আপনার জন্ম ফরিদপুরে কিন্তু শৈশব-কৈশোরের অধিকাংশ সময় আপনি কলকাতায় ছিলেন, ওই সময়ের গল্প শুনতে চাই।
ফরিদপুরে পূর্বপুরুষদের বাড়ি। আমার বাবা ফয়জুল মহী ছিলেন সাব-ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট। ফলে বাবার চাকরির সূত্রেই ঘুরে বেড়িয়েছি পূর্ব ও পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন স্থানে। আমার শৈশব-কৈশোরের অধিকাংশ সময় কেটেছে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে।
নানা স্থানে ঘুরে বেড়ানো, নানা জাতি-ধর্ম-বর্ণের মানুষের সঙ্গে মেশার সুযোগ আমার জীবনের বড় সঞ্চয়। আমার মা আকিফা খাতুন ছিলেন খুবই ধার্মিক। তার কাছেই ছোটবেলায় নামাজ ও কোরআন শরিফ পড়া শিখেছি। সাত-আট বছরের মধ্যেই কোরআন পাঠ শেষ করি। বাড়িতে উর্দু আর বাংলা ভাষার চল ছিল।
আমাদের পরিবারে ধর্মের প্রতি অনুরক্ত থাকলেও কারও মধ্যে কোনো গোঁড়ামি ছিল না। বাড়িতে একটা মুক্ত পরিবেশ সব সময়ই ছিল। আমার প্রাথমিক শিক্ষার হাতেখড়ি হয় বাড়িতেই। গৃহশিক্ষক ছিলেন কবি কাজী হাসমত উল্লাহ। তিনি কাজী নজরুল ইসলামের আত্দীয় ছিলেন।
তিনি মূলত বাংলা ও ইংরেজি পড়াতেন। হাসমত উল্লাহ নিজে যেহেতু কবি ছিলেন সেজন্য আমাকে ভীষণ উজ্জীবিত করেছিলেন। শৈশবে রবীন্দ্রনাথের 'দুই বিঘা জমি' কবিতাটি আমার জীবনবোধ বদলে দেয়। এর মধ্যেকার দেশপ্রেম, মানবতাবোধ একপর্যায়ে আমাকে সমাজতন্ত্রের দিকে টেনে নিয়ে গেছে। নিপীড়িত মানুষের প্রতি মমত্ববোধ ওই কবিতা পাঠ করেই শিখেছি।
ছেলেবেলায় কয়েকটি স্কুল পেরিয়ে কলকাতার তালতলা হাইস্কুল থেকে ১৯৩৮ সালে মাধ্যমিক পাস করি।
কলকাতা রিপন কলেজে ভর্তি হয়ে আপনি বিখ্যাত সব শিক্ষকের সানি্নধ্য পেয়েছিলেন এবং একই সময় কমিউনিস্ট রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়েন। এ প্রসঙ্গে বলুন।
১৯৩৮ সালে রিপন কলেজে উচ্চ মাধ্যমিক ভর্তি হই। তখন কলেজে অধ্যাপনা করতেন বাংলা সাহিত্যের অনেক দিকপাল।
প্রমথনাথ বিশী, বুদ্ধদেব বসু, বিষ্ণু দে, হীরেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় প্রমুখ। তাদের সঙ্গে আমার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। ইতিহাসের হীরেন মুখার্জির অনবদ্য পাঠদান, তীক্ষ্ন সমাজ সচেতনতা এবং সমাজতন্ত্রের প্রতি অনুরাগ আমাকে গভীরভাবে আকৃষ্ট করল। আমি তখন নিষিদ্ধ ঘোষিত কমিউনিস্ট পার্টি সম্পর্কে আগ্রহী হয়ে উঠি এবং পার্টির বিভিন্ন বই পড়ি। আমার সঙ্গে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির প্রতিষ্ঠাতা ও মানবতাবাদের প্রধান প্রবক্তা চিন্তানায়ক মানবেন্দ্রনাথ রায়ের সাক্ষাৎ হয়।
তার আগের নাম ছিল নরেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য। প্রথম মহাযুদ্ধের সময় তিনি ছদ্মবেশে এবং এম. এন. রায় ছদ্মনামে দেশত্যাগ করে বিভিন্ন দেশ ঘুরে যুক্তরাষ্ট্রে উপস্থিত হন। তারপর মেঙ্েিকাতে গিয়ে সেখানকার কমিউনিস্ট পার্টির অন্যতম প্রধান সংগঠক হয়েছিলেন। ১৯১৭ সালে রুশ বিপ্লবের পর লেলিনের আমন্ত্রণে তিনি রাশিয়ায় গিয়ে বিশ্ব কমিউনিস্ট আন্দোলনের প্রধান সংস্থা কমিউনিস্ট ইন্টারন্যাশনালের বিশিষ্ট নেতা হিসেবে স্বীকৃতি পান। ১৯৩০-এ গোপনে ভারতে এসে গ্রেফতার হন।
১৯৩৭ সালে জেল থেকে মুক্ত হয়ে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসে যোগ দেন। তিনি 'হিস্ট্রিক্যাল রোল অব ইসলাম' নামে বিখ্যাত একটি বই লেখেন। তার নীতি ছিল কমিউনিস্ট পার্টি থেকে ভিন্ন। আর যে কারণে কমিউনিস্টরা তাকে সে সময় 'কংগ্রেসের দালাল' বা 'ব্রিটিশের দালাল' বলে গালি দিত। এম. এন. রায়ের নীতি ছিল কংগ্রেস একটি জাতীয় প্লাটফর্ম।
এখান থেকেই গণমানুষের কর্মসূচিকে অগ্রসর করে নিতে হবে। একে ব্যবহার করতে হবে। গণমানুষের সঙ্গে সম্পর্ক ছাড়া কোনো নীতি বা আদর্শ টিকতে পারে না। কমিউনিস্ট পার্টি যেহেতু নিষিদ্ধ, তাই সবার কংগ্রেসেই কাজ করা উচিত।
আপনি শ্রমিক আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হয়েছিলেন কখন?
১৯৪০-এ আমি কলকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজে ইতিহাসে অনার্স পড়ি।
১৯৪২ সালে আমার অনার্স পরীক্ষা দেওয়া হলো না। ১৯৪৩-এ অনার্স পাস করলাম। পরে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৪৫ সালে এমএ পাস করে কোনো চাকরিতে না গিয়ে আমি শ্রমিক আন্দোলনে যোগ দেই। শ্রমিকদের সংগঠিত করতে কাজ শুরু করি কলকাতার খিদিরপুরে পোর্ট ট্রাস্ট এমপ্লয়িজ ইউনিয়নে। এ সংগঠনের সহকারী সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করি।
বেঙ্গল পোস্ট ও টেলিগ্রাফ শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের জেনারেল সেক্রেটারি নির্বাচিত হই। ১৯৪৬ সালে কলকাতা এবং নোয়াখালীর সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার সময় আমি রাজনীতি বাদ দিয়ে ভারতীয় রেডক্রসের পূর্ণকালীন কর্মী হিসেবে ত্রাণ ও সেবামূলক কাজে আত্দনিয়োগ করি। নোয়াখালীতে মহাত্দা গান্ধীর শান্তি ও সম্প্রীতি স্থাপনের উদ্যোগ আমাকে গভীরভাবে অনুপ্রাণিত করে। ১৯৪৭ সালের ডিসেম্বর মাসে আমি ঢাকায় চলে আসি। কয়েক মাস বেকার থাকার পর ১৯৪৮ সালের ১৬ আগস্ট ঢাকার জগন্নাথ কলেজে প্রভাষক হিসেবে যোগ দেই।
জগন্নাথ কলেজে শিক্ষকতা দিয়েই আপনার শিক্ষকতা জীবনের সূচনা, আজও শিক্ষকতার সঙ্গে যুক্ত আছেন। এ সময়ের উল্লেখযোগ্য স্মৃতির কথা বলুন।
জগন্নাথ কলেজে যোগ দিয়ে আমার শিক্ষকতা জীবনের শুরু। এখানে পড়ানোর সময়েই শুরু হয় ঐতিহাসিক ভাষা আন্দোলন। তখন বাংলা বিভাগের শিক্ষক অজিত গুহর নেতৃত্বে আমরা 'জগন্নাথ কলেজ বাংলা সংস্কৃতি সংসদ' নামে একটি সংগঠন গড়ে তুলি।
এ সংগঠন থেকে আমরা ছাত্রদের ভাষা আন্দোলনে নানাভাবে উৎসাহিত করেছিলাম। ১৯৫৪ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপিত হওয়ার পর আমি ইতিহাস বিভাগে যোগ দেই। ওই সময় বাংলা বিভাগে মোহাম্মদ এনামুল হক, মাজহারুল ইসলাম, মুস্তাফা নূরউল ইসলাম, ইংরেজিতে জিল্লুর রহমান সিদ্দিকী, সমাজবিজ্ঞানে বদরুদ্দীন উমরের মতো প্রতিভাবান মানুষ শিক্ষকতা করতেন। সেখানে জিল্লুর রহমান সিদ্দিকী ও মুস্তাফা নূরউল ইসলামের সম্পাদনায় 'পূর্বমেঘ'; পরে মাজহারুল ইসলামের সম্পাদনায় বের হয় 'উত্তর অন্বেষা'। এ ছাড়া রাজশাহী থেকে প্রকাশিত হতো আরও তিনটি সাহিত্য পত্রিকা 'সুনিকেত মল্লার', 'বনানী' ও 'একান্ত'।
আমরা উত্তরবঙ্গের ছাত্র-ছাত্রী ও সাধারণ মানুষের মধ্যে শিক্ষা, শিল্প-সাহিত্যের বিকাশে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছিলাম। এদিকে তখন আইয়ুবের আমল চলছে দেশে। ছাত্ররা বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েছে। বাঙালি জাতীয়তাবাদের বীজ পুষ্ট হতে শুরু করেছে। ছাত্রদের বিভিন্নভাবে শেল্টার দেওয়া, পুলিশের গ্রেফতার এড়ানো, তাদের ঠিকমতো পরিচালনা করা এসব দায়িত্ব পালন করেছি।
এদিকে পূর্ব পাকিস্তানজুড়ে গোটা ষাটের দশক রাজনৈতিক স্বায়ত্তশাসনের দাবিতে উত্তাল ছিল। '৬২-র শিক্ষা আন্দোলন, '৬৪-র শ্রমিক আন্দোলন, '৬৬-র ছয় দফা, ছাত্র সমাজের ১১ দফা_ নানা দাবিতে আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে বাঙালি জাতীয়তাবাদ পরিপুষ্ট হয়ে পড়ে। কেউ কেউ স্বায়ত্তশাসনের দাবি বাদ দিয়ে সরাসরি স্বাধীনতার দাবিই উত্থাপন করেন। আইয়ুব খান তখন পাকিস্তানের শাসক। পশ্চিম পাকিস্তানে থেকে পূর্ব পাকিস্তানকে নিয়ন্ত্রণ করেন মৌলিক গণতন্ত্রের নামে।
এ দেশে তার চেলা ছিল মোনায়েম খাঁ আর নূরুল আমিন। পূর্ববাংলা তখন উত্তাল বিক্ষোভ-মিছিল-মিটিংয়ে। প্রায় প্রতিদিন টানটান উত্তেজনা। উত্তপ্ত বিশ্ববিদ্যালয়ও। এর পর '৭১ সালে শুরু হলো মুক্তিযুদ্ধ।
প্রতিটি আন্দোলনে আমি সক্রিয় ছিলাম। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালের নভেম্বর মাসে আমি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগে যোগ দেই। সেখানে প্রায় ছয় বছর শিক্ষকতা করে ১৯৭৮ সালের শেষদিকে চলে আসি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগে। ১৯৮৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মিত চাকরি থেকে অবসর নিয়ে কিছু দিন সুপার নিউমেরি অধ্যাপক হিসেবে যুক্ত ছিলাম। কিছু দিন বেসরকারি ইন্ডিপেন্ডেট বিশ্ববিদ্যালয়েও শিক্ষকতা করেছি।
শিক্ষকতা জীবন অত্যন্ত মধুময়।
১৯৭১-এর ২৫ মার্চ আপনি ঢাকাতেই ছিলেন এবং সেই কালরাতের ঘটনা কাছ থেকে দেখেছিলেন; ওই সময়ের কথা বলবেন?
১৯৭১ সালে আমি তখন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের চেয়ারম্যান। ফেব্রুয়ারি মাসের শেষের দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের এমএ ফাইনাল পরীক্ষার ভাইভা নিতে ঢাকায় আসি। আমার স্ত্রী অধ্যাপক হামিদা খানম তখন সরকারি হোম ইকোনমিঙ্ কলেজের অধ্যক্ষ। নীলক্ষেত আর আজিমপুর রোডের চৌমাথায় যে পেট্রল পাম্প, ঠিক তার পেছনে হোম ইকোনমিঙ্ কলেজের ভেতর বাসায় আমি উঠেছিলাম।
১ মার্চ ভাইভা শেষ হয়। অসহযোগ আন্দোলন চলছে। এর মধ্যে ৭ মার্চ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণ শুনি। এর পর ১০ মার্চ আমি রাজশাহী ফিরে যাই। আবার ঢাকায় আসি ১৪ মার্চ।
পরিস্থিতি ঠাণ্ডা হলে রাজশাহী ফিরে যাওয়ার ইচ্ছা। ২৫ মার্চ এদিকটায় হৈচৈ থেমে য়ায়। ইয়াহিয়া-মুজিব আলোচনার ফলাফল কি বোঝা যাচ্ছে না। সবাই উদগ্রীব হয়ে আছে তা জানার জন্য। পরে জানা যায়, আলোচনা ভেঙে গেছে।
ওই দিন গভীর রাতে নিরীহ বাঙালির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। প্রথম হত্যাকাণ্ড চালায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ফলে সেদিন রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নারকীয় তাণ্ডব খুব কাছ থেকে দেখি। ইকবাল হলের আশপাশে গুলি, মেশিনগান, মর্টারের শব্দ হচ্ছিল। ক্যাম্পাসজুড়ে শুধুই আগুন।
যেন মৃত্যু উপত্যকা। সারা রাত মৃত্যু আতঙ্কে কাটে। সবাই চুপ করে কান পেতে বসে আছি। আমার স্ত্রীকে বললাম, আজ রাতে পাকিস্তান শেষ হয়ে গেল। বাড়িতে আর্মি ঢুকতে পারে।
মানুষ তো একবারই মরে, কুকুর বেড়ালের মতো মরার চেয়ে মানুষের মতো মরা ভালো। ভোর রাতে কয়েকজন পাকিস্তানি আর্মি আমাদের বাড়ির গেটে দমাদম আঘাত করে। আমি বাড়ির দারোয়ান রফিককে গেট খুলে দিতে বলি। পাক আর্মি বাড়ির মধ্যে ঢুকে পড়ে। আমি বলি_ কেয়া চাহিয়ে।
আমার কথা শুনে ওরা থমকে যায়। কিছুক্ষণ কথা চলার পর আমাদের হত্যা না করে স্রেফ দুটো হাতঘড়ি নিয়ে তারা ফিরে যায়। এর পর আরও একদিন আসে পাকিস্তানি হানাদাররা। কিন্তু সেদিনও মৃত্যুর মুখ থেকে আমরা বেঁচে যাই। শেষে আমরা কোয়ার্টার ছেড়ে চলে আসি ইস্কাটনে বিখ্যাত রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী আমার স্ত্রীর বড় ভাই আবদুল আহাদের বাসায়।
মুক্তিযুদ্ধের পুরো মাসটিই জীবন-মৃত্যুকে সাথী করে ঢাকাতেই ছিলাম।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে আপনার ব্যক্তিগত সম্পর্ক ছিল। তার দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবন ও কর্মের কোন দিকগুলো আপনার তাৎপর্যপূর্ণ মনে হয়?
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমার চেয়ে বয়সে দুই বছরের বড় ছিলেন। বঙ্গবন্ধু আমাদের স্বাধীনতার মহান স্থপতি। তিনি বাংলাদেশের ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন।
তার নেতৃত্বে পূর্ববাংলার সব সম্প্রদায়ের মানুষ হিন্দু-মুসলমান-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ও অন্যান্য জাতি-গোষ্ঠীর মানুষ ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্রথমবারের মতো একটি স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেছে। এটিই বঙ্গবন্ধুর সবচেয়ে বড় অবদান। তার আগে এই ভূখণ্ডের মানুষের ঐক্য রাষ্ট্র ছিল না। দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন, শেরেবাংলা ফজলুল হক, নেতাজি সুভাষ বসু প্রমুখ চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু সফল হননি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবই এই ভূখণ্ডের ভাষা-ধর্ম-সংস্কৃতি নির্বিশেষে সব সম্প্রদায়ের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করেছিলেন।
তার নেতৃত্বেই দীর্ঘ রাজনৈতিক আন্দোলন-সংগ্রাম শেষে এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মধ্য দিয়ে একটি একক স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। আমাদের হাজার বছরের ইতিহাসে বঙ্গবন্ধুর এটিই সবচেয়ে বড় কৃতিত্ব। তার ভুলত্রুটি-সীমাবদ্ধতা সব কিছু সত্ত্বেও শুধু এ কারণেই তিনি ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন।
কী কারণে বা কীসের বলে তিনি এই ভূখণ্ডের সব মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করতে সক্ষম হয়েছিলেন?
প্রধান কারণ হচ্ছে, তিনি আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন ধর্মনিরপেক্ষতাকে। ধর্মে ধর্মে বিভেদ-বিভাজন থাকলে তো সব মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করে একটি রাষ্ট্র গঠনের কাজে উদ্বুদ্ধ করা যায় না।
তার অনুপ্রেরণায় পূর্ববাংলার হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ও অন্যান্য ধর্ম-সংস্কৃতির মানুষ জীবন বাজি রেখে অস্ত্র হাতে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন। এটা সম্ভব হয়েছিল তার অসাম্প্রদায়িক, ধর্মনিরপেক্ষ আদর্শের কারণে। বঙ্গবন্ধু নিজে ধার্মিক ছিলেন, নিষ্ঠাবান মুসলমান ছিলেন। কিন্তু তিনি ধর্মকে রাজনীতির সঙ্গে জড়াননি। কারণ আগে মুসলিম লীগের সময় ধর্মকে রাজনীতির সঙ্গে জড়ানো হয়েছিল বলে মানুষে মানুষে বিভেদ সৃষ্টি হয়েছিল।
ওই বিভেদ চলতে থাকলে পূর্ববাংলার সব মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করা সম্ভব ছিল না। বঙ্গবন্ধু অভিজ্ঞতার আলোকে সেটা বুঝতে পেরেছিলেন। তিনি আরও বুঝতে পেরেছিলেন, ধর্ম ও রাজনীতিকে একত্র করলে ধর্ম ও রাজনীতি উভয়ই কলুষিত হয়।
স্বাধীনতার পর আমাদের সমাজ জীবনে উল্লেখযোগ্য কী পরিবর্তন ঘটেছে?
স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্ন ছিল এমন একটি দেশ গড়ে তোলা, যেখানে সব মানুষের সমান অধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠা পাবে। মুক্তিযুদ্ধে বৃহত্তর লক্ষ্য ছিল এটাই।
এ জন্য প্রয়োজন সুশাসন। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে সব মানুষ সমান অধিকার প্রতিষ্ঠা পেতে পারে। আইনের দৃষ্টিতে সবাই সমান। এটা শুধু মুখে বললে হবে না, কাজের মধ্য দিয়ে প্রমাণ করতে হবে। শক্ত হাতে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
আমাদের স্বাস্থ্য, শিক্ষা, যোগাযোগ, অবকাঠামোসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন এসেছে। দেশকে এগিয়ে নিতে গণতান্ত্রিক ঐক্য অনিবার্য।
আপনার অবসর কীভাবে কাটে?
পড়াশোনা করি, টেলিভিশন দেখি। নিয়মিত গান শুনি। অতুল প্রসাদ, রবীন্দ্রনাথ, নজরুলের গান আমার প্রিয়।
সপ্তাহে সোমবার ও বুধবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যাই, উচ্চতর গবেষকদের সঙ্গে কথা বলি। ভালো লাগে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।