জন্ম দাতায় দিলনা জন্ম, জন্ম দিল পরে,
যখন ছেলের জন্ম হইল, মা ছিল না ঘরে।
জয়ধন মুনির ধ্যান খুব সহজে ভাঙ্গেনা। জগৎ-এর সব কিছু তুচ্ছ জ্ঞান করেই, এজীবনের সার্থকতার সন্ধানে মানুষের কোলাহল ছেড়ে, গহীন অরণ্যে যোগী হয়েছে। বনের বাঘ, সিংহ, ভাল্লুক ঐসবের ভয়, জয়ধন মুনিকে বিচলিত করে না। কারণ জয়ধন মুনি জানে, মানুষের চেয়ে ভয়ংকর প্রাণী ধরতি মাতা জন্মায়নি।
এই গভীর অরণ্যে অন্তত মানবের উপদ্রব নেই। এই তার বিশ্বাস।
বিশ্বাস করেছিল জোস্নাও।
এতটুকু মেয়েকে মংগার কারণে ঝিয়ের কাজে পাঠিয়েছে হরু মাঝি। ভেবেছিল: বাঘু পাটনি পেটেভাতে খাটাক।
কিন্তু বয়স কালে মেয়েটার একটা বিয়ে তো দেবে! আমি খাইয়েই বাঁচিয়ে রাখতে পারব না। মেয়ে হয়ে জন্মেছে কাজ তো স্বামীর ঘরে গেলেও করতে হবে। চুরিতো আর করছে না! মন খারাপ আমারও বউ! আঁচলে চোঁখ মুছতে মুছতে হরু মাঝির বউ স্বামির ব্যাবস্থা মেনে নিল।
সেই যে হরু মাঝি মেয়েকে রেখে গেল, সেই থেকে মেয়ে বাঘু পাটণীর হয়ে গেল। মেয়ে দেখতে শুনতে ভাল।
কাজও ভাল করে। সবাই খূশী। বাধ সাধল মা ধরতী। পেট ভরে খেতে পায়। এত খাটা খাটনির পরে, যখন ঘুমোতে যাবার আগে বঘু পাটণী ডাকে: মা জোস্না একটা পান ছেইচ্চা দেতো।
জোস্নার প্রণটা পিতৃ ভক্তিতে ভরে উঠে। ভূলে যায় সে এবাড়ীর চাকরাণী। তাও বিনে পয়সার। কিন্তু ঐ যে মা ধরতী! জোস্নার মন এবং শরীর দুই মার আর্শীবাদে পুষ্ট হল। মা ধরতী জোস্নার এত রুপ দিল যে, বাঘু পাটণীর মাথা ঘুরে গেল।
তার ফল ভোগ করতে জোস্না সমাজ ছেড়ে জঙ্গলে এল। দশ মাস দশ দিন পর বাঘু পাটণীর বীজ জোস্নার পেট ফুরে মা ধরতীর বুকে অঙ্কুরোদগম করতে চাইল। তা সামলাতে না পেরে জোস্না কেঁদে উঠল।
জয়ধন মুনি মানুষের কান্নায় ভয় পেয়ে মেয়ের দিকে ফিরে চাইল। এই একটি ভূলের কারণে জয়ধন মুনির সাধনা পূর্ণ হলনা।
সে যে পাপী ছিল সে পাপীই রয়েগেল। মেয়েটির জন্য তার মায়া হল। অথচ এ মায়ার মোহ মুক্তিই ছিল তার সাধনা। ধরণীর আর সব কিছুর মতই জয়ধন মুনিও মা শিশুর দেখা শোনা করতে লাগল। জয়ধন মুনি জানে না কে বাঘু পাটণী।
তার কাছে পৃথিবী খুব সহজ। "ভবে মানুষ রতন করগো তাহারে যতন"। কিন্তু এতটুকু বুঝেছে যে, মেয়েটি তারই মত বনবাসী হয়েছে। কারণ যাই হোক দুজনে একই বনের বাসিন্দা।
কিন্তু তাই বলে ধ্যান করা জয়ধন মুনি একে বারে ছেড়ে দেয়নি।
এক দিন মুনি ধ্যানে বসেছে দেখে মেয়েটি ভাবল জল নিয়ে আসি। কিন্তু ছেলেটা যেতে চায়না। মুনিকে বলল বাবা ছেলেটাকে রেখে গেলাম। একটু নজর রেখ। মুনি শুনলকি শুনলনা।
আবার ধ্যানে মগ্ন হল। কোন অদ্ভূত শব্দে মুনির ধ্যান ভেঙ্গে গেল। কিন্তু ছেলেটাকে কোথাও দেখতে পেল না। কারণ মুনি ধ্যানে বসার পর ছেলেটা মায়ের পিছু পিছু নদীর ধারে চলে গেছে। ছেলেকে দেখতে না পেয়ে মুনি গেল দিশে হারা হয়ে।
মা কে এখন কি বলব? কে জানে হয়ত ছেলেকে বাঘে নিয়ে গেছে! তুই আমাকে এত যন্ত্রনা কেন দিচ্ছিস ভগবান! ভগবানের দয়া হল। বলল ছেলে পাবি, অধৈর্য্য হসনে। মুনি বলল হে ভগবান, আমি তোর কাছে কিছুই চাইনে, শুধু মা ফিরে আসার আগে ছেলেটাকে আমার হাতে তুলে দে। অমনি ঝোপের আড়াল থেকে ছেলে মুনির পাশে এসে বসল। ছেলেকে কোলে তুলে চুমোয় ভাসিয়ে দিল মুনি।
আর বলল: এখন থেকে আমার ধ্যান জ্ঞন সব তুই। এমন সময় মা তার ছেলেকে নিয়ে নদীর ঘাট থেকে ফিরে এল।
আছে মিলে খায় কতেক দিন যায়
এই ভাবে তিন জনের সংসারে চার জন হল। এক ছেলের যায়গায় দুই জন হল। দুজনেই মায়ের সন্তান।
মা দু'জনকেই ছেলের আদরে মানুষ করতে লাগল। দেখতে দুজন একই রকম। যমজ ভাই। সব মানুষ একই স্রষ্টা সৃষ্টি করেছেন। জয়ধন মুনি ভগবানের লীলা ছেলে দুটির মাঝে খোজেন।
কিন্তু মা ধরতী বসে নেই। ছেলে দুটি বড় হয়। মুনির ইহধামের সাজা কমে। এখন মুনির চোখ কদাচিৎ খোলে। পানাহারের যন্ত্রনা আর পোহাতে চান না।
আজকাল জলটুকু পর্য়ন্ত মুখে তুলেন না। এভাবে ভবের খেয়া পারি দিয়ে একদিন মাটির ঢেলা মা ধরতিকে ফেরৎ দিয়ে, স্বর্গবাসী হলেন জয়ধন মুনি। মায়ের ভাবনার কারণ নেই। জয়ধন মুনির আশ্রয় এখন আর তার প্রয়োজন নেই। ছেলে দুটি মায়ের খুব দেখা শোনা করে।
প্রকৃতির সঙ্গে মিলে মিশে তারা বর হচ্ছে। জীবনের সব চাহিদা একাই মেটাতে সক্ষম।
আল্লার আছে মর্জি, খোদার আছে কাম
জাগা বুইজা পইরা গেছে মালদাইরা আম।
তাদের সোনার সংসার তছনছ করে দিতে এক দিন কামান গর্জে উঠল। বর্ণহীন মানুষ জঙ্গল কেটে মঙ্গল করতে নীল চাষ করল।
মা বৃদ্ধা বলে আর "জয়ধন মুনির বর" ছেলেটা চালাক বলে, আদি বাসে ঠাঁই পেল। অন্য ছেলেটা মা ধরতির বুকের মায়া, এই গাছ-বৃক্ষ কাটায় বাধা দিয়েছিল বলে বর্ণচোরা মানুষ গুলি তাকে দিপান্তর নিয়ে গেল। সেখানে নাকি তাকে লোহার বোঝা বইতে হবে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।