দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে 'আন্দোলন' এবং 'নির্বাচন' এই দুই ফর্মুলা সামনে রেখে এগুচ্ছে সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি। নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি হলে জোট করে ভোট করবেন সাবেক এ রাষ্ট্রপতি। আর বিএনপিসহ বড় দলগুলো নির্বাচনে না এলে সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করতে বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে যাবেন তিনি। এ অবস্থায় জাতীয় পার্টির শীর্ষ নেতারা তাকিয়ে আছেন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের দিকে। তিনি যে সিদ্ধান্ত নেবেন সেদিকেই যাবেন তারা।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য অ্যাডভোকেট কাজী ফিরোজ রশিদ বলেন, বর্তমান মহাজোট সরকারের আমলে জাতীয় পার্টি অনেক অবহেলা-বঞ্চনার শিকার হয়েছে। নেতা-কর্মীরা কেউ আর আওয়ামী লীগের সঙ্গে থাকতে চাচ্ছেন না। এ অবস্থায় আন্দোলন এবং নির্বাচন দুটোকেই সামনে রেখে এগুচ্ছে জাতীয় পার্টি। জানা যায়, নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি হলে জোট-মহাজোটের বাইরে আলাদা একটি জোট করে নির্বাচনে অংশ নেবে জাতীয় পার্টি। এ জোটের নাম হতে পারে 'তৃতীয় রাজনৈতিক শক্তি' বা 'বিকল্প শক্তি'। এ জন্য সমমনা এবং ইসলামী কয়েকটি দলের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। অতি সম্প্রতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ সাবেক রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক ডা. বদরুদ্দোজা চৌধুরীর বাসায় দীর্ঘ তিন ঘণ্টা বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী ও আ স ম আবদুর রবের সঙ্গে বৈঠক করেন। বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল বাসদ, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টিসহ বেশ কয়েকটি বাম দল ও জামায়াতবিরোধী কয়েকটি ইসলামী দল থাকবে এ জোটে। এদিকে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ গতকাল এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, দুই-একদিনের মধ্যেই আনুষ্ঠানিকভাবে মহাজোট ছাড়ার ঘোষণা দেওয়ার পাশাপাশি নতুন জোটের ঘোষণা দেবেন। এ ছাড়া জাতীয় নির্বাচনের জন্য ইশতেহার তৈরির কাজ চলছে দ্রুত গতিতে। পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য জিয়াউদ্দিন বাবলু এ ইশতেহার তৈরির নেতৃত্ব দিচ্ছেন। এ ছাড়া অধিকাংশ আসনে প্রার্থী বাছাইয়ের প্রাথমিক প্রক্রিয়া শেষ করে রেখেছেন। এদিকে বিএনপিসহ বড় রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনে অংশ না নিলে বা একতরফাভাবে আওয়ামী লীগ নির্বাচন করার চেষ্টা করলে এরশাদ নির্বাচনে অংশ নেবেন না, পাশাপাশি আন্দোলন করে নির্বাচন প্রতিহত করবেন।
কয়েকজন প্রেসিডিয়াম সদস্য জানান, আগামী সংসদ নির্বাচন নিয়ে চাপের মুখে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। দলের একাংশের নেতা-কর্মীরা জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানকে মহাজোট ছাড়ার জন্য অব্যাহতভাবে চাপের মুখে রেখেছেন। এরশাদ প্রকাশ্যে একাধিকবার মহাজোট ছাড়ার ঘোষণা দিলেও এ বিষয়ে এখনো কার্যকর উদ্যোগ নেননি। বরং নানা অজুহাতে সময়ক্ষেপণ করছেন। বিদ্যমান রাজনৈতিক সংকটে সরকার ও বিরোধী দলের দুই নেত্রীর সর্বশেষ সম্পর্ক কী দাঁড়ায় সেদিকেই তাকিয়ে রয়েছেন তিনি। মূলত চলমান আন্দোলন থেকে সুবিধা নেয়ার অপেক্ষায় রয়েছেন এরশাদ। এ জন্য পার্টির শীর্ষ প্রেসিডিয়াম সদস্যদের এরশাদ জানিয়েছেন, আন্দোলন এবং নির্বাচন দুটো প্রস্তুতিই তাদের রাখতে হবে। আন্দোলনের অংশ হিসেবে সর্বদলীয় সরকারে যাচ্ছেন না জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান। আন্দোলন শুরু হবে সংসদ ভেঙে দেওয়ার পর থেকে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক প্রেসিডিয়াম সদস্য জানান, জাতীয় পার্টি নির্বাচনের জন্য যেমন প্রস্তুত, অন্যদিকে আন্দোলনের জন্যও প্রস্তুত। জানতে চাইলে পার্টির মহাসচিব এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, জাতীয় পার্টি নির্বাচনের জন্যও সাংগঠনিকভাবে প্রস্তুত। নির্বাচনে যাওয়া না যাওয়ার বিষয়টি নির্ভর করছে পার্টি চেয়ারম্যানের ওপর। তার সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় নেতা-কর্মীরা। পার্টির চেয়ারম্যান যে সিদ্ধান্তই নেবেন নেতা-কর্মীরা তা বাস্তবায়ন করবেন।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।