বর্তমান বাজার মূল্যে ঢাকায় বস্তির এক রুমের ঘরের ভাড়া দুই হাজার টাকার কম নয়। এ কথা জেনেও বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ) সদস্যরা সম্প্রতি তাদের সাধারণ সভায় শ্রমিকদের বেতন মাত্র ৬০০ টাকা বৃদ্ধির প্রস্তাব করেন। অথচ ২০% হারে বেতন বাড়লে আগের চেয়ে শ্রমিকদের বাড়ি ভাড়া বাড়বে মাত্র ১৬০ টাকা। যা বর্তমান বাজার মূল্যের সঙ্গে কোনোভাবেই সঙ্গতিপূর্ণ নয়। এ সিদ্ধান্ত শ্রমিকরা গ্রহণ করেননি। অন্যদিকে কথায় কথায় শ্রমিক ছাঁটাই, অতিরিক্ত কর্মঘণ্টা ও পাওনা বেতনের টাকা নিয়মিত পরিশোধ না করার কারণে শ্রমিকদের মধ্যে আগে থেকেই অসন্তোষ তৈরি হয়ে আসছিল। এমনকি রানা প্লাজার নিহত ও আহত শ্রমিকদের অনেকেই এখন পর্যন্ত পাননি কোনো ক্ষতিপূরণ। সবমিলিয়ে শ্রমিকদের মধ্যে জমে থাকা ক্ষোভ ক্রমেই বাড়ছে। বিজিএমইএ ও শ্রমিক নেতারা আশঙ্কা করছেন আসন্ন ঈদুল আজহা বা তার পরপরই শ্রমিকরা সহিংস আন্দোলনে জড়িয়ে পড়বেন। কয়েকজন শ্রমিক নেতা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, মজুরি বৃদ্ধির নামে বিজিএমইএ শ্রমিকদের অপমান করেছে। শ্রমিকদের ট্রেড ইউনিয়ন করার দাবি না থাকায় আগামী দিনে শ্রমিকরা যে আন্দোলন করবে তা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে। এটি ক্রমেই সহিংস হয়ে উঠবে। এক্ষেত্রে তৃতীয় পক্ষ শ্রমিকদের আন্দোলনকে কাজে লাগাতে চেষ্টা করবে বলেও তারা ধারণা করছেন। এ ব্যাপারে বিজিএমই কর্তৃপক্ষ জানান, আসন্ন নির্বাচন ও ঈদকে কেন্দ্র করে একটি শ্রেণী শ্রমিকদের উসকে দেওয়ার চেষ্টা করবে। তারা আশঙ্কা করছেন যে ঈদের আগেই এমনটি ঘটবে। তবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে বিজিএমইএ শ্রমিক ও শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে আলোচনায় বসবে। সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্টের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক রাজেকুজ্জামান রতন বলেন, ২০% হারে বেতন বৃদ্ধির বিষয়টি শ্রমিকরা প্রত্যাখ্যান করেছে। এটি তাদের কাছে অপমানজনক। মালিক পক্ষ বরাবরই শ্রমিকদের তুচ্ছ মনে করেন। বেতন বৃদ্ধি করা হলে গার্মেন্ট বন্ধ হয়ে যাবে কিছুদিন পরপরই মালিকরা এমন রব তোলেন। কিন্তু এটি সত্য নয়। শ্রমিকদের প্রাপ্য থেকে তাদের বঞ্চিত করার কৌশল এটি। আর সামনে যেহেতু নির্বাচন সে কারণে সরকারও মালিকদের দাবি নিয়ে দ্বিমত করবে না। তার মতে শ্রমিকদের ট্রেড ইউনিয়ন করার অধিকার নেই। এ অবস্থায় শীঘ্রই তারা যে আন্দোলন করবে তা সহিংসতায় রূপ নেবে। সম্মিলিত গার্মেন্ট শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি শ্রমিক নেত্রী নাজমা আক্তার বলেন, বিজিএমইএ'র বেতন বৃদ্ধির প্রস্তাব গ্রহণযোগ্য নয়। বর্তমান বাজার মূল্যের সঙ্গে সঙ্গতি রেখেই তা বাড়াতে হবে। এ জন্য প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ প্রয়োজন। বেতন আট হাজার টাকার সমপরিমাণ বাড়ানো না হলেও তিনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে শ্রমিকদের আবাসন, চিকিৎসা ভাতা ও নায্যমূল্যে চাল-ডাল ক্রয়ে সহযোগিতার আশ্বাস দেওয়ার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, আমরা ঈদের আগে বেতন বৃদ্ধির জন্য লাগাতার বিক্ষোভ করব। দাবি আদায় না হলে ঈদের পরপরই লাগাতার ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনে যাব। বিজিএমইএর ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম মান্নান কচি বলেন, বিজিএমইএর সাধারণ সভায় প্রাথমিকভাবে শ্রমিকদের মজুরি ২০% বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। কিন্তু এটি চূড়ান্ত নয়। আমরা বাজার মূল্যের সঙ্গে যাচাই-বাছাই করে শ্রমিকদের জন্য সর্বশেষ ছাড় দেওয়ার চেষ্টা করব। দেশের ৭৫% গার্মেন্ট ছোট ও মাঝারি। যেখানে ত্রিশ লাখের বেশি শ্রমিক কাজ করেন। যদি বেতন আট হাজার টাকা করা হয় তবে এ কারখানাগুলো বন্ধ হয়ে যাবে, সেক্ষেত্রে শ্রমিকরাও বেকার হয়ে পড়বেন। কথা হলে রাজধানীর মিরপুর, মালিবাগ, মগবাজার ও শ্যাওড়াপাড়ার শ্রমিকরা জানান, তারা বিজিএমইর সিদ্ধান্ত কোনোভাবেই মানবেন না। এ জন্য তারা লাগাতার আন্দোলনে যাবেন। নিজেদের বেঁচে থাকার জন্যই তারা এ আন্দোলন করবেন। তারা আরও অভিযোগ করেন, বেতন বৃদ্ধি ছাড়াও তাদের ওপর কারখানা কর্তৃপক্ষ নানা ধরনের নির্যাতন করেন। এর মধ্যে নির্ধারিত সময়ের পর কর্মক্ষেত্রে উপস্থিত হলে শ্রমিকদের অনুপস্থিত দেখিয়ে সেদিনের টাকা কেটে নেওয়া, নারী শ্রমিকদের সঙ্গে কারখানা সংশ্লিষ্টদের অশোভন আচরণ, শ্রমিকদের টিফিন না দেওয়া, ঈদে বাড়িতে যাওয়ার ছুটি বা বোনাসের টাকা ঠিকমতো না দেওয়া, অসুস্থতার বা মাতৃত্বকালীন ছুটি না দেওয়া অন্যতম। তবে নির্দিষ্ট কর্মঘণ্টার চেয়ে শ্রমিকদের বেশি কাজ করানো এবং মালিকদের অবহেলায় কারখানার মধ্যে শ্রমিকদের দুর্ঘটনা ঘটলে তার ক্ষতিপূরণ না দেওয়া- অসন্তোষের কারণ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।