||জনৈক বোকা পিতার নিষ্কর্মা ছেলে||
-তাহমিদ উল্লাস
১.
চোখ খুলে দেখি সাড়ে বারোটা বাজে। সকালে দেড়ি করে ওঠা মা কখোনোই পচ্ছন্দ করে না। কিন্তু তার নিষ্কর্মা ছেলেকে ডেকে তোলার কোনো প্রয়োজন বোধ করে না। আজ প্রয়োজন ছিল কারণ ইন্টারভিউ আছে। চাকরীটা এবার হয়েই যাবে মনে হচ্ছে।
(প্রতিবারই মনে হয়। আমার সিক্সথ সেন্স জঘন্য) সযতনে তুলে রাখা ইন্টারভিউ ইউনিফর্মটা বের করে পড়ে নিলাম। টাইটা পাচ্ছি না। জুতোও পলিশ করা নেই। ইন্টারভিউ বোর্ডে এ নিয়ে কিছু না কিছু বলবেই।
বারোটায় ছিল ইন্টারভিউ। তড়িঘড়ি করে রিকশা নিয়ে ইন্টারভিউ অফিসে গেলাম। বিশ টাকা দেয়া লাগল দশ টাকার পথ। বাজারে চাল-ডালের দাম যে হারে বাড়ে রিকশা ভাড়া বাড়ে তার দ্বিগুণ হারে। অফিসে গিয়ে দেখি এতক্ষণে মাত্র একজনকে ডাকা হয়েছে ভেতরে।
বাংলাদেশে জন্মগ্রহণের জন্য নিজেকে ধন্যবাদ দিলাম। হঠাৎই ক্ষুধা লাগল। নাস্তা করার টাকা ছিল না তাই করি নি। এই দুস্থের আর্জি শুনে খোদা চা বিস্কিট পাঠালো। প্লেটের সব বিস্কিট একাই সাবড়ে দিলাম।
পাশের ছেলেটা কোন ফাঁকে যেন একটা নিয়েছিল ওটাও দিয়ে দিল। বিনাদ্বিধায় ওটাও খেলাম। যাই হোক অবশেষে আমার ডাক এল।
২.
সালাম দিয়ে দাড়িয়ে রইলাম।
হোৎকা মতন লোকটা বসতে বলল।
তার পাশের জনের মাথায় এক গাছি চুল মাত্র।
হোৎকা লোক - নাম?
আমি-আরণ্যক ইসলাম।
হোৎকা লোক - রেজেল্ট?
আমি -একাউন্টিংএ অনার্স,মাস্টার্স।
এক গাছি চুল -রেজাল্ট তো ভালই।
আমি -জ্বি স্যার।
আল্লাহর রহমত।
এক গাছি চুল -বাবা কি করেন?
আমি -করতেন। সরকারি চাকুরী
এক গাছি চুল - ভাল তো। তাহলে তোমার এ অবস্থা কেন? টাই কই?
আমি -স্যার জানেনই তো সরকারি চাকুরীতে বেতন ভাল না।
হোৎকা লোক -তাতে কি? বোনাস তো আছে।
আমি -আমার বাবা তো কাজকর্মে ভাল ছিল না তাই বোনাস পেত না।
এক গাছি চুল -হুমম্। আচ্ছা বল ,পৃথিবীতে যার ভর 40কেজি চাঁদে তার ভর কত?
আমি -স্যার আমি একাউন্টেন্টের পদের জন্য আসছি।
হোৎকা লোক -বেয়াদব ছেলে! জানলে বলবা নাইলে নাই। রাবিশ্!
আমি -জানা নাই স্যার।
এক গাছি চুল -সেইটা আগেই বুঝছিলাম।
হোৎকা লোক - আচ্ছা বল, বাতাস কি পদার্থ?
আমি -বায়বীয় পদার্থ।
হোৎকা লোক -গর্দভ! মিশ্র পদার্থ।
আমি -স্যার, বায়বীয় পদার্থও তো হয়।
এক গাছি চুল -এই ছেলে তুমি এত বেশি কথা বল কেন? কম কথা বলবা।
আমি -জ্বি স্যার।
এক গাছি চুল -উপরের লেভেলের কারো সাথে জানাশোনা আছে?
আমি -থাকলেতো এতক্ষণে ফোন পাইতেন।
হোৎকা লোক -এই ছেলে এত কথা প্যাচাও ক্যান?কিছু পার না,উপরের লেভেলে যোগাযোগ নাই। তোমার তো কিছু খরচ করতে হবে।
আমি -স্যার আমার রেজাল্ট ভালো তো….
হোৎকা লোক -অই মিঞা, রেজাল্ট ধুইয়া পানি খাও গিয়া।
চাকরী পাইতে হইলে ৫লাখ দেয়া লাগবে। পারলে কালকে নিয়া আইস নাইলে এখনি রাস্তা মাপো।
আমি আমার কাগজ-পত্র গুছিয়ে আক্ষরিক অর্থেই রাস্ত মাপতে বের হলাম।
৩.
রাস্তা মাপতে মাপতে বাসায় যাচ্ছি। নিজের ওপরের চেয়ে বাবার ওপর রাগ বেশি হচ্ছে।
মরা মানুষের ওপর রাগ করা ঠিক না। তারপরও হচ্ছে। মা-বাবর ঝগড়া হলেই মা বলত-”এক বেকুব লোকের সাথে সংসার করি। ” নাহ্ মা ঠিকই বলত। আমার বাবা খালি ঘ্যনর ঘ্যনর করত-”বুঝলি আরণ্যক,না খাইয়া মারা যাব কিন্তু ঘুষ খেয়ে নিজের সততা নষ্ট করব না।
” আমার বাবা বোকা ছিল তাই এমন ভাবছে। সৎ ছিল বইলাই আগে আগে ওই পারে গেছে। যদিও না খাইয়া মারা যায় নাই। তবে তার একমাত্র ছেলেকে সেই পথেই ঠেলে দিয়ে গেছে। নাহ্, আমার ছেলেকে আমি এই সুযোগ দেব না যে বলবে তার বাবা বেকুব ছিল।
খালি চাকরী পাইয়া নেই!
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।