আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

দুঃখবিলাস -৩

কৃষ্ণশুভ্রারা বেঁচে থাকুক দূরে সুদূর স্বপ্নসীমান্তে

আমি যখন প্রথম ব্লগ লিখা শুরু করি তখন দুঃখবিলাস নিয়ে কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনার অবতারনা করেছিলাম। তেমনই আরেকটি লিখলাম। যারা আমার আগের লেখা গুলি পড়েন নি তাদের জন্য আগের গুলোর লিংক দিয়ে দিলাম। Click This Link Click This Link Click This Link রাত দশটা পার হয়ে গেছে। আজ একটু বেশিই দেরি হয়ে গেছে।

যাত্রাবাড়ী থেকে বাড়ি যাওয়ার পথের সব বাস বন্ধ হয়ে গেছ.বিপদে পড়ে গেছে কমল। কারণ কোন রিকশা রাজি হচ্ছে না যেতে। যাকেই জিজ্ঞেস করে বলে যাবে না। মেজাজ খিচড়ে উঠে তার। মনে মনে জগতের সকল রিকশা ওয়ালাদেরকে কুৎসিত ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকে।

শালার সব নবাব....ইত্যাদি। এমন সময় কোন এক রিকশাওয়ালা যেন রাজি হলো। যেন আকাশের চাদ হাতে পেল সে। ভাড়া কিছু জিজ্ঞেস না করেই উঠে পড়ল। কিন্তু কিছুদুর যেতেই তার কেমন যেন করতে লাগল।

আচ্ছা রিকশা ওয়ালার শরীরটা এমন হাড্ডিসার কেন?কেমন যেন প্রানহীন ভাবে সে রিকশা চালাচ্ছে। কিছুদুর এগুতে আশপাশটা জনমানব হীন হয়ে যায়। তখন তার কানে এক অদ্ভুত শব্দ ভেসে আসে। সে চমকে উঠে। কেমন এক অশরীরীর ছোয়া অনুভব করে সে তার চেতনায়।

কেমন যেন গা গুলোচ্ছে। ভূত টুত নাকি? কমল সাহসী ছেলে। সে মনযোগ দিয়ে বোঝার চেষ্টা করে কী হচ্ছে?কিছু নেই চারদিকে অথছ শব্দটা চলতে থাকে একঘেয়ের মত। হঠাৎ করে তার মনে হয় রিকশাওয়ালার দিক থেকে আসছে শব্দটা। সে রিকশাওয়ালাকে ডাকে কিছুটা ভয় যে পায় না সেটা বলা যাবে না।

রিকশাওয়ালা ঘুরলে ভয়াবহভাবে চমকে উঠে সে। না কোন ভুত না একেবারে জ্বলজ্যান্ত মানুষ। কিন্তু ভুত হতে বেশি বাকি নেই। একেবারে কঙ্কালাসার এক বৃদ্ধ। সাহস ফিরে পায় কমল।

কিন্তু তার মন ভরে যায় অদ্ভুত বিষন্নতায়। এই বয়সে যখন মন চায় একটু বিশ্রাম তখন কিনা এই বৃদ্ধ খেটে মরছে রুজির তাগিদে। তাকে দেখার কেউ নেই। বৃদ্ধের সাথে কথা বলার চেষ্টা করে। চাচা আপনার কি দেখাশোনা করার মানুষ নেই।

এত রাত করে রিকশা চালাচ্ছেন ?শরীর খারাপ করবে না? ক ক করে অস্পষ্ট স্বরে বৃদ্ধ যা বললেন তা অনেক কষ্ট করে বুঝে নিতে হল কমলকে। তার মানে যা দাড়ায় তার এক ছেলে ছিল। সে মারা গেছে। তার নাতনীকে রেখে ছেলের বৌ আবার বিয়ে করেছে। নাতনীকে ফেলে রেখে গেছে।

শেষ কথাটা কমলের কানে আটকে গেল,"নাতনী চাইসে ঐ খেলনা যেটা কানে দিয়ে গান শুনে না কি করে যানি। ঐটার লেইগ্যা এই কয়দিন একটু বেশি খাটতেসি। " কমল গন্তব্যে পৌছে ভাড়া দেয়। তার সাথে পকেট থেকে কিছু টাকা দিতে যায় বৃদ্ধকে নাতনীর জন্য খেলনা কিনে দিতে। বৃদ্ধ সে টাকা নেয় না।

রহস্যময় হাসি দিয়ে বলে যায়,নাতনীর পরের বায়না ধরলে আপনেরে পামু কই?আমারটা আমারে খাইটা খাইতে দেন"। কমল আরপো কিছু বলার আগেই রিকশা ওয়ালা রিকশা নিয়ে অদৃশ্য হয়ে যায়। কমল বাড়ি যেতে থাকে। বৃদ্ধের হাসিটার মানে বুঝার চেষ্টা করে। সেটা কী তার জীবনের প্রতি অনীহা থেকে আসা চরম শ্লেষ নাকি তার ন্যায় বিলাস দুঃখীদের প্রতি বিদ্রুপ।

কমল বাড়ি পৌছে যায়। সে জানে আর কোনদিনও হয়তো সেই বৃদ্ধের সাথে দেখা হবে না কিন্ত তার সেই শীর্নকায় দেহ আর সেই কষ্টের হাসি তার বুকে ক্ষত ছড়িয়ে যাবে সারাজীবন।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।