তুরস্ক ইউরো ফাইটার টাইফুন ক্রয়ের পরিকল্পনা স্থগিত করেছে এবং এর বদলে দেশেই নিজস্ব ডিজাইনে জঙ্গী বিমান তৈরির একটি উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনা নিয়েছে। তুরস্কের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ভেচদি গোনুল এ পরিকল্পনার কথা ঘোষণা করেন। এটাকে শুধু একটা শিল্পোদ্যোগ হিসাবেই নয় বরং তুরস্কে তৈরি লেখাটি জঙ্গী বিমানকে জাতীয় গৌরব হিসাবে দেখা হচ্ছে। গোনুল শান্তিশালী প্রতিরক্ষা শিল্প নির্বাহী কমিটির সঙ্গে এক বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের বলেন আমরা সম্পূর্ণ জাতীয় ভিত্তিতে নিজস্ব ডিজাইনে দেশীয়ভাবে জঙ্গী বিমান উৎপাদনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। কমিটির এ উদ্যোগ তুরস্কে এই প্রথমবারের মত জঙ্গী বিমান তৈরির পথ খুলে দেবে।
এর আগে ৬০টি ইউরোফাইটার টাইফুন ক্রয়ের যে পরিকল্পনা করা হয়েছিল তা আপাতত স্থগিত থাকবে।
তুরস্ক যে নতুন জঙ্গী বিমান বানানোর উদ্যোগ নিয়েছে তা যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি বহু পুরানো এফ-৪ বিমানের স্থলাভিষিক্ত হবে। এ ধরনের উদ্যোগ নিয়েছে ইসরাইলও। তেল আবিব আগামী দশকে এফ-১৬ জঙ্গী বিমানের নতুন সংস্কার তৈরি করবে। ২ ইঞ্জিন বিশিষ্ট তুরস্কের এই নতুন জঙ্গী বিমান তৈরির জন্য আরো বিশ কিছু সময়ের প্রয়োজন।
আঙ্কারা ইতোমধ্যে ১শ'টি পরবর্তী প্রজন্মের এফ-৩৫ জঙ্গী বিমান ক্রয়ের পরিকল্পনার কথা ঘোষণা করেছে। এ বিমানগুলো ক্রয়ের জন্য খরচ হবে মোট প্রায় ১ হাজার ৫শ কোটি ডলার। জয়েন্ট স্ট্রাইক ফাইটার বা জে এস এফ বিমানের প্রথম চালান ২০১৫ সালে পাওয়া যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। তুরস্ক শুধুমাত্র শূন্যস্থান পূরণের লক্ষ্যে ৩০টি এফ-১৬ জঙ্গী বিমান কিনতে পারে। তুরস্ক তার ন্যাটো জোটের শরীক ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকা থেকে দূরে থেকে এককভাবে জঙ্গী বিমান বানানোর পরিকল্পনা গ্রহণ করলো।
তুরস্ক বর্তমানে মধ্যপ্রাচ্যের প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তোলার চেষ্টায় নিয়োজিত রয়েছে।
তুরস্ক গত নবেম্বরে ইরানের সম্ভাব্য হামলা প্রতিরোধে ন্যাটোর মিসাইল শিল্ড বা ক্ষেপণাস্ত্র ঢাল গড়ে তোলার পরিকল্পনার বিরোধিতা করে এবং ইসরাইলের সঙ্গে জোটের তথ্য ভাগাভাগি করতে আপত্তি জানায়।
তুরস্ক বর্তমানে লকহীড মার্কিন কোম্পানীর সঙ্গে চুক্তির ভিত্তিতে তুর্কী বিমান শিল্প (টি আই এ) প্রকল্পে এফ-১৬ জঙ্গী বিমান সংযোজন করছে। রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত এই টিআইএকে নতুন জঙ্গী বিমান তৈরির প্রকল্পের সমন্বয়ক নিযুক্ত করা হয়েছে। তুরস্কের প্রতিরক্ষা শিল্প সংগ্রহ সংস্থা এসএসএম নতুন বিমানের ডিজাইন করার জন্য ২ কোটি ডলার বরাদ্দ দিয়েছে।
১৯৮০-র দশকে ইসরাইলের জঙ্গী বিমান লাভির ডিজাইন ও উৎপাদনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত বিমান শিল্প সংস্থার একজন নির্বাহী বলেন, এটা একটা বিশাল উদ্যোগ। তুরস্কের পক্ষে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা সম্ভব কিনা এ ব্যাপারে আমার সংশয় রয়েছে। কারণ এ ব্যাপারে দেশটির কারিগরি ও প্রযুক্তি জ্ঞান খুবই সীমিত। তবে শুধু কারিগরি জ্ঞান দিয়ে এটা হয় না। এজন্য প্রয়োজন শতশত কোটি ডলার।
এটা শুধুমাত্র বিমান সংযোজন নয়। এ জন্য কারিগরি জ্ঞান অর্জন করতে বেশ সময়ের দরকার এবং পরবর্তীতে প্রয়োজন বিশাল অর্থ তহবিলের। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এই নির্বাহী মিডিয়া লাইনকে এসব কথা বলেন। তুরস্কের প্রতিরক্ষা শিল্প ক্রমশ বিকাশ লাভ করছে এবং আধুনিকায়ন হচ্ছে। তবে এখনও প্রযুক্তির জন্য তাদের বিদেশের উপর নির্ভর করতে হয়।
টি আই এ হুরকুস নামের একটি প্রশিক্ষণ বিমান তৈরি করছে। তবে তা এখনো পরীক্ষামূলক চালানো হচ্ছে। এছাড়া মনুষ্যবিহীন একটি বিমান তৈরির কাজও চলছে। এটির নামকরণ করা হয়েছে আনকা।
মিডিয়া লাইনকে উপরিউক্ত নির্বাহী আরো বলেন, জঙ্গী বিমান বানানোর কাজটি অত্যন্ত ব্যয়বহুল।
বড় ধরনের বাজেট ছাড়াই ছোট দেশ ইসরাইল এ উদ্যোগ নিয়েছিল। এমনকি যখন আবকাঠামো নির্মাণের কাজ সমাপ্ত হয় তখনই আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম এ প্রকল্প পরিত্যাগের। কারণ ব্যয় সংকুলান করা সম্ভব হচ্ছিল না। আজকের দিনে এ ধরনের উদ্যোগের জন্য প্রয়োজন আন্তর্জাতিক অংশীদারিত্বের। তাহলেই কেবল এ ধরনের প্রকল্পের কাজ সফলভাবে সম্পন্ন করা সম্ভব।
ইসরাইল মার্কিন এফ-১৬ জঙ্গী বিমানের মত করে লাভি নামের বিমান বানাতে চেয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত মার্কিন চাপ এবং পর্যাপ্ত অর্থের অভাবে এই পরিকল্পনা বাদ দেয়। তুর্কী প্রতিরক্ষা মন্ত্রী গোনুল বলেন আমরা সম্ভবত দক্ষিণ কোরিয়ার কাছ থেকে সহযোগিতা নেব। দেশটি ইন্দোনেশিয়ার সঙ্গে যৌথভাবে কে এফ-এক্স নামের জঙ্গী বিমান তৈরি করছে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।