যদি নির্বাসন দাও.................................................................. আমি ওষ্ঠে অঙ্গুরী ছোঁয়াবো আমি বিষ পান করে মরে যাবো! বিষণ্ন আলোয় এই বাংলাদেশ নদীর শিয়রে ঝুঁকে পড়া মেঘ, প্রান্তরে দিগন্ত নির্নিমেষ- এ আমারই সাড়ে তিন হাত তুমি।
গত ৬-৯ জুন হয়ে গেলো সুইডেন রক ফেস্টিভ্যাল। সারাবিশ্বের রক এন্ড রোলের নামী-দামী যত ব্যান্ডগুলো যোগ দিয়েছিলো উৎসবে। চারদিনব্যাপী ফেসিটভ্যাল চললেও পকেটের স্বাস্থ্যের কথা চিন্তা করে ৭ তারিখটাকে বেছে নিয়েছিলাম আগে থেকে। এই উৎসবটা শুরু হয় স্টকহোম এবং অবো-র মধ্যবর্তী সাগর উপকূলে।
যাহোক, আমি যখন অনুষ্ঠানে যোগ দিলাম তখন পুরো উপকূলভর্তি অসংখ্য মানুষ। মানুষের উচ্ছল কোলাহল সাগরের তরঙ্গধ্বনিকেও হার মানিয়ে দিয়েছে। একে একে শুনলাম স্করপিয়ন, অ্যারোস্মিথ, হেভেন এন্ড হেলের দারুন সব গান। দর্শকদের অনুরোধে হেভেন এন্ড হেল গাইলো মাইকেল লার্নস টু রকের সেই বিখ্যাত গান- "ও মাই স্লিপিং চাইল্ড"। পুরো সময়টা খুব উপভোগ করলাম।
একরাশ প্রাণোচ্ছল মানুষের মাঝে যেন অতীতকে খুঁজে পাচ্ছিলাম বারবার।
ফেরার সময় মনে মনে গুনগুন করে গাইতে লাগলাম- ও মাই স্লিপিং চাইল্ড, দ্যা ওয়ার্ল্ড ইজ সো ওয়াইল্ড, বাট ইউ হ্যাভ বিল্ড ইয়োর ওন প্যারাডাইজ। তখনই মনে পড়লো জাফর ইকবাল স্যারের একটি কথা। প্রথম আলোর কোন একটি কলামে লিখেছিলেন- "আমি আমার শৈশবে বার বার ফিরে যেতে চাই। আর যারা ফিরে যেতে চায় না তাদের জন্য করুণা হয়।
" ভাবতে থাকলাম, এই কথাটা কতটুকু যৌক্তিক। আমার কিংবা জাফর ইকবাল স্যারের শৈশবটা হয়তো ছিলো নিরুদ্বিগ্ন, অবিমিশ্র ভালো লাগার। কিন্তু সবার ক্ষেত্রে কি তা? আমার দুরন্ত শৈশবের উড়ন্ত দিনগুলি কেটেছে গ্রামের সবুজ শ্যামলিমায়। প্রকৃতি আর প্রকৃতির কাছের মানুষগুলোর ছোঁয়া লেগে আছে তাই এখনো শরীরের পরতে পরতে। উদ্দাম দিনগুলো তাই স্বপ্নের চেয়েও মধুর আমার কাছে।
সেই স্মৃতি রোমন্থনে আমি পাই অজানা সুখের সন্ধান। সবাই কি তা পায়?
দশ বছরের যে ছেলেটি এই শৈশবেই হাতে তুলে নিয়েছে মাস্তুল- প্রতি আঘাতে খন্ড-বিখন্ড ইটের মতো করে থেঁতলে যাচ্ছে তার স্বপ্ন, কিংবা যে ছেলেটি শীর্ণ শরীরে টেনে নিয়ে যাচ্ছে আমাদের- দিনরাত ঘুরাচ্ছে চাকা নতুবা বন্ধ হয়ে যাবে তার সংসারের চাকা, নয় বছরের যে মেয়েটি দুটো ভাতের আশায় দিনে নয় নয় বার গৃহকর্ত্রীর গরম খুন্তির ছ্যাঁকা খেয়ে আর অমানুষিক নির্যাতন সয়ে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত সে কি চাইবে তার শৈশবে ফিরে যেতে? সবার শৈশব প্রজাপতির ডানার সাত রঙের মতো বর্ণিল হয় না। প্রতিদিন মরে যাওয়ার তীব্র ইচ্ছা নিয়েও জীবনের ঘানি টেনে টেনে অনেকে জানতেই পারে না শৈশব কি? কেমন ছিলো সে দিনগুলি? তাই করুণা শব্দটিকে আমি মেনে নিতে পারি না। 'করুণা' শব্দটিতে আমার বড় কষ্ট হয় কারণ অনেকে আমার-আপনার মতো সৌভাগ্য নিয়ে জন্মায়নি।
সুমনের একটা গান খুব মনে পড়ছে-
পেটাকাটি চাঁদিয়াল মোমবাতি বগ্গা
আকাশে ঘুড়ির ঝাঁক মাটিকে অবজ্ঞা।
বয়েস বারো কি তেরো রিক্সা চালাচ্ছে,
আকাশে ঘুড়ির ঝাঁক ছেলেটাকে ডাকছে।
বয়েস বারো কি তেরো বড়জোড় চৌদ্দ,
রিকশা চালাতে শিখেছে সে সদ্য।
..............
এ কিশোর পারবে কি এ বোঝা টানতে,
এই বাবু কোনদিন পারবে কি তা জানতে?
অনেক কষ্টেরই কথাই আমাদের কখনো জানা হবে না।
** লেখাটি সচলায়তনে প্রকাশিত।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।