আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বেসরকারি রেডিও স্টেশনের হালচাল

আমি এক যাযাবর....

দেশে বর্তমানে বেশ ক'টি বেসরকারি রেডিও স্টেশন এফএম তরঙ্গে তাদের সম্প্রচার চালিয়ে যাচ্ছে। এদের মাঝে রেডিও টুডে, রেডিও ফুর্তি এবং রেডিও আমার উল্লেখ করবার মতো। বেসরকারি এই রেডিও স্টেশনগুলো চালু হবার পর থেকে শহরাঞ্চলের কিশোর-যুবকদের মাঝে এফএম শোনার হিড়িক পড়ে গেছে। মোবাইল কিনতে তারা এখন এফএমবিশিষ্ট সেটের দিকে ঝুঁকে পড়ছে। তথ্য-প্রযুক্তির উৎকর্ষের এই যুগে নতুন নতুন মিডিয়া সৃষ্টি হওয়া নিশ্চয়ই ইতিবাচক।

মিডিয়ার মধ্য দিয়ে শিক্ষিত জনসাধারণ যেমন পেতে পারে নানারকম শিক্ষামূলক তথ্য তেমনি নিরক্ষর মানুষগুলোও এই মিডিয়ার মাধ্যমে পরিণত হতে পারে সচেতন নাগরিকে। সমাজের প্রতি তাই এসব গণমাধ্যমের রয়েছে বড় রকমের দায়বদ্ধতা। কিন্তু প্রচলিত এই বেসরকারি রেডিওগুলোতে দায়বদ্ধতার দিকটি চরমভাবে উপেক্ষিত। এসব মিডিয়ায় প্রায় সারাদিন ধরে বিভিন্ন গান পরিবেশিত হয়। এসব গানের অধিকাংশই আমাদের দেশের সংস্কৃতিকে প্রতিনিধিত্ব করার পরিবর্তে অন্য দেশের বিকৃত স্টাইলকেই অনুকরণ করে।

বেসরকারি এই রেডিও স্টেশনগুলো থেকে সুস্থ ধারার শিল্পীদের গান খুব কমই পরিবেশন করা হয়। উপরন্তু, এসব রেডিও স্টেশনে উপস্থাপনার দায়িত্বে যেসব আর. জে. নিয়োজিত আছেন, তাদের বাকভঙ্গিও অত্যন্ত বিকৃত ধরনের। ইংরেজি ও বাংলার সংমিশ্রণে এরা এমন একটি নতুন ভাষা ও স্টাইল আবিষ্কার করেছেন যা অত্যন্ত শ্রুতিকটূ। কেবলমাত্র রেডিও টুডে'র আয়োজনে কিছু সময় জুড়ে সংবাদের ব্যবস্থা থাকলেও অধিকাংশ সময় জুড়েই এসব রেডিও স্টেশনে থাকে এ সময়ের ভূঁইফোড় কিছু শিল্পী এবং আর জে’দের যতসব বিরক্তিকর খিস্তিখেউড়। আর মুহূর্তে মুহূর্তে এসব রেডিও থেকে অযথাই শ্রোতাদের এসএমএস করতে বলা হয়।

আমাদের সরল শ্রোতৃমণ্ডলীও হুজুগে এসএমএস করতে থাকেন শত সহস্র। সবচেয়ে দুঃখজনক হলো, বাংলাদেশ বেতারও ইদানীং এফএম তরঙ্গে এসব বেসরকারি রেডিও স্টেশনের অনুকরণে প্রোগ্রাম শুরু করেছে। এসবের বিরূপ প্রভাব পড়ছে আমাদের সমাজের ওপর। শহুরে কিশোর-যুবকরা সারাক্ষণ কানে এয়ারফোন লাগিয়ে শুনছে এসব বিকৃত রুচির গান। তাদের জীবনাচরণ পাল্টে যাচ্ছে।

আমাদের সমাজে সৃষ্টি হচ্ছে একটি ডিজুস প্রজন্ম। এ প্রজন্মের দেশ গড়ার ব্যাপারে কোনো মাথাব্যাথা নেই। নেই ক্যারিয়ার গঠনের ব্যাপারে কোনো উদ্বেগ। নিজস্ব সংস্কৃতির প্রতি নেই এতটুকু শ্রদ্ধাবোধ। এদের পোশাক-পরিচ্ছদে লেগেছে তথাকথিত বিকৃত ফ্যাশনের ছোঁয়া, কথা-বার্তা আর আচরণে দিনদিন এরা হয়ে উঠছে যান্ত্রিক; ঠিক যেন আর জে’দের মতো! গণমাধ্যম একটি প্রজন্মকে গড়তে পারে, ভাঙতে পারে।

এফএম ব্যান্ডের এসব রেডিও স্টেশনের প্রোগ্রামে ভিনদেশী সংস্কৃতির প্রতিফলন ঘটলে তা মোটেই মঙ্গলজনক হবে না দেশ ও জাতির জন্যে। প্রোগ্রাম নির্বাচনে তাই খুব সতর্ক ও পরিণামদর্শী হওয়া উচিত অনুষ্ঠান নির্মাতাদের। সারাক্ষণ গান পরিবেশন না করে একটা বড় অংশ জুড়ে আকর্ষণীয় কিছু শিক্ষা ও তথ্যমূলক অনুষ্ঠান প্রচার করা যেতে পারে। জীবনমুখী ও সমকালীন প্রেক্ষাপটের গান প্রচার করা উচিত। আর জে’দের কথা-বার্তাও শালীন হওয়া দরকার।

ক্ষণে ক্ষণে এসএমএস করতে বলার এই অতিবাণিজ্যিক দৃষ্টিভঙ্গিও নিয়ন্ত্রিত হওয়া উচিত। সর্বোপরি, জাতি গঠনের কাজে এসব গণমাধ্যম যেন গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে, সে ব্যাপারে সরকার, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও অনুষ্ঠাননির্মাতাদের আন্তরিকতাপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.