ক
কটি অনেক উঁচু। কত উঁচু আন্দাজ করা কঠিন। ঠিক মাঝে একটি গম্বুজ। কিন্তু গম্বুজের চূড়াটায় কি আঁকা বা লেখা তা ঠিকমতো বুঝা যায়না। অস্পষ্ট বুঝা যায় কিছু একটা লেখা বা আঁকা।
কখনও মনে হয় সুন্দর লতা-পাতা ফুল আঁকা। কখনও মনে হয় লাইনের পর লাইন কোন কিছু লেখা। বিজ্ঞানের কোন সূত্র। অথবা কোন ঘটনার বর্ননা। প্রাচীন পৃথিবীর উপসাগরীয় অঞ্চলের একটি ভাষা ছিলো।
এ ভাষার ক্যলিওগ্রাফি ছিলো খুব সুন্দর। ক্যলিওগ্রাফির কারনে এ ভাষার বাক্য দূর থেকে ফুল বা কারুকার্যময় ছবি মনে হতো।
নুশ ভেতরে ঢুকে ভালোভাবে কটি দেখছে। বিশাল করে প্রতিটি অংশ তার আগেই অনেকবার দেখা হয়ে গেছে। ভিডিও ফুটেজ আর স্থির ছবিতে।
তারপরেও নুশ করে সৌন্দর্য্যে অবাক হয়েছে। এত সুন্দর করেও কোন অফিস সাজানো যায়?
অসাধারন। অসাধারন।
নুশের মুখ ফুটে বের হয়ে গেলো। যদিও ওর কথা শোনার জন্য কাছাকাছি কেউ নেই।
বিশাল কে মাত্র দু’জন ব্যাক্তি। বিজ্ঞানী ফাত আর রেন। দু’জনেই তার কাছ থেকে প্রায় পাঁচশ গজ দূরে। নিবিষ্ট মনে তাদের সামনের বিশাল স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে আছেন।
করে সৌন্দর্য দেখে মুগ্ধ হতে নুশ এখানে ঢোকেনি।
নুশ বিশ্ব ব্যবস্থার গোয়েন্দা সংস্থার প্রধান। এখানে সে বিশেষ মিশনে এসেছে। গোয়েন্দা তথ্য অনুযায়ী পৃথিবী গভীর সংকটের মুখোমুখি। পৃথিবীর নিরাপত্তা হুমকিতে। এই হুমকির মূল কারন তার পাঁচশ ফুট দূরে বসা দুই বিজ্ঞানী।
এই কালপ্রিট দুইটার সাথে কথা বলে তাকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। পৃথিবীর নিরাপত্তার ব্যবস্থা সে কোন পথে করবে। এ মিশনের ব্যাপারে বিশ্ব পরিচালনা সংস্থা গোপন বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। নুশকে মিশনের যেকোন পর্যায়ে যে কোন সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য তার পদাধিকারের অতিরিক্ত মতা দেয়া হয়েছে। বিশ্ব পরিচালনা সংস্থার কোন কোন পরিচালক মতাটিকে ‘মাত্রাতিরিক্ত’ বলে বাঁকা চোখেও দেখছেন।
সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নুশ প্রয়োজন মনে করলে বিশ্ব পরিচালনা সংস্থার অনুমোদন ছাড়াই পৃথিবীতে সামরিক অভিযান চালাতে পারবে।
খ//
বিশাল করে চারিদিকে যে অসংখ্য ক আছে তা সহজে বুঝা যায়না। কটি যারা নিয়মিত ব্যবহার করেননা তাদের জন্য কটির কোন দরজা খুঁজে বের করা মহা কঠিন। বিশাল কটির চারিদিকে অসংখ্য ছোট ছোট ক। আর মাঝে গম্বুজওয়ালা বিশাল এ ক।
ছোট কগুলিতে তরুন বিজ্ঞানীরা মহাকাশে প্রাণ নিয়ে গবেষনা করছেন। আর মাঝের কটিতে তাদের নেতৃত্বে রয়েছেন দুই বিজ্ঞানী। ফাত আর রেন।
বিশাল করে মতোই কটির স্ক্রিনও বিশাল। দেয়াল আর স্ক্রিন আলাদা কিছুনা।
দেয়াল-ই স্ক্রিন। স্ক্রিন-ই দেয়াল।
বিজ্ঞানী ফাত আর রেন গভীর মনঃযোগে স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে আছেন। স্ক্রিনে বিলোভেরা নত্রের একটি গ্রহকে দেখা যাচ্ছে। গ্রহের পানিতে নানা ধরনের শৈবাল ভেসে বেড়াচ্ছে।
কোনটা লালচে,কোনটা নীলাভ সবুজ, কোনটা কমলা সবুজ। বেশকিছু শৈবালের ফুল ফুটে আছে। একগুচ্ছ নীলাভ-সবুজ শৈবাল স্ক্রিনের একদম সামনে। তাদের ফুলগুলি অন্য ফুলের চাইতে কিছুটা বড়। সেগুলি একসাথে নড়াচড়া করছে।
স্ক্রীনের একপাশে বিভিন্নরকম তথ্য উঠছে।
‘রেন বুঝতে পারছো ওরা কি বলতে চাইছে? ফাত বললো। ’
‘আমরা তো আগেই এমন কিছু আশঙ্কা করেছিলাম। এখন ওরা আশঙ্কা করছে। ’
‘এখন আমাদের কি করা উচিৎ রেন?’
‘ঠিক কি করা উচিৎ আমি জানিনা।
তবে এই মূহূর্তে এক ধরনের তাগিদ অনুভব করছি। আমাদের এ আবিস্কারটি আমাদের বাইরে অন্য কাউকে জানানোর তাগিদ। যাতে আমাদের কিছু হলে কেউ না কেউ আমাদের আবিস্কার সম্পর্কে জানে। ’
চোখ বড় বড় হয়ে গেলো ফাতের। ‘কি বলছো রেন ? বিশ্ব সংস্থা আমাদের মেরে ফেলবে ? ’
মুচকি হেসে জবাব দিলো রেন।
‘তুমি বোকার মতো কথা বলছ। যারা একটা সভ্যতাকে বুঝতে পারেনা। একটা সভ্যতাই যাদের জন্য হুমকির মুখে, তাদের কাছে আমরা কি? ছাতু। ’
‘আমরা কিছু না?’
চোখের বিস্ময় কাটছে না ফাতের। ‘এতদিন ধরে আমাদের গবেষনা পৃথিবীর কত কাজে আসলো।
সাড়াজীবন ব্যায় করলাম পৃথিবীর কল্যানে। আমরা কিছু না ? ’
‘লোভে উš§ত্ত মানুষের কাছে কোন কিছুই কিছুনা। তারা অনায়াসে অনেক ধ্বংস করতে পারে। হত্যা করতে পারে। পৃথিবীর ইতিহাসের কোন কিছুই কি তোমার মনে নেই ফাত? ’
বেশ কিছুন চুপ করে রইলেন বিজ্ঞানী ফাত।
কিছুই বলতে পারলেন না। তার ভেতরটা হাহাকার করতে থাকলো। বিশ্ব সংস্থার কাছে এতই তুচ্ছ তারা?
‘কাকে জানাতে চাচ্ছো?’ রেনের প্রশ্নে নিরবতা ভাংলো ফাতের।
‘আমাদের গবেষনা কেন্দ্রের কাউকে জানালে হবেনা। দূরের কাউকে জানাতে হবে।
আক্রান্ত হলে আমাদের সাথে সাথে আমাদের গবেষনা কেন্দ্রের অন্যরাও আক্রান্ত হবে। ’
‘দূরে কাকে বলতে পারি?’
‘গোবি মরুভূমিতে ওরিয়া নামের আমাদের এক ছাত্র গবেষনা করে। ওকে জানাতে পারি। ’
‘ঠিক আছে, তাহলে তা-ই করো। ’
মূহূর্তেই যোগাযোগ হলো ওরিয়ার একাউন্টের সাথে।
বছরের পর বছর গোপন রাখা দুই বিজ্ঞানীর গবেষনার সমস্ত ফাইল এক মূহূর্তে চলে গেলো তরুন বিজ্ঞানী ওরিয়ার একাউন্টে।
বিজ্ঞানীরা জানেননা তাদের গবেষনার বিয়টি বহু আগেই একজন জেনে গেছে। নুশ। বিশ্ব সংস্থার গোয়েন্দা প্রধান।
গ//
মানমন্দির না দূর্গ?
মানমন্দিরের চারিদিকে বেশ উঁচু দেয়াল।
দরজাটিও পুরনো আমলের দূর্গের মতো। কাঠ আর লোহার তৈরী। কাঠে চমৎকার কারুকাজ। যিনি দরজাটিতে কাজ করেছেন তিনি নিঃসন্দেহে মাসের পর মাস সময় ব্যায় করেছেন। মানমন্দিরের দেয়ালেও ম্যুরাল আঁকা।
দরজার পাশের ম্যুরালে এক কিশোরী দু’টি হরিন শাবকের পেছনে ছুটছে। চারিদিকে গাছ দুলছে বাতাসে। দূরে একটা নদী।
মরুভূমির মানমন্দিরে এ ম্যুর্যাল বেশ বেমানান। মরুভূমির মানমন্দিরের দেয়ালে থাকবে মরুদ্যানের দৃশ্য।
খেজুর গাছ, বেদুঈন শিশুর খেলা বা উট চড়ানোর চিত্র। মরুভূমির দৃশ্য না এঁকে শিল্পী কেন এমন দৃশ্য আঁকলেন? তিনি কি মরুভূমীর শিল্পী না ? না যখন এ ভূমি মরু ছিলো না তখন এ ছবি আঁকা?
মানমন্দিরের ম্যূরাল নিয়ে ভাবতে ভাবতে লোকটা মন্দিরের প্রধান গেইট থেকে বেশ কিছুটা দুরে চলে গেলো। মানমন্দিরটির পাশের বালি মোটামুটি শক্ত। হাটতে হাটতে লোকটি যেখানে চলে এসেছে সেখানে বালি অনেক নরম। পা দেবে যায়।
তারপরেও লোকটি না থেমে এগুতে লাগলো। বালিতে পা ডুবিয়ে ডুবিয়ে আস্তে আস্তে হাটছে সে। লোকটি কি মানুষ না রোবট? এ ব্যাপারে যে কারো সন্দেহ হতে পারে। কারন আজ দিনে এখানে তাপমাত্রা ছিলো বেয়াল্লিশ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড। এখন তাপ নেমে এসেছে আটাশ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডে।
এখানকার অধিবাসি হলে তার শীত করবে। মরুভূমির ঠান্ডা হাওয়ায় এ মধ্যরাতে কোন স্বাভাবিক মানুষ শখ করে হাটবে না। অন্তত গায়ে শীতাতপ নিয়ন্ত্রনের পোষাক ছাড়া।
লোকটি আকাশের দিকে তাকালো। শরৎের পরিস্কার আকাশ।
আকাশে কালপুরুষ নত্রপুঞ্জ দেখা যাচ্ছে। কালপুরুষ নত্রপুঞ্জের পাশে তারার মতো পাঁচটি খুব ছোট আলো তৈরী হলো। আলোর ফোঁটাগুলি খুব দ্রুত বড় হচ্ছে। বিশ্ব ব্যবস্থার পাঁচটি গোয়েন্দা আকাশযান। লেজার বীম, আল্ট্রাভায়োলেট বীমসহ মারাত্মক সব অস্ত্রই রয়েছে এগুলিতে।
কিছুনের মধ্যে তারা মানমন্দিরকে ঘিরে সমান দূরত্বে নামলো। তাদের আসার আর বালিতে নামার একটু শব্দও হলো না।
আকাশযানের এ বেষ্টনীর ভেতরে আরো একটি ছোট্ট আকাশযান। এটি আগেই এখানে এসেছে। সেটি ঐ পাগল লোকটার।
যে মরুভূমির এ শীতল রাতে শীতাতপ নিয়ন্ত্রনের পোষাক ছাড়াই বালিতে পায়চারি করছে।
লোকটা আবার এগিয়ে গেলো মানমন্দিরের দরজার দিকে। এবার তার দু’পাশে চারজন অস্ত্রধারি। হাতের কমিউনিকেটর মানমন্দিরের দরজায় ছোঁয়ালেন তিনি। তার কমিউনিকেটর মূহূর্তেই মানমন্দিরের কম্পিউটার সিস্টেমের নিয়ন্ত্রন নিজের কাছে নিয়ে নিলো।
দশ সেকেন্ডের মাথায় তার কমিউনিকেটর তাকে অভ্যর্থনা জানালো।
‘সেল, গোবি’র ওরিয়া মানমন্দিরে আপনাকে স্বাগতম। এ মানমন্দিরের মূল কম্পিউটারের নিয়ন্ত্রন এখন আমাদের হাতে। এই মূহূর্তে মানমন্দিরে কোন ধরনের সন্দেহজনক আচরন দেখছিনা। আপনার প্রবেশের জন্য মানমন্দির সম্পূর্ন নিরাপদ।
’
সন্তুষ্টির হাসি নিয়ে মানমন্দিরের ভেতরে ঢুকলো সেল। সেল, বিশ্ব সংস্থার সহকারি গোয়েন্দা প্রধান।
কিন্তু সেলের সন্তুষ্টি পাঁচ মিনিটের মধ্যেই হাওয়া হয়ে গেলো। তার সাথের লোকজন আর রোবটদের পাঁচ মিনিট লাগলো মানমন্দিরের সমস্ত ক আর গবেষনাগার চষে ফেলতে। মানমন্দিরের গবেষকদের এনে লাইনে দাঁড় করানো হয়েছে তার সামনে।
দু’জনকে আনা হয়েছে গবেষনাগার থেকে। বাকিদের আনা হয়েছে ঘুম থেকে তুলে। তাদের কমিউনিকেটরের সব তথ্যও চলে এসেছে সেলের লোকজনের কাছে।
কিন্তু মানমন্দিরের প্রধান গবেষক ওরিয়া নেই। তার কমিউনিকেটরও নেই।
কমিউনিকটরের কোন সিগন্যালও কোথাও ধরা পড়ছে না ।
ঘ//
মরুভূমিতেও বরফ জমে? জায়গাটিতে এসে ওরিয়ার মনে প্রথম এ প্রশ্নটি-ই এসেছিলো। কয়েক ঘন্টা চলে গেছে। কিন্তু জায়গাটি দেখে ওরিয়ার বিস্ময় কাঁটছে না। যতই জায়গাটি দেখছে ততই ওর ভালো লাগছে।
নিপ্পনকে জানাতে ইচ্ছে করছে। নিপ্পন ওর বান্ধবী। কিন্তু জানাতে গেলেই কমিউনিকেটর চালু করতে হবে। ওরিয়ার এই মূহূর্তে কমিউনিকেটর চালু করতে ইচ্ছে করছে না। কমিউনিকেটর মানেই আধুনিক মানুষের সাথে থাকা।
আর আধুনিক মানুষ মানেই প্রকৃতি থেকে বিচ্ছিন্ন।
সত্যিই কি বিচ্ছিন্ন? এর পে বিপে একশ করে দু’শ যুক্তি থাকতে পারে। কিন্তু ওরিয়া মনে করে আধুনিক মানুষ মানেই প্রকৃতি থেকে বিচ্ছিন্ন । প্রকৃতির কাছে ফিরতে হলে পুরনো দিনের মানুষ হতে হবে। আর এজন্য প্রথমে বিচ্ছিন্ন করতে হবে কমিউনিকেটর।
ওর মানমন্দির থেকে জায়গাটি প্রায় বিশ কিলোমিটার দূরে। আঠারো কিলোমিটার সমুদ্র পার হয়ে আসতে হয়। অন্যরা পিএসভিতে *১ চললেও ওরিয়ার জন্য একটা উড়ন্ত পিজিভি *২ বরাদ্দ আছে। পিজিভিতে ওঠার সময়ই ওরিয়া ওর কমিউনিকেটরটি বন্ধ করে দিয়েছে। কমিউনিকেটরের শক্তি যোগায় ুদ্র একটা গ্রাভিটেশন মেশিন।
ওরিয়া গ্রাভিটেশন মেশিনটাও কমিউনিকেটর থেকে খুলে ফেলেছে। বন্ধ অবস্থায়ও গ্রাভিটেশন মেশিনটা কাজ করে কমিউনিকেটরকে কাজের উপযোগি রাখে। ফলে একধরনের সিগন্যাল বের হয় গ্রাভিটেশন মেশিন থেকে। খুলে ফেললে এটি আর কাজ করেনা।
বরফ এলাকায় নেমে ওরিয়া পিজিভি’র গ্রাভিটেশন মেশিনও পিজিভি থেকে খুলে ফেললো।
যাতে ওকে কেউ খুঁজে না পায়। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত পোষাকের বদলে গায়ে চড়ালো পুরনো দিনের মোটা পশমী পোষাক। কান ঢেকে যায় মাথায় এমন একটা টুপি। পশমী পোষাকের ভেতরে টুকিটাকি কয়েকটা জিনিস খুজে পেলো। একটা আলো জ্বালানোর ও আগুন জ্বালানোর যন্ত্র।
একটা ফিডিং টিউব। ফিডিং টিউবের ভেতরে একটি সুষম খাবার খুব কম জায়গায় রাখা আছে। ফিডিং টিউবের ভেতরে এটি টুকরো টুকরো চাকতির মতো আছে। দুই সেন্টিমিটার ব্যাসার্ধের এক চাকতি খাবার খেলে দুইদিন ুধা পাবে না। আর একটা ছোট ছুড়ি।
ওরিয়া এখানে এসে নেমেছে প্রায় তিনঘন্টা হলো। এই তিন ঘন্টায় ওর সহকর্মীরা ওকে খুঁজতে পারেনি। কারন তারা বন্দি। আর বাইরের কোন বন্ধুও তাকে খুঁজেনি। এই মধ্যরাতে কে কাকে খোঁজে।
খুঁজেছে শুধু বিশ্ব গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন। হন্যে হয়ে ওরিয়াকে খুঁজছে। খুঁজতে খুঁজতে তাদের মাথা খারাপ হওয়ার যোগাড়।
*১ পিএসভি: পার্সোনাল সোলার ভেহিক্যাল। সৌরশক্তিচালিত ছোট আকারের কাল্পনিক যান।
যা প্রয়োজনে আকাশে, পানিতে ও ভূমিতে চলতে পারে।
*২ পিজিভি: পার্সোনাল গ্রাভিটেশনাল ভেহিক্যাল: মধ্যাকর্ষ ও মহাকর্ষ শক্তি চালিত কাল্পনিক যান। এটিও প্রয়োজনে আকাশে, পানিতে ও ভূমিতে চলতে পারে।
ঙ//
গবেষনা কেন্দ্রের বিশাল কে বিজ্ঞানী ফাত আর রেন বন্দি। তাদের সামনে বসে আছে গোয়েন্দা সংস্থার প্রধান নুশ।
কেউ কিছু বলছে না। নুশ মাথা নিচু করে আছে। তার সাড়া মুখে চিন্তার ছাপ। কি করবে বুঝতে পারছে না।
কমিউনিকেটরে সেল এর সিগন্যাল।
নুশ সিগন্যাল রিসিভ করলো না। উঠে পাশের কে চলে গিয়ে রিসিভ করলো।
‘সেল খোঁজ পেলে। ’
‘না। ’
‘না মানে? না কেন?’
‘ওরিয়ার কাছে কোন সিগন্যাল ডিভাইস নেই।
তাই আমরা তার অবস্থান খুঁজে পাচ্ছিনা। ’
‘সিগন্যাল ডিভাইস ছাড়া মানুষ চলতে পারে নাকি? ওর কাছে নিশ্চই কমিউনিকেটর আছে। কোথাও যেতে হলে নিশ্চই পিএসভি বা পিজিভি ব্যবহার করেছে। গায়ে নিশ্চই শীতাতপ নিয়ন্ত্রনের পোষাক আছে। এসব থেকে সিগন্যাল পাওয়া যাচ্ছেনা ?’
‘সব কমিউনিকেটরের সিগন্যালই প্রয়োজন না থাকলেও রেকর্ড করা হয়।
মরুভূমিতে ওরিয়ার মানমন্দিরে আমরা অভিযান চালানোর আগেই ওর কমিউনিকেটর বন্ধ করা হয়েছে। অভিযান চালানোর পরে ওকে না পেয়ে ওর পিজিভি এবং সে ব্যবহার করতে পারে সম্ভাব্য এমন পিএসভি ও পিজিভি’র সিগন্যাল পর্যীা করা হয়েছে। ওকে বরাদ্দ দেয়া পিজিভি’র সিগন্যাল আমরা অভিযান শুরুর সময় থেকে বন্ধ রয়েছে। আর ওর শীতাতপ নিয়ন্ত্রনের দুই জোড়া পোষাক মানমন্দিরেই পাওয়া গেছে। ওর সাথের লোকজন জানিয়েছে ও এগুলি ব্যবহার করেনা।
’
‘তা কি করে সম্ভব? শীতাতপ নিয়ন্ত্রনের পোষাক ছাড়া মানুষ কিভাবে বেঁচে থাকতে পারে? এটা কি বলছো? ’
সেল কোন উত্তর দিলো না।
‘ পিজিভি’র সিগন্যাল না পাওয়ার কি কারন থাকতে পারে?’
‘সম্ভবত ওরিয়া কোথাও যাওয়ার পর পিজিভি’র পাওয়ার সাপ্লাই খুলে ফেলেছে। ’
‘তা না হয় খুললো। কিন্তু ঠিক আমারা যখন অভিযান চালাবো সে সময়টাতে? ও কিভাবে জানলো আমরা অভিযান চালাবো?’
সেল নিরুত্তর রইলো।
‘তোমাকে না আগেই বলেছিলাম বিজ্ঞানী রেন আর ফাত কোনো ধরনের সিগন্যাল প্রদান করলে তা রেকর্ড করতে।
নিশ্চই এটা রেকর্ড করতে তোমার মনে ছিলোনা সেল?’
‘না স্যার মনে ছিলো। টেকনিক্যাল সেকশনকে বলা ছিলো। কিন্তু তারা জানালো গ্রাহক যন্ত্রে গ্রহন না করলে তারা কোন সিগন্যাল রেকর্ড করতে পারেনা। বা রেকর্ড করলেও এর অর্থ বের করতে পারেনা। তখন সিগন্যালটি বাইনারি মুডে থাকে।
বাইনারি মুডের সিগন্যাল কোন গ্রাহক যন্ত্রে ধরা না পরলে আমাদের গ্রহনযোগ্য পর্যায়ে থাকেনা। ’
‘বাইনারি মুড মানে?’
‘বাইনারি মুড মানে হচ্ছে যেকোন কথা, গবেষনা, ছবি যা-ই হোক না কেন তা শুন্য আর এক দিয়ে প্রকাশ করা থাকে। আর বিজ্ঞানীদের কমিউনিকেটর যেহেতু বিশেষ ধরনের তাই তারা যে কমিউনিকেটরে এটা পাঠাচ্ছেন সে কমিউনিকেটরে গৃহিত না হলে ঐ সিগন্যাল ধরা যায়না। ’
‘আচ্ছা ঠিক আছে। তোমার সাথে পরে কথা বলছি।
’
নুশ এর মেজাজ খারাপ হয়ে গেছে। সেল ছেলেটা একটা ফাজিল। কত কত ব্যাখ্যা তার কাছে। কোন কাজ ঠিকমতো করার নাম নেই, সুন্দর ব্যাখ্যা নিয়ে বসে আছে। ও যে যে ব্যাখ্যা দিয়েছে তা ঠিক কিনা এটা খোঁজ নিতে হবে।
কাউকে বিশ্বাস নেই। সেলকেও না। সে-ও ওরিয়াকে সড়িয়ে দিয়ে থাকতে পারে।
নিজেকে ঠান্ডা করতে নুশ কিছুন চোখ বন্ধ করে রাখলো। চোখ বন্ধ করে নাকের ডগায় তাকানোর চেষ্টা করলো।
মনে মনে গোয়েন্দা ট্রেনিংয়ের কমান্ড আওড়ালো ‘জিহ্বা দাঁতের আগায়, চোখ নাকের আগায়। ’ এরপর একশ থেকে উল্টো গুনে এক পর্যন্ত এলো।
এ ব্যায়ামে উত্তেজনা কমে। চিন্তা অনেক সংগঠিত হয়।
যখন ওরা অভিযান শুরু করতে যাবে সে মূহূর্তে ওরিয়া তার সকল সিগন্যাল ডিভাইস বন্ধ করে দিয়ে নিরাপদ স্থানে সড়ে গেছে? এটা এমনি এমনি সম্ভব ? নুশ নিজের পায়ের বুড়ো আঙ্গুলের নখের দিকে তাকালো।
অর্ধেক সম্ভাবনা ঘটনাটা এমনি এমনি ঘটেছে। অর্ধেক সম্ভাবনা কেউ তাকে অভিযানের খবর অভিযান শুরুর মূহূর্তে জানিয়ে দিয়েছে। এমনি এমনি ঘটে থাকলে চিন্তা কম। কেউ জানিয়ে থাকলে বিষয়টা অনেক অনেক চিন্তার ব্যাপার। বিশ্বাসঘাতককে ধরতে হবে।
কেউ অভিযানের খবর জানিয়ে থাকলে কে সেটা ?
নুশ তার আরেক সহকারি মিনোটার সাথে যোগাযোগ করলো। মিনোটাকে তার সন্দেহের বিষয়টা জনিয়ে দায়িত্ব দিলো এ অভিযানে প্রত্য পরোভাবে অংশ নেয়া সবার ব্যপারে তদন্ত করতে। সন্দেহের এক নাম্বারে সেল। যাকে সে এতদিন সবচেয়ে বিশ্বস্ত সহকারি মনে করেছে।
চ//
সামনে কতজন দাড়িয়ে আছে? বা থেকে গোনা শুরু করলেই পারে সেল।
কিংবা জিজ্ঞেস করতে পারে পাশে দাড়ানো রোবটটাকে। শুধু সংখ্যা না , ওর কাছে সামনে দাড়ানো লোকগুলির কে কত বিরতিতে নিঃশ্বাস নিচ্ছে, কার হার্ট বিট কতো, প্রেসার কতো, কে কত ডিগ্রি এঙ্গেলে দাড়িয়েছে , সে দাড়ানোটা থেকে বিপদের সম্ভাবনা কতটুকু সব তথ্য আছে। চাইলেই বলে দেবে। কিন্তু সেলের জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে করছে না।
আজ নুশের কথা ওর ভালো লাগেনি।
অভিযান শুরুর আগ মূহূর্তে ওরিয়া সব কমিউনিকেশন ডিভাইস বন্ধ কেন করে দিয়েছে সেটা সেল কিভাবে জানবে। সেল কি ওরিয়াকে বলে দিয়েছে এসব বন্ধ করে পালিয়ে যেতে?
কিন্তু শালা গেলো কোথায়? কেউ তো বলতে পারছে না। আর শীতাতপ নিয়ন্ত্রনের পোষাক না নিয়ে যাওয়ার রহস্যটা কি ? এসব ছাড়া কেউ বেশিদূর কিভাবে যায় ?
সেলের সামনে একজন অল্প বয়েসি তরুনী দাড়িয়ে আছে। তাকে জিজ্ঞেস করা যেতে পারে।
‘আচ্ছা আপনাদের মানমন্দিরের প্রধান ওরিয়া শীতাতপ নিয়ন্ত্রনের পোষাক ফেলে বাইরে গেলো কেনো? শীতাতপ নিয়ন্ত্রনের পোষাক ছাড়া বাইরে হাটা যায়? দিনের চাইতে তো রাতে তাপমাত্রার পার্থক্য অনেক বেশি।
’
‘আপনাকেও তো কিছুন আগে শীতাতপ নিয়ন্ত্রনের পোষাক ছাড়াই বাইরে হাটাহাটি করতে দেখলাম। আপনি কিভাবে পারলেন ?’
উত্তরের সাথে সাথে সেলের কাশি ধরে গেলো। খুক খুক করে ও দ’ু-তিনটা কাশি দিলো। মেয়েটা এত কড়া করে উত্তর দিলো কেন? আর এই কথার মাঝখানে কাশিটা কোত্থেকে এলো?
‘ না মানে আমি তখন একটু দেখার চেষ্টা করছিলাম মরুভূমির আবহাওয়া কেমন। তাই শীতাতপ নিয়ন্ত্রনের পোষাক ছাড়াই হাটাহাটি করছিলাম।
কিন্তু আপনাদের প্রধানতো সাড়ানই মরুভূমিতে আছেন। তার তো নিশ্চই মরুভূমির আবহাওয়া দেখার শখ হয়নি। ’
কথাটা বলে সেলের নিজের উপরই মেজাজ খারাপ হলো। এই পুচকে মেয়েটাকে ব্যখ্যা দেয়ার কি আছে ? ওকে যা জিজ্ঞেস করা হয়েছে তার উত্তর দেবে। এত বেশি কথা বলে কেন ?
‘ওরিয়া শীতাতপ নিয়ন্ত্রনের পোষাক পড়েননা।
সাধারন পোষাকের মাধ্যমে তাপমাত্রার ভারসাম্য রা করে চলাফেরা করেন। কখনই শীতাতপ নিয়ন্ত্রনের পোষাক ব্যবহার না করায় তার তারতম্য সহ্য করার মতা বেশি। তিনি প্রকৃতিবাদি। ’
শব্দটা নতুন ঠেকলো। প্রকৃতিবাদি।
প্রকৃতিবাদি আবার কি?
‘প্রকৃতিবাদি মানে কি ?’
‘প্রকৃতিবাদি মানে হচ্ছে তিনি কৃত্রিম ব্যবস্থায় অভ্যস্থ না হয়ে প্রাকৃতিকভাবে চলতে পছন্দ করেন। যেমন শীততাপ নিয়ন্ত্রনের পোষাক পড়ে বা শীততাপ নিয়ন্ত্রন যন্ত্রের মাধ্যমে স্থাপনার তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রন তিনি পছন্দ করেননা। আমাদের এই মানমন্দিরটার ভেতরে কোন শীততাপ নিয়ন্ত্রন যন্ত্র নেই। কিন্তু এটা এমনভাবে তৈরী করা যে মরুভূমিতে রাতের ঠান্ডার সময় এর ভেতরে শীত লাগবে না। আর দিনের প্রচন্ড গরমেও ভেতরে গরম লাগবে না।
তার এরকম আরো অনেক ব্যাপার আছে। ’
‘ ঠিক আছে আপনাদের প্রধানকে ধরার পর মরুভূমির প্রচন্ড গরমেও দু’শ মাইল স্পিডে একটা দৌড় দেয়াবো। ওনার জন্য নিশ্চই এটা কোন ব্যাপার না। ’
সেল খোঁচা দিলো মেয়েটাকে। মূহূর্তেই মোম একটা জবাব দিয়ে সেলের কথাটাকে উড়িয়ে দিলো মেয়েটা।
‘ আগে ওরিয়াকে খুঁজে বের করে নিজের দৌড়টা শেষ করুন। তারপর না হয় ওনাকে দৌড় দেয়াবেন। '
মুখটা কালো হয়ে গেলো সেলের। পাল্টা বলার মতো মোম কোনো জবাব খুঁজে পাচ্ছেনা ও।
ছ//
বিলোভেরা নত্রের এ ছোট্ট গ্রহটিতে কোন বড় প্রাণী নেই।
গ্রহটির নাম টারস। টারসের স্থল খুব অল্প। পুরো গ্রহের বেশিরভাগই পানির নিচে। পানির উপরে ভেসে আছে নানা ধরনের উদ্ভিদ। বেশিরভাগ শৈবাল জাতীয়।
আছে ছোট আকৃতির প্রাণীও। কোনো প্রাণী অক্সিজেন নিয়ে বেঁচে থাকে। কোনোটা বেঁচে থাকে নাইট্রোজেন নিয়ে।
স্থলভাগের কাছে মাইলের পর মাইল এলাকা জুড়ে ছড়িয়ে আছে নীলাভ সবুজ শৈবালের একটি বিশাল কলোনী। প্রতিটি শৈবাল আকারে পৃথিবীর নীলাভ সবুজ শৈবালের চাইতে বেশ বড়।
প্রতিটি শৈবালের একটি করে ফুলের মতো অংশ। সবগুলি ফুলই সূর্যমুখি ফুলের মতো একদিকে মুখ করে আছে।
শৈবালের ফুলের মতো অংশগুলি সব মুখ করে আছে পৃথিবীর দিকে। শৈবালের দেহের ফুলের মতো অংশগুলি কাজ করছে এন্টেনার মতো। এরা যোগাযোগ করছে পৃথিবীর সাথে।
বিজ্ঞানী ফাত আর রেনের সাথে।
বিজ্ঞানী ফাত আর রেন যে বিপদে আছে এটা ওরা জানে। দু’বিজ্ঞানী বিপদে পড়ার আগেই ওরা বিজ্ঞানীদের সতর্ক করেছিলো। তারা সতর্কবানী শোনেননি। নিজেদের গবেষনাগারে বন্দি দু’ বিজ্ঞানীকে কিভাবে উদ্ধার করা যায় এ নিয়ে ভাবছে ওরা।
ওরা মানে আলাদাভাবে কেউ না। বা অল্প কয়েকজন না। কোটি কোটি শৈবাল একসাথে ভাবছে। ভাবনার জন্য নির্দিষ্ট করা বিদ্যুৎ তরঙ্গ দ্রুত চলাচল করছে তাদের মধ্যে। প্রচুর তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে পৃথিবী থেকে।
কিভাবে দু’ বিজ্ঞানীকে সাহায্য করা যায়।
ওদের কোনো মহাকাশযান নেই যে পৃথিবীতে অভিযান চালাবে। যা করার দূর থেকেই করতে হবে। দূর থেকে কিভাবে করবে?
চিন্তার তরঙ্গে একগুচ্ছ শৈবালের তৈরী করা নতুন তরঙ্গ এলো। দূর থেকেই পৃথিবীর বিজ্ঞানীর সহায়তা করা যাবে।
পৃথিবী থেকে ওরা মহাকর্ষ শক্তি ব্যবহার করে তথ্য সংগ্রহ করে। এ শক্তি ব্যবহার করেই পৃথিবীতে আঘাত হানা যাবে। পৃথিবীর মানুষেরা কমিউনিকেটর নামের একটি যন্ত্রের মাধ্যমে নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ করে। কমিউনিকেটরে ব্যবহার করা হয় বিদ্যুৎ ও চৌম্বক শক্তি। চৌম্বক শক্তি মহাকর্ষ শক্তির আরেকটি রুপ।
পৃথিবীর অনেক যানবাহনে ব্যবহার হয় মহাকর্ষ শক্তি চালিত মোটর। কোনভাবে ওদের ভূ-পৃষ্ঠে মহাকর্ষ শক্তির সামান্য সময়ের শুণ্যতা বা অতিরিক্ত চাপ তৈরী করে সবকিছু লন্ডভন্ড করে দেয়া যায়। কিন্তু এতে আবার অনেক অনেক পৃথিবীবাসির তি হবে। যারা দু’বিজ্ঞানীর কোন তি করেনি। যারা এসবের সাথে জড়িত না তাদের তি না করে অভিযান চালানোর পরিকল্পনা বের করতে হবে।
পরিকল্পনা এ পর্যায়ে এসে থেমে গেলো। কারন পৃথিবী থেকে নতুন তথ্য এসেছে। পৃথিবীবাসি টারস গ্রহে আক্রমনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। হাইড্রেজেন বোমা মেরে টারস গ্রহের সমস্ত প্রাণ শেষ করে দেয়া হবে।
টারস পরিণত হবে এক বিশাল ধ্বংসস্তুপে।
জ//
টেবিলটি কুঁচকুঁচে কালো। টেবিলটি দেখেই নুশের মনে কাব্যভাব জেগে উঠলো।
ব্ল্যাকহোলের কালো মেখে গায়
তুমি ডেকেছিলে আমায় রহস্যময় আঁধারে
ত্রস্ত পায়ে আমি গিয়েছিলাম কাছে
জানতাম যে যায় কাছে, সে-ই লীন হয়ে যায়।
নুশ নিজেই নিজেকে বাহবা দিলো। কবিতাটা ভালোই হয়েছে।
ছাত্রজীবনে ও টুকটাক লেখালেখি করতো। সে প্রতিভা এখনও একেবারে শেষ হয়নি। তবে রহস্যময় আঁধারে শব্দটা কি কারো সাথে মিলে গেলো নাকি? কার সাথে? এই মূহূর্তে মনে পড়ছে না। যাক মিললে মিললো। ঘুরে ফিরে অনেকের কবিতাই অনেকের সাথে মিলে।
‘আপনি বসতে পারেন নুশ। ’
বিশ্ব সংস্থার প্রধান পরিচালক লেন বললেন নুশের দিকে তাকিয়ে।
কে বারোটি চেয়ার। এগারোটি বিশ্ব সংস্থার এগারোজন পরিচালকের জন্য। বাকি একটি অতিরিক্ত।
নুশের জন্য।
নুশ করে একমাত্র খালি চেয়ারটিতে বসলো।
লেন-ই শুরু করলেন। অনেকটা সবাইকে জানানোর ভঙ্গীতে। ‘নুশ টারস নামের একটি গ্রহে সামরিক অভিযান চালাতে চাচ্ছে।
গ্রহটি সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য আপনাদের কমিউনিকেটরে আগেই দেয়া আছে। তারপরেও বলি গ্রহটি বিলোভেরা নত্রের একটি গ্রহ। বিলোভেরা নত্রের অন্য কোন গ্রহে প্রাণের কোন সন্ধান আমরা পাইনি। একমাত্র টারস গ্রহে প্রাণ আছে। অন্য গ্রহগুলি থেকে আমরা নিয়মিত সিলিকাসহ বিভিন্ন খনিজ পদার্থ আনি।
টারস এর পরের গ্রহ বিলারস-এ খনিজ আহরনের জন্য আমাদের একটি অস্থায়ী ঘাঁটি আছে। ’
‘ টারস গ্রহে কেন আমরা সামরিক অভিযান চালাতে যাচ্ছি?’ বিশ্ব সংস্থার একজন পরিচালক হাদ বললেন।
‘ আগের সভায় বিষয়টি নিয়ে বেশ আলোচনা হয়েছিলো । তারপরেও আবারো বলি ঐ গ্রহের প্রাণীরা পৃথিবীবাসির জন্য হুমকি। তারা যেকোন সময় আমাদের উপর হামলা চালাতে পারে বলে আমাদের গোয়েন্দা সংস্থার কাছে তথ্য আছে।
আমাদের দু’জন বিজ্ঞানী না বুঝে টারস এর অধিবাসিদের সহায়তা করছিলো। তাদের কাছে প্রচুর তথ্য পাচার করেছে। তবে আমরা বিষয়টি টের পেয়ে এই দুই বিজ্ঞানীকে গ্রেফতার করেছি। তাদের সহযোগি একটি সন্ত্রাসবাদি বিশাল গ্র“পকেও গ্রেফতার করা হয়েছে। তবে ওরিয়া নামের সন্ত্রাসবাদি দলের এক নেতা এখনও গ্রেফতার হয়নি।
তাকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। ’ লেন জানালেন।
‘ আমাদের এতো করিৎকর্মা গোয়েন্দা প্রধান। যাকে আমরা এ বিষয়ে যেকোন সময় অনুমোতি ছাড়া সামরিক অভিযান চালাতে বিশেষ মতা দিয়ে রেখেছি। তার হাত থেকে সন্ত্রাসবাদি ছুটে যায় ? এ-তো বড়-ই বেদনার বিষয়।
যে পালিয়েছে সে নাকি সন্ত্রাসবাদি না, একজন তরুন বিজ্ঞানী - এমন কি একটা যেন আবার শুনি। ’ পরিচালক হাদ কটা করলেন।
হাদের কটাে নুশের চেহারা লাল হয়ে গেলো। তবে তাকে কথা বলতে না দিয়ে জবাব দিলেন লেন, ‘ তরুন বিজ্ঞানী , কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর কোন সন্ত্রাসবাদি আন্দোলনের সাথে জড়িত হয়ে গেছে -এমন কোন ঘটনা কি অতীতে ঘটেনি ? এটাও সেরকম একটি ঘটনা। ’
‘ টারস গ্রহে তো শুনলাম কিছু ুদ্র জলজ প্রাণী ছাড়া আর কিছু নেই।
ওরাই আমাদের উপর হামলা চালাবে ? ’
‘ টারস গ্রহে খুব উন্নত প্রজাতির এক ধরনের নীলাভ সবুজ শৈবাল বসবাস করে। এরা প্রযুক্তিতে বেশ দ। এরা আমাদের দুই বিজ্ঞানীর সাথে নিয়মিত যোগাযোগ করতো। যদিও আমরা এ দুই বিজ্ঞানীর কথা-বার্তার বিস্তারিত জানিনি। কারন বিজ্ঞানী হওয়ায় তারা বিশেষ ধরনের কমিউনিকেটর ব্যবহারের সূযোগ পেতেন।
যেখানে আমরা সরাসরি আড়ি পাততে পারিনা। আর গ্রেফতারের আগেই তারা তাদের কথোপকথনের রেকর্ড সরিয়ে ফেলেছেন। তবে তাদের এক জুনিয়র বিজ্ঞানী আমাদের হয়ে কাজ করছে। সে আমাদের জানিয়েছে এই শৈবালরা নিজেরাই বিজ্ঞানীদের সাথে যোগাযোগ করেছে। তাদের ভাষা যাতে বিজ্ঞানীরা বুঝতে পারে এজন্য একটি কনভার্টিং সিষ্টেম তারাই বিজ্ঞানীদের দিয়েছে।
’
‘ তারাই কনভার্টিং সিষ্টেমও বিজ্ঞানীদের দিয়েছে ? কেমন যেন গল্পের মতো শোনায়। ’ হাদ নাছোর বান্দা।
‘ আমি একটু এই অভিযানের যুক্তিটা জানতে চাচ্ছি। কেন আমরা এই শৈবালদের হুমকি মনে করছি ? ’ আরেক পরিচালক মিরান এতনে মুখ খুললেন।
‘ যারা হাজার হাজার আলোকবর্ষ দূর থেকে আমাদের দু’বিজ্ঞানীর সাথে যোগাযোগ করতে পারে , তাদের ভিডিওচিত্র নিয়মিত পাঠাতে পারে, তারা আমাদের উপর হামলাও করতে পারে।
আর এ সূযোগ আমরা তাদের দিতে পারিনা। আগেই আমরা তাদের উপর হামলা চালাতে চাই। ’
‘ কিন্তু তারা কেন আমাদের উপর হামলা চালাবে ? তাদের লাভ কি ? ’
‘ এই কথাগুলি আগের সভায়ও বলা হয়েছিলো। আবারো বলি। এই শৈবালরা যেহেতু কোনভাবে প্রযুক্তি আয়ত্ত্ব করতে পেরেছে তারা আমাদের কাজের পথে বাঁধা হয়ে দাঁড়াতে পারে।
টারস এর পাশের গ্রহ বিলারস-এ আমাদের ঘাটি ওদের জন্য হুমকির মুখে পড়তে পারে। বিলোভেরা নত্রের অন্যান্য গ্রহ থেকে আমাদের খনিজ আহরন বন্ধ হয়ে যেতে পারে। কারন যারা প্রযুক্তি ব্যবহার করতে জানে তাদের হয়তো একসময় বাইরের খনিজের প্রয়োজন পড়বে। যেমন আমাদের পড়ছে। ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে তারা হয়তো এখনই আমাদেও বাঁধা দিতে পারে।
আর জানেন তো এখন আমরা যা খনিজ ব্যবহার করি তার আশিভাগ আসে বাইরে থেকে। আর এ আশিভাগের মধ্যে পঞ্চাশভাগ বিলোভেরা নত্র থেকে। তাই আমাদের খনিজ নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়ার আগেই আমরা ব্যবস্থা নিতে চাই।
‘ব্যবস্থা মানে কি ? ’
‘ব্যবস্থা মানে হাইড্রোজেন বোমা। আমরা পুরো গ্রাহে কোন প্রাণ রাখতে চাইনা।
আমাদের উপর হামলার সামান্যতম সম্ভাবনাও আমরা উপড়ে ফেলতে চাই। ’
‘ তুচ্ছ আশঙ্কায় একটা পুরো গ্রহ ধ্বংস ? ’ হাদ জিজ্ঞেস করলো।
‘ আপনার কাছে তুচ্ছ আশঙ্কা মনে হতে পারে। আমার কাছে না। আমি মনে করি এ অভিযানের জন্য যা তথ্য রয়েছে তা-ই যথেষ্ট।
’
‘ আমি এ অভিযানের বিরোধীতা করি। ’
‘ ঠিক আছে। সিদ্ধান্ত ভোটাভুটিতে হবে। ’
ভোটাভুটিতে লেন দশ-এক ভোটে জিতলো। বিশ্ব পরিচালনা সংস্থায় লেনসহ নয়জন এক লবির।
হাদ আর মিরান দু’টি ভিন্ন লবি থেকে এসেছে। মিরান অভিযান চালানোর পে ভোট দিলো।
সভা শেষ।
উঠতে উঠতে হাদ বললো,‘ টারস এর শৈবালগুলি বিশ্ব পরিচালনা সংস্থার প্রধানের সাথে যোগাযোগ না করে কেন দু’বিজ্ঞানীর সাথে যোগাযোগ করলো বুঝতে পারলাম না। তাদের যখন এতো মতা তারা লেনকে কব্জা করলেই তো কোন ঝামেলা হতো না।
’
তার রসিকতায় সবাই হেসে উঠলো।
শুধু লেনের রক্ত মাথায় উঠে গেলো। কটমট করে সে তাকিয়ে রইলো হাদের দিকে। অনেক কষ্টে সামলালো তার রাগ।
নুশ আবার ফিরে এলো দুই বিজ্ঞানীর গবেষনাগারে।
একটা চেয়ারে হেলান দিয়ে সে টারসে হামলার পরিকল্পনাটা করছে। অভিযানে একটি স্পেসশীপ গেলেই চলে। সাথে কয়েকটা ছোট আকারের রোবট চালিত স্কাউটশীপ থাকতে পারে। বড় যানটা যাওয়ার এক ঘন্টা আগে টারসের আকাশে পৌছাবে স্কাউটশীপগুলি। এরা সেখান থেকে টারসের প্রচুর ছবি নেবে।
সেখানে কয়টি বোমা ফেলা হবে সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হবে। এক ঘন্টা পর স্পেসশীপ টারসের ভূমির কাছাকাছি যাবে। তবে এটি ভূমিতে নামবে না। উপর থেকেই যা করার করবে।
কিন্তু এর আগে দুই বিজ্ঞানীর সাথে টারসের শৈবালদের কথার রেকর্ডটা পাওয়া গেলে ভালো হতো।
বিজ্ঞানী ওরিয়াকে কি পাওয়া গেছে ?
নুশ কমিউনিকেটরে সেলের সাথে যোগাযোগ করলো। ‘ সেল কতটুকু এগিয়েছে ? ’
‘ আমি চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। ওরিয়ার মানমন্দিরের লোকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। ’
‘ কিছু পাওয়া গেছে ? ’
‘এখনও না। তবে যাবে।
’
‘ যাবে কিভাবে ? ’
‘ মনে হচ্ছে পাওয়া যাবে। ’
‘ ও, তোমার মনে হচ্ছে ? ঠিক আছে মনে হতে থাকুক। রাখি। ’
নুশ কমিউনিকেটরে তার দ্বিতীয় সহকারি মিনোটার সাথে যোগাযোগ করলো।
‘ মিনোটা তোমাকে না সেলের উপর নজর রাখতে বলেছিলাম।
’
‘ জ্বী রাখছি। ’
‘ সেল এখন কি করছে ? ’
‘ ওরিয়ার সহযোগি একটা মেয়ের সাথে কথা বলছে। কিছুনের মধ্যে প্রেমে পড়ার সম্ভাবনা আছে। ’
‘ বলো কি ? ’
‘ হ্যা। মেয়েটা একজন গবেষনা কর্মী ।
মেয়েটার পাশেই দাঁড়ানো আছে ওরিয়ার ব্যাক্তিগত সহকারি ছেলেটা। কিন্তু সেল ওরিয়ার ব্যাক্তিগত সহকারিকে জিজ্ঞাসাবাদ না করে মেয়েটাকে আধঘন্টা ধরে জিজ্ঞাসাবাদ করছে। মেয়েটার কাছ থেকে তেমন কোন তথ্যও বের করতে পারেনি। দু’তিনবার মেয়েটা সেলকে অপমানের সুরে কথা বলেছে। সেল কিছু বলেনি।
’
‘ মেয়েটা সেলকে অপমানের সুরে কথা বলেছে ? আর সেল দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে শুনছে ? ওতো প্রেমে না শুধু প্রেমের খাদে পড়তে যাচ্ছে। আচ্ছা দাঁড়াও ওর সাথে কথা বলি। ’
পরনেই নুশ সেলের সাথে যোগাযোগ করলো। আসলেই সেল জানেনা মেয়েটার পাশে দাঁড়ানো ছেলেটা ওরিয়ার ব্যাক্তিগত সহকারি। ‘ তুমি কেন এটা জানোনা সেল ? ’
‘আমি এখনও ছেলেটার সাথে কথা বলিনি।
একটু পরেই বলতাম। ’
‘ কথা বলার তো দরকার নেই। তোমার কমিউনিকেটরে ওদের সব তথ্য চলে এসেছে। তুমি কথা বলা শুরু করার সময়ই নির্ধারন করা উচিৎ ছিলো, কার কার সাথে তুমি আগে কথা বলবে। ’
সেল কিছু বললো না।
আসলেই উচিৎ ছিলো। ওর মাথায় কেন যে বিষয়টা আসেনি। এই ভুলটা কিভাবে হলো।
দশ মিনিটের মধ্যে সেলকে তার দায়িত্ব থেকে সাময়িক অব্যহতি দেয়া হলো। তার দায়িত্ব বুঝে নিতে মানমন্দিরে এসে নামলো মিনোটা।
ঝ//
টারস গ্রহে আজ সাড়াদিন সান্ধ্য। সকাল থেকে বিলোভেরা নত্র একটুও সূযোগ পায়নি আকাশে উঁকি দেয়ার। কুচকুচে কালো মেঘেদের দখলে আকাশ। বৃষ্টি ঢেলে দিচ্ছে মেঘগুলি। প্রবল বৃষ্টি।
শুরু হলে আর শেষ হতে চায়না। বিকেলের দিকে আকাশ পরিস্কার হয়ে এলো।
শৈবালের কলোনী থেকে প্রায় দুই মাইল দীর্ঘ একটি অংশ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলো। পানির নিচে পা।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।