যুক্তরাষ্ট্রের একটি আদালত গত শুক্রবার বাংলাদেশি যুবক কাজী রেজওয়ানুল আহসান নাফিসকে সন্ত্রাসী হামলার ষড়যন্ত্রে জড়িত থাকার দায়ে ৩০ বছরের কারাদণ্ডাদেশ দিয়েছেন। আদালতের রায়ে বলা হয়েছে, মুক্তিলাভের পর তাকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হবে। নাফিসের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের ফেডারেল রিজার্ভ ভবন উড়িয়ে দেওয়ার ষড়যন্ত্র করার অভিযোগ আনা হয়। এ উদ্দেশে তিনি বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরকও ক্রয় করেন। আমেরিকার অর্থনীতিকে বিপর্যস্ত ও জানমালের ক্ষতিসাধনের পরিকল্পনা এঁটেছিলেন এই অপরিণামদর্শী যুবক। তিনি তার অশুভ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ১০০০ পাউন্ড ওজনের বিস্ফোরকও কেনেন। অবশ্য সেগুলো ছিল ভুয়া। যাদের কাছ থেকে কেনেন তারা ছিলেন এফবিআইয়ের ছদ্মবেশী এজেন্ট। ফলে নাফিসের পরিকল্পনা যেমন ব্যর্থ হয়, তেমন তাকে গ্রেফতার এবং বিচারের মাধ্যমে কঠিন শাস্তি পেতে হয়। বিচারকালে নাফিস অকপটে তার অপরাধ স্বীকার করেন। বলেন, ঢাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় তার সহপাঠীদের অনেকেই ছিলেন ইসলামী উগ্রপন্থি। এর ফলে তিনি অপকর্মে প্রবৃত্ত হন। আদালতের কাছে নাফিস তার কৃতকর্মের জন্য ক্ষমাও চান। নাফিসের কারাদণ্ডাদেশ বাংলাদেশের ভাবমূর্তির ক্ষেত্রে নতুন সংকট সৃষ্টি করল। এ নিয়ে তিন বাংলাদেশিকে যুক্তরাষ্ট্রে সন্ত্রাসী হামলায় জড়িত থাকার দায়ে শাস্তি পেতে হলো। এর আগে ২০০৭ সালে জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যের আটলান্টায় বসবাসরত বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত সিফা সাদেকীকে ১৭ বছরের কারাদণ্ড দেন ফেডারেল কোর্ট। দণ্ড ভোগের পর ওই সন্ত্রাসীকে আরও ৩০ বছর কর্তৃপক্ষের কঠোর নজরদারিতে জীবনযাপন করতে হবে। ২০০৮ সালে নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের রাজধানী আলবেনিতে বসবাসরত মোহাম্মদ মোশাররফ হোসেনকে ১৫ বছর কারাদণ্ড দেওয়া হয় জঙ্গিবাদী তৎপরতায় জড়িত থাকার দায়ে। নাফিস যুক্তরাষ্ট্র গিয়েছিল পড়াশোনার জন্য। তবে তার আগেই ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় তিনি জঙ্গিবাদের দীক্ষা গ্রহণ করেন। ধনাঢ্য পরিবারের সন্তানদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচিত ওই বিশ্ববিদ্যালয়টি জঙ্গিবাদ চর্চার অভয়ারণ্য হিসেবে ইতোমধ্যেই পরিচিতি লাভ করেছে। নাফিসের অপকর্ম দেশের ভাবমূর্তির পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসীদের জন্য বিড়ম্বনা সৃষ্টি করেছে। এর দায় থেকে নাফিসের পরিবার এবং ওই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষও রেহাই পেতে পারে না। সন্তানের প্রতি যথাযথ নজর না রাখা এবং জঙ্গিবাদ চর্চার ক্ষেত্রে প্রশ্রয় দেওয়ার জন্য অভিভাবক ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভূমিকাও ভর্ৎসনার যোগ্য বলেই মনে করা যেতে পারে। যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী বাংলাদেশিরা বিপথগামী নাফিসের শাস্তিকে স্বাগত জানিয়েছে। আমরাও মনে করি জাতির জন্য বিড়ম্বনা সৃষ্টিকারীর এমন শাস্তিই প্রাপ্য ছিল। এ থেকে অন্যরা শিক্ষা নেবেন এমনটিই কাম্য।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।