আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

শেরালী বার-মুক্তির মন্দির সোপান তলে-২



হলদে পাট ফুলের ধূসর পাঁপড়ি গুলো পাটের ফলে ঝুলে আছে পরিত্যাক্ত পালকের মত। ফড়িং গুলো উড়ে বেড়াচ্ছে ইতস্ত-বিক্ষিপ্ত। টুনটুনির বাচ্চা গুলো লাফ দিয়ে ডালে ডালে ঘুড়েবেড়ানোর সময় ডানা মেলে উড়াল দেয়ার প্রশিক্ষন নিচ্ছে। ধুতুরার ফুল মেলে ধরেছে বিষের ডালা। বাবুদের বাগানে সবুজের সাথে পালা করে ফুটেছে, লাল-সাদায় কদমের ফুল।

পাঁপড়ি লুকিয়ে সবুজ শরীরে, কান্ডে ঝুলে অছে অসংখ্য ডুমুর। অতি যত্নে সাজিয়েছে বেন্না, ফুলের ডালা। সবুজের পাতায় মোড়া হলদে পাঁকা গাবের রং উঁকি দিচ্ছে আব্রু বেধ করে। এতো সমারহে বৈচির পাশে গাবই একমাত্র আহারের উপযোগী ফল। কিন্তু শেরালীর মন ঝুকেছে আজ শিকারের দিকে।

গোলা-বারুদ জমে আছে পাটের বিঁচি হয়ে অতিরিক্ত ভাবে। মাহাল বাঁশের গিট্টু হীন একটা খন্ড আর জিংলার ট্রিগার। প্রথম বিঁচিটা বাঁশের ছিদ্রে ঢুকে জিংলার গুতোয়, পরের ছিদ্রের মুখে গুলি হয়ে অপেক্ষা করবে। শিকার দেখে শেরালী দ্বিতীয় গুলি বাঁশের ছিদ্রে ডুকিয়ে দিবে ধাক্কা, জিংলার ট্রিগার দিয়ে। লুটিয়ে পড়বে শিকার।

কিন্তু টুনটুনির বাচ্চা গুলো এত চঞ্চল, শেরালী লক্ষ্য স্থির করার আগেই লাফ দিয়ে চলে যাচ্ছে অন্য ডালে। পাট খড়ীর আগায় কাফিলার কষ লাগিয়ে ফড়িং ধরা খুব সহজ বলে, বাঁশের বন্দুকে পাখি শিকারের সাধ হয়েছিল তার। সূর্য্যটা গাব ফলের রং নিয়ে রাঙ্গিয়েছে পশ্চিমের আকাশ। গোমতীর জলে তার প্রতিচ্ছবি আগুনের মত জ্বলে। শেরালী পরাজিত সৈনিকের মত অবহেলায় বাঁশের বন্দুক কাঁধে ঝুলিয়ে এবার ঘর মুখো।

পাটের ক্ষেত প্রায় জঙ্গলের মত। নদীর জল বোর ধানের জমি গ্রাস করে এই উঠল বলে পাট ক্ষেতে। মাত্র বিঘত ( বিঘত=কনিষ্ঠ থেকে বৃদ্ধাগুলি পর্যন্ত) খানি বাকি। আকশের আগুন জ্বলে ধীরে ধীরে ছাই হচ্ছে, কালো কয়লায় ঢেকে যাচ্ছে চরাচর। ইঁদুর আর বেঙ খেতে তীরের কাছে আনাগোনা করছে বোয়াল মাছ।

ধূর্ত শেয়াল ডাঙ্গায় বসে লেজ নাড়াচ্ছে জলের উপড়। শেরালি উত পেতে বসে গেছে চিতা বাঘের সর্তকতা নিয়ে। শিয়াল এক লাফে ডুকে গেছে পাট ক্ষেতের ভেতর। ইঁদুর ভেবে শেয়ালের লেজে কামড় দিয়ে ঝুলে থাকা বোয়ালটা নিয়ে লড়াই হবে শেয়ালের সাথে শের-এর। পাড়া কোউ তেমন একটা খেয়াল করল না শেরালীর সাফল্য।

শুধু আনন্দে মায়ের মুখ খানা উদ্ভাসিত হল কুপির ঝাপসা আলোয়। রাত দুপুরে পুড়োটা পাড়া ভেংগে পড়েছে শেরালীর ঘরে। গভীর রাতে ঘুম ভেঙ্গে শেরালী চমকে উঠল মায়ের রণ-রঙ্গিনী রুপ দেখে। কেরামত মাওলা মাটির মানুষ হয়ে গেছে। মায়ের খিচূনী, বকুণী, কিল খামচার কোন প্রতি আক্রমন তো দূরের কথা প্রতিবাদ পর্যন্ত করতে ভুলে গেছে।

চোখের জল দাড়ি বেয়ে ঝরে পড়ছে অঝরে ওলগায় পেচানো একটা কিছুর উপড়। মা সেটা কোলে করে এবার মন দিলেন বিলাপে। আমনে আমার এই দুধের শিশু লইয়া গেলেন পুল ডিওটিতে। মুক্তি বাহিনী ডিনামাইট দিয়ে পুল উড়িয়ে দিয়েছে। পাহারারত আরো কয়েক জনের সাথে খন্ড-বিখন্ড হয়ে গেছে রতনের দেহ।

তারই কয়েকটা অংশ এই ওলগায় পেচানো।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.