আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পথশিশুদের সাথে চাদরাত

আল বিদা

রমযান মাস আসলেই আমাদের মধ্যে দান করার আগ্রহ বেড়ে যায়। কারন এ মাসেই আমরা সাধারনত আমাদের যাকাতের হিসাব করি। আবার এই মাসে দান করার কিছু ফযিলতও আছে। যে যেই কারনেই করুক না কেন, শেষে তো এই দান অসহায়দের কাছেই পৌছায়। আমার নিজেরও সাধ্যমত কারো জন্য কিছু করার ইচ্ছা।

বিশেষত সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জন্য। যখনই এমন কোন সুযোগ আসে তা কাজে লাগানোর চেষ্টা করি। তবে আমার মধ্যে সংকোচবোধটা অনেক বেশী। আমি এমন কাজে আমার দায়িত্ব কিছু অর্থ প্রেরনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে। নিজে গিয়ে কিছু করব বা নিজের হাতে বিলি করব তা আমি ভাবতেই পারতাম না।

এবারও রোজার মধ্যে নানাজনের সাথে এ নিয়ে আলাপ করছিলাম। এতিমখানায় যাকাত বা দান করে দেয়াটা সবচেয়ে সহজ। কিন্তু আমার ইচ্ছা এমন কোথাও দেয়া যেখানে দিলে তার কোন কাজে লাগবে এবং তা আমি দেখব বা শুনব। মাঝে মাঝে এমন কিছু সুযোগ আসে। হয়ত এমন কোন গরীবকে পেলাম যে অল্প কিছু টাকা পেলে ব্যবসা শুরু করতে পারবে।

এমন লোকজনদের মাঝে মাঝে সাহায্য করার সুযোগ পাই। এবার ঈদের ২/৩দিন আগে থেকে মনে হচ্ছিল আর কি করা যায়। বিশেষত শিশুদের জন্য কিছু করার ইচ্ছা। কিন্তু কি করব ভেবে পাচ্ছিলাম না। যে ২/১টি সুযোগ ছিল সেখানে টাকা পাঠানোরও সময় পেলাম না।

হঠাৎ মনে হল আমি নিজেই তো এমন কিছু করতে পারি। ২৯তম রোযার দিন দেখলাম আমার মা মার্কেটে যাচ্ছে বাসার কাজের লোকের জন্য কাপড় কিনতে। আমি সাথে আরও কিছু টাকা দিয়ে দিলাম পথশিশুদের জন্য কাপড় কিনতে। আমার মা ছেলে-মেয়ে মিলিয়ে বিভিন্ন সাইজের কিছু কাপড় কিনল। এই কাপড় কিনে আম্মা খুব আনন্দ পেলেন মনে হল।

তবে আমার আরও কিছু বাজেট ছিল। আর এর সাথে আমার এক ভাই কিছু যোগ করল। সেই টাকা নিয়ে আমার বোন গেল কাপড় কিনতে। সে পরমানন্দে কিছু টি-শার্ট-প‌্যান্ট কিনল। কেনার সাথে সাথেই সে এক পথশিশুকে পেয়ে গেল।

এবং সাথে সাথেই তাকে একটা টি-শার্ট দিয়ে দিল। বাসায় বেশ কিছু নতুন কাপড় তো আসল। এখন তা কিভাবে কোথায় দিব তাই ভাবছিলাম। আমার তো একটু লজ্জাই লাগতে শুরু করল। তবুও চোখ মুখ শক্ত রেখে প্ল্যান করছি।

ঠিক হল, চাদ উঠলে রাত ১০টার পর সব কাপড় নিয়ে বের হব। প্রথমে ভেবেছিলাম আমার সাইকেলে করেই নিয়ে নিব। এখন দেখছি সাইকেলে এসব নেয়া যাবে না। আবার আমার বোনের খুব আগ্রহ নিজের হাতে এগুলো দিবে আর বাচ্চাদের চোখ-মুখের আনন্দ দেখবে। আমার এক বন্ধুর ট্রান্সপোর্ট পার্টনার হওয়ার কথা ছিল।

কিন্তু সে শেষ মুহূর্তে আর সময় দিতে পারল না। তার সময় কোহিনূরের চেয়েও দামী। এসময় আমি পেয়ে গেলাম আমার এক সুহৃদ ড্রাইভারকে। সে রাতে আমাকে নিয়ে বের হবে বলল। সন্ধ্যায় বাসার বাজারের জন্য বাজারে গেলাম।

সেখানে সেমাই কিনতে কিনতে মনে হল তাদের জন্যও তো সেমাই কিনতে পারি। আবার মনে হল তারা সেমাই রাধবে কি দিয়ে? দুধ/চিনি তো আর আমি দিতে পারব না। পরে মনে হল কেউ না কেউ হয়ত দুধ/চিনি বা এর টাকা দিবে। সেমাই প‌্যাকেটও কিনে নিলাম কিছু। রাত ১১টার দিকে গাড়ী নিয়ে বের হলাম।

সঙ্গী আমার আর আমার বোনের পরিবার। আমরা আমাদের ছেলেদের কোলে রেখেই অন্য শিশুদের তাদের জন্য কেনা কাপড় আর তার মায়েদের হাতে সেমাইয়ের প‌্যাকেট দিলাম। আমার বাসা বাড্ডায়। বাড্ডা থেকে বের হয়ে গুলশান এলাকাসহ ঘুরে ঘুরে অল্প কিছু শিশুদের কাছে যেতে পারলাম। তবে এই কাজে যেহেতু সবাইকে দেয়া সম্ভব না তাই কিছু উত্তেজিত লোকদের তো মুখামুখি হওয়াই লাগে।

এছাড়া কাজটা খুবই ভালভাবে শেষ করতে পারলাম। সবচেয়ে ভাল লাগল যখন এক মা বলছিল, "আমি আমার বাচ্চাদের জন্য নতুন কাপড় কিনতে পারি নাই। আল্লাহকে বারবার বলতেছিলাম। আল্লাহ মিলায় দিছে"। এই শ্রেনীর লোকজন যে খুব ভাল বা সত্য কথা বলে বা তারা আসলেই গরীব বা তারা মৌসুমী গরীব না তা আমি বলতে পারব না।

আমি আমার কাজ করেছি। এখন কথা হচ্ছে আমি এই ব্যক্তিগত গল্প করলাম কেন? নিজের প্রচার? হতে পারে। তবে মূল যে কারন তা হল যেন অন্যরাও সাহস করে কাজটি করে ফেলে। আমার মনেও অনেকদিন ইচ্ছাটা ছিল কিন্তু সংকোচের কারনে করতে পারি নাই। আমি করে ফেললাম।

আপনার মনেও যদি এমন ইচ্ছা থাকে নেমে পড়ুন। আমি মনে করি নিয়ত ঠিক থাকলে দান প্রকাশ্যে করা উচিৎ বা দানের কথা প্রকাশ করা উচিৎ যেন অন্যরা উৎসাহী হয়। বা তারা একটা ভাল উপায় খুজে পায়। আশা করি আমার আত্নপ্রচার ভালভাবে নিবেন। আল্লাহ আমাদের সহায় হোন।


সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.