গনতন্ত্রের জন্য আমরা হায় হায় করি, বুক চাপড়াই, গনতন্ত্রকে ব্যবহার করি নিজের স্বার্থে স্রেফ ঢাল হিসেবে। গদি যখন টলটলায়মান হয়, নড়ে উঠে ঠিক তখন। অথবা ক্ষমতায় যাবার উপায় হিসেবে। এর বাইরে আমরা সবাই এক একজন স্বৈরাচারের বাবা/মা। কি নিজ অফিসে, বাসায় অথবা রাজনীতিতে, একই চেহারা।
চেয়ারের উপর 'তোয়ালে' বিছিয়ে বসলেই প্রধান অতিথি নামক ব্যাক্তিটি গনতান্ত্রিক হয়ে যায় না। এই ভন্ডামি প্রথা, ভন্ড মানসিকতাকে যত বেশী সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় 'কুড়াল' দিয়ে আঘাত করবেন, সমাজ তত দ্রুত সচেতন হয়ে উঠবে। একটা ঘটনা বলি। আশির দশকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘোষিত অঘোষিত ছুটিতে প্রায়ই শর্ট নোটিশে বাড়ী চলে যেতে হতো। এলাকায় জনসভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান সবখানেই বড় বড় শিল্পীদের কদর।
একজন খুব ভাল নজরুল গীতি ও মরমী গানের মানুষ ছিলেন, নাম ছিল কানাই ইসমাইল। আওয়ামী লীগের যাকে বলে মাটি কামড়ানো নেতা কিন্তু নানা কারনে উনাকে কেউ পাত্তা দিতেন না। উনার কথাবার্তায় থাকতো একটা বিদ্রোহ ভাব, অনিয়ম, অপশাষন দেখলেই খুব কড়া ভাষায় গালি দিতেন। সুদর্শন লম্বা চেহারার মানুষটা বাড়ীতে খাবার না থাকলেও সাদা ধবধবে পায়জামার উপর গলাবন্ধ কালো লম্বা কোট পরে ঘুরে বেড়াতেন। সবাই তাকে গোয়ালন্দের গভর্নর বলে ডাকতেন।
কিছুক্ষন আগে গলা ফাটিয়ে মিছিল করে এসেছে এমন একজনকে পেয়ে হয়তো বলেই বসলেন, 'কি রে নটির ছেলে, তুই এদিকে শ্লোগান দিচ্ছিস, ওদিকে যে বস্তায় বস্তায় রিলিফের গম পাচার হয়ে যাচ্ছে, সেগুলো দেখবে কে?' এরকম একজন মানুষ, বয়স প্রায় ৭০/৮০। কেউ কিছু বলতেন না, বরং উনার কথাবার্তা সকলেই এনজয় করতেন। একবার ভাবলাম, উনাকে একটা সংবর্ধনা দিলে কেমন হয়! যা ভাবা তাই কাজ। দামী ইনভাইটেশন কার্ড ছাপালাম। বন্ধু বান্ধব দিয়ে মাইকিং করিয়ে দিলাম।
আগামী অমুক দিন বটতলায় 'কানাই ইসমাইলের সংবর্ধনা ও একক সংগীতানুষ্ঠান'। সত্যি সত্যি একজন গুনী মানুষকে সেদিন যে সম্মাননা জানাতে পেরেছিলাম, তা আজও মনে হলে অদ্ভুদ একটা ভাল লাগা পেয়ে বসে। কারন, ওটা শুধু উনার সংবর্ধনাই ছিল না, ছিল মুখোসধারীদের মুখে জুতা মারাও!
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।