আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সূর্যসেন:

মানুষ আর প্রাণীর মধ্যে পার্থক্য হলো-চেতনাগত ও সংস্কৃতিগত।

সূর্যসেন: ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন-সংগ্রাম ও বিপ্লবের শ্রেষ্ঠতম লড়াকু বিপ্লবী[/sb ‘আমার শেষ বাণী _ আদর্শ ও একতা। ফাঁসির রজ্জু আমার মাথার উপর ঝুলছে। মৃত্যু আমার দরজায় করাঘাত করছে। মন আমার অসীমের পানে ছুটে চলছে।

এই তো সাধনার সময়। বন্ধুরূপে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করার এই তো সময়। ফেলে আসা দিনগুলোকে স্মরণ করার এই তো সময়। কত মধুর তোমাদের সকলের স্মৃতি। তোমরা আমরা ভাই-বোনেরা তোমাদের মধুর স্মৃতি বৈচিত্রহীন আমার এই জীবনের একঘেঁয়েমিকে ভেঙ্গে দেয়।

উৎসাহ দেয় আমাকে। এই সুন্দর পরম মুহূর্তে আমি তোমাদের জন্য দিয়ে গেলাম স্বাধীন ভারতের স্বপ্ন। আমার জীবনের এক শুভ মুহূর্তে এই স্বপ্ন আমাকে অনুপ্রাণিত করেছিল। জীবনভর উৎসাহভরে ও অক্লান্তভাবে পাগলের মতো সেই স্বপ্নের পেছনে আমি ছুটেছি। জানি না কোথায় আজ আমাকে থেমে যেতে হচ্ছে।

লক্ষ্যে পৌঁছানোর আগে মৃত্যুর হিমশীতল হাত আমার মতো তোমাদের স্পর্শ করলে তোমরাও তোমাদের অনুগামীদের হাতে এই ভার তুলে দেবে, আজ যেমন আমি তোমাদের হাতে তুলে দিয়ে যাচ্ছি। আমরা বন্ধুরা _ এগিয়ে চল, এগিয়ে চল _ কখনো পিছিয়ে যেও না। পরাধীনতার অন্ধকার দূরে সরে যাচ্ছে। ওই দেখা যাচ্ছে স্বাধীনতার নবারুণ। কখনো হতাশ হয়ো না।

সাফল্য আমাদের হবেই। ভগবান তোমাদের আশীর্বাদ করুন। ১৯৩০ সালের ১৮ এপ্রিল চট্টগ্রাম ইস্টার বিদ্রোহের কথা কোনও দিনই ভুলে যেও না। জালালাবাদ, জুলখা, চন্দননগর ও ধলঘাটের সংগ্রামের কথা সব সময় মনে রেখো। ভারতের স্বাধীনতার বেদীমূলে যেসব দেশপ্রেমিক জীবন উৎসর্গ করেছেন, তাঁদের নাম রক্তাক্ষরে অন্তরের অন্তরতম প্রদেশে লিখে রেখো।

"আমাদের সংগঠনে বিভেদ না আসে _ এই আমার একান্ত আবেদন। যারা কারাগারের ভেতরে ও বাইরে রয়েছে, তাদের সকলকে জানাই আমার আশীর্বাদ। বিদায় নিলাম তোমাদের কাছ থেকে’। বিপ্লব দীর্ঘজীবী হোক বন্দেমাতরম ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন-সংগ্রাম ও বিপ্লবের অন্যতম লড়াকু যোদ্ধা সূর্যসেন। অগ্নিযুগের সশস্ত্র বিপ্লববাদী কর্মকাণ্ডে চট্টগ্রামের মহানায়ক ছিলেন তিনি।

বিপ্লবীদের কাছে তিনি ‘মাস্টারদা’ নামে পরিচিত ছিলেন। পূর্ববঙ্গে জন্ম নেয়া এই বাঙালীব্রিটিশবিরোধী সশস্ত্র বিপ্লববাদী আন্দোলনে বিপ্লবীর ভূমিকা পালন করেন। ব্রিটিশ শাসনের দেড়শত বছরের মধ্যে তিনিই চট্টগ্রামের পাহাড়তলী থেকে ব্রিটিশকে সম্মুখ যুদ্ধের মাধ্যমে বিতাড়িত করতে সক্ষম হয়েছিলেন। তিনি ব্রিটিশরাজকে উৎচ্ছেদ করতে গিয়ে দেশমাতৃকার জন্য জীবন উৎসর্গ করেন। এ উপমহাদেশে বৃটিশবিরোধী আন্দোলনে মাস্টারদা সূর্যসেনের নাম চিরস্মরণীয়।

সূর্য সেনের বীরত্ব ও আত্মত্যাগ এ উপমহাদেশকে বিদেশী শক্তির শোষণ-শাসন থেকে মুক্ত করে স্বাধীনতা প্রাপ্তির স্বপ্ন দেখিয়েছিলো। সূর্যসেনর জন্ম ১৮৯৪ সালের ১৮ অক্টোবর। চট্টগ্রামের রাউজান থানার নোয়াপাড়া গ্রামে। বাবা রাজমণি সেন, মা শশীবালা সেন। তিনি পিতা-মাতার চতুর্থ সন্তান।

পাঁচ বছর বয়সের তাঁর বাবা মারা যায়। সূর্যসেন তাঁর বড় কাকা গৌরমণি সেনের কাছে বড় হয়েছেন। তারপর জ্যাঠাতুতো দাদা চন্দ্রনাথ সেন তাঁর অভিভাবকের দায়িত্ব পালন করেন। পড়াশুনার হাতেখড়ি পরিবারে। তারপর মক্তব-পাঠশালা ও প্রাইমারী স্কুল।

সূর্য সেন ছেলেবেলা থেকেই খুব ভাল ছাত্র ছিলেন। তিনি তখন থেকেই বিপ্লবী দলের সব খবর রাখতেন ও গোপনে গোপনে বেআইনী রাজনৈতিক বইও পড়তেন। তিনি ১৯১২ সালে চট্টগ্রামের নন্দনকাননে অবস্থিত হরিশদত্তের ন্যাশনাল স্কুল থেকে মেট্রিক পাশ করার পর উচ্চশিক্ষার জন্য প্রথমে চট্টগ্রাম কলেজে ও পরে পশ্চিমবঙ্গের বহরমপুর কৃষ্ণনাথ কলেজে ভর্তি হন। ওই কলেজ থেকে ১৯১৮ সালে বিএ পাস করেন। এই কলেজের শিক্ষক সতীশচন্দ্র চক্রবর্তী সূর্যসেনকে বিপ্লবী আদর্শে উদ্বুদ্ধ করেন।

তিনি রাজনৈতিক শিক্ষাগুরুদের মধ্য অন্যতম। ১৯১৪ সালে চট্টগ্রামে বিপ্লবী গ্রুপ সংগঠিত হয়। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের (১৯১৪-১৯১৮) শেষের দিকে অনুরূপ সেন, চারুবিকাশ দত্ত, অম্বিকা চক্রবর্তী, নগেন্দ্রনাথ সেন প্রমুখের সঙ্গে চট্টগ্রামে গোপনবিপ্লবী দল গঠন করেন। স্কুলে পড়ার সময়ই সূর্যসেনের সাথে বিপ্লবীদের যোগাযোগ ঘটে । বহরমপুর কলেজে পড়ার সময়ে সূর্যসেন সশস্ত্র বিপ্লববাদী দল অনুশীলনের সাথে যুক্ত হন।

চট্টগ্রামে ফিরে এসে শিক্ষকতা পেশা বেছে নেন। রাজনৈতিক জীবনের সুবিধার কথা চিন্তা করেই এই সিদ্বান্ত নিয়েছিলেন। চট্টগ্রামের দেওয়ানবাজারে বিশিষ্ট উকিল অন্নদা চৌধুরী প্রতিষ্ঠিত অধুনালুপ্ত ‘উমাতারা উচচ ইংরেজী বিদ্যালয়ে’ শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। ক্লাশে ছাত্রদের বলতেন ‘তোমাদের বিদ্যার্জন, তোমাদের দৈনন্দিন জীবনধারণ, তোমাদের ভাবী জীবনের স্বপ্ন ও চিন্তার মধ্যে সবকিছুর ঊর্ধ্বে মনে একটি কথাকে কি প্রোজ্জ্বল করে রাখতে পারবে _ পরাধীনতার অভিশাপ থেকে, ইংরেজের পরাধীনতার পীড়ন থেকে এই দেশকে মুক্ত করাই তোমাদের ব্রত _ আমাদের জীবনের উদ্দেশ্য? এসময় বিপ্লবী দলের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক গভীর হয়ে ওঠে। শিক্ষকতা করার কারণে প্রথমে বিপ্লবীদের কাছ এবং পরে সকলের কাছে তিনি ‘মাস্টারদা’ হিসেবে পরিচিত হন।

এই স্কুলই তাঁর বিপ্লবী কর্মকাণ্ডের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হয়ে ওঠে। বিপ্লবী ভাবধারায় দীক্ষিত সূর্যসেন দেশমাতৃকার স্বাধীনতার জন্য আত্মত্যাগকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছিলেন। তাই তিনি বিবাহ করতে রাজি ছিলেন না। কিন্তু বিএ পাশ করে চট্টগ্রামে আসার পর থেকেই তাঁর বিবাহের কথাবার্তা অভিভাবকরা তোলেন। অবশেষে তাঁর বড়ভাই শিক্ষক চন্দ্রনাথ সেন ও অন্যান্য আত্মীয়দের বিশেষ অনুরোধে ১৯১৯ সালে তিনি চট্টগ্রামের কানুনগোপাড়ার নগেন্দ্রনাথ দত্তের ষোল বছরের কন্যা পুষ্প দত্তকে বিয়ে সহধর্মিনী করেন।

তবে সহধর্মিনীকে সময় দেবার মত সময় তাঁর ছিলনা। তাঁদের ঘর-সংসার করা হয়ে ওঠেনি। ১৯১৬ সালে প্রণয়ন করা হয় ‘ভারতরক্ষা আইন’। এই আইনের মাধ্যমে স্বাধীনতা আন্দোলনের হাজার হাজার নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার করে কারাগারে আটকে রাখা হয়। ১৯১৯ সালের ১৮ মার্চ ঘোষণা করা হয় ‘রাউলাট আইন’।

এই আইনের সাহায্যে শাসকরা বিনা-বিচারে আটক রাখার ক্ষমতা লাভ করে। এর পরপরই ১৩ এপ্রিল ১৯১৯ সংঘটিত হয় কুখ্যাত জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ড। এর প্রতিবাদে রবীন্দ্রনাথ পর্যন্ত নেমে এলেন রাজপথে। ছুঁড়ে ফেলে দিলেন ব্রিটিশের দেওয়া নাইট খেতাব। সূর্যসেন প্রথম বিশ্বযুদ্ধের শেষের দিকে চট্টগ্রামে অনুরূপ সেন, চারুবিকাশ দত্ত, অম্বিকা চক্রবর্তী এবং নগেন্দ্রনাথ সেনসহ কয়েকজন বিপ্লবীকে নিয়ে একটি গোপন বিপ্লবী সংগঠনের কাজ শুরু করেন।

১৯২০সালে মহাত্মা গান্ধী বিপ্লবীদের কাছে এক বছরের মধ্যে স্বরাজ এনে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। শুরু করেন অসহযোগ আন্দোলন। এ সময় কলকাতার যুগান্তর দলের সঙ্গে মাস্টারদা সূর্য সেনের নেতৃত্বে চট্টগ্রামের বিপ্লবীরাও ব্রিটিশবিরোধী প্রকাশ্য আন্দোলনে যোগ দেন। মহাত্মা গান্ধী যখন অহিংস আন্দোলন প্রত্যাহার করেন তখন সূর্য সেনের নেতৃত্বে বিপ্লবীরা আবার গোপনে সশস্ত্র আন্দোলনের প্রস্তুতি নিতে থাকে। ১৯২২ সালের শুরুতেই চৌরিচৌরার একটি ঘটনায় গান্ধী অসহযোগ আন্দোলন প্রত্যাহার করে নিলেন।

এ সময় চট্টগ্রামের বিপ্লবীরা গণআন্দোলন এগিয়ে নিয়ে যাবার উদ্যোগ নিলেন। তারা অর্থ, অস্ত্র সংগ্রহের পাশাপাশি সশস্ত্র অভ্যুত্থানের সব রকম প্রস্তুতি নিতে থাকেন। নগেনসেনের নেতৃত্বে শুরু হল বিপ্লবীদের সামরিক প্রশিক্ষণ। এ সময় বিপ্লবীরা অর্থসংগ্রহের জন্য ডাকাতির আশ্রয়ও নিয়েছিলেন। প্রথম ডাকাতি সংগঠিত হয়েছিল আনোয়ারা থানার সরসী বাবুর বাড়িতে।

১৯২৩ সালের ১৪ ডিসেম্বর অনন্ত সিংহ, নির্মল সেন প্রমুখের নেতৃত্বে বাটালি পাহাড় এলাকায় রেলের টাকা ডাকাতির সময় কোনো গুলি চালানো হয়নি। কারণ ডাকাতি করতে গিয়ে কাউকে আহত করা যাবে না _ এমনটাই ছিল মাস্টারদার নির্দেশ। অম্বিকা চক্রবর্তী ও দলিলুর রহমান রেল ডাকাতির সতের হাজার টাকা নিয়ে চলে গেলেন কলকাতায়। উদ্দেশ্য অস্ত্র কেনা। ওই বছর ২৪ ডিসেম্বর সূর্যসেনের সহযোগীদের নেতৃত্বে সশস্ত্র আন্দোলনের অর্থ সংগ্রহের জন্য রেলওয়ের ১৭ হাজার টাকা ছিনতাই করা হয়।

পুলিশ তাদের আস্তানায় হানা দেয়। পুলিশের সঙ্গে শুরু হয় যুদ্ধ। এই যুদ্ধ নাগরথানা পাহাড়খণ্ড যুদ্ধ নামে পরিচিত। যুদ্ধে সূর্যসেন ও অম্বিকা চক্রবর্তী ধরা পড়েন। তাঁদের বিরুদ্ধে সাক্ষী-প্রমাণ না থাকায় তাঁরা দ্রুত ছাড়া পান।

জেল থেকে বেরিয়ে এক মুহূর্তও সময় নষ্ট করলেন না তিনি। আবার শুরু হল সশস্ত্র অভ্যুত্থানের প্রস্তুতি। ১৯২৪ সালের ৫ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রামের নোয়াপাড়ায় একটি অস্ত্রলুটের ঘটনায় মাস্টারদা জড়িত ছিলেন। এ বছর ১ নং বেঙ্গল অর্ডিনেন্স ঘোষণা করে সারা বাংলায় বিপ্লবীদের ব্যাপকহারে গ্রেফতার করা হয়। শুধু ২৫ অক্টোবর বাংলার বিভিন্ন জেলা থেকে প্রায় ২০০ বিপ্লবী কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়।

গ্রেফতার হন নেতাজী সুভাষ, অনিলবরণ রায় প্রমুখ নেতারাও। চট্টগ্রামের বিপ্লবীরা পুলিশের চোখ ফাঁকি দিতে কলকাতায় আশ্রয় নেন। ওই সময় তাঁরা কলকাতার দক্ষিণেশ্বরে বোমা তৈরির প্রশিক্ষণ নিতেন। থাকতেন শোভাবাজারে। ১৯২৫ সালের ১০ নভেম্বর সেখানে পুলিশ হানা দেয়।

সূর্যসেন গায়ের জামা খুলে খালি গায়ে একটা অপরিষ্কার ময়লা গামছা কাঁধে ফেলে চায়ের কেতলি হাতে ধীরে ধীরে সিঁড়ি বেয়ে নীচে নেমে আসেন। পুলিশ তাঁকে দাঁড় করিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তিনি সাদাসিদাভাবে বলেন, বাবুলোকদের জন্য চা আনতে যাচ্ছেন। পুলিশের দারোগা কিছুক্ষণ জেরা করার পর সন্দেহ করার মতো কোনো কিছু না পেয়ে তাঁকে ছেড়ে দেন। ১৯২৬ সালের ৮ অক্টোবর কলকাতার এক মেস থেকে পুলিশ তাঁকে গ্রেফতার করে। তাঁদের বিরুদ্ধে দায়ের করা হয় ‘মুরারিপুকুর ষড়যন্ত্র মামলা’ ও টেগার্ট হত্যা প্রচেষ্টায় মামলা।

১৯২৮ সালে মুক্তি পান। ১৯২৯ সালের প্রথম দিকে তিনি চট্টগ্রাম জেলা কংগ্রেসের সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৩০ সালের শুরু থেকেই তার উদ্যোগে ভবিষ্যৎ সশস্ত্র আন্দোলনের ব্যাপক পরিকল্পনা শুরু হয়। ১৯৩০ সালের ১৮ এপ্রিল সশস্ত্র অভ্যুত্থানের করার উদ্দেশ্যে নিয়ে চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার দখল করেন। কারণ একটাই অস্ত্র সংগ্রহ।

ঐতিহাসিক রমেশচন্দ্র মজুমদার ১৮ এপ্রিল যুববিদ্রোহ বা চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠনের ঘটনাকে ‘ভারতের বিপ্লবী কর্মকাণ্ডের সবচেয়ে সাহসিকতাপূর্ণ কাজ’ হিসাবে চিহ্নিত করেছেন। ২২ এপ্রিল জালালাবাদ পাহাড়ে সুর্যসেনের নেতৃত্বে কয়েকশত পুলিশ-সেনা বাহিনীর সাথে বিপ্লবীদের সম্মুখযুদ্ধ হয়। যুদ্ধে ব্রিটিশ বাহিনীর ৮০ জন এবং বিপ্লবী বাহিনীর ১২ জন নিহত হয়। যুদ্ধের এক পর্যায়ে ব্রিটিশ বাহিনী পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়। যা ছিল দেড়শত বছরের ইতিহাসের মধ্যে ইংরেজ জন্য খুবই অপমানজনক ঘটনা।

ইংরেজ বাহিনী এদেশের মানুষের কাছে প্রথম পরাজয়। তাই এই যুদ্ধের ঐতিহাসিক মূল্য অনেক। সূর্যসেনকে ধরার জন্য ইংরেজ সরকার প্রচুর টাকা পুরস্কার ঘোষণা করে। এ সময় তাঁকে কিছু দিনের জন্য আত্মগোপনে থাকতে হয়। ১৯৩১ সাল জুড়ে আত্মগোপনে তিনি।

১৯৩২ সালের ১৩ জুন সাবিত্রী চক্রবর্তীর বাড়িতে তাঁকে ধরার চেষ্টা ব্যর্থ হয় ব্রিটিশ পুলিশ। ১৯৩২ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর মাষ্টারদার প্রীতিলতাকে বললেন, পাহাড়তলী ইউরোপিয়ান ক্লাব আক্রমণের নেতৃত্ব তোমাকে নিতে হবে। তারপর প্রীতিলতার নেতৃত্বে বিপ্লবীরা ১৯৩২ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর রাত্রে পাহাড়তলী ইউরোপিয়ান ক্লাব আক্রমণ করে সফল হন। আক্রমণ শেষে নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়ার সময় তিনি গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হন। এ অবস্থায় ধরা পড়ার আগে সঙ্গে রাখা সায়ানাইড বিষ খেয়ে আত্মাহত্যা করেন।

কারণ ধরা পড়লে বিপ্লবীদের অনেক গোপন তথ্য ব্রিটিশ পুলিশের মারের মুখে ফাঁস যেতে পারে, তাই। দেশমাতৃকার জন্য নিজেকে আকুণ্ঠভাবে উৎসর্গ করলেন। ১৯৩৩ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম থেকে ১০ মাইল দূরে পটিয়া থানার গৈরিলা গ্রামের ক্ষীরোদপ্রভা বিশ্বাসের বাড়িতে তিনি আত্মগোপন ছিলেন। তাঁর সঙ্গে ছিলেন ব্রজেন সেন, কল্পনা দত্ত ও মনি দত্ত। নগেনসেন নামের এক বিশ্বাসঘাতক এ খবর পৌঁছে দিল ব্রিটিশ পুলিশের কাছে।

পুলিশ-বাহিনী বাড়িটি ঘিরে ফেলে। শুরু হয় এক লড়াই। অবশেষে পুলিশ গ্রেফতার করে মাস্টারদা ও ব্রজেন সেনকে। গ্রেফতারের পর মাস্টারদা ও ব্রজেন সেনের ওপর চালানো হয় বর্বর অত্যাচার। হাত-পা শিকলে বেঁধে মাস্টারদাকে নিয়ে যায় চট্টগ্রামে।

২০ ফেব্রুয়ারি তাঁদের জেলে পাঠায়। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদী শাসক মাস্টারদা ও তারকেশ্বর দস্তিদারের ফাঁসির হুকুম জারি। ১৯৩৪ সালের ১২ জানুয়ারি। দিবাগত রাত। বিপ্লবী মাস্টারদা সূর্যসেন এবং তাঁর সহকর্মী তারকেশ্বর দস্তিদার নিঃশঙ্কচিত্তে ব্রিটিশের ফাঁসির রজ্জুতে হাসি মুখে জীবন বিসর্জন দিলেন।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.