আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

শত কোটি টাকার বাড়ি চার কোটিতে বিক্রি

রাজধানীর ধানমণ্ডিতে ১০০ কোটি টাকা দামের একটি পরিত্যক্ত সরকারি বাড়ি মাত্র সোয়া চার কোটি টাকায় বিক্রির ফাইলে ক্ষমতার শেষ সময়ে সই করে গেছেন সদ্যবিদায়ী গৃহায়ন ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী আবদুল মান্নান খান। মন্ত্রীর অনুমোদনের পর মন্ত্রণালয় এ মাসের শুরুতে বাড়িটি ক্রেতা প্রতিষ্ঠানকে বরাদ্দ দিতে রাজউককে নির্দেশ দিয়েছে। যে কোনো দিন বাড়িটির রেজিস্ট্রি এবং দখল বুঝিয়ে দেওয়া হতে পারে। অথচ বাড়িটি বিক্রির ব্যাপারে সরকারের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। সেই নিষেধাজ্ঞা গোপন রেখেই সেটি বিক্রির সব প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করা হয়েছে। খবর বাংলানিউজের।

গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, ক্ষমতা ছাড়ার কয়েক দিন আগে সদ্য বিদায়ী প্রতিমন্ত্রী আবদুল মান্নান খান বাড়িটি বিক্রির অনুমোদন দিয়ে গেছেন। অনুমোদন এবং এ সংক্রান্ত নির্দেশনা এরই মধ্যে রাজউকের হাতে পেঁৗছেছে। যে কোনো দিন বাড়িটির দখল ক্রেতাকে বুঝিয়ে দেবে রাজউক। ধানমণ্ডির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় পরিত্যক্ত বাড়িটির অবস্থান। আবাসন ব্যবসায়ীদের সংগঠন রিহ্যাব-এর একাধিক সদস্য জানান, ওই এলাকায় বর্তমান বাজারমূল্যে প্রতি কাঠা জমির দাম অন্তত পাঁচ কোটি টাকা। সে হিসাবে ২০ দশমিক ৩০ কাঠা জমির দাম বর্তমানে ১০০ কোটি টাকার বেশি। অথচ মূল্যবান বাড়িটি নামমাত্র মূল্যে বিক্রি হচ্ছে। এ জন্য বিপুল অংকের অর্থের লেনদেনও হয়েছে বলে সূত্র জানায়। ন্যাম সম্মেলনের অর্থ সংগ্রহের জন্য ২০০০ সালে গুলশান এবং ধানমণ্ডির ১৬টি পরিত্যক্ত সরকারি বাড়ি বিক্রির সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। বাড়িগুলো নিলামে বিক্রি করতে রাজউককে নির্দেশ দেয় মন্ত্রণালয়। সরকারের নির্দেশে রাজউক ২০০০ সালের ২১ নভেম্বর ১৬টি বাড়ির সঙ্গে ধানমণ্ডি ২ নম্বর সড়কের ২০ দশমিক ৩০ কাঠার ১৪৫/এ (নতুন-৩৩) নম্বর বাড়িটি বিক্রির জন্য কয়েকটি দৈনিকে বিজ্ঞপ্তি দেয়। বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর বাড়িটি কিনতে মেট্রো সার্ভিসেস লিমিটেড এবং ড্রাগ ইন্টারন্যাশনাল দরপত্র জমা দেয়। মেট্রো সার্ভিসেস লি. ৪ কোটি ১৬ লাখ ৫৫ হাজার ৬০০ টাকা দর দিয়ে সর্বোচ্চ দরদাতা বিবেচিত হয়। অন্যদিকে ৩ কোটি ৬ লাখ ৭৫ হাজার ৫৩৩ টাকা দর জমা দেয় ড্রাগ ইন্টারন্যাশনাল। দরপত্র যাচাই করে টেকনিক্যাল কমিটি বাড়িটির মূল্য নির্ধারণ করে ৪ কোটি ৪৫ লাখ ২০ হাজার টাকা। কিন্তু টেকনিক্যাল কমিটির নির্ধারিত দাম উপেক্ষা করে ২০০১ সালের ৩ জানুয়ারি টেন্ডার কমিটি মেট্রো সার্ভিসেসকে জমিসহ স্থাপনা বরাদ্দের সিদ্ধান্ত নেয় তাদের জমা দেওয়া দরেই। বিক্রির সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর ২০০১ সালের ১৫ জানুয়ারি রাজউক উলি্লখিত দামেই বাড়িটি বিক্রির সুপারিশসহ মন্ত্রণালয়ে পাঠায়। পরে মন্ত্রণালয় দরপত্রের যাবতীয় কাগজপত্র রাজউকের কাছে চেয়ে পাঠায়। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ মতো ২০০১ সালের ৪ মার্চ রাজউক পত্রিকায় প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তির কপি, টেন্ডারের তুলনামূলক বিবরণী এবং টেন্ডার কমিটির কার্যবিবরণী মন্ত্রণালয়ে পাঠায়। জমা দেওয়া দরপত্রে বাড়িটি বিক্রি করার বিষয়টি মন্ত্রণালয় অনুমোদনের পর ২০০১ সালের ১৯ এপ্রিল রাজউক মেট্রো সার্ভিসেসকে বরাদ্দপত্র দেয়। দরপত্রের সঙ্গে মেট্রো সার্ভিসেস ২৫ লাখ টাকা জামানত হিসেবে জমা দেয়। তাই বরাদ্দপত্রের শর্তানুসারে ২৫ লাখ টাকা জামানত বাদ দিয়ে বাকি ৩ কোটি ৯১ লাখ ৫৫ হাজার ৬০০ টাকা পরিশোধ করে মেট্রো সার্ভিসেস। জমির মোট মূল্যের ওপর ৩ শতাংশ হারে আরও ১২ লাখ ৪৯ হাজার ৬৬৮ টাকা পরিশোধ করে মেট্রো সার্ভিসেস। এর পর ২০০১ সালের ৫ জুলাই প্লটের দখল বুঝিয়ে দেয় রাজউক।

বিএনপি সরকার ক্ষমতায় আসার কিছু দিনের মধ্যেই ন্যাম সম্মেলন বাতিল করে। তখন বাড়িটির বরাদ্দও বাতিল করে দেয় গৃহায়ন মন্ত্রণালয়। এখন পর্যন্ত সেই বরাদ্দ বাতিলের আদেশ অব্যাহত রয়েছে। মেট্রো সার্ভিসেস প্লটের মূল্য বাবদ যে টাকা পরিশোধ করেছে, সেই টাকাও তুলে নেয়নি। মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর মেট্রো সার্ভিসেস বাড়িটি আবার কেনার জন্য চেষ্টা চালায়। সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে তারা বাড়িটি কেনার জন্য দেনদরবার করে। মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের পরামর্শে বাড়িটি কিনতে তারা রাজউকের কাছে আবার আবেদন করে। রাজউক আবেদনটি আবারও মন্ত্রণালয়ে পাঠায়। মন্ত্রণালয় কাগজপত্র পরীক্ষা করে দেখতে পায়, বাড়িটি বিক্রির ওপর থেকে এখনো নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হয়নি। কিন্তু নিষেধাজ্ঞা গোপন করেই মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা গত ৯ অক্টোবর বাড়িটি বিক্রির অনুমোদন দিতে আবেদনের সারসংক্ষেপ পাঠান মন্ত্রীর কাছে। নিষেধাজ্ঞাদেশ প্রত্যাহার না হওয়া সত্ত্বেও গৃহায়ন ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী বাড়িটি বিক্রি করতে অনুমোদন দেন।

মন্ত্রীর অনুমোদনের পর গৃহায়ন মন্ত্রণালয় চলতি মাসের শুরুর দিকে বাড়িটি মেট্রো সার্ভিসেস লিমিটেডকে বরাদ্দের জন্য রাজউককে নির্দেশ দিয়েছে। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ পাওয়ার পরই মেট্রো সার্ভিসেসকে বাড়িটি রেজিস্ট্রি করে দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। যে কোনো দিন বাড়িটির রেজিস্ট্রি এবং দখল বুঝিয়ে দেওয়া হতে পারে বলে সূত্র জানায়।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.