"আকাশে নক্ষত্র দেখে নক্ষত্রের মতন না হয়ে পারিনি আমি / নদী তীরে বসে তার ঢেউয়ের কাঁপন, / বেজেছে আমার বুকে বেদনার মত / ঘাসের হরিৎ রসে ছেয়েছে হৃদয়"। _আহমদ ছফা
পর্ব - ৩
১৯২০ সালে জাতীয় কংগ্রেস নন-ভায়োলেন্স নন-কোঅপারেশন বা অসহযোগ নামে খ্যাত কর্মসূচি গ্রহণ করে, যার উদগাতা মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী বা মহাত্মা গান্ধী। ওই একই সময়ে মুসলীম লীগ গ্রহণ করে খিলাফৎ আন্দোলনের কর্মসূচি। গান্ধী ভারতের সশস্ত্র বিপ্লববাদী সংগঠনগুলোকে তাদের কর্মকাণ্ড একবছরের জন্য স্থগিত রেখে অসহযোগ আন্দোলনে সহযোগিতা করার জন্য আহ্বান জানালেন। এ অসহযোগ কর্মসূচির মাধ্যমে তিনি 'স্বরাজ' এনে দেওয়ারও আশ্বাস দিলেন।
স্বাধীনতা আন্দোলনের সমস্ত শক্তিকে একত্রিত করার উদ্দেশ্যে নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুও গান্ধীর দাবি প্রস্তাব মেনে নিয়ে একই আবেদন রাখেন। নেতাজীর আবেদনে সাড়া দিয়ে অপরাপর বিপ্লববাদী সংগঠনগুলোর সাথে চট্টগ্রামের বিপ্লবীরাও অসহযোগে শামিল হন। '২০ সালের অসহযোগ ও খিলাফৎ আন্দোলনে চট্টগ্রাম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। কাজেম আলী মাস্টার, দেশপ্রিয় যতীন্দ্র মোহন, শাহ বদিয়াল আলম, মহিম চন্দ্র পাল, মৌলানা মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদী, জালাল আহমেদ, মৌলভী নাজির আহমেদ, শাহ নূরুদ্দীন, মৌলানা নূরুল হক, প্রশান্ত চৌধুরী প্রমুখ নেতাদের পেছনে দাঁড়িয়ে মাস্টারদা, অম্বিকা চক্রবর্তী এবং তাঁদের দলের কর্মীরা সমস্ত শক্তি নিয়ে অসহযোগ আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেছিলেন। চট্টগ্রামের এ অগ্রণী ভূমিকাকে স্বীকৃতি দিয়ে সেদিন গান্ধী বলেছিলেন, "Chittagong is in the fore of the movement", অর্থাৎ অসহযোগ আন্দোলনের সামনের কাতারে আছে চট্টগ্রাম।
১৯২০ সালের ৮ নভেম্বর চট্টগ্রামে প্রথম ছাত্র্রধর্মঘট ও মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। ওই দিন মৌলানা মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদীর সভাপতিত্বে যাত্রা মোহন সেন (জেএম সেন) হলে অনুষ্ঠিত জনসভায় হিন্দু-মুসলমান নির্বিশেষে হাজার হাজার মানুষের সমাগম ঘটেছিল।
জাতীয়ভাবে কংগ্রেসের নেতৃত্বে প্রায় তিনবছর ধরে চলা এ গণআন্দোলনে সূর্যসেন এবং তাঁর দল সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন। এ আন্দোলনের এক পর্যায়ে বিরোধী বিভিন্ন দল, উপদল, গোষ্ঠী ও ব্যক্তিকে স্বপক্ষে আনতে গান্ধী এমনও বলেছিলেন যে একবছরের অসহযোগ আন্দোলনের মাধ্যমে তিনি স্বরাজ এনে দেবেন। কিন্তু ১৯২২ সালের শুরুতেই চৌরিচৌরার একটি ঘটনায় গান্ধী অসহযোগ আন্দোলন প্রত্যাহার করে নিলেন।
গণআন্দোলন মুখ থুবড়ে পড়ল। সারাদেশে নেমে এল হতাশা ও স্থবিরতা।
চট্টগ্রামের বিপ্লবীরা সে হতাশা আর স্থবিরতার আঘাত সামলে গণআন্দোলন এগিয়ে নিয়ে যাবার উদ্যোগ নিলেন। তারা অর্থ, অস্ত্র সংগ্রহের পাশাপাশি সশস্ত্র অভ্যুত্থানের সব রকম প্রস্তুতি নিতে থাকেন। নেগন সেন বা জুলু সেন প্রথম বিশ্বযুদ্ধে বেঙ্গল রেজিমেন্টে হাবিলদার পদে উন্নীত হয়েছিলেন।
তাঁর নেতৃত্বে শুরু হল বিপ্লবীদের সামরিক প্রশিক্ষণ। এ সময় বিপ্লবীরা অর্থসংগ্রহের জন্য ডাকাতির আশ্রয়ও নিয়েছিলেন। প্রথম ডাকাতি সংগঠিত হয়েছিল আনোয়ারা থানার সরসী বাবুর বাড়িতে। ১৯২৩ সালের ১৪ ডিসেম্বর অনন্ত সিংহ, নির্মল সেন প্রমুখের নেতৃত্বে বাটালি পাহাড় এলাকায় রেলের টাকা ডাকাতির সময় কোনো গুলি চালানো হয়নি। কারণ ডাকাতি করতে গিয়ে কাউকে আহত করা যাবে না _ এমনটাই ছিল মাস্টারদার নির্দেশ।
অম্বিকা চক্রবর্তী ও দলিলুর রহমান রেল ডাকাতির সতের হাজার টাকা নিয়ে চলে গেলেন কলকাতায়। উদ্দেশ্য অস্ত্র কেনা।
সে সময় সুলুকবাহার এলাকায় ছিল বিপ্লবীদের সদর দপ্তর। রেল ডাকাতির তদন্ত করতে '২৩ সালের ২৪ ডিসেম্বর সেখানে পুলিশ হানা দেয়। বিপ্লবীরা গুলি চালিয়ে, বোমা ফাটিয়ে সেখান থেকে পালিয়ে যান এবং নগরকানা পাহাড়ে গিয়ে আশ্রয় নেন।
বিপ্লবীদের পেছনে পেছনে পুলিশ তাড়া করে এবং এক পর্যায়ে তাঁদের ঘিরেও ফেলে। ধরা পড়ার ভয়ে ক্লান্ত মাস্টারদা, অম্বিকা চক্রবর্তী ও রাজেন দাস তাঁদের পকেটে রাখা সায়ানাইড বিষ খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা চালান। অনন্ত সিংহ, উপেন ও খোকা পালিয়ে যেতে সক্ষম হন। মৃতপ্রায় মাস্টারদা ও অম্বিকা চক্রবর্তী পুলিশের হাতে ধরা পড়েন। হাসপাতালে নিয়ে তাঁদের চিকিৎসা করার পর তাঁরা সুস্থ হয়ে ওঠেন।
রাজেনের দেহ জঙ্গলের মধ্যে পুলিশ খুঁজে পায়নি, কিন্তু তিনিও বেঁচে যান। জানা যায়, সায়ানাইড ক্যাপসুল খোলা অবস্থায় দিনের পর দিন তাঁদের পকেটে থাকতে থাকতে সেগুলোর কার্যকারিতা নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। ফলে তাঁরা বেঁচে যান। তাদের বিরুদ্ধে ডাকাতির মামলা রুজু করা হয়েছিল। সে মামলা পরিচালনা করেন দেশপ্রিয় যতীন্দ্র মোহন।
প্রায় ৯ মাস কারাবন্দি থাকার পর মামলা থেকে তাঁরা খালাস পান।
জেল থেকে বেরিয়ে এক মুহূর্তও সময় নষ্ট করলেন না তিনি। আবার শুরু হল সশস্ত্র অভ্যুত্থানের প্রস্তুতি। ১৯২৪ সালের ৫ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রামের নোয়াপাড়ায় একটি অস্ত্রলুটের ঘটনায় মাস্টারদার নাম শোনা যায়। এ বছর ১ নং বেঙ্গল অর্ডিনেন্স ঘোষণা করে সারা বাংলায় বিপ্লবীদের ব্যাপকহারে গ্রেফতার করা হয়।
শুধু এক ২৫ অক্টোবর তারিখেই বাংলার বিভিন্ন জেলা থেকে প্রায় ২০০ বিপ্লবী কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতার হন নেতাজী সুভাষ, অনিলবরণ রায় প্রমুখ নেতারাও। চট্টগ্রামের বিপ্লবীরা পুলিশের চোখ ফাঁকি দিতে কলকাতায় আশ্রয় নেন। ওই সময় তাঁরা কলকাতার দক্ষিণেশ্বরে বোমা তৈরির প্রশিক্ষণ নিতেন। থাকতেন শোভাবাজারে।
১৯২৫ সালের ১০ নভেম্বর সেখানে পুলিশ হানা দেয়। সূর্যসেন গায়ের জামা খুলে খালি গায়ে একটা অপরিষ্কার ময়লা গামছা কাঁধে ফেলে চায়ের কেতলি হাতে ধীরে ধীরে সিঁড়ি বেয়ে নীচে নেমে আসেন। পুলিশ তাঁকে দাঁড় করিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তিনি সাদাসিদাভাবে বলেন, বাবুলোকদের জন্য চা আনতে যাচ্ছেন। পুলিশের দারোগা কিছুক্ষণ জেরা করার পর সন্দেহ করার মতো কোনো কিছু না পেয়ে তাঁকে ছেড়ে দেন। এর প্রায় একবছর পর ১৯২৬ সালের ৮ অক্টোবর কলকাতার আমহাস্র্ট্র স্ট্রিটের এক মেস থেকে পুলিশ তাঁকে গ্রেফতার করে।
তাঁদের বিরুদ্ধে দায়ের করা হয় 'মুরারিপুকুর ষড়যন্ত্র মামলা'। এ মামলায় ১৯২৮ সাল পর্যন্ত দুইবছর তাঁকে মেদিনীপুর প্রেসিডেন্সি জেল, পুনার য়েরোড়া জেল ও বম্বের রত্নগিরি জেলে কারাবাস করতে হয়।
মাস্টারদারা যখন জেলে ওই সময়টাতেই প্রকাশিত হয় শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের সাড়া জাগানো উপন্যাস 'পথের দাবী'। ব্রিটিশ সরকার এ বইটি বাজেয়াপ্ত করলেও বিপ্লবীরা গোপনে নানা উপায়ে তা সংগ্রহ করতেন এবং গভীর মনোযোগের সাথে পড়তেন। 'পথের দাবী' সূর্যসেন ও তাঁর সাথীদের মনে ব্যাপক নাড়া দেয়, অনন্ত সিংহের ভাষায়, "চিন্তার জগতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটায়"।
তাঁরা ব্যক্তিহত্যা ও ডাকাতি-জাতীয় কার্যক্রম বাতিল করে দিয়ে নতুন পথে ভাবতে শুরু করেন।
মাস্টারদা মনে করতেন, বাংলার তথা ভারতবর্ষের বৈপ্লবিক কর্মকাণ্ডের বীরত্মপূর্ণ ও চরম আত্মত্যাগের ইতিহাস যেমন অধ্যয়ন করতে হবে, তার চেয়েও হাজারগুণ বেশি ভাবতে হবে অতীত দুর্বলতার কথা। বিভিন্ন সময় পুলিশের রিপোর্ট, বিশেষত সিডিশন (Sedation) কমিটির রিপোর্টে হাজার হাজার ঘটনার উল্লেখ আছে _ বিপ্লবী পার্টি কিভাবে তাদের নিজেদের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব ও কারো কারো চরম বিশ্বাসঘাতকতার জন্য ধ্বংস হয়ে গেছে, বহু সংঘবদ্ধ বৃহৎ পরিকল্পনা ও ছোট ছোট আয়োজন বিফল হয়ে গেছে। পুলিশের চর কিভাবে দলে ঢোকে, পুলিশ কিভাবে তাদের চরদের গোপন করে রাখে ও রক্ষা করে, তাদের কার্যকলাপ দিয় কিভাবে দলকে বিভ্রান্ত করে _ মাস্টারদা এগুলো খুব গভীরভাবে অধ্যয়ন ও অনুধাবন করার চেষ্টা করেছিলেন। এর প্রতিকারের পথও তিনি ভেবেছিলেন।
এসব অভিজ্ঞতা থেকেই পরে তিনি নিজের সংগঠনে বেশ কিছু নিয়ম-নীতি চালু করেছিলেন। তিনি বলতেন, "শক্তিশালী বুনিয়াদের ওপর একটি বিপ্লবী পার্টি আমাদের তৈরি করতে হবে। " (অনন্ত সিংহ : সূর্যসেনের স্বপ্ন ও সাধনা, পৃ: ৫৬) কারাবন্দি থাকা অবস্থাতেই সূর্যসেন আরো একটি বিষয়ে গভীরভাবে ভেবেছিলেন, তাহল বিপ্লবী আন্দোলনে নারীদের অংশগ্রহণ।
তাঁদের সেদিনকার উপলব্ধি ব্যাখ্যা করে বিপ্লবী গণেষ ঘোষ লিখেছেন, "মাস্টারদার শিক্ষায় বিপ্লবী দলের নেতৃস্থানীয় কর্মীরা বুঝেছিলেন ব্যক্তিগত হত্যা ও প্রতিহিংসার যুগ শেষ হয়ে গেছে। প্রশাসনের সাথে যুক্ত নিষ্ঠুর ও ঘৃণ্য কয়েকজন শাসককে হত্যা করে গণ-বিপ্লবের পথ উন্মুক্ত করা যায় না বা সেই সম্ভাবনাও ত্বরান্বিত করা যায় না।
সুতরাং ওই পথ গ্রহণীয় নয়, অবশ্যই বর্জনীয়। সমস্ত লক্ষণ থেকে এই কথাই ক্রমশ পরিস্ফূট হয়ে উঠছে যে ব্যাপকতম জনসাধারণের মনের যথার্থ আকাঙ্ক্ষাকে রূপ দেবার জন্য আশু প্রয়োজন ভারতীয় জনসাধারণ কর্তৃক জাতীয় সরকার প্রতিষ্ঠার জন্য সর্বভারতীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা। কিন্তু জাতির প্রত্যাশা পূরণের জন্য কংগ্রেস নেতৃত্ব এই পথে অগ্রসর হয়ে যাবেন এরূপ প্রত্যাশার আদৌ কোনো ভিত্তি ছিল না। এবং ওই সময়কার পরিস্থিতিতে উদ্ধত এবং অনিচ্ছুক সাম্রাজ্যবাদের হাত থেকে অহিংস পন্থায় রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা ছিনিয়ে নেওয়া অসম্ভব। ... সুতরাং যথার্থ জাতীয় মুক্তি অর্জনের একমাত্র সম্ভাব্য পন্থা ছিল প্রচণ্ড সংগ্রামে সাম্রাজ্যবাদকে বিতাড়িত করা; সংগ্রামে দুর্বল ও কোণঠাসা করে সাম্রাজ্যবাদকে ক্ষমতা পরিত্যাগে বাধ্য করা।
একমাত্র দেশের ব্যাপকতম জনগণের অত্যুগ্র আগ্রহ ও ইচ্ছাপ্রসূত চাপের ফলেই জাতীয় নেতৃত্ব এই পথে অগ্রসর হয়ে যাবেন অথবা বাঁধভাঙা বন্যার স্রোতের ন্যায় জনসংগ্রাম সমগ্র দেশে উত্তাল অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠবে _ এরূপ আশা করাই তখন স্বাভাবিক ছিল। " (সূর্যসেন স্মৃতি : বিপ্লবতীর্থ চট্টগ্রাম স্মৃতিসংস্থা, কলকাতা)
১৯২৮ সালের শেষের দিকে স্ত্রী পুষ্পকুন্তলার অসুস্থতার খবর পেয়ে সূর্যসেন তাকে দেখতে আসার অনুমতি প্রার্থনা করলে তাঁর সে আবেদন মঞ্জুর করা হয়। জেল থেকে তিনি ছাড়া পেলেন, কিন্তু তাঁকে নজরবন্দি রাখা হল। যেদিন তিনি বাড়ি পৌঁছলেন, পুষ্পকুন্তলা সেদিনই মৃত্যুবরণ করেন। অবসনা ঘটল তাঁদের ৯ বছরের বিবাহিত জীবনের।
স্ত্রীর মৃত্যুশোক কাটতে না কাটতেই সূর্যসেন আক্রান্ত হলেন টাইফয়েডে। তিন মাস শয্যাশায়ী থাকলেন। এরই মধ্যে একদিন ইংরেজ ম্যাজিস্ট্রেট এসে হাজির। প্রস্তাব দিলেন রাজনীতি থেকে সরে দাঁড়ানোর জন্য। শুধু তাই নয়, বন্ড সই দিলে সংসারের খরচও ব্রিটিশ সরকার চালাবে বলে জানানো হল।
সূর্যসেন চুপ করে রইলেন। সূর্যসেনের দাদা চন্দ্রনাথ সেন সাহেবকে এ-কথা সে-কথা বলে কোনোরকম বুঝ দিয়ে ফেরত পাঠালেন। এভাবেই চলে গেল কয়েকদিন। একদিন আকস্মাৎ উধাও হয়ে গেলেন মাস্টারদা।
.................................................... (চলবে) ........................................................
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।