মহান শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসেও গতকাল সহিংসতা চালিয়েছে জামায়াত-শিবির। বিভিন্ন স্থানে ১৮ দলের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষ হয়েছে। এর মধ্যে নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে ছয়জন নিহত হয়েছেন। নিহতরা হলেন- আবদুস সাত্তার (২৪), সাইফুল ইসলাম (৩২), মতিউর রহমান (২২), সজীব (২২), রাসেল (২৫), রায়হান (২১)। শিবিরের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, নিহতরা সবাই তাদের কর্মী।
আর নীলফামারীতে আওয়ামী লীগ এবং ১৮ দলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষে তিনজন নিহত হয়েছেন। নিহতরা হলেন_ সদর উপজেলার টুপামারী ইউনিয়ন কৃষক লীগ সভাপতি খোরশেদ আলম চৌধুরী (৫০), উপজেলা যুবলীগ কর্মী ফরহাদ হোসেন (২৬) ও লক্ষ্মীচাপ ইউনিয়ন ওয়ার্ড বিএনপির সদস্য সিদ্দিক (৪২)। তবে সিদ্দিককে নিজেদের কর্মী হিসেবে দাবি করেছে জামায়াত। নীলফামারীতে মূলত সংসদ সদস্য আসাদুজ্জামান নূরের গাড়িবহরে হামলা চালানোর সময় ওই সংঘর্ষ বাধে। অবশ্য আসাদুজ্জামান নূরকে অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে।
কোম্পানীগঞ্জে পুলিশের সঙ্গে জামায়াত-শিবিরের সংঘর্ষ, নিহত ৬ : বেলা সোয়া ৩টার দিকে জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা বসুরহাট মডেল উচ্চবিদ্যালয়ের পাশ থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করে। মিছিলটি উপজেলা সার্ভার স্টেশনের কাছে গেলে পুলিশ তাদের বাধা দেয়। এতে উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। সংঘর্ষ চলে সন্ধ্যা প্রায় ৬টা পর্যন্ত। এ সময় জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা বেশ কয়েকটি ভবনে আগুন ধরিয়ে দেয়।
একপর্যায়ে দুই পক্ষই গুলি ছুড়লে পুলিশের দুজন কনস্টেবলসহ বেশ কয়েকজন গুলিবিদ্ধ হন। এ সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে ছয়জনের মৃত্যু হয় এবং অন্তত ৪০ জন আহত হন। নিহতদের মধ্যে মতিউর রহমান সজীব ও সাইফুল ইসলামের লাশ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেঙ্ েনেওয়া হয়েছে বলে জানান জরুরি বিভাগের চিকিৎসক রাশিদুল ইসলাম। শিবিরের পক্ষ থেকে আরও দাবি করা হয় পুলিশের গুলিতে তাদের মোট সাতজন কর্মী নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে মতিউর, আবদুস সাত্তার ও সজীবের লাশ থানায় আছে।
সংঘর্ষে ৫ পুলিশ গুলিবিদ্ধসহ আহত হয়েছে অন্তত ২৫ জন। আহতদের কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। এদিকে স্থানীয় লোকজন জানান, জামায়াত-সমর্থকদের পরিচালিত বসুরহাট মডেল উচ্চবিদ্যালয়ে আগুন ধরিয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা। এতে স্কুলটি সম্পূর্ণ পুড়ে যায়। একপর্যায়ে বসুরহাট বাজার ও আশপাশের এলাকায় ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে।
এ সময় অতিরিক্ত পুলিশ ও বিজিবি সদস্যরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। সংঘর্ষ চলাকালে ওই সময় জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা উপজেলা ভূমি অফিস ও জনস্বাস্থ্য অফিসে আগুন ধরিয়ে দেয়। এ ছাড়াও ১৫টি দোকানপাটে অগি্নসংযোগ করে। এ ঘটনায় ৫ শিবির কর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। নোয়াখালী শহর শিবিরের সভাপতি নেয়ামত উল্যাহ শাকের বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, শিবিরের আবদুস সাত্তার, সাইফুল ইসলাম, মতিউর রহমান, সজীব, রাসেল ও রায়হানসহ সাত শিবির কর্মী পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছেন।
এদের মধ্য তিনটি লাশ কোম্পানীগঞ্জ থানায় রয়েছে। বাকি ৪টি লাশ শিবিরের কর্মীরা নিহতদের বাড়িতে পেঁৗছে দিয়েছেন। পুলিশ সুপার আনিসুর রহমান সংঘর্ষ ও হতাহতের খবর নিশ্চিত করেছেন। তবে তিনি দাবি করেছেন গোলাগুলিতে তিন শিবির কর্মী নিহত হয়েছেন এবং শিবিরের হামলায় কোম্পানীগঞ্জ থানার ওসি তদন্ত সফিকুল ইসলামসহ পাঁচ পুলিশ সদস্য গুলিবিদ্ধসহ আটজন আহত হয়েছেন। বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে।
নীলফামারীতে আসাদুজ্জামান নূরের গাড়িবহরে হামলা, সংঘর্ষ, নিহত তিন :
বিকাল ৫টার দিকে সংসদ সদস্য আসাদুজ্জামান নূর সদর উপজেলার লক্ষ্মীচাপ কাচারী বাজারে পথসভা করে নীলফামারী শহরে ফেরার পথে টুপামারী ইউনিয়নের রামগঞ্জ ব্রিজের কাছে পেঁৗছলে জামায়াত- শিবিরের নেতা-কর্মীরা হামলা চালান। এ সময় বিএনপি-জামায়াতের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষ বাধে। উভয় পক্ষের নেতা-কর্মীরা দেশীয় অস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। এতে কৃষক লীগ নেতা খোরশেদ আলম, যুবলীগ কর্মী ফরহাদ হোসেন এবং বিএনপি নেতা সিদ্দিক নিহত হন। এ সময় পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে টিয়ার শেল, রাবার বুলেট ও কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে।
এ ছাড়াও সেখানে নীলফামারীর সহকারী পুলিশ সুপার শফিউল ইসলামসহ অন্তত ৪০ জন আহত হন। জেলা কৃষক লীগ সভাপতি অক্ষয় কুমার রায় জানান, বিএনপি জামায়াতের হামলায় সংঘর্ষে কৃষক লীগ নেতা খোরশেদ আলম নিহত হন।
লক্ষ্মীচাপ ইউনিয়ন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম রব্বানী জানান, সংঘর্ষে পুলিশ ও আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের হামলায় বিএনপি নেতা সিদ্দিক নিহত হন।
সংসদ সদস্য নূরকে সন্ধ্যা পৌনে ৬টার দিকে শহরের ফুড অফিস সড়কের বাসায় পুলিশ প্রহরায় পেঁৗছে দেওয়া হয়। ঘটনার পর থেকে নীলফামারীর বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে আগুন ধরিয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।