যমুনা নদীর প্রবল স্রোত ও ঘূর্নাবতে কারনে সিরাজগঞ্জ শহর রক্ষা বাঁধ হার্ডপয়েন্টে ফের ধ্বস নেমেছে। বুধবার রাত ১১টায় ধ্বসের কারনে বাঁধের প্রায় ১০০ মিটার এলাকা যমুনা নদী গর্ভে চলে গেছে। প্রায় ৫০০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত শত বছরের গ্যারান্টি দেয়া এ বাঁধে মাত্র ৪০ দিনের ব্যবধানে ফের ধস নামায় শহরবাসীর মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে এবং নদী তীরবর্তী কয়েকটি গ্রামের হাজারো মানুষের চোখের ঘুম কেড়ে নিয়েছে।
এর আগে গত মাসের ৭ আগষ্ট ধ্বসে একই স্থানের উত্তর পাশে ১০০ মিটার অংশ ধ্বস নেমেছিল। সে সময় থেকেই ভাঙ্গন পরিস্থিতি মোকাবেলায় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সেনাবাহিনী করা হয়।
বাঁধ সংরক্ষনে সঠিক কারিগরি প্রযুক্তি প্রয়োগের অভাব, নদীর গতি প্রকৃতির বাস্তবতা নিরূপন ও সে অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহন না করায় বাঁধটি বারবার ভাঙ্গনের মুখে পড়ছে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছে।
এছাড়াও বাঁধ এলাকার ভাঙ্গন নিয়ন্ত্রণের জন্য চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে ৮৪ কোটি টাকা ব্যয়ে ২ লাখ ৩৩ হাজার ২৮৮ মেট্রিক টন পাথর এবং ১ লাখ জিওব্যাগ ফেলার জন্য ঠিকাদার নিয়োগ করা হয়। মের্সাস মোনায়েম লিমিটেড ওই কাজ পেলেও সঠিক সময়ে পাথর ও জিওব্যাগ সরবরাহ ও না ফেলায় বাঁধে ধস দেখা দিয়েছে বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করেছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, বুধবার রাত ১১টার দিকে সিরাজগঞ্জ শহর রক্ষা বাঁধ হার্ড পয়েন্টের পুরাতন জেলখানা ঘাটের সামনে নদীতে পানি বুদবুদ শুরু হয়। এর কিছুক্ষনের মধ্যেই বিকট শব্দে বাঁধে ধ্বস নামে।
কয়েক ঘন্টার মধ্যে আকস্কিক এ ধ্বসে হার্ডপয়েন্টের পুরো প্রায় ১০০ মিটার এলাকা যমুনা নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যায়। ভাঙ্গন আতংকে নদীতীর এলাকার শত শত মানুষ বাধ এলাকায় ভীড় করতে থাকে। এসময় একজন ক্যাপ্টেনের নেতৃত্বে সেনাবাহিনীর একটি টিম বাঁধ এলাকার নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করেন। রাত থেকেই সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ সালাউদ্দিন ও পাউবো কর্মকর্তাদের তত্ত্বাবধানে স্থানীরা রাতেই হার্ডপয়েন্টে রক্ষিত পাথর ফেলে ধ্ব রক্ষার চেষ্টা করেন।
সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড (বিশেষশায়িত শাখার) সেকশন অফিসার আব্দুস সাত্তার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বাঁধের ১০০ মিটার বাধ নদীতে চলে গেছে।
নদীর বর্তমান অবস্থা জানতে নদীতে ব্যাথোমিটার মেশিন দিয়ে নিয়মিত সার্ভে করা হচ্ছে। জিওব্যাগ নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে।
জেলা প্রশাসক বেল্লাল হোসেন বলেন, ইতোমধ্যে পানিসম্পদ মন্ত্রনালয় ও বিশ্বব্যাংকের কনসালটেন্টদের বিষয়টি অবগত করা হয়েছে। বর্তমানে সেনাবাহিনীর ৯৮ সংমিশ্রন বিগ্রেডের একটি টিমের তত্ত্বাবধনে ধ্বস রক্ষায় কাজ চলছে।
প্রসঙ্গত, যমুনা সেতু নির্মানের পাশাপাশি ১৯৯৫ সাল থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত সিরাজগঞ্জ শহর রক্ষায় ৩৬৪ কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে শহরের মতি সাহেবের ঘাট থেকে রানী গ্রাম পর্যন্ত আড়াই কিলোমিটার দীর্ঘ হার্ডপয়েন্ট নির্মাণ করে শত বছরের গ্যরান্টি দেয়া হয় এবং দেখভালের জন্য ২০০০ সালের ডিসেম্ববরে পানি উন্নয়ন বোর্ডের একটি বিশেষ দফতরকে রক্ষনাবেক্ষনের দায়িত্ব দেয়া হয়।
কিন্তু সময়মত রক্ষনাবেক্ষনের অভাবে মাত্র ১০ বছরের মাথায় ২০০৯ সালের ১০ ও ১৭ জুলাই, ২০১০ সালের ১৯ জুলাই,২০১১ সালের ১৮,২১ ও ২৪ জুলাই, ২০১২ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর বিভিন্ন স্থানে এবং চলতি বছরের ৭ আগষ্ট জেলখানা ঘাটে এলাকায় ধ্বস নামে। এসকল স্থানে মেরামত করতে প্রায় শতাধিক কোটি টাকা ব্যয় করা হয়।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।