আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

শেরালী চার-কূক্ষেইন্না:



কূক্ষেইন্না: স্নান শেরে তীরে উঠা রমনীর শরীর থেকে গড়িয়ে পড়ার মত, জল নেমে যাবে জমি থেকে কঁর্তিকের শেষে। জেগে উঠবে চর। যুবতীর উব্ধত স্তনের মত। অঘ্রানের শুরুতে ধান পকবে। ধাড়ালো লাঙ্গলের ফলা দিয়ে ছিন্ন-ভিন্ন করতে হবে জমির মাটি।

বুনতে হবে বীজ। এখনো অনেক সময় হাতে। কেরামত মওলা বউয়ের দুই উড়ুর ফাঁকের গর্তে, নিজের তীক্ষ্ণ চামরার ছোরাটি ঢুকিয়েদিল। নরম পিচ্ছিল পলিমাটিতে পা ঢোকারমত। একবার, দুইবার, বারবার ছুরিবিব্ধ করল।

রক্তের মত, গরম,পিচ্ছিল ঘোলাজলে ভেসেগেল গর্ত। কার্তিকের মাছের পোনারমত, বীর্জ গুলি গভীর পুকুরে, বউয়ের জড়ায়ূতে ঢুকল। ঈশ্বর কি একেই স্মৃষ্টি বলেছেন! আদমের জন্য ছিল বেহেস্ত। শাহজাহানের জন্য সিংহাসন। মোহাম্মদের জন্য নবুওত।

কেরামত মাওলার যৌনক্ষুধা মেটাতে যে বীজ বপিতহল, সে কোন উর্বর জমিতে, কি ফসল হয়ে ফলবে, সময় হলে দেখাযাবে। আদা, রসুন, পেয়াজ কিংবা বাঁশ। মানুষ তারদের চেয়ে কতটুকু ভিন্ন! হরিযনের ছেলে ঠাকুর হয়! ক্ষুধা, তৃষ্ণার মত হিন্স্রতাও একটা খুব সাধারণ মানবীয় ব্যাপার। ভিন্ন ভিন্ন সময়, বিভিন্ন ভাবে মানুষ তা চিরতার্থ করে, সর্বত্র। ব্যাতিক্রম শুধু পদ্বুতির।

বৃষ্টির আগে মেঘ জমে। বিদ্যুৎ চমকায় বিকট শব্দে। তারপর শুরু হয় প্রবল বর্ষণ। দিবালোকে নেমে আসে নিশির আধার। পাশের মানুষটি চেনা যায়না।

মেঘের মত, কুকথা বাতাসের উপর ভর করে, ছড়িয়ে পড়ল চৌদিকে। " গান্ধির সৈন্যরা যাবে করাচিতে নাস্তা করতে"। ঠিক কবে আমার জন্ম তা আমিতো জানিইনা, বোধ হয়, নাহ নিশ্চিৎ, আমার জন্মদাত্রীও জানেননা। কিন্তু জন্মের বিষয়টা বড় অদ্ভূত। কার গর্ভে, কোন খানে, কোন সময় কার জন্ম হবে তা ঈস্বর ব্যাতীত কেউ জানেনা।

এমনকি যে নামে তোমাকে ডাকা হবে, তাও তুমি জাননা। অথচ জন্মের পর; তোমার নাম এই, তুমি অমুকের ছেলে বা মেয়ে তমুক। তোমার বাড়ী অমুক দেশে। জন্মের পর এই বিষয় গুলি অংগ-প্রত্যেঙ্গের মত তোমার গায়ে লেগে থাকবে। এমনকি মরার পরও।

তুমিযে একটি একক অদ্বিতীয় জীবন এটি ভেবে দেখবেনা কেউ। তোমার কোথায় জন্ম হল, তার উপর নির্ভর করে মানুষ তোমাকে অবহেলা বা আদর করবে। জননীর জবানে শুনেছি: আমার জন্মের সময় রায়ট হয়েছিল। পৃথিবীতে সূর্য্যের আলো প্রথম বারের মত আমার চোখ ঝলসে দিচ্ছে, আর সেই আলোতে, ঝাপসা দৃষ্টিতে, দেখলাম মানুষের অন্ধকার বৃত্তি ও তার বলয়। শুক্কুর বার।

বাদ জুম্মা। হুনলাম কি মোল্লার ফুত! কি হুনলা? মালাউনরা পাকিস্তানের পাক মাটিতে আবার জমিনদারী করব বলে! তোমার আমার করবার কি আছে? হ, কথা ঠিক। কয়দিন বাদে মসিদে মা কালির মূর্তি উঠলে আমরা কুলু দিমু। রাইতে আইও। তামুক খাইতে।

মোল্লার দোনালা বন্দুকের গুল্লির আওয়াজে খান খান হয়ে গেল অন্ধ রাতের নিঝুম নীরবতা। হাজার বাতির আলোর লেলিহান শিখা ঝলমল করে উঠল আঁধার তাড়াতে। আলোকিত ঋষি পাড়ার আলোর উৎস, তাদের জ্বলতে থাকা ঘর-বাড়ি। চিৎকার-চেচামেচিতে মুখর গ্রাম। এই উৎসবে কেরামত মাওলা কেমনে থাকে ঘরে! বিনা যুদ্ধে নাহি দেব সূচাগ্র মেদেনি।

এই প্রতিজ্ঞা ঋষি পাড়ায় আজ কেউ করে নাই। কিন্তু তাতেও রক্ষা নাই। গোমতীর জলে এই রাতে মাছের বদলে মালেক, রসুল আর বসিরের বল্লমে গেথে ডাঙ্গায় তোলা মাছের মতই কাতরাচ্ছে রাখাল, ভজন আর কার্তিকের লাশ। না অনেকে জলে ডুবে আত্মরক্ষা করতে পাড়লেও, এরা পারে নাই। নাড়ী আর শিশুরা কিছুটা রহম পেল।

কিন্ত গায়ের কাপড় ছাড়া কিছুই নেই। ভিটার মাটিও অবসিষ্ট আছে। আর সব শকুনের মরা গরুর মংস খাওয়ার মত ওদের উদরে ঢুকেছে। কংকালের মত দাঁড়িয়ে আছে কয়েকটা গাছ। রায়ট লাগার আর সময় পাইলনা।

এক্বেবারে আমার জন্মের সময়। বালুচর গ্রামে রটে গেল: রায়টের রাইতে রতনের মার ফেঠের ফোলা ফইরা গেছেগা। মানে বাচ্চা নষ্ট হয়ে গেছে। মানে মরে গেছে। কিন্তু এই অস্বাভাবিক গর্ভপাত আমার বেঁচে থাকার ইচ্ছার কাছে অনেক তুচ্ছ।

অবাক হয়ে লোকে বলাবলি করতে লাগল: রতনের মার এই কূক্ষেইন্না পোলা বাইচ্চা রইল! চলবে...

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.