ণিত ভালোবাসার কথা সস্তা নয়। আমি মনে প্রাণে বিশ্বাস করি পবিত্র ভালোবাসার থেকে মূল্যবান কিছুই এই জগতে নাই।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।