আমার ছয় বছর বয়েসথেকে আমরা মোহাম্মদপুরে ছিলাম। গত ২০০৭ এর ২১ জানুয়ারি আবাসস্থলের পরিবর্তন। এই পরিবর্তনটা আমার অবশ্য পছন্দ হয় নি। কিন্তু কি করব? সবাই ছাড়তে চাইলো আগের বাসাটা। মোহাম্মদপুরে থাকার সময় চষে ফেলেছিলাম এলাকাটা।
কলেজে পড়ার সময়টা থেকেই এলাকাটায় এবং গোটা বাংলাদেশে একটা কর্পোরেট ধাঁচের পরিবর্তন চোখে পড়ছিল। এখনতো বাংলাদেশে এ্যাড ফার্মগুলো বেশ ভাল করছে! কিন্তু তখন এ্যাডের কন্সেপ্টগুলো ছিল বেশ সেকেলে ধাঁচের এবং বেশ হাস্যকর টাইপের। এই হাস্যকর ব্যাপারটা কোন পজিটিভ কিছু ছিল না। সব কিছুতেই একটা বেকুব টাইপের ছোঁয়া ছিল! বিশেষ করে হাসপাতাল ও ডাক্তারদের বিজ্ঞাপনে। দশম পোস্ট উদযাপনের পর পরই আমার পুরোনো ধাঁচের লেখায় ফিরতে ইচ্ছে হল না।
মনে হল উদযাপনের আমেজটা আরেকটু ধরে রাখা যায়। তাই সে সময়ের কিছু বিজ্ঞাপন, ক্লাসিক্যাল কিছু বিজ্ঞাপন, কিছু প্র্যাকটিক্যাল জোক আর একটা আড্ডাফাইং জোক নিয়ে এই পোস্ট দিচ্ছি। প্রায় সবই ডাক্তার বা হাসপাতাল রিলেটেড বিজ্ঞাপন। শুরুতেই বলে রাখা ভালো, আমার হাসির পসরা খুব ছোট। যতটুকু হাসি, সেটার অধিকাংশই তাচ্ছিল্যের হাসি।
কাজেই হাসতে না পারলে আমার উপর চড়াও হয়ে বসবেন না আবার!
সাত মসজিদ রোডে আগে একটা ক্লিনিক ছিল। এখনও আছে কিনা জানিনা। লেখা ছিল, "নাক কান গলার হাসপাতাল!" ঐ একই রোডে আরেকটা ক্লিনিক ছিল, "অর্থোপেডিক্স হাসপাতাল, হাড় ভাঙার জন্য পৃথিবী বিখ্যাত!" এগুলো দেখে হাসবো না কাঁদবো বুঝতে পারতাম না। কৈশোরের শুরুতে অনেক সময় ভাবতাম, মনে হয় এগুলো কোন ধরনের মেডিক্যাল টার্ম হিসেবে ব্যবহার হয়েছে। কিন্তু পরে একটু বড় হয়ে মেডিক্যালের বড় আপু-ভাইয়াদের কাছে জানলাম ওগুলো আসলে হবে যথাক্রমে, "নাক কান গলার রোগের হাসপাতাল" এবং "অর্থোপেডিক্স হাসপাতাল, ভাঙা হাড় জোরা লাগাবার জন্য পৃথিবী বিখ্যাত।
"
এতো গেল রোগের(!) ডাক্তারদের কথা। এবার যাদের কথা বলব তারা কিসের ডাক্তার তা আপনারা কেউ জানলে জানান দেবেন। এদের বিজ্ঞাপনে লেখা থাকে, "চর্ম, যৌন ও সেক্সের ডাক্তার"! এদের বিজ্ঞাপন আসলে সারা দেশের মোড়ে মোড়ে দেখা যায়। ক্ল্যাসিক্যাল বিজ্ঞাপন আরকি! তবে সবচে বড় বিজ্ঞাপনটা ছিল বাংলামোটর মোড়ের মার্কেটটার গায়ে। ঐ মার্কেটটা ভেঙে ফেলার কারণে, নাকি তারও আগেই ওটা মুছে ফেলা হয়েছিল তা আর খেয়াল করে দেখা হয় নি।
রিংরোডে এক ডাক্তারের চেম্বার দেখেছিলাম। ডাক্তারের নাম মনে নেই। নামটা ফেরদৌস সারওয়ার টাইপের কিছু একটা হবে। ধরে নিলাম ফেরদৌস সারওয়ার-ই হবে। এটা ধরে নেবার কারণও আছে! কারণ চেম্বারের বাইরে লেখা ছিল, "ফেরদৌস সারওয়ার, মহিলা ডাক্তার"।
ডাক্তার পুরুষ ছিল না মহিলা, তা নিয়ে সন্দেহটা জাচাই করে দেখার লোভটা অনেক কষ্টে সামলেছিলাম!
কলেজে যাবার সময় এলিফ্যান্ট রোডে বাটার মোড়ের কাছে রাস্তার বাম দিকে একটা মার্কেটের তিন তলায় দেখতাম লেখা ছিল, "বেঈমান হোমিও হল, হাঁপানির জন্য বিশ্ব বিখ্যাত!" এটা নিয়ে আর কথা না বাড়াই!
এবার একটু আধুনিক হওয়া যাক! বাংলাদেশের বড় শহরগুলোতে বছর চারেক বা তার একটু বেশি হল, টিভি স্ক্রিনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে। চট্টগ্রামে গিয়ে দেখলাম নিউমার্কেটের সামনে একটা বসানো হয়েছে। সে সময়ে বাংলা লিংকের 'দেশ' নিয়ে নাচানাচির প্রথম অ্যাডটা মার্কেটে এসেছে। তিন্নির নাচানাচি মনেহয় অ্যাডটার প্রাণ ছিল! যাহোক, সে সময় এই অ্যাডটা বাংলা লিংক বেশ জোরেশোরে প্রচার শুরু করেছিল। ঐ স্ক্রীনটায় একটু পর পরই প্রচার করা হচ্ছিল সেটা।
নিউমার্কেট থেকে স্টেশনের দিকে এগোতে রাস্তা পার হলাম এক হুজুরের সাথে। পার হবার আগে এবং পরে অ্যাডের তন্ময় দর্শক, হুজুরের মুখে দু'বার শুনতে পেলাম, "আস্তাগফিরুল্লাহ!" (সবই অ্যাড শেষ হবার পর! )
এবার আরেকটু আধুনিক হওয়া যাক! ইদানিং ভি. আই. পি. রোডে একটা প্র্যাকটিক্যাল জোক শোনা যাচ্ছে, "ফকিরের চলাচলের জন্য ভি. আই. পি. রোডের সকল ফুট ওভার ব্রিজ দিনে অন্তত দু'বার বন্ধ করে দেয়া হয়। " এটা নিজ গুণে না বুঝলে ১৮ই ডিসেম্বরের আগে কাইন্ডলি আর কোন প্রশ্ন করবেন না!
সব শেষে একটা আড্ডায় শোনা আড্ডাফাইং জোক, "প্রশান্ত মহাসাগরে এক ব্রিটিশ জাহাজ চীনে যাবার সময় জলদস্যুদের দ্বারা আক্রান্ত হল! ক্রোজ নেস্টথেকে তথ্য এল ক্যাপ্টেনের কাছে, " চারটে জাহাজ!" ক্যাপ্টেন লড়াই আসন্ন জেনে বললেন, "আমার লাল জামাটা নিয়ে এস, ওটা পরে যুদ্ধ করব। " যুদ্ধে বিপুল বিক্রমের সাথে লড়ে তারা জয়ের মুখ দেখলেন! একদিন পর, ক্রোজ নেস্টথেকে তথ্য এল, "আটটা জাহাজ!" এবার ভয় পেলেও ক্যাপ্টেন বললেন, "আমার লাল জামাটা নিয়ে এসো। " এবারও বিপুল বিক্রমে লড়াই এবং জয়! লাল জামার রহস্য নিয়ে নাবিকদের মধ্যে জোর গুঞ্জন! ক্যাপ্টেন বললেন, "আমার রক্ত তোমাদের মনোবল কমিয়ে দিতে পারে বলেই আমি লাল জামা পড়ে লড়াইয়ে অংশ নিয়েছিলাম যাতে তোমরা আমার রক্ত দেখতে না পাও!" তিন দিন পর ক্রোজ নেস্টথেকে আবার খবর এল, "এবার ষোলটা জাহাজ!" ভয় পেলেও ক্যাপ্টেন বললেন, "আমার লাল জামা আর হলুদ প্যান্ট নিয়ে এসো!"
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।