কুমিল্লা মহানগরীর ধর্মসাগর দিঘির উত্তর-পশ্চিম পাড়ে সিটি পার্ক। এখানে বুকভরে নিঃশ্বাস নিতে নগরীর মানুষ সকাল-বিকাল ভিড় জমায়। পার্কে ছাতার মতো ছাদ দেওয়া একটি কক্ষ আছে। এ কক্ষের নাম 'অবকাশ'। এর নিচে রয়েছে পাকা বেঞ্চ।
এখানে লোকজন আড্ডা দেয়। তবে বিকাল ৪টার পর দেখা যায় কেউ আড্ডা দেয় না, কিছু ছেলে-মেয়ে কিচিরমিচির শব্দ তুলে পড়ে। তাদের পোশাক দেখে বোঝা যায় হতদরিদ্র পরিবার থেকে এসেছে। কারও শার্টের বোতাম কিংবা প্যান্টের চেন নেই। কারও পায়ে স্যান্ডেল নেই।
বয়স ৪ থেকে ১০ বছরের মধ্যে। তবে চোখেমুখে রয়েছে আলোর অন্বেষা। এদের বিনামূল্যে পড়ার ব্যবস্থা করেছে কুমিল্লার বিভিন্ন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া কিছু ছাত্র। শিক্ষকদের বয়স ১৬ থেকে ২২ বছরের মধ্যে। নিজেদের হাত খরচের টাকায় এই শিশুদের খাতা-কলমও কিনে দেন উদ্যোক্তা ছাত্ররা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উদ্যোক্তা এই ছাত্ররাও ধনী পরিবারের সন্তান নন। সবাই মধ্যবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের। শিক্ষার্থীরা তাদের মামা বলে ডাকে। সে কারণে এটি 'মামাদের স্কুল' নামে পরিচিত। এক শিক্ষার্থীর নাম ফাতেমা।
থাকে শাসনগাছা বস্তিতে। তার মা অন্যের বাসায় কাজ করে। দুই বোনের মধ্যে সে ছোট। বাবা আরেকটি বিয়ে করে তাদের ফেলে গেছে। ফাতেমা আগে বোতল কুড়াত।
তার ভাষায়- প্রথম ভর্তি হই মামাদের স্কুলে। পরে করুণাময়ী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। তার ইচ্ছা বড় হয়ে ডাক্তার হবে। আরেক শিক্ষার্থীর নাম আলম। থাকে আড়াইওরা এলাকায়।
বাবা-মা দুজন বোতল কুড়ান। আলম বড় হয়ে বিদ্যুতের মিস্ত্রি হতে চায়। পথশিশুদের শিক্ষক ইলিয়াস হোসেন ভিক্টোরিয়া কলেজের সোসিওলজির ছাত্র। তিনি বলেন, বিকালবেলা এখানে না আসতে পারলে অস্থির লাগে। শিশুদের সঙ্গে বুধবার ছাড়া প্রতি বিকালের ৪টা-৬টা সময়টা আমাদের আনন্দে কাটে।
তারা এখন আমাদের আত্দার আত্দীয়। কুমিল্লার পথেঘাটে যেন একটিও পথশিশু না থাকে, সবাই যেন স্কুলমুখী হয় সে চেষ্টা করছি। স্কুলের উদ্যোক্তা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের বিবিএর ছাত্র এ আর মো. মানিক সরকার। তিনি জানান, অবসর সময়ে পার্কে ঘুরতে আসতাম। এখানে এসে নজরে পড়ত কিছু শিশু মা-বাবার হাত ধরে ভালো পোশাক পরে আনন্দচিত্তে ঘুরছে।
আর কিছু শিশু খালি গায়ে বস্তা নিয়ে কাগজ ও বোতল কুড়াচ্ছে। আমাদের ভাবনায় এলো কিছু করার। পথশিশুদের পড়ানোর জন্য অবকাশের কক্ষটি বেছে নিলাম। ২০১১ সালের ৯ ডিসেম্বর থেকে কাজ শুরু করি। ১৯ জন ছাত্র একত্র হলাম।
সবার হাত খরচের টাকা থেকে মাসিক চাঁদা নিয়ে গঠন করলাম 'অবকাশ ওয়েল ফেয়ার ফাউন্ডেশন'। এখন আমরা ২৫ জন ছেলে-মেয়েকে পড়াচ্ছি। শিক্ষক আমরা নিজেরাই। শিশুদের বই, খাতা, কলম ও ব্যাগ দেওয়া হচ্ছে। ঈদে সেমাই-চিনি ও জামা দেওয়া হয়।
পড়াতে সবাই সহযোগিতা করছে। শিশুরা এলে অন্যরা জায়গা ছেড়ে দেয়। পথশিশুদের হাতে বই ধরানো খুব সহজ ছিল না। প্রথমে শিশুদের পরে অভিভাবকদের বোঝাতে হয়েছে। কারণ অধিকাংশ শিশু বস্তিবাসী ও দরিদ্র।
তাদের অভিভাবকরা কাজের বুয়া কিংবা বোতল কুড়ানি। শিশুদের অধিকাংশই অ-আ পড়তে পারত না। অনেকে এখন স্কুলে পড়ে। তাদের অভিভাবকদের সঙ্গে মাসে দুবার মতবিনিময় করি, যাতে তারা ঝরে না পড়ে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।