আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

প্রগতির পরিব্রাজক দল, প্রপদ এর খসড়া ঘোষণা

চোখ খুবলে নেয়া অন্ধকার, স্ফুলিঙ্গ জ্বেলে দাও!

প্রপদ ঘোষণা (খসড়া) এ কোন ক্রান্তিকালের মুখোমুখি আমরা আজ জাতীয় অর্থনীতি ধ্বংসের মুখে, রাজনীতি হয়ে উঠেছে হিংস্র, সমাজ ও সংস্কৃতিতে চলছে নৈরাজ্য। পরাধীনতা, অগণতান্ত্রিকতা ও স্বৈরাচারের একালে বিদ্রোহ আর বিপ্লব সমাগত। অর্থনীতি হলো সমাজের ভিত্তি এদেশের অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে ঘিরে শোষক ও শোষিতের যে সম্পর্ক, তার উপর দাঁড়িয়ে আছে এদেশের রাষ্ট্র, রাজনীতি, সমাজ ও সংস্কৃতির দশা। বাংলাদেশ হওয়ার পর থেকে প্রথমে আওয়ামীলীগ এবং বি.এন.পি, জাতীয় পার্টির নেতৃত্বে শাসক শ্রেণী দেশের সম্পদ, শিল্প ব্যাংক-বাণিজ্য উজাড় করেছে। ঘুষ, দুর্নীতি, কমিশন আর আমলাতন্ত্রের সাহায্যে কয়েক’শ কোটিপতি তৈরি হয়েছ।

এরা স¤প্রসারণবাদ আর সাম্রাজ্যবাদের ঠিকাদারী করে বিকশিত হয়ে চলেছে। স্বাধীন অর্থনীতি গড়ে তুলেনি। তারা বাংলাদেশের ১৪ কোটি মানুষকে ভারতীয় পণ্যের বাজারে পরিণত করেছে। এজন্য দেশের শিল্প ও কৃষি ব্যবস্থাকে ধ্বংস ও পঙ্গু করে ভারতের উপর নির্ভরশীল করে তোলা হয়েছে। দেশের কাঁচামাল, প্রাকৃতিক সম্পদ ও ব্যবসা গ্রাস করেছে ভারত।

দেশের তেল-গ্যাস-বিদ্যুৎ-বন্দরসহ সমগ্র শক্তি, সম্পদ ও যোগাযোগ ব্যবস্থা সাম্রাজ্যবাদ দখল করেছে ভারতের সাথে সমঝোতার মাধ্যমে। বাংলাদেশ পরিণত হয়েছে সাম্রাজ্যবাদের সস্তা শ্রমিকের বাজারে। এই ভারতীয় স¤প্রসারণবাদ, সাম্রাজ্যবাদ, আমলাতান্ত্রিক পুঁজিবাদ ও প্রতিক্রিয়াশীল বুদ্ধীজীবিরা সামন্তবাদের মাধ্যমে ব্যাপক কৃষক সমাজকে শোষণ করছে। তার সাথে যুক্ত হয়েছ এনজিও তৎপরতা ও শোষণ। গ্রামের কোন রকম উন্নয়ন ছাড়া, পুঁজি বিনিয়োগ ছাড়াই উৎপাদিত ফসলের সিংহভাগ শাসকরাই ভোগ করছে।

অর্থনৈতিক অবস্থার প্রতিফলন ঘটেছে রাজনীতিতে এ দেশের অর্থনৈতিক ক্ষেত্রের মালিক ভারতীয় সম্প্রসারণবাদ, সাম্রাজ্যবাদ, আমলাতান্ত্রিক পুঁজিবাদ, সামন্তবাদ ও প্রতিক্রিয়াশিল বুদ্ধিজীবীরা এদেশের রাজনৈতিক ক্ষমতারও মালিক। তারা এদেশের রাষ্ট্র ও সরকারেরও মালিক। এদেশের শাসক শ্রেণী দুই শিবিরে বিভক্ত। এই দুই শিবিরে আওয়ামীলীগ ও বিএনপির নেতৃত্বে সংগঠিত। তারা উভয়ে জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র ও ধর্মের লেবাস ধারণ করে।

ভোট ও সংসদের মুলো ঝুলিয়ে জনগণকে প্রতারিত করে। স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের নামে তারা ভারতে উপনিবেশিক শোষণকে আড়াল করে। অর্থনৈতিক ফায়দা লোটার জন্য সরকারি ক্ষমতা আবশ্যক হওয়ায় এই দুই শিবিরে সরকার গঠনের জন্য হিংস্র লড়াই চলে। তবে শাসক শ্রেণীর স্বার্থ রক্ষায় ও জনগণের দমন-নিপীড়নে এরা অভিন্ন ভূমিকা পালন করে। অপরদিকে শাসকশ্রেণীর অত্যাচার, শোষণ ও নিপীড়নে অতিষ্ট জনগণ নানারূপে সর্বপ্রকার সংগ্রাম করছে।

জনগণ এই শত্রুদের উৎখাত করে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক মালিকানা প্রতিষ্ঠার জন্য প্রকৃত স্বাধীন গনতান্ত্রিক রাষ্ট্র ও সরকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম করছে। শত্র“রা ফ্যাসিবাদী কায়দায় এসব দমন করতে চাইছে। অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অবস্থার প্রতিফলন ঘটেছে সমাজ ও সংস্কৃতিতে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে মালিকানা রক্ষার্থে রাষ্ট্রের মালিকানা বা রাজনৈতিক ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার শর্ত হিসাবে তার সামাজিক ও সাঙস্কৃতিক পরিমন্ডলে নিজেদের আধিপত্য বজায় রেখেছে। তাদের অনুকূলে প্রতিক্রিয়াশীল ধ্যান-ধারনা ও সংস্কৃতির পৃষ্ঠপোষকতা দিচ্ছে। দেশপ্রেমিক ও গণমুখী জাতীয় ও গণতান্ত্রিক প্রগতিশীল শিক্ষা-সংস্কৃতির বিকাশ করছে রুদ্ধ।

তাই প্রকৃত জাতীয় মুক্তি, স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র দূরে থাক আজ জনগণের ন্যূনতম অধিকারও অনর্জিত রয়ে গেছে। গণবিরোধী, দেশপ্রেমহীন শাসকদের সবচেয়ে অবহেলার কবলে পড়েছে অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসার মত মানুষের মৌলিক অধিকারগুলো। প্রতি বছর উত্তরবঙ্গে দুর্ভিক্ষ হচেছ, অপুষ্টি ও চিকিৎসার অভাবে শিশু ও মায়ের মৃত্যু ঘটছে। ৬ কোটির বেশী মানুষের নিজস্ব বাসস্থান নেই। বস্তিতে দরিদ্র জনগণ পাশবিক জীবন যাপন করে।

বস্ত্রের অভাবে শীতে মানুষের মৃত্যু ঘটে। প্রতি বছর বন্যা আর নদী ভাঙ্গনে জীবন বিপর্যস্ত হয়। স্বাস্থ্য ব্যবস্থার এমন অবনতি হয়েছে যে, আর্সেনিক, ডেঙ্গু, ডায়রিয়া, মহামারি আকার ধারন করে প্রতি বছর হাজার হাজার জীবন সংহার করছে। অর্থনৈতিক লুন্ঠন ও রাজনীতিতে রাষ্ট্রযন্ত্রের ব্যবহারের ফলে সমগ্র রাষ্ট্রযন্ত্রসহ সর্বত্র ঘুষ, দুর্নীতি, চাঁদাবাজী ও রাষ্ট্রীয় নিপীড়ন চরমে পৌঁছেছে। রাজনীতিতে ধর্মের ব্যবহারের ফলে সাম্প্রদায়িকতা ব্যপক পৃষ্টপোষকতা লাভ করেছে।

ধর্মীয় নিপীড়ন ব্যাপক আকার ধারন করেছে। উৎপাদন ব্যবস্থায় বৈষম্য থাকায় শোষণ-নীপিড়ন উগ্রজাতীয়তাবাদ রূপে প্রকাশ পাচ্ছে। জাতিগত, ভাষাগত নিপীড়ন বাড়ছে। স্বজনপ্রীতি ও আঞ্চলিকতা বাড়ছে। বাড়ছে পিতৃতান্ত্রিক নিপীড়ন, বাড়ছে নারী ও শিশু পাচার।

শাসক শ্রেণী পৃষ্ঠপোষকতা দিচ্ছে দলীয় সন্ত্রাসের। ফলে প্রতিদিন হত্যা, খুন, ধর্ষণ, ছিনতাই, ডাকাতি বেড়ে চলেছে। জনজীবনে আজ এতটুকু নিরাপত্তা নেই। শ্রমিক, ছাত্র, পেশাজীবীসহ সকল স্তরের সংগঠনে এমনকি সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোতে দুর্বৃত্তি ও সন্ত্রাস আধিপত্য লাভ করেছে। শিল্প-কৃষি-বাণিজ্যের ধ্বংস ও পরমুখাপেক্ষিতার কারণে বাড়ছে বেকারত্ব দারিদ্র্য।

সম্প্রতি গার্মেন্টস শিল্পের চার লক্ষ শ্রমিক বেকার হয়েছে। আদমজীসহ হাজার হাজার শিল্পের শ্রমিক কাজ হারিয়েছে। সরকারি প্রতিষ্টানগুলো হতে গোল্ডেন হ্যান্ডসেকের মাধ্যমে শ্রমিক ছাটাই চলছে। গ্রামে কৃষকের ১৯০ দিন কাজ থাকেনা। এসব বেকারেরা স্ব-কর্মসংস্থানে শহরে রিক্সা, বেবি চালাতে, হকারি করতে আসে।

কিন্তু বর্তমানে গরীব মুক্ত নিরাপদ শহর বানাতে সরকার বেবি, রিক্সা, হকার সেই সাথে তাদের আবাস বস্তিগুলো উচ্ছেদ করছে। ফলে এসব বেকার-বাস্তুহীন জনগোষ্ঠী অসহায়ভাবে মুত্যুর দিন গুনছে। যাদের কাজ আছে তাদের অবস্থাও কম করুন নয়। গার্মেন্টস শিল্পের নারীরা তীব্র শোষণের শিকার হচ্ছে, এমনকি পুড়ে মরছে। গ্রামে এনজিও গুলো কৃষকদের মহাজনী কায়দায় শোষণ, নিপীড়ন চালিয়ে হাড় মাংস এক করে ছাড়ছে।

সমগ্র অর্থনীতি আজ ধ্বংসের মুখে। জাতির ভবিষ্যত আজ অন্ধকারময়। বাড়ছে হতাশা। বাড়ছে মাদকাশক্তি। বাড়ছে অশ্লীলতা।

মানুষ হয়ে উঠেছে আত্মকেন্দ্রীক ও ভোগবাদী। শিল্প-সাহিত্য, নাটক, গানে আজ বাণিজ্যের বেসাতি। কৌতুক, অশ্লীলতা, হাঙ্গামা উৎকট কিছুই এর মৌল উপাদান। শুধু তাই নয়, এসব শিল্পকলা ও সাহিত্য, শাসকশ্রেণীর কোন না কোন অংশের সমর্থনে অথবা জনগণের সংগ্রামকে বিভ্রান্ত করার উপাদানে ঠেসে গড়ে তোলা হচ্ছে। আজ ঘরে ঘরে পৌছে গেছে ভারতীয় ও পশ্চিমা বাণিজ্যিক সংস্কৃতির আগ্রাসন।

স্যাটেলাইট চ্যানেল, অডিও-ভিডিও প্রিন্ট মিডিয়াগুলো জাতীয়, স্বদেশবোধ ও প্রগতিশীল উপাদান বর্জিত প্রতিক্রিয়াশীল বাণিজ্যিক সংস্কৃতির ব্যাপক প্রচার চালিয়ে যাচ্ছে। অবস্থার চরম প্রকাশ ঘটছে যাত্রা ও চলচ্চিত্রে। লোক সংস্কৃতিতেও এসব রুচিহীন উপাদান প্রবেশ করছে। এভাবে জাতির মনন সুকুমারবোধ ও সংস্কৃতি ধ্বংসের সম্মুখীন। সংস্কৃতিতে বাণিজ্যমুখীতার পাশাপাশি শাসকশ্রেণীর রাজনৈতিক লেজুড়বৃত্তির ধারা অত্যন্ত শক্তিশালী।

বাঙ্গালী, বাংলাদেশী বা ইসলামী সংস্কৃতির প্রত্যক্ষ চর্চার নামে এ ধারা সক্রিয়। বর্তমানে বাউল উৎসব, নাট্যোৎসব, সঙ্গীত সম্মেলন, কেরাত, জলসা ইত্যাদিসহ যে সাংস্কৃতিক আন্দোলন চলছে তা মূলতঃ এই লেজুড়বৃত্তির ধারার অংশ। এসব সাংস্কৃতিক আন্দোলনের পৃষ্ঠপোষকতা দিচ্ছে বিভিন্ন দেশী-বিদেশী কোম্পানী, এনজিও, বিদেশী দূতাবাস, রাজনৈতিক দল অথবা সরকার ও রাষ্ট্র। এসব সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের মাধ্যমে শাসক শ্রেণীর জয়গান, তাদের নিপীড়নের মুখে আপস ও সহ্য করার মতবাদ, জাতি ও জনগণ সম্পর্কে হীনমন্যতা, শাসক শ্রেণীকে রক্ষার দর্শন, তাদের শোষণ-নিপীড়নের সাফাই ইত্যাদি প্রচার করা হয়। জনগণের মত প্রকাশের স্বাধীনতা না থাকলেও উপরোক্ত কাজে একশ্রেণীর বুদ্ধীজীবি এবং গণমাধ্যমগুলো সর্বক্ষণ নিয়োজিত থাকে।

এই দুই ধারার সংস্কৃতির সাথে যুক্ত রয়েছে অভিজাত শ্রেণীর সংস্কৃতিরুপে সম্পূর্ণ গণবিচ্ছিন্ন ও নান্দনিকতা সর্বস্ব তথাকথিত উচ্চাঙ্গ সংস্কৃতি। গ্রামাঞ্চলে, এমনকি শহরে সামন্তীয় সংস্কৃতির প্রাধান্য দেখা যায়। সামন্তীয় ও ধর্মীয় আবরণে কু-সংস্কার, ধর্মান্ধতা, পিতৃতন্ত্র, গোষ্ঠীতন্ত্র, ধর্ম ব্যবসার ব্যাপক প্রসার দেখা যায়। দরিদ্র্য ও নারীর উপর শোষণ-নিপীড়নের নানা প্রথা ও আচার চালু রয়েছে। প্রতিদিন জনগণ এসব নিপীড়নের শিকার হচ্ছে।

সংখ্যালঘু জাতিসত্ত্বা, ধর্মীয় ও ভাষাগত সংখ্যালঘুদের উপর চলছে নানা উৎপীড়ন। এ সমস্ত ক্ষেত্রে পৃষ্ঠপোষকতা দিচ্ছে জাতীয় শত্র“রা, এমনকি খোদ রাষ্ট্র। বিজ্ঞান মনস্কতার বিপরীতে ভাবালুতা ও অন্ধত্বের চর্চা মানুষকে সংগ্রাম ও উৎপাদন বিমুখ করে তুলেছে। সমাজের অর্থনৈতিক প্রয়োজনই শিক্ষা ও জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চার শর্ত সৃষ্টি করে। তাই এদেশের পরনির্ভরশীল উৎপাদনবিমুখ অর্থনীতি-শিক্ষা ও জ্ঞান-বিজ্ঞান বিকাশের পথে বাধা তৈরি করছে।

জনগণের শিক্ষার ব্যবস্থা চরম অবহেলিত। কোটি কোটি মানুষ শিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত। শিক্ষার বাণিজ্যিকীকরণের ফলে গরিব ও মধ্যবিত্তের শিক্ষার সুযোগ সীমিত হয়ে পড়েছে। ঔপনিবেশিক অর্থনীতির চাহিদা অনুযায়ী প্রচুর বাণিজ্যিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সেবায় সক্ষম ধনীর সন্তানদের গড়ে তুলতে অনুৎপাদনশীল, দেশপ্রেম বর্জিত চাকচিক্যময় শিক্ষা ব্যবস্থা চালু রয়েছে। পক্ষান্তরে গরিব মধ্যবিত্তদের প্রচলিত ব্যবস্থাও সার্বজনীন নয়।

দেশে প্রায় সাত-আট পদ্ধতির শিক্ষা পদ্ধতি ও কাঠামো চালু রয়েছে যার অধিকাংশ পশ্চাদপদ ধর্মীয় শিক্ষার মধ্যেই সীমিত। সামগ্রিকভাবে এসব শিক্ষার মান অত্যন্ত নিচু। রয়েছে অবকাঠামো, উপকরণ ও ব্যবস্থাপনার অভাব। এ অবস্থার মাঝেই জনগণের করের টাকায় শিক্ষিত করা মেধাবীদের দেশে কর্মসংস্থান ও কাজে লাগানো হয় না। এসব মেধা পাচার হয়ে বিদেশী প্রভুদেরই সেবা করে।

গরীব মধ্যবিত্তদের শিক্ষার প্রতি শাসক শ্রেণীর অবহেলার আরেক নজির হল শিক্ষাঙ্গনে সন্ত্রাস ও প্রশাসনগুলোর স্বেচ্ছাচারিতা। সার্টিফিকেট সর্বস্ব শিক্ষার বর্তমান পদ্ধতি ছাত্রদের মধ্যে গড়ে তুলছে আত্মকেন্দ্রিক কেরিয়ার প্রবণতা। তার সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে কোচিং সেন্টার ও শিক্ষকদের নৈতিক স্খলনের প্রবণতা। অনিবার্যভাবে বৈজ্ঞানিক, গবেষণামুখী, বিজ্ঞান মনস্ক, দেশপ্রেমিক মানুষ হিসাবে গড়ে তোলার যে শিক্ষানীতি তার বিপরীত নীতিই কার্যকর হয়ে চলেছে। যে মাটির উত্তরাধিকার এ সংগঠন শত শত বছরে এত রক্ত শুষে নিয়েছে বৃটিশ, পাকিস্তানি ও ভারতীয় উপনিবেশিক দস্যু ও তাদের পা-চাটার দল; তাই আজ অতি মলিন, জ্বরাগ্রস্থ স্বদেশ।

কিন্তু এমাটির কয়েক’শ বছরের ইতিহাস-ঔপনিবেশিক শোষণ-শাসনের জনগণের বীরত্বপূর্ণ সংগ্রামের ইতিহাস। এদেশের জনগণ জাতির মুক্তির জন্য বারবার সংগ্রাম করেছে। অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে শাসক শ্রেণীর মালিকানা ও আধিপত্যের উৎখাত চেয়েছে। এত রক্ত, এত আত্মত্যাগ, মানচিত্র আর পতাকা সত্ত্বেও, দেশ কেন অধঃপতনে, জাতি কেন পরাধীন। পাকিস্তান আমলে পূর্ব বাংলার জনগণ জাতীয় মুক্তির জন্য সংগ্রাম করে, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ক্ষেত্রে মালিকানা ও নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার লড়াই শুরু করে।

শ্রমিক শ্রেণীর নেতৃত্ব দানের ব্যর্থতার ফলে পূর্ব বাংলার আমলাতান্ত্রিক পুঁজিবাদ, সামন্তবাদ, ও প্রতিক্রিয়াশীল বুদ্ধিজীবিদের দল আঃলীগ জাতীয় প্রশ্নের ভিত্তিতে জনগণের নেতৃত্ব দখল করে। তারা ঔপনিবেশিক শাসকদের সাথে আপোষের চেষ্টা চালায়। জাতীয় মুক্তির সংগ্রাম বেগবান হলে পাকিস্তানি সামরিক ফ্যাসিস্টরা গণহত্যা চালায়। আওয়ামী বিশ্বাসঘাতকেরা ভারতে পালিয়ে যায়। জনগণ প্রতিরোধ গড়ে তোলে।

লক্ষ লক্ষ জনগণ প্রাণ বিসর্জন দেয়। নিজেদের শক্তিতে পূর্ববাংলা মুক্ত অক্ষম আ:লীগ চক্র ক্ষমতার লোভে জনগণের জাতীয় স্বার্থের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে। ভারতীয় সম্প্রসারণবাদীদের পরাধীনতার সহযোগীতায় সোভিয়েত সামাজিক সাম্রাজ্যবাদের সমর্থণে পূর্ববাংলা দখল করে। এভাবে পূর্ববাংলা ভারতের উপনিবেশে পরিণত হয়। পূর্ববাংলার জনগণ ভারতীয় সম্প্রসারণবাদীদের পরাধীনতার শৃঙ্খলে আবদ্ধ হয়।

লক্ষ লক্ষ দেশপ্রেমিক জনগণের রক্ত বৃথা যায়। মানচিত্র, পতাকা আর আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি থাকা সত্ত্বেও স্বাধীন জাতি হিসাবে জনগণের অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক ও রাষ্ট্র ক্ষমতা প্রতিষ্ঠা হয় না। ’৭৫ সালে শাসক শ্রেণীর সোভিয়েতপন্থী ভারতীয় তাঁবেদাররা উৎখাত হয় মার্কিন সমর্থক ভারতীয় পা-চাটা অংশ দ্বারা। একই ভাবে ৯০-এর আন্দোলনে শ্রমিক শ্রেণীর নেতৃত্বের অনুপস্থিতিতে জনগণের কাতারে মিশে থাকা বন্ধুবেশী শত্রুরা জনগণের নেতৃত্ব দখল করে। শত্রুর বিশ্বাসঘাতকতায় জনগণের বিজয় পরিণত হয় পরাজয়ে।

অবস্থার কোন মৌলিক পরিবর্তন হয় না। এত রক্ত, এত এত আত্মত্যাগ সত্ত্বেও পরাধীনতা, নিপীড়ন ও শোষণের অবসান হলো না। জনগণের অর্থনৈতিক ক্ষেত্রের মালিকানা ও রাজনৈতিক ক্ষমতা প্রতিষ্ঠা পেল না। সাংস্কৃতিক মুক্তি এলোনা। তাই আজও সম্প্রসারণবাদ, সাম্রাজ্যবাদ, আমলাতান্ত্রিক পুঁজিবাদ, সামন্তবাদ ও তাদের বুদ্ধিজীবিদের শাসন ও শোষণ চলছে।

জনগণ নয়, আজ তারাই এদেশের অর্থনৈতিক ব্যবস্থার মালিক, রাষ্ট্র এবং তার মুল উপাদান সামরিক বাহিনীর জোরে জনগণের উপর স্বৈরশাসন চালাচ্ছে। সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে আধিপত্য ও দখল অটুট রেখেছে। উপসংহার এরকম অবস্থায় সমস্যা, শোষণ বৈষম্য আর সংকটগুলো যখন বেড়েই চলছে, এই সমাজ ব্যবস্থা যখন কোন সমাধান দিতে পারছে না, তখন সমাজের শোষক ও সুবিধাভোগীরা ছাড়া গোটা জাতি ও জনগণ চায় সমাধান। তারা চায় নতুন অর্থনীতি, নতুন রাজনীতি, নতুন সংস্কৃতি। আর তাই এদেশের জনগণের সামনে আজ এক মহোত্তম কর্তব্য হাজির হয়েছেঃ ভারতীয় সম্প্রসারণবাদ, সাম্রাজ্যবাদ, আমলাতান্ত্রিক পুঁজিবাদ ও সামন্তবাদ এবং প্রতিক্রিয়াশীল বুদ্ধিজীবিদের বিপ্লবী প্রক্রিয়ায় উচ্ছেদ করে জনগণের স্বাধীন, গণতান্ত্রিক, শান্তিপূর্ণ, নিরপেক্ষ ও প্রগতিশীল রাষ্ট্র ও সরকার প্রতিষ্ঠা করা এবং এভাবে অর্থনীতি ও সাংস্কৃতিকে জনগণের কল্যাণে নতুন ভাবে গড়ে তোলা।

প্রপদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য উপরে বর্ণিত এই মহত্তম লক্ষ্য’র সাথে প্রপদের এক ও অভিন্ন। লক্ষ্যে স্থির থেকে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে প্রতিরোধ গড়ে তোলা এবং জনগণের সংস্কৃতির বিকাশকে ত্বরান্বিত করে জনগণের রাজনৈতিক কর্তব্য পালনের এক মতাদর্শিক প্রস্তুতি সম্পন্ন করাই হল প্রপদের উদ্দেশ্য। (২০০১ সালে ১ম সাধারণ সভায় গৃহীত। )

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.