জল্লাদ দরিতে দুধ কলা মাখাচ্ছে, মাথায় যম-টুপি পরাচ্ছে। আমি কিছু দেখতে পারছিনা। দম বন্ধ হয়ে আসছে। চিৎকার করে বলছি:বাঁচতে চাই। ঘুম ভেঙ্গে গেলে স্বপ্নের যন্ত্রনা শেষ হয় বটে কিন্তু শুরু হয় বাস্তবের নরক যন্ত্রনা।
ঘামে ভিজে, গায়ের গেন্জী দ্বিতীয় চামড়ার মত, শরীরের সাথে লেপ্টে আছে।
এরই মধ্যে চৌদিক থেকে প্রায় একই সাথে ভেসে আসে আযানের ধ্বনি। মধুর আযান গলিত শিশার মত কর্ণ কুহরে প্রবেশ করিলে, ঘুমাইতে পারে কেবল কুম্ভকর্ণ। অবশ্য অভ্যস্ততারও একটা ব্যাপার আছে। চেষ্টা করলে মানুষ পারেনা পৃথিবীতে এমন কিইবা আছে।
অকারনেই শরীরের ব্যাথাটা একটু কমল। অথবা স্নায়ূবিব দুর্বলতার কারণে অনুভব ক্ষমতা কমেছে। তিন বার পুলিশ রিমানডে ছিলাম। তাতে অনুভব ক্ষমতা বারার তো কথা নয়।
কথাতো একটাই।
সেটা হল সত্য কথা। সত্যের মত অলংকারহীন কথা কার ভাললাগে! পুলিশেরও লাগে না। কিন্তু তাদের উপর করা নির্দেশ আছে। কোন বড় নেতার নাম নথিবুক্ত করা যাবে না। ছোট খাট নেতা যেমন ওয়ার্ড কমিশনার এদের নামও ক্ষেত্র বিষেশে বিপদ জনক।
কারণ দলের সঙ্গে ঘনিষ্ট সর্ম্পক না থাকলে কমিষনার হবে কি করে? কাজেই সাবধান। তাছাড়া, আমাদের মত গুন্ডারা ধরা পরার চব্বিশ ঘন্টার মধ্যে কোন নেতার ফোন না এলে পুলিশ ধরেনেয় আমরা বেওয়ারিশ লাশ।
জ্বালা হয়েছে আমাদের মত ভোট চোরদের।
আরে কমিশনার সব দ্বায়ীত্ব নিল। কইল খুন জখম আমি দেহুম।
আজকাল পাবলিকে ছুরি, দাও, কুড়াল এই সব ডরায় না। তাই পাইপ গান। কিন্তু পাইপ গানের গুলি সব সময় বের হয় না। নিজে পাবলিকের হাতে মরুম। হেডা কোন ব্যাপার না।
কিন্তু একবার চিন্তা কইরা দেহেন। আমারে টেকা বেশী দিতে অইব না। কয়ডা টেকা বেশী খরচা কইরা এক নম্বর মাল জোগার কইরা দেন। এত টেকা খরচা কইরা অহন মালের লাইগা ইলেকশনে আরবেন? কথায় কাম অইল। কমিশনার জ্ঞানী মানুষ।
রাইতের ভিতরে মাল হাজির।
এই সত্য কথাটা পুলিশ কিছুতেই শুনতে চায়না। দেয় মাইর।
ভোর থেকে সকাল বেলাটা এত দ্রুত হয়, যে খুব মনোযোগ না দিলে, এর মধ্যে যে একটা পার্থক্য আছে সেটা বুঝাই যায় না। সকাল হলেই সূর্য্যটা এমন ভাবে দাহন শুরু করে, মনে হয় সব কিছু জ্বালিয়ে পুড়িয়ে আজই কিয়ামৎ করে দিবে।
প্রতক্রিয়া শেষে নাস্তা হবে। টিনের থালায় আলু ভাজি আর দুটো রুটি। প্রথম প্রথম খেতে একটু কষ্ট হয়েছে, কিন্তু এখন অভ্যাস হয়ে গেছে। কত মানুষ কিছুই খেতে পায় না। এখানে অন্তত না খেতে পেয়ে মরার ভয় নেই।
কিন্তু খাওয়ার পর শুরু হল বুকের ব্যাথা। নিশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। নতুন কিছু নয়। প্রায়ই হয়। তৃতীয় বার পুলিশ রিমান্ডে নেওয়ার পর থেকে ফুসফুসটা ফেটে গেছে।
নরা চরা করবেন না। এমন মেয়েলী কন্ঠ জীবনে এই প্রথম শুনলাম। মায়া, মমতা, স্বাসন, ভয়, আদর, মিনতি কিছুই নেই, এই কন্ঠে। ধীরে ধীরে চোখ মেলে দেখি নার্স। যেন মাদার তেরেসা।
নাইট ডিউটি মহিলার। লাল পেরে সাদা শাড়ী। উপজাতি কোন মহিলা। বুকের নেম প্লেটে লেখা কিরণময়ী বড়ুয়া। নামের সাথে গায়ের রং-এর কোন মিল নেই।
কিন্তু আমার খুব ভাল লাগল। ফাঁসীর আসামীদের সাথে মানুষ সাধারনত স্বাভাবিক ভাবে কথা বলতে পারে না। হয় ভয়ে ভয়ে ডোক গিলে তোতো করে কোন রকমে কাজের কথা সেরেই, ছেরে দে মা কেঁদে বাঁচি অবস্থা। আবার কেউ এমন ভাব দেখায় যে, তোমার মুন্ডুপাত আমিই করতে পারতাম।
কিন্তু এই মহিলার কন্ঠ খুব সহজ সাবলিল।
এই স্বাভাবিকতার কারণে তার প্রতি শ্রধ্বা হল। দেখতে দেখতে হাসপাতালের আরামের দিন খুব দ্রুত ফুরিয়ে গেল।
ফাঁসির আসামীদের এক রকম সুবিধা আছে। পুলিশরা পর্যন্ত সমীহ করে। ভাবে আরতো বেশী দিন বাঁচবে না।
দিন কয়েকের মধ্যেই...। মৃত্যু পরোয়ানা ছারাই ভাল। তা ছারা ফাঁসি হবে কি হবে না। সেটাও নিশ্চিৎ হয়নি। ফাঁসির রায়ে আপিল করার অধিকার থাকাই উচিৎ নয়।
আপিলের সময়টা আসামী শূণ্যে কাটায়। আসায় থাকে হয়ত মুক্তি পাবে কিন্তু যদি না পায়! এই দোটানায় কিছুই করতে পারে না। কিন্তু যদি নিশ্চিৎ যানে অমুক দিন ফাঁসি হবে, তাহলে মানুষ মুক্তির স্বপ্ন দেখতে পারে। চলবে...
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।