আষ্ট ঠেং ষোল হাটু
নাম তার নিমাই টাঠু
শুকনায় পাতিয়া জাল
মাছ খায় চির কাল।
লাঠিম, ডাংগুটি আর মেয়েদের মত ষোলকৌট্টা খেলতে খেলতে হাত পা জমে গেছে। হয়ত সে কারণেই করিমের প্রস্তাবে আমিও ফজলুর মত খুসীই হলাম। কাঁচা জিংলার (বাঁশের ডালা) ছিপ নিয়ে বর্শি বাইতে যাব। করিমের বাবাও বালির নাওয়ে গেছে।
তাই ওদের কোষা নৌকার একছত্র অধিপতি এখন সে একাই। জল স্ফটিকের মত স্বচ্ছ। দু একটা কাটাইরা বা দারকিলা মাছ ছাড়া অন্য মাছের দেখা পাওয়ার সম্ভবনা নেই। তাই কাটাইরা মাছের উপয়োগী বর্শীই সাথে নিলাম।
মাকড়শা একটা পূন্যবান প্রানী।
কথিত আছে যে, দ্বীনের নবি মোস্তফায় মক্কা ছেড়ে মদিনায় পালিয়ে যাওয়ার সময় ভোর হয়ে যাওয়াতে একটা গুহায় আস্রয় নেন। মাকড়শা সে গুহার মুখটায় জাল বুনে। কবুতর সে জালে ডিম পাড়ে। কাফেররা মনে করল এখানে অনেক দিন কোন মানুষ ঢুকে নাই। এভাবে মাকর্শা নবির জীবন রক্ষা করে।
তাই এ প্রাণী পূন্যবান এবং অনেক গুনে গুনী। পানির উপর সচ্ছন্দে চলাফেরা করতে পারে। কিন্তু তার একটা বিপদ হল যে, সে পানির উপর দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় খাদ্য হিসাবে কাটাইরা মাছের পেটে চলে যেতে পারে। কাটাইরা মাছগুলো মাকড়শার লোভেই মাছরাংগার ভয়কে উপেক্ষা করে পানির এত উপরে ভেসে বেড়ায়। আমরা ধানের ডগা থেকে মাকড়শা ধরে বর্শিতে গেথে পানির উপর ভাসিয়ে রাখি।
মাছগুলো জিবীত মাকড়শা মনে করে সেটা গিলে। ব্যাস টান দিয়ে নৌকায়। কিন্তু কাটাইরা মাছের ঠোট খুব নরম। তাই খুব আস্তে টান দিতে হয়। আর কান্চা বাঁশের চিকন নরম ছিপ না হলে, ঠোট বর্শিতে গেথে থাকে মাছ জলেই সাতার কাটে।
করিম ফজলু পটাপট মাছ তুলছে নোকায়। কিন্তু আমি শুধু ঠোট পাচ্ছি। একটা মাছও ধরতে পাড়লাম না। ক্রমাগত ব্যার্থতায় অধৈর্য্য হয়ে নৌকা থেকে লাফিয়ে ওদের একটু ক্ষ্যাপালাম আর একটু সাতার কাটলাম। জল এখন এত বেশী নয়।
তবে ঠিকমত দাড়াতে পাড়িনা। খুব লম্বা হয়ে দ্বাড়ালে কোন রকমে নাকটা পানির উপরে থাকে। ওরা আবার মাছ ধরায় মনোযোগ দিল। আমি ধানের ফাঁকে বেড়ে উঠা দুএকটা শালুক পাতা দেখে ডুবদিয়ে শালুক তোলার চেষ্টা করলাম। ভাল করে জলের উপর এখনো সব কটি পাতা জাগেনি।
শালুক হবে কিভাবে। একটা মটরশুটির মত শালুক পেলাম। দাঁত দিয়ে ছাল সরিয়ে মুখে পূড়লাম। অসম্ভব তেতো। আষারের শেষে কার্তিকের শুরুতে গোল আলুর মত হবে একেকটা শালুক।
সিদ্ধ করে ছিললে মনে হয় সোনার ডিম। মুখে পুড়লে চিনিছাড়া সন্দেশ। জিবে পানি এসে গেল। ভাবতে ভাবতেই। শাপলার কুড়িগুলো এখনো পদ্ম পাতায় পরিনত হয়নি।
অদ্ভূত ভাবে শাপলা, পাতার সাথেই মূল থেকে অঙ্কূরিত হয়। পানি খুব স্বচ্ছ বলে দেখতে পেলাম। সাবধানে একটা শাপলা মূল থেকে ছেড়লাম। খুব কঁচি বলে খশা না ছাড়িয়েই মূখে পুড়লাম। এর স্বাদ শাপলার মতই।
বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার মত সবুজ ধানের পাতা। জলের সাথে পাল্লা দিয়ে বেড়ে এতদিন পরে একটু স্থির হয়েছে। তাতেই হাল্কা সবুজ কঁচি রংটা ঘন সবুজে পরিনত হয়েছে। ওৎ পেতে বসে আছে ঘন ঝাপড়ির ধনচে গাছে কাল বক আর ডাহুক। মাকড়শার লোভে মাছগুলো পানির উপরে অনেক সময় লাফদেয়, টুক করে গিলে ফেলে ডাহুক না হয় বক।
বড় শান্ত মনে হয় ঐ জীবনের গতি বেগ। এ কূল ভেঙ্গে ও কূল গড়তে গিয়ে আপন খেয়ালে প্রকৃতি সৃষ্টি করেছে এই সাত মৌজার বিল। এ দিকটায় চড় পরতে পরতে আর ও দিকটা ভাংতে ভাংতে অনেক ভাংগা গড়ার ফল এ বিল। যদিও এটা আসলে চড় কিন্তু লোকে বলে বিল। তাতে চড় দখলের রক্তাত অধ্যায় কি আর ঘোচে! এর দখল নিয়ে যত রক্ত ঝরেছে, তাতে এবিল ভরে যেত।
দারগা, থানা, পুলিশ, কোর্ট ,কাচারি কিছুতেই যখন কার দখল নিশ্চিৎ করতে পারেনি তখন সবাই একমত হল। চর সাত মৌজার সব পরিবারে সমান করে ভাগ করে দেওয়া হবে। কিন্তু অনেক মানুষ বলি হওয়ার পরে।
ক্রমশ....
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।