"আকাশে নক্ষত্র দেখে নক্ষত্রের মতন না হয়ে পারিনি আমি / নদী তীরে বসে তার ঢেউয়ের কাঁপন, / বেজেছে আমার বুকে বেদনার মত / ঘাসের হরিৎ রসে ছেয়েছে হৃদয়"। _আহমদ ছফা
পর্ব - ৫
১৮ এপ্রিল রাতে বিপ্লবীদের আঘাতে ব্রিটিশ শক্তি হতভম্ব হয়ে পড়ে। সন্ত্রস্ত ব্রিটিশ সরকার ভারতের বিভিন্ন এলাকা থেকে সামরিক শক্তি জড়ো করে চট্টগ্রামে সামরিক অভিযান শুরু করে। সূর্যসেনের নেতৃত্বে ৫৭ জন (কারো মতে ৬৩ জন) বিপ্লবী জালালাবাদ পাহাড়ে এসে আশ্রয় নিয়েছিলেন। ২২ এপ্রিল পুলিশ ও ইংরেজ সেনাবাহিনী পাহাড়ে হামলা চালায়।
পাশের একটা পাহাড় থেকে মেশিনগানের সাহায্যে বিপ্লবীদের ওপর প্রবল আক্রমণ চালানো হয়। বিপ্লবীরাও পাহাড় থেকে পাল্টা জবাব দিতে থাকেন। প্রায় তিন ঘণ্টা স্থায়ী এ যুদ্ধে বিপ্লবীদের দৃঢ় প্রতিরোধের মুখে পুলিশ ও সেনাবাহিনী পিছু হঠতে বাধ্য হয়।
জাললাবাদ পাহাড়ের যুদ্ধে ৭৪ জন ইংরেজ সৈন্য নিহত হয়। অন্যদিকে ১২ জন বিপ্লবী সেদিনের যুদ্ধে আত্মাহুতি দিয়ে এক বিরল সংগ্রামের ইতিহাস রচনা করেন।
এ যুদ্ধে প্রথম শহীদ হলেন সদ্য কিশোর হরিগোপাল বল (টেগরা)।
এরপর একে একে শহীদ হন নরেশ রায়, ত্রিপুরা সেন, বিধু ভট্টাচার্য, প্রভাস বল, শশাঙ্ক দত্ত, নির্মল লালা, মতি কানুনগো, পুলিন ঘোষ, জিতেন দাশগুপ্ত, অর্ধেন্দু দস্তিদার এবং মধুসূদন দত্ত।
পরদিন ইংরেজ বাহিনী শক্তি বৃদ্ধি করে পুনরায় হামলা চালায়। হামলার মুখে টিকতে না পেরে বিপ্লবীরা গেরিলা কায়দায় যুদ্ধ করতে করতে জালালাবাদ পাহাড় ত্যাগ করে আত্মগোপন করেন।
এ ঘটনার প্রতিক্রিয়া হিসাবে পুলিশ ব্যাপক ধর-পাকড় চালিয়ে অসংখ্য বিপ্লবী কর্মী ও তাঁদের সহযোগীদের গ্রেফতার করে।
বিপ্লবীরাও পাল্টা চোরাগোপ্তা হামলা চালিয়ে ইংরেজ সরকারের মনে ত্রাস সৃষ্টি করেছিল। ১৯৩০ সালের ১ ও ২ সেপ্টেম্বর কলকাতার নিকটবর্তী চন্দন নগরের ফরাসি কলোনিতে অবস্থিত বিপ্লবীদের ঘাঁটিতে পুলিশ হানা দেয়। পুলিশী হামলায় শহীদ হন জীবন লাল ঘোষ এবং গ্রেফতার হন গণেশ ঘোষ, লোকনাথ বল ও আনন্দ গুপ্ত।
১৯৩১ সালের এপ্রিল মাসে এক বিশেষ আদালতে (ট্রাইব্যুনালে) আরম্ভ হয় রাজদ্রোহ মামলায় অভিযুক্ত ৩২ জন বন্দির বিচার। মাস্টারদা বন্দিদের মুক্ত করার জন্য এক দুঃসাহসিক পরিকল্পনা গ্রহণ করেন।
তিনি মাইন ব্যবহার করে জেলের প্রাচীর উড়িয়ে দিয়ে বন্দিদের মুক্ত করা এবং একই সাথে আদালত ভবন ধ্বংস করার উদ্যোগ নেন। এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন কল্পনা দত্ত। হামলার দিন ধার্য করা হয় ৩ জুন। সব প্রস্তুতিও গোপনে সম্পন্ন হয়ে যায়। কিন্তু একেবারে শেষ মুহূর্তে সর্বশেষ মাইনটি বসানোর সময় পুলিশের নজরে পড়ে যাওয়ায় গোটা পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়ে যায়।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।