আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

দেশজুড়ে রেড অ্যালার্ট বিজিবি মোতায়েন

দেশজুড়ে রেড অ্যালার্ট চলছে। সর্বোচ্চ সতর্কতায় রয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণাকে কেন্দ্র করে যে কোনো সময়ে যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় পুলিশ, র্যাব ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলো নিয়েছে সর্বোচ্চ প্রস্তুতি। এ ছাড়া নির্বাচনকে অবৈধ অস্ত্রমুক্ত রাখতে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে দেশব্যাপী শুরু হতে যাচ্ছে পুলিশের বিশেষ অভিযান। দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন ও জনমনে যে কোনো ধরনের ভীতি ও অনিশ্চয়তা দূর করতে দেশব্যাপী এ অভিযানের বিষয়ে পুলিশ বাহিনীকে বিশেষ নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা বলেছে, জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয় গতকাল। আর এই তফসিল ঘোষণাকে কেন্দ্র করে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির আশঙ্কা করে ইতোমধ্যে গোয়েন্দারা তাদের একাধিক প্রতিবেদন দিয়েছে। এ অবস্থায় ঢাকাসহ দেশের প্রতিটি জেলার নির্বাচন কমিশন কার্যালয় ও বিচারপতি, মন্ত্রীদের বাসভবন, সচিবালয়সহ জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোর নিরাপত্তায় মোতায়েন করা হয়েছে অতিরিক্ত ফোর্স। নির্বাচন কমিশনের চাহিদা অনুযায়ী পুলিশ ও র্যাব নিরাপত্তা নিশ্চিতের সব আয়োজন সম্পন্ন করেছে। তবে তফসিল ঘোষণার সময় যত ঘনিয়ে আসতে থাকে সাধারণ মানুষের মধ্যে উদ্বেগ উৎকণ্ঠা বাড়তে শুরু করে। সন্ধ্যায় তফসিল ঘোষণার পর রাজধানী ফাঁকা হতে শুরু করে। অজানা আশঙ্কায় মানুষ ছুটতে থাকে নিজ নিজ গন্তব্যে। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বোমাবাজি ও ভাঙচুরের খবর পাওয়া গেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে রাতে বিজিবি নামানো হয়েছে।

পুলিশ কর্মকর্তারা চলমান এই সময়কে বিগত দিনগুলোর চেয়ে অধিক স্পর্শকাতর ও গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন। যে কারণে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পুলিশকে নানা কৌশল নিতে হয়েছে। এ নিয়ে পুলিশ সদর দফতরে দফায় দফায় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার অভিযানে পুলিশ, র্যাব ও আনসার বাহিনীর সঙ্গে অন্য কোনো বাহিনীকে সংযুক্ত করা হবে কি-না তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি বলে পুলিশ সদর দফতর সূত্রে জানা গেছে।

জেলার একজন পুলিশ সুপার (এসপি) জানান, আমরা সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থায় থাকার নির্দেশ পেয়েছি। কোনোভাবেই যেন কোনো এলাকায় বিশৃঙ্খল কর্মকাণ্ড না ঘটে, সে ব্যাপারে সজাগ থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদেরও পর্যবেক্ষণে রাখার নির্দেশ পেয়েছি। অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার অভিযান চালানোর প্রস্তুতি হিসেবে অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী, জঙ্গি, মাদকব্যবসায়ীদের নামের তালিকা হালনাগাদ করা হয়েছে।

পুলিশের আইজি হাসান মাহমুদ খন্দকার বলেন, জানমাল রক্ষায় পুলিশের ওপর অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করবে পুলিশ সদস্যরা। জননিরাপত্তা বিঘ্নকারী অপরাধীদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি বলেন, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার অভিযান পুলিশের নিয়মিত কাজের একটি অংশ। প্রতিনিয়ত পুলিশের এই অভিযান চলছে। তবে সময় বিবেচনায় অনেক সময় গতি বাড়ানো হয়।

পুলিশ সদর দফতর সূত্র জানায়, তফসিল ঘোষণাকে কেন্দ্র করে দেশের সবগুলো জেলা শহরেই অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। সঙ্গে রয়েছে আনসার সদস্য। আর্মড ফোর্সেস ব্যাটালিয়নের বেশির ভাগ সদস্যকেই ফিল্ডে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। স্ট্যান্ডবাই রাখা হয়েছে রিজার্ভ পুলিশ। যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় সদাসতর্ক রয়েছে নিরাপত্তাকর্মীরা। বাংলাদেশ টেলিভিশন ভবন, বেতার ভবন, কমলাপুর রেলওয়ে, সচিবালয় এলাকা, কূটনৈতিক এলাকা, সরকারি-বেসরকারি গুরুত্বপূর্ণ অফিস, বিদ্যুৎকেন্দ্র, বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা, বাস, লঞ্চ টার্মিনাল ও ভিআইপি এলাকাসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোয় নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। ইউনিফর্ম পরা পুলিশের পাশাপাশি সাদা পোশাকের গোয়েন্দা সদস্যরাও নিয়মিত টহল দেবে। সূত্র জানায়, পুলিশের পাশাপাশি টহলে থাকবে র্যাবের টিমগুলো। ওই সময়ে এ কাজেই তাদের মনোযোগ বেশি দেওয়ার নির্দেশ রয়েছে।

সূত্র মতে, পুলিশ সদর দফতর থেকে দেশের সবগুলো জেলার পুলিশ সুপারের কাছে একটি ফ্যাঙ্বার্তা পাঠানো হয়েছে। বার্তায় মিছিল, মিটিং ও নাশকতা রোধে তাদের বিশেষভাবে সতর্ক থাকার আদেশ দেওয়া হয়। অস্থিতিশীল কর্মকাণ্ড ঠেকাতে প্রয়োজনে যে কোনো পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার অভিযান : অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার এবং জঙ্গি, সন্ত্রাসী, মাদক ব্যবসায়ী ও পলাতক আসামি গ্রেফতারে দেশব্যাপী শুরু হচ্ছে পুলিশের বিশেষ অভিযান। এ অভিযান চলবে ডিসেম্বর মাসজুড়েই। জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত চলবে এই বিশেষ অভিযান। তবে পুলিশের এই বিশেষ অভিযানের কর্মকৌশল এখনো চূড়ান্ত না হলেও প্রস্তুত নিয়ে থাকতে বলা হয়ে জেলার পুলিশ সুপারদের। জানা গেছে, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে দেশব্যাপী আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সর্বশেষ অভিযান হয় ২০০৮ সালে। ওই বছরের ২৮ মে থেকে শুরু হওয়া মাসব্যাপী অভিযানে গ্রেফতার হয় ৫০ হাজার ২১৫ জন। একই সময়ে ২৫২৯ রাউন্ড গুলিসহ ৩৯৮টি অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করা হয়। এর পর সারা দেশে আর অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে কোনো বিশেষ অভিযান পরিচালিত হয়নি। গোয়েন্দাদের তথ্য মতে, সারা দেশে অপরাধীদের হাতে ছড়িয়ে পড়েছে অবৈধ অস্ত্র। শিক্ষাঙ্গনে সন্ত্রাস থেকে শুরু করে চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, সংঘর্ষ এমনকি রাজনৈতিক কর্মসূচিগুলোতে অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহার দেখা গেছে। প্রচুর অবৈধ অস্ত্র ছড়িয়ে পড়েছে সারা দেশে। পুলিশের একজন পদস্থ কর্মকর্তা জানান, ঘোষণা দিয়ে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার অভিযানের অতীত ইতিহাস খুব একটা ভালো নয়। যে কারণে অভিযানের আগে এবার তারা হাঁকডাক করতে চাচ্ছে না। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যেই পুলিশ এই অভিযান শুরু করবে।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.