বন বিভাগের অনুমতি ছাড়াই বরিশাল-ভোলা সড়কের দুই পাশের সরকারি গাছ কাটা হচ্ছে। সড়ক ও জনপথ বিভাগের এক উপসহকারী প্রকৌশলীর যোগসাজশে স্থানীয় এক ব্যক্তি গাছগুলো কাটছেন বলে এলাকাবাসী অভিযোগ করেছেন।
কয়েক দিন আগে নয়টি গাছ কাটা হয়েছে। আর গত দুই মাসে দুই শতাধিক গাছ কাটা হয়েছে।
এলাকাবাসীর অনেকে জানান, ১৭ বছর আগে সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের তত্ত্বাবধানে ১৭ কিলোমিটার দীর্ঘ বরিশাল-ভোলা সড়কের ১০ কিলোমিটারে শিশু, রেইনট্রি, চাম্বল, মেহগনি প্রজাতির দেড় সহস্রাধিক গাছের চারা লাগানো হয়।
কয়েক বছর ধরে স্থানীয় লোকজন সড়কের পাশ থেকে গাছ কেটে নিয়ে যাচ্ছেন। গত রোববার সড়কের সাহেবহাট বাজার এলাকার দুই পাশের ১৪টি গাছ কাটা হয়। সাহেবহাট বাজার কমিটির সাধারণ সম্পাদক লিখন খান গাছগুলো স্থানীয় নুরুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তির কাছ থেকে কিনে নিয়েছেন।
নুরুল ইসলাম বলেন, ‘আমি সড়ক ও জনপথ বিভাগ থেকে ওই সড়কের দুই পাশের জমি ৩০ বছরের জন্য লিজ নিয়ে সেখানে পাঁচ সহস্রাধিক গাছের চারা লাগিয়েছি। সেখান থেকে মাত্র ১০টি গাছ বিক্রি করেছি।
’
কী শর্তে ইজারা নিয়েছেন—জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘গাছ লাগিয়ে রক্ষণাবেক্ষণ করা বাবদ আমি গাছ বিক্রির অর্ধেক টাকা পাব। বাকি অর্ধেক সওজ পাবে। ’ অর্ধেক টাকা দিয়েছেন কি না—জানতে চাইলে তিনি জানান, কিছুদিন আগে তারা (সওজ) ৬০টি গাছ কেটে নিয়েছে। তখন তারা তাঁকে গাছ বিক্রির অর্ধেক টাকা দেয়নি।
তবে উপসহকারী প্রকৌশলী সোলায়মান তাঁকেও ৬০টি গাছ কেটে নেওয়ার জন্য বলেছেন।
সওজের বরিশাল কার্যালয়ের উপসহকারী প্রকৌশলী সোলায়মান বলেন, ‘৩০ বছর ইজারা দেওয়া বিষয়টি সঠিক নয়। আমরা কয়েকটি গাছ এনেছি। কিন্তু সেই জন্য ৬০টি গাছ কেটে নিতে বলেছি, এটাও সঠিক নয়। ’ তিনি গাছ কাটার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
বরিশাল বিভাগীয় বন কর্মকর্তা গোলাম কুদ্দুস ভূঁইয়া বলেন, বনজদ্রব্য পরিবহন ও নিয়ন্ত্রণ বিধিমালার ৫ ধারা অনুযায়ী বন বিভাগের নিয়ন্ত্রণাধীন নয় বা বন বিভাগের সামাজিক বনায়ন কর্মসূচির আওতাভুক্ত নয়।
সড়ক ও জনপথ, রেলপথ, বাঁধ, সংযোগ সড়ক, জেলা পরিষদ সড়ক, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের সড়কসহ অন্যান্য সরকারি ভূমি থেকে বনজদ্রব্য আহরণ, অপসারণ বা পরিবহনের প্রয়োজন হলে জেলা বা বিভাগীয় বন কর্মকর্তা বরাবর ফরম-৩-এ আবেদন করতে হবে। কিন্তু এখানে এই আইন কেউ মানছে না।
সাহেবহাট বাজার কমিটির সাধারণ সম্পাদক লিখন খান বলেন, ‘গাছ আমাদের, ঘর আমাদের। তার পরও আমরা গাছ কিনে তারপর কেটেছি। সড়ক ও জনপথ বিভাগের উপসহকারী প্রকৌশলী মো. সোলায়মানের অনুমতিসহ মো. নুরুল ইসলামের কাছ থেকে তিন হাজার টাকায় গাছ কেনা হয়েছে।
’
সওজের বরিশাল কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী খালেদ শাহেদ বলেন, ‘গাছ কাটা বা অন্যকে কেটে নিতে বলার এখতিয়ার আমাদের নেই। ’ বন বিভাগের অনুমতির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘অনুমতি নেওয়ার বিষয়টি আমাদের জানা নেই। ’
বরিশালের সদর উপজেলা বন কর্মকর্তা এমাদুল হক জানান, বরিশাল-ভোলা সড়ক থেকে বিভিন্ন সময়ে গাছ কাটা হলেও বন বিভাগের কোনো অনুমতি নেওয়া হয় না। গত কয়েক দিনে লক্ষাধিক টাকার গাছ কাটা হয়েছে।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।