'ন্যায্যতা' ও 'সমদূরত্ব' নীতির ভিত্তিতে ভারত শ্রীলঙ্কার সঙ্গে তাদের সমুদ্রসীমা বিরোধ মিটিয়ে ফেললেও বাংলাদেশের ব্যাপারে তা মোটেও মানতে রাজি নয় ভারত। একই সুর মিয়ানমারেরও। তারা বাংলাদেশের সঙ্গে সমুদ্রসীমার বিরোধের নিষ্পত্তি করতে চায় শুধুমাত্র 'সমদূরত্ব' নীতির ভিত্তিতে। তাদের পরোক্ষ সমর্থনে রয়েছে দক্ষিণ এশিয়ার মোড়ল ভারত। আর 'সমদূরত্ব' নীতি মানলে সাড়ে তিন দিক থেকে ভারতবেষ্টিত প্রিয় জন্মভূমি বাংলাদেশ 'সী-লকড' দেশে পরিণত হবে।
অন্যদিকে সমুদ্রের তলদেশের বিপুল পরিমাণ খনিজ সম্পদের দাবি যে ত্যাগ করতে হবে, তা বলাই বাহুল্য।
বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের সমুদ্র উপকূলের গঠন একই ধরনের নয়। একই ধরনের হলে দুই দেশের উপকূল থেকে সমদূরত্বের ভিত্তিতে সমুদ্রসীমা নির্ধারিত হলে ল্যাঠা চুকে যেতো।
শুধু বাংলাদেশ কেন, বিশ্বের যেসব অঞ্চলের উপকূল ক্রমশ ঢালু হয়ে সমুদ্রে নেমে যায়, সেখানে স্বাভাবিকভাবেই উপকূল থেকে অনেক দূরে গভীর সমুদ্র শুরু হয়। আর গভীরসমুদ্রই কৌশলগত আর খনিজসম্পদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
আন্তর্জাতিক আইনের বিধান হচ্ছে, বিবদমান দুটো বা ততোধিক দেশের সমুদ্র উপকূলের বৈশিষ্ট্যে ফারাক থাকলে দ্বিপক্ষীয় সীমা নির্ধারিত হবে 'ন্যায্যতার ভিত্তিতে'। নরওয়ে ও জার্মানি তাদের প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সমুদ্রসীমার বিরোধ এই ন্যায্যতা নীতির ভিত্তিতেই মীমাংসা করেছে।
ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিসে (আইসিজে) এই ন্যায্যতার নীতির ভিত্তিতেই জার্মানি সমুদ্রসীমায় ডেনমার্কের কাছ থেকে সাত হাজার বর্গকিলোমিটার এবং নেদারল্যান্ডসের কাছ থেকে পাঁচ হাজার বর্গকিলোমিটার সমুদ্র এলাকা বেশি পেয়েছে।
কূটনীতিক পর্যায়ে মিয়ানমারের সঙ্গে সমুদ্রসীমা নিয়ে বিরোধ না মেটায় বাংলাদেশ ২০০৯ সালের ১৪ ডিসেম্বর বাংলাদেশ মিয়ানমারেরই অনুরোধে আন্তর্জাতিক ট্রাইবুরাল ফর দি ল' অব দি সী-তে (আইটিএলওএস) সালিসি মামলা পেশ করে। এই ট্রাইবুনালটি ২১ জন সমুদ্র বিশেষজ্ঞ নিয়ে গঠিত।
পাশাপাশি দ্বিপক্ষীয় আলোচনাও চলছে। ২০১০ সালের ৮-৯ জানুয়ারি চট্টগ্রামে অনুষ্ঠিত বৈঠক শেষে ঘোষণা করা হয় দুদেশ 'ন্যায্যতা' (প্রিন্সিপল অব ইকুয়িটি) এবং 'সমদূরত্ব' নীতি ( প্রিন্সিপল অব ইকুয়েল ডিসট্যান্স) মেনে নিতে সম্মত। মিয়ানমার কথা রাখলে এটা ধরে নেয়া যায়, বাংলাদেশ বঙ্গোপসাগরে খনিজসম্পদ অনুসন্ধানের ১৭টি ব্লক কাগজে-কলমে হারানোর আশঙ্কা আপাতত নেই। কিন্তু বাংলাদেশ যাই করুক, 'আনক্লস' অনুযায়ী সমুদ্রসীমায় নিজের দাবি প্রমাণ করতে হবে ২০১১ সালের জুলাই মাসের মধ্যেই। নইলে আম ছালা দুটোই যাবে।
এবার আসুন, বাংলাদেশের প্রস্তুতি সম্পর্কে জেনে নেই। ফরেন ডেস্কের মাত্র একজন কর্মবর্তা মামলাটি হ্যান্ডেল করছেন। দেশের স্বার্থ আদায়ে মিয়ানমারের মতো বাংলাদেশ কোনো গবেষণা সংস্থা বা প্রাতিষ্ঠানিকভাবে কোনো দফতর খোলার প্রয়োজন মনে করেনি। অদৃশ্য কারণে বড়ই বেহাল অবস্থায় বাংলাদেশ মিয়ানমারের বিরুদ্ধে মামলা লড়ে যাচ্ছে। কে জানে, শেষ পর্যন্ত আমাদের কপালে কি আছে!
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।