কৃষ্ণশুভ্রারা বেঁচে থাকুক দূরে সুদূর স্বপ্নসীমান্তে
***দুঃখবিলাস -১ এর মত এটিও একটি খন্ড কিন্তু সত্য ঘটনা।
ঝা ঝা রোদ পড়েছে আজ। চৈত্রের কোন কোন দিন অন্যান্য দিন ছাপিয়ে বেশি তেজ দীপ্ত বেশি ক্লান্তিকর হয়। আজ বোধ করি তেমন এক দিন। অফিসের এসির ভেতর থেকে বের হবার কারণেই হোক কিংবা সূর্যের তীব্র খরতাপেই হোক কেমন যেন ফাপড়ে উঠে মুহিত।
রুমাল দিয়ে ঘাম মুছতে মুছতে সে হাটতে থাকে আর খাওয়ার জায়গার খোজ করতে থাকে সে। এমন গরমে তার পছন্দ আগুন গরম ভাত আর তার সাথে ততোধিক গরম যে কোন মাছের তরকারি। খাবারের চিন্তাটা যেন তার গরম লাগা আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে।
হঠাৎ সে একটি ছেলে দেখতে পেল বয়স ২০ ২১ হবে একটি ছেলে। খাবারের জন্য সে জনে জনে টাকা চাচ্ছে।
দুঃখীদের প্রতি মুহিতের অনেক সমবেদনা। যদিও এজন্য তাকে তার বন্ধুরা মাঝে মাঝে বোকা বলে ঠাট্টা করে। সে অবশ্য বোকা বলে নিজেকে ভাবে না। কেননা সে কাউকেই নগদ টাকা দেয় না। সে জোর পায়ে এগিয়ে গেল ছেলেটির দিকে।
বলল, কী হয়েছে?
--স্যার টাকা লাগব খাওয়ার জন্য। ছেলেটি বলল।
--এখানে খা। পাশের একটি দোকান দেখিয়ে মুহিত বলল।
নিতান্ত অনিচ্ছা স্বত্তেও ছেলেটি অল্প কিছু খেল।
মুহিত বিল পরিশোধ করে চলে যাবে এমন সময় ছেলেটি বলল,বাসায় মা না খেয়ে আছে। তার জন্য চাল কিনতে হইব, মারে না খাওয়াইয়া রাইখ্যা খাইলে মন কান্দে।
এবার মুহিতের মন খারাপ হল। এমন ছেলেকে সে কীভাবে সন্দেহ করল। সে তাকে ততক্ষনাৎ ১০০ টাকা দিল।
আর বলল তোর ঠিকানা দে। আর নাম কী তোর?
--কালাম । বলে ছেলেটি একটা কাগজে কিছু লিখে এগিয়ে দিল।
ঠিকানা টা পকেটে রেখে দিল সে। সাধারণ রাস্তার ছেলের মাতৃভক্তি তাকে বিমোহিত করেছে।
এমন ছেলেকে যে ধারণ করেছে সেই মায়ের পদধূলি নিয়ে ধন্য হতে হবে। দুপুরের খাবার খাওয়া হল না তার লাঞ্চ টাইম শেষ। তবুও তো টাইমটা ভালো কাটল একটা ভালো কাজ করলো।
সন্ধ্যা সাতটা । খুজে খুজে কালামের বাড়ি বের করল মুহিত।
কালামের মা তার কাছে দুপুরের ঘটনা শুনে অবাক হয়ে বললেন,আমার ছেলেকে অনেক আগেই বের করে দিছি। এমন নেশাখোর বদ কাঙাল যেন শত্রুর ঘরেও না জন্মে। বলতে বলতে তার চোখ দিয়ে অশ্রু বিন্দু বেয়ে পড়তে থাকে।
আর কথা বলতে ইচ্ছা করল না মুহিতের। এই দুখিনী মাকে সে কীভাবে স্বান্তনা দিবে।
একদিকে এই দুখিনীর কষ্ট তার বুকে করছে শেলের আঘাত আর অন্যদিকে কালাম নামের সে লোকটার নীচতা তার চিত্তে জ্বালিয়ে দিচ্ছে ক্রোধের আগুন।
সন্ধ্যার ঝিরি ঝিরি হাওয়া তার শরীরে ঝাপটা দিতে থাকে। আর আজকের ঘটনা বার বার তার মনে ফিরে ফিরে আসে আসে । পৃথিবীটা এত নোংরা কেন এখানে কী বিশ্বাস ভালবাসা এসব শুধুই বইয়ের শব্দ। নিজের অজান্তেই সে অনুভব করে তার চোখের দৃষ্টি কেন যেন ঝাপসা হয়ে উঠছে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।