আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

শৈবাল এখন বড় হয়েছে

কিছু মানুষ ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে স্বপ্ন দেখে। কিছু মানুষ স্বপ্নটা সত্যি করার জন্য ঘুম থেকে জেগে উঠে। জীবন আপনার কাছে সেভাবেই ধরা দিবে আপনি যেরকম থাকবেন।

গ্রামে পাশাপাশি বাড়ি হলে এরকম সমস্যা হয়। কিছু একট নিয়ে বিরোধ থাকেই।

হয়ত দুই বাসার মাঝখানে কোন গাছ থাকবে। সেই গাছের ফল কে কেড়ে খাবে? দুই বাড়ির সামনের জমিজমা নিয়ে ঝামেলা থাকবে। গ্রামের সালিশীতে যেটার এমন কোন মিমাংসা হবে যেটাতে কেউই খুশি হবেনা। শৈবাল এর অবশ্য এসব বোঝার তেমন কোন ইচ্ছাই ছিলনা। জীবন নিয়ে তার একটাই আক্ষেপ।

সে বড় হচ্ছেনা কেন। বড় হওয়ার অনেক মজা। নিজের মত করে থাকা যায়। সেইদিন কার কথা। পাশের গ্রাম এ যাবে সে হাট দেখতে।

তার চাচা গেল তাকে যেতে দেওয়া হল না। মায়ের বেশি ভয়। তুই তো আর ব্যাটা মানুষ না। তুই হইলি ছুটু পোলাপাইন। শৈবাল মাকে বুঝিয়েও পায়না যে তার বয়সি ছেলেপেলেরা গ্রামে একাই ঘুরে।

শৈবাল অভিযোগ নিয়ে বাব-চাচা দের কাছে যায়। তারাও বলে, আরে বেটা বড় হ। ব্যাটা মানুষ হ আগে। শৈবাল এর চাচা সুলায়মান অবশ্য তাকে বেশ আদর করে। এটা ওটা কিনে দেয়।

সুলায়মান রাশভারী আর রগচটা লোক। পাশের বাড়ির কাওসারদের সাথেই তাদের গ্যাঞ্জাম। ঘটনা যখন ঘটে শৈবাল তখন ছিলই না। শৈবাল ঘরের মধ্যে ছিল। গ্রামের হাটবারের কোন দোকান এর পজিশন নিয়ে কাওসার এর সাথে সুলায়মান এর কথাবার্তায় কাটাকাটি চলছিল।

হটাৎ সুলায়মান ঘরে ঢুকে দা হাতে নিল। বের হয়ে কিছু একটা করল যাতে শৈবাল ঘরে বসে খালি আর্ত-চিৎকার টাই শুনল। বের হয়ে ভয়াবহ দৃশ্য দেখল। কাওসার গোঙ্গাইতেসে। হাসপাতালে নেওয়ার পথে কাওসার এর মৃত্যু হয়।

কাওসার এর সাথে সুলায়মান এর আগেও ঝগড়া হইসে। এরকম হবে কেউই ভাবে নায়। মার্ডার অনেক বড় ব্যাপার। গ্রামের ছোটখাট ঝগড়া সালিশীতে মিমাংসা হতে পারে মার্ডার না। তার উপর আবার কাওসার এর দুই ভাই মজনু আর তারেক, এদের কাছে কাওসার এর মৃত্যু যতটা না গুরুত্ববহন করে তার থেকে বেশি ব্যস্ত তারা ছিল পারিবারিক ঝগড়ার ক্ষোভ মিটানো।

সুলায়মান কে ফাসাইতে পারলে তাদেরো লাভ তাই পুলিশ আসল। গ্রামে মাতব্বর এর অভাব নাই। সুলায়মান কে কিভাবে প্রাণে বাঁচানো যায় সেটা নিয়ে অনেক কথাবার্তা হল। তারপর ঠিক হল পুলিশ কে বলা হবে খুনটা করেছে শৈবাল। শৈবাল অপ্রাপ্ত বয়স্ক।

তার ফাঁসি হবেনা। সুলায়মান সাহায্য করেছে। দুইজনেরি কিছু জেল হবে। কিন্তু ব্যাপারটা যত সহজভাবে চিন্তা করা হল মুল ব্যাপারটা এমন সহজ মোটেও হলনা। পুলিশ পুরা ঘটনাটা টাকা খাওয়ার জন্য তাদের মত করে সাজাল।

পুলিশ এর রেকর্ড এ শৈবাল এর বয়স থাকল কম করে হলেও ১৬। শৈবাল এর বয়স পরীক্ষা করা হল। ডাক্তার এর রিপোর্ট এ আসল ১২ থেকে ১৬। পুলিশ টাকা খাওয়ার জন্য সেটাকে বানাল ১৪ থেকে ১৮। শৈবাল কে অনেক ধরনের বেগ পোহাতে হল।

অনেক জায়গায় শুনতে হইল, এইটুকু ছেলে খুন করে! শেষ মেশ যেভাবেই হোক প্রমান হল তার বয়স নাকি আঠার। মায়ের আদরের ছেলে যে কিনা মায়ের চোখের দৃষ্টি সীমার বাইরেই যায় না সে হল খুনের আসামী। যেহেতু পুলিশের মামলা তে ঘটনাটা হটাৎ করে হয়ে যাওয়া, প্ল্যান করে মার্ডার না তাই শৈবাল আর তার চাচা দুইজনেরি জেল হল। দা দিয়ে কোপ দেওয়াতে শৈবালের ১০ বছর আর চাচা সুলায়মান এর মাত্র ২ বছর। যেহেতু সে শুধুই সাহায্যকারী।

জেল এ থাকতে একবার খালি চাচা এর সাথে ভাতিজার দেখা হইসিল। সুলায়মান গিয়ে শৈবাল কে বলে কেমন আসিস তুই? শৈবাল বলে, বড় হইয়া গেসি চাচা। ব্যাটা মানুষ হইসি। প্রকৃত অর্থেই শৈবাল তো এখন অনেক বড়ই হইসে।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.