অবরোধ ঘোষণার দুই দিন আগে ঢাকা মহানগরীতে আন্দোলন জোরদার করতে সিনিয়র আট নেতাকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। বিরোধীদলীয় নেতার নির্দেশনায় দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর স্বাক্ষরিত একটি চিঠিও প্রত্যেককে দেওয়া হয়। কিন্তু প্রথম দফার ৪৮ ঘণ্টার অবরোধের দ্বিতীয় দিন পর্যন্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত একজন নেতা ছাড়া কাউকে মাঠে দেখা যায়নি। অবরোধ আজ আরও ১২ ঘণ্টা বাড়ানো হয়েছে। শুধু মাঠে নয়, অধিকাংশ নেতাই ব্যক্তিগত মোবাইল ফোন বন্ধ রেখেছেন। তৃণমূল নেতা-কর্মীদের সঙ্গেও যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। নিজ বাসা ছেড়ে অন্যত্র রাতযাপন করছেন বলেও পরিবার থেকে জানা গেছে। এ নিয়ে মাঠ পর্যায়ের নেতা-কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে হতাশা লক্ষ্য করা গেছে। তবে যে আট নেতাকে দায়িত্ব দেওয়া হয় তার মধ্যে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য হান্নাহ শাহ গ্রেফতার হয়ে কারাগারে আছেন। তাকে কাফরুল, ক্যান্টনমেন্ট ও গুলশানের আন্দোলনের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য মির্জা আব্বাসকে মতিঝিল, খিলগাঁও ও সবুজবাগের দায়িত্ব দেওয়া হয়। মোহাম্মদপুর, আদাবর, দারুসসালামের দায়িত্ব পেয়েছেন স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। তেজগাঁও এবং বনানীর দায়িত্ব পেয়েছেন স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান। ঢাকা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক সাদেক হোসেন খোকাকে সূত্রাপুর, কোতোয়ালি, বংশাল, গেণ্ডারিয়া ও ওয়ারীর দায়িত্ব দেওয়া হয়। আমানউল্লাহ আমানকে দায়িত্ব দেওয়া হয় লালবাগ, নবাবগঞ্জ ও হাজারীবাগ আর বরকতউল্লা বুলু এমপিকে উত্তরা, উত্তরখান ও দক্ষিণখান থানা এবং সালাহউদ্দিন আহমেদকে ডেমরা, শ্যামপুর, যাত্রাবাড়ী ও কদমতলীর দায়িত্ব দেওয়া হয়। ওইসব এলাকার বিএনপি, ছাত্রদল, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দলসহ সব অঙ্গ সংগঠন এবং গত নির্বাচনে যারা মনোনয়ন পেয়েছেন তাদের সঙ্গে নিয়ে আন্দোলনের দায়িত্ব দেওয়া হয় উল্লেখিত নেতাদের। দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের সহযোগিতা করতে নেতা-কর্মীদেরও নির্দেশ দেওয়া হয়। অবরোধের প্রথম দিন রাজধানীর আমিনবাজারে বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব আমানউল্লাহ আমানকে প্রায় এক ঘণ্টা নেতা-কর্মীদের নিয়ে মহাসড়কে অবস্থান করতে দেখা যায়। এ সময় পুলিশের সঙ্গে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনাও ঘটে। এতে প্রায় অর্ধশতাধিক নেতা-কর্মী আহত হন। বাকি ছয় নেতাকে গত দুই দিন মাঠে দেখা যায়নি। এ বিষয়ে বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, পুলিশের মারমুখী আচরণ ও গুলির কারণে রাজধানীতে নেতা-কর্মীরা কোথাও দাঁড়াতেই পারছেন না। এর পরও রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে নেতা-কর্মীরা মাঠে নেমে অবরোধ কর্মসূচি পালন করছেন। ঢাকার ৮৭ নম্বর ওয়ার্ড পর্যায়ের এক নেতা জানান, খালেদা জিয়ার নির্দেশে বিএনপির দায়িত্ব পাওয়া নেতাদের মাঠের অনুপস্থিতির কারণে তৃণমূলেও চেইন অব কমান্ড নেই। আন্দোলনে হামলা-মামলায় তৃণমূল নেতা-কর্মীদের খোঁজখবর না নেওয়ায় তারা মাঠে নামতে নারাজ। অনেকে জেলে থাকলেও আর্থিক সহযোগিতা দূরের কথা অনেককে আইনগত সহায়তা করছে না কেন্দ্র। তাই মাঠের কর্মীরা ঝুঁকি নিতে নারাজ। এদিকে, বিগত হরতালগুলোয় নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অবস্থান করতেন দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। অবরোধ ঘোষণার পর কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলের মুখপাত্রের দায়িত্ব পালন করছেন রিজভী আহমেদ। তিনি জানান, ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের সঙ্গে তার সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রয়েছে। মির্জা ফখরুলের সঙ্গে পরামর্শ করেই সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। অবরোধের দ্বিতীয় দিনেও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান, ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার, ড. আবদুল মঈন খান, অধিকাংশ ভাইস চেয়ারম্যান, উপদেষ্টা পরিষদের কাউকেই মাঠে দেখা যায়নি। দলের যুগ্ম-মহাসচিব, আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদকসহ বিভিন্ন সম্পাদকীয় পর্যায়ের নেতার অধিকাংশই ঢাকায় অবস্থান করলেও তাদের অবস্থান জানেন না নেতা-কর্মীরা। অধিকাংশ নেতা ব্যক্তিগত মোবাইল ফোন বন্ধ রেখে বাসা ছেড়ে অন্যত্র রাতযাপন করছেন। বিএনপির অঙ্গ সংগঠনের নেতাদেরও একই অবস্থা। ঢাকা মহানগর বিএনপি বিশেষ করে ২১ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি, সাবেক ওয়ার্ড কাউন্সিলর, থানা ও ওয়ার্ড বিএনপির নেতারাও আন্দোলনের মাঠে অনুপস্থিত। জানা গেছে, রাজধানীর বাইরে অবরোধে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ১৮-দলীয় জোটের অংশগ্রহণে বিরোধীদলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়া সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তবে ঢাকায় বিএনপিসহ ১৮ দলের নেতাদের পারফরম্যান্সে নাখোশ তিনি।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।