আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে : আমু

ভূমি, দুর্যোগ ও ত্রাণ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রী আমির হোসেন আমু বলেছেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নতির দিকে। ক্রমান্বয়েই আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পরিস্থিতি নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিচ্ছে। একই সঙ্গে তিনি বলেন, বিরোধী দলের অবরোধে জনগণের কোনো সাড়া নেই। নির্বাচনও যথাসময়ে অনুষ্ঠিত হবে। গতকাল আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত মন্ত্রিসভার কমিটির ১৭তম বৈঠক শেষে এসব কথা বলেন এ কমিটির সভাপতি আমির হোসেন আমু। এটি হচ্ছে নির্বাচনকালীন মন্ত্রিসভা গঠনের পর আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির প্রথম সভা। গতকালের সভায় বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং বিরোধী দলের সহিংসতা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হয়। বিভিন্ন সংস্থা তাদের প্রতিবেদন উপস্থাপন করে। সভায় সবকিছু বিশ্লেষণ করে মন্ত্রিসভা কমিটি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে কঠোর হওয়ার পাশাপাশি বেশকিছু দিকনির্দেশনা দেয়। একই সঙ্গে সামাজিক সচেতনতা তৈরির মাধ্যমে প্রতিরোধ গড়ে তোলার কথা বলা হয়। ভোটকেন্দ্রভিত্তিক কমিটি গঠন করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সহযোগিতারও নির্দেশ দেওয়া হয়। এ ছাড়া রেলপথ নিরাপদ ও সচল রাখতে রেল মন্ত্রণালয়কে পরামর্শ দেওয়া হয়। আলোচনা হয় মিডিয়ার প্রচার-প্রচারণা নিয়েও। স্পর্শকাতর স্থান বা এলাকা নিয়েও নির্দেশনা দেওয়া হয়। এসব তথ্য জানা গেছে বৈঠকে উপস্থিত একাধিক সূত্র থেকে। গতকালের বৈঠকে আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সদস্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন শিল্প এবং গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, পাটমন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকী, রেলপথ মন্ত্রী মুজিবুল হক, ডাক, তার ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, পরিবেশ ও বনমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, আইন প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট শামসুল হক টুকু, মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসাইন ভূঁইঞা, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব সি কিউ কে মুসতাক আহমদ, ডিজিএফআই, এনএসআই, এসবি, বিজিবি, পুলিশ ও র্যাবের প্রধানরা। বৈঠক শেষে সংক্ষিপ্ত সংবাদ সম্মেলনে আমির হোসেন আমু বলেন, গতকালও ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে দূরপাল্লার দুই হাজার যানবাহন চলাচল করেছে। কিন্তু সেই খবর সংবাদ মাধ্যমে আমরা দেখলাম না। কিন্তু আমরা দেখলাম নয়টি গাড়ি কোথায় পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে সেই খবর। তিনি বলেন, আমরা কি দেশে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি আরও সৃষ্টি হোক সেটাকে উৎসাহিত করতে চাই, নাকি দেশের মানুষ শান্তিতে বসবাস করুক, গণহত্যা বন্ধ হোক সেটা চাই। এটা আমাদের সবাইকে একটু বিবেচনায় আনা উচিত। তিনি বলেন, সত্যটা যদি সবাই প্রকাশ করি তাহলে সেটা দেশের জন্য মঙ্গলজনক হবে এবং দেশবাসী উপকৃত হবে। তিনি বলেন, সাংবাদিকদের আগাম জানিয়ে বিভিন্ন স্থানে বোমাবাজি ও গাড়িতে আগুন দেওয়ার ঘটনা প্রকাশ করা হয়। তিনি বলেন, আপনারা সবাই বিবেকবান, সচেতন। তাই যেটুকু সত্য সেটা প্রচার করুন। তিনি বলেন, সাতক্ষীরা, সীতাকুণ্ডসহ দেশের যেসব এলাকায় দুষ্কৃতকারীরা অবরোধের নামে রাস্তাঘাট কেটে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে সেগুলোর পরিস্থিতি ক্রমান্বয়ে উন্নতি হচ্ছে। মন্ত্রী বলেন, সারা দেশে তিন হাজার কিলোমিটার রেলপথ। গহিন জঙ্গল থেকে শুরু করে অনেক জায়গায় আছে জনবলসহ বিভিন্ন সমস্যার কারণে যেখানে সবসময় নিরাপত্তা দেওয়া সম্ভব হয় না। তারপরও আমরা নিরাপত্তা দেওয়ার চেষ্টা করেছি। এখন অবস্থার অনেক উন্নতি হয়েছে। তিনি বলেন, সারা দেশের সঙ্গেই ঢাকার সড়ক যোগাযোগ মোটামুটি স্বাভাবিক হয়ে আসছে। এ ধরনের একটা পরিস্থিতি দেশে আসবে সেটা কারও জানা ছিল না বলে মন্তব্য করেন আমির হোসেন আমু। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে শিল্পমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, বিরোধী দল আন্দোলন করে নির্বাচন বানচালের চেষ্টা করেছে বা এখনো করছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে দক্ষতা ও সততার সঙ্গে পরিস্থিতি সামাল দিতে বলা হয়েছে। যেভাবে আগে করেছেন, সামনেও এভাবে করবেন। তিনি বলেন, সন্ত্রাসীদের টার্গেট ছিল ২ ডিসেম্বর, অথচ ওই দিন ১১০৮ জন প্রার্থী নমিনেশন পেপার জমা দেওয়ায় এটা প্রমাণিত হয়েছে বিরোধী দলের আন্দোলন ব্যর্থ হয়েছে। তিনি বলেন, আশা করি নির্বাচনও যথাসময়ে অনুষ্ঠিত হবে। এদিকে বৈঠকে উপস্থিত একাধিক সূত্র জানায়, গতকালের বৈঠকে সার্বিক পরিস্থিতি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে আলোচনা হয়েছে। এতে গোয়েন্দা সংস্থার প্রধানরা নিজেদের প্রতিবেদন তুলে বলেছেন, পরিস্থিতি আগের চেয়ে অনেক ভালো। উন্নতির দিকে। গোয়েন্দা প্রতিবেদন উপস্থাপনের পর সভায় অংশ নেওয়া মন্ত্রীরা বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি পরিস্থিতি মোকাবিলায় স্থানীয় জনসাধারণের বিশেষ করে আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ-সংগঠনগুলোর নেতা-কর্মীদের সহযোগিতা ও সম্পৃক্ততা দরকার। এ জন্য এখনোই ভোটকেন্দ্রভিত্তিক কমিটি গঠন করে এসব কমিটির মাধ্যমে প্রতিরোধ গড়ে তোলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সহযোগিতার কথা বলেন মন্ত্রীরা। এর পাশাপাশি মানুষের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলার বিষয়েও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় সভায়। বৈঠকে দেওয়া তথ্যানুযায়ী দেশের ৬১টি উপজেলায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে বলে জানান বৈঠকে উপস্থিত একজন কর্মকর্তা। নাম প্রকাশে অনচ্ছিুক ওই কর্মকর্তা বলেন, নিরাপত্তা জোরদার করার পাশাপাশি যে কোনো মূল্যে সহিংসতাকারীদের প্রতিরোধ করার নির্দেশও দেওয়া হয়। রেলপথের এক হাজার ৪১টি পয়েন্টকে ঝুঁকিপূর্ণ চিহ্নিত করে এসব পয়েন্টে নিরাপত্তা জোরদার করার ওপরও গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া নির্দিষ্ট গন্তব্যে যাত্রার আগে ট্রলি পাঠিয়ে লাইন ঠিক আছে কিনা জেনে নেওয়া এবং ট্রেনের ইঞ্জিনের সামনে দুই থেকে তিনটি কনটেইনার বহনকারী ট্রলি রাখারও পরামর্শ দেওয়া হয় রেল মন্ত্রণালয়কে। বৈঠকে উপস্থিত আইনশৃঙ্খলা কমিটির সদস্য পরিবেশ ও বনমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, পরিস্থিতির উন্নয়নে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে কঠোর হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে নির্দিষ্ট কিছু জেলা ও উপজেলা যেখানে সহিংসতা বেশি হচ্ছে সেসব জায়গায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সর্বোচ্চ কঠোর হতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তিনি আরও জানান, আন্দোলনকারীদের টার্গেট ছিল মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার দিনে বড় ধরনের সহিংসতা বিশেষ করে নির্বাচন অফিস পুড়িয়ে দেওয়াসহ সহিংস অবস্থা সৃষ্টি করা। কিন্তু তাদের সে পরিকল্পনা ব্যর্থ করে দেওয়া হয়েছে। হাছান মাহমুদ আরও জানান, সাইবার অপরাধের বিষয়টিও বৈঠকে গুরুত্ব পেয়েছে। বিশেষ করে বিভিন্ন ওয়েবসাইটের মাধ্যমে বোমা বানানো, কোথায় কোথায় কীভাবে বোমা নিক্ষেপ করতে হবে, সহিংসতা করতে হবে সেগুলো বলে দেওয়া হচ্ছে। এটা প্রতিরোধে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ারও সিদ্ধান্ত হয়।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.