আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

প্রোপাগান্ডা ও মুক্তিযুদ্ধের তৃতীয় প্রজন্ম

বাধ ভাঙ্গার শব্দ শুনি................... গণযোগাযোগ বিদ্যায়তনের ছাত্র হিসেবে আমাদের গণমাধ্যমের বিভিন্ন তত্ত্ব পড়তে হয়। ৪ র্থ সেমিস্টারে অধীত গণযোগাযোগ তত্ত্ব কোর্সটি আমার সবচেয়ে প্রিয় কোর্সগুলোর একটি। আর যদি বলা হয় সবচেয়ে প্রিয় বিষয় কী? আমি এক সেকেন্ড ও না ভেবে বলবো প্রোপাগান্ডা। এই কোর্সটি পড়ার সময় আমি বেশ আগ্রহী হয়ে গোযেবলসের প্রোপাগান্ডা মিনিস্ট্রির অধীনে তৈরি ফ্রিটজ হিপলার পরিচালিত কয়েকটি ডকুমেন্টারি ইউটিউব থেকে ডাউনলোড করে দেখি। বিশেষ করে derewige jude বা চিরন্তন ইহুদি দেখার পর আমি ফ্রিটজ হিপলারের ভক্ত হয়ে গিয়েছি( তবে সেটা শুধু একাডেমিক জায়গা থেকে, তার আদর্শিক অবস্থানকে আমি মনেপ্রাণে ঘৃণা করি।

) ঐতিহাসিক ভাবে প্রমাণ করে দেখানোর চেষ্টা করা হয় ইহুদিরা কত খারাপ-নোংরা ইদুর তুল্য, আর ফাকে ফাকে আরিয়ান তথা জার্মান জাতির তুলনামুলক গুণকীর্তন। এমন সব ভয়ংকর মানবতা বিরোধী কথা এই ডকুমেন্টারিতে আছে কিন্তু চিত্রায়ন আর ভাষার ব্যবহারে সেগুলো যেন বেশ যৌক্তিক মনে হতে থাকে। ফ্রয়েডীয় মনোবিশ্লেষন আর Behaviorist School এর তাত্ত্বিক ভিত্তি ব্যবহার করে যা প্রচার করেছে তাতে আর্য শ্রেষ্ঠত্বর গর্বে আর ঔদ্ধত্যে জার্মান জাতির কাছ থেকে নাৎসী পার্টি আদায় করে নেয় পৃথিবীর ইতিহাসের সবচেয়ে নির্মম হত্যাযজ্ঞের প্রতি জনসমর্থনের বৈধতা। ’সেই ফ্রিটজ হিপলার পৃথিবীর সব প্রোপাগান্ডিস্টদের জন্য একটি ওহী নাজেল করে দিয়ে গিয়েছিলেন। Make a complex thing easy through repetition. হিপলারের এই কথা তার পরবর্তী সব প্রোপাগান্ডিস্ট অক্ষরে অক্ষরে ব্যবহার করেছে।

সবচেয়ে বেশি সম্ভবত ব্যবহার করেছে হিটলারের জার্মানিকে পরাজিত করা মিত্রশক্তির প্রধান আমেরিকা। বিশ্বযুদ্ধর পরবর্তীতে দুই মেরুতে বিশ্বকে নিজেদের পক্ষে রাখতে দুই প্রধান শক্তি রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক-তাত্ত্বিক প্রোপাগান্ডার পাশাপাশি চলতে থাকে সচল চিত্রের ব্যবহার। আমেরিকাতে তে গণমাধ্যমের স্লোগানই ছিল Better be Dead Than Red.. ১৯৬৯ সালে আমেরিকার চন্দ্র অভিযানকেতো অনেকে বলেন পৃথিবীর ইতিহসের সবচেয়ে ব্যয়বহুল চলচ্চিত্র যা তৈরি করা হয়েছে ভিয়েতনাম ব্যর্থতা ও বিপরীত মেরু সোভিয়েত রাশিয়াকে পেছনে ফেলার স্বার্থে! ভিয়েতনাম সমস্যারই সমসাময়িক আমাদের বর্তমান বাংলাদেশ ভূখন্ডেও এসে ভর করে গোয়েবলসের প্রেতাত্মা। দীর্ঘদিনের নিষ্পেষনের ফলে গড়ে ওঠা গণমানুষের জাগরণকে স্তব্ধ করে দেওয়ার জন্য ফাদা হয় প্রোপাগান্ডার ফাদ। ধর্ম-জাতীয়তার মত বিমূর্ত বিষয়গুলোকে কেন্দ্র করে উৎপত্তি হতে থাকে ভারতের দালাল, হিন্দুয়ানি, মসজিদ থেকে উলুধবনি, আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার মত ঐতিহাসিক পাকিস্তানি প্রোপাগান্ডা প্রত্যয়গুলো।

পাকিস্তান থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার পরও গোয়েবলসের সেই ভূত কিন্তু বাংলাদেশের ভূখন্ড ছেড়ে যায়নি। পুরোনো সেই ভুত আবার আছর করেছে আমাদের গণজাগরণ মঞ্চ শাহবাগকে ঘিরে। আমার দেশ,নয়া দিগন্তু আর সংগ্রামের মত গণবিচ্ছিন্ন পত্রিকাগুলো চালিয়ে যাচ্ছে নির্বিচার মিথ্যার বেসাতি। আর সেগুলো নিয়ে সামাজিক গণমাধ্যমে ছাগলদের ম্যাৎকার চলছেই। (আমি ব্যাপার গুলো বেশ উপভোগ করছি.থিওরির এমন প্রায়োগিক উদাহরণ ছাগুরা ছাড়া আমাকে কে দিতে পারতো?) তবে একটা কথা সম্ভবত নব্য প্রোপাগান্ডিস্টরা ভুলে গেছে।

সময়টা এখন আর ১৯৪৭ বা ৭১ বা ৭৫ এমন কী ২০০০ ও নয়। এখন সময় ২০১৩। নতুন সহস্রাব্দে স্বাধীনতার তৃতীয় প্রজন্ম এখন অনেক সচেতন। আমাদেরকে কোন কিছু বিশ্বাস করানো অনেক কঠিন, কিন্তু যেটা আমরা বিশ্বাস করি সেটা হৃদয়ে ধারণ করি । স্বাধীনতা পরবর্তী দুই প্রজন্মর চোখের সামনে দিয়ে তাদের ভাই-বাবার হত্যাকারী আর মা-বোনের ইজ্জত লুন্ঠনকারীরা ক্ষমতার মসনদে পর্যন্ত বসেছে।

তাদের ক্ষত সময়ের প্রলেপে শুকিয়ে গেলেও যে পাপের বোঝা তারা বয়ে বেড়িয়েছেন প্রজন্মান্তরে সেটি আমাদের কাধে এসে পড়েছে। আমরা সেটি বইতে নারাজ, তাইতো যুদ্ধপাপীদের পাওনা বুঝিয়ে দেওয়ার অঙ্গীকার করা দলটিকে বিপুল সমর্থন দিয়ে ক্ষমতায় বসিয়েছি। তারা ক্ষমতার যথেচ্ছ ব্যবহার করে দেশের বারোটা বাজালেও তাদের প্রতি এখনও আমাদের সমর্থন অটুট আছে প্রজন্মান্তরের পাপ ঝেড়ে ফেলার প্রত্যয় । যদি তারা আমাদের এই অটুট প্রত্যয়কে ভাবেন নিজেদের রাজনীতির ঘুটি তাহলে তারা মারাত্মক ভুল করবেন। আমরা রাজনীতির ঘুটি নয় আমরা সচল একেকটা বিপ্লবের বোমা।

আপনাদের আমরা সুযোগ দিয়েছি ইতিহাসের পাতায় নিজেদের নাম স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখার। বিপরীত কিছু হলে নিক্ষিপ্ত হবেন ইতিহাসের ঘৃণার আস্তাকুড়ে। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.