হৃদয়ের কাছে বুদ্ধির বাস ভাল কথা। কিন্তু মাঝে মঝে হৃদয়ের ওপর থেকে বুদ্ধির শাসন তুলে দিতে হয়, হৃদয়কে স্বাধীন করে দিতে হয়, মুক্ত করে দিতে হয়। স্বাধীন মুক্ত হৃদয়ের ধর্মকে সব সময় বুদ্ধি দিয়ে বিচার করতে নেই
শিউলি ফুল, গাছে থাকতে এই ফুলের সৌন্দর্য্য চোখে পরেনা। এই ফুল চোখে পরে গাছ থেকে ঝরে পরার পর। তবে অন্যান্য ফুলের সাথে এই ফুলের পার্থক্য এইযে সূর্যের মুখ না দেখতেই শিউলি ফুল ঝরে যায়।
নিছক মালা গাথা ছাড়া শিউলি ফুলের কোন কদর থাকে না।
কেন যে সূর্য্য ওঠার আগে শিউলি ফুল ঝরে যায় তার কোন কারন জানা যায়না। কিংবদন্তী আছে কৃষ্ণের দুই স্ত্রী-সত্যভামা ও রুক্মিণীর খুব ইচ্ছে তাদের বাগানও পারিজাতের ঘ্রাণে আমোদিত হোক। কিন্তু পারিজাত তো স্বর্গের শোভা! কৃষ্ণ স্ত্রীদের খুশি করতে চান। তাই লুকিয়ে স্বর্গের পারিজাত বৃক্ষ থেকে একটি ডাল ভেঙ্গে এনে সত্যভামার বাগানে রোপণ করেন, যার ফুল রুক্মিণীর বাগানেও ঝরে পড়ে সুগন্ধ ছড়ায়।
এদিকে স্বর্গের রাজা ইন্দ্র তো ঘটনাটা জেনে খুব রেগে যান! তিনি বিষ্ণু অবতারের উপর গোপনে ক্রুদ্ধ ছিলেন। এই অছিলায় তিনি কৃষ্ণকে শাপ দেন কৃষ্ণের বাগানের পারিজাত বৃক্ষ ফুল দেবে ঠিকই কিন্তু ফল কোনদিনও আসবেনা, তার বীজে কখনও নতুন প্রাণের সঞ্চার হবে না।
আর একটি গল্প থেকে জানা যায় পারিজাতিকা নামে এক নাগরাজার অপরূপ সুন্দরী রাজকন্যা সূর্যের প্রেমে পড়ে তাকে কামনা করেন। কিন্তু শত চেষ্টা করেও সূর্যকে না পেয়ে তিনি আত্মহত্যা করেন। তার দেহের ভস্ম পারিজাতবৃক্ষ রূপে ফুটে ওঠে।
যে কিনা নিরব ব্যার্থ প্রেমের প্রতীক! সূর্যের স্পর্শমাত্র যে ঝরে পড়ে অশ্রুবিন্দুর মত।
পৃথিবীর বুকে আপনি তার দুঃখের চিহ্ন দেখবেন শত শত অশ্রুবিন্দুর মত, সে সুগন্ধি ছড়িয়ে থাকে চারদিকে, আমরা এখন তাকে শিউলি রূপে দেখি তার শুভ্র দেহে গৈরিক বসনে…হিন্দু দেবতার পুজোয় শিউলিই এমন ফুল যেটি মাটিতে ঝড়ে পড়লেও তাকে দেবতার উদ্দেশ্যে নিবেদন করা হয়ে থাকে।
তবে শিউলি যে কারনেই ঝরুক না কেন ব্যাথাতুর মন নিয়ে সে মানুষের উপকারই করে যাচ্ছে। অন্যান্য গাছ গাছড়ার মত শিউলির ও রয়েছে ভেষজ গুন। বিখ্যাত অমরকোষ গ্রন্থের রচয়িতা অমর সিংহ শিউলিকে বণৌষধি হিসাবে নথিভূক্ত করেছেন।
আর্য়বেদিক শাস্ত্রে শিউলির থেকে শিউলির পাতার ভেষজ গুন বেশি করে উল্লেখ্য করা আছে। ভারতীয় বনৌষধি নামক গ্রন্থে উল্লেখ্য আছে বাতরোগে শিউলি পাতার রস খুব উপকারী। এই গ্রন্থে শিউলিকে ভেষজ জগতেও চানক্য হিসাবে অভিহিত করে বলা হয়েছে যে শত ভীমরুলের হাত থেকে চন্দ্রগুপ্তকে রক্ষা করছিলেন চানক্য। আর মানূষের সায়েটিকা বাতে যখন ভীমরুলের হুল ফোটানর মত যন্ত্রনা আসে তাকে দমন করতে পারে শিউলি। সায়েটিকা বাতে ৮/১০ টি শিউলির পাতা ভালভাবে থোক করে ৪/৫ কাপ পানিতে সেদ্ব করে এক কাপ থাকতে নামিয়ে ছাকতে হবে।
এরপর সকাল বিকাল দুবেলা কয়েকদিন করে খাওয়ালে যন্ত্রনার উপশম হবে। নিয়ম অনুযায়ি এই রস খেলে অনেক উপকার হয়
মেদ রোগঃ মেদ কমাতে বৈদ্যরা শিঊলি ডালের চুর্ন দেড় গ্রাম মাত্রায় সকালে বিকালে খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। এই ব্যাবস্থা অবলম্বনে কিছু দিনের মধ্যে মেদের হ্রাস লক্ষ্য করা যায়।
কৃমিঃ শিউলি পাতার রস সকাল বিকাল দুবেলা গরম পানি দিয়ে খাওয়ালে কেচোর মত কৃমি পরে যায়। গুড়া কৃমির উপদ্রব ও কমে যায়।
গলা বসাঃ গলা বসার ক্ষেত্রে শিউলি পাতার রস বেশ উপকারী। শ্লেশ্মার দোষে অনেকের গলার আওয়াজ বসে যায়। , এ ক্ষেত্রে শিউলি পাতার রস সকাল বিকাল ২ বেলা খাওয়ালে উপকার পাওয়ার নিশ্চয়তা।
জ্বালাঃ কেউ কেউ দিনের কোন কোন সময় শরীরে জ্বালা অনুভব করেন এ ক্ষেত্রে শিউলি পাতার রস সকাল বিকাল ২ বেলা খাওয়ালে উপকার পাওয়া যায়। তবে দীর্ঘদিন খাবার প্রয়োজন হলে চালের চূর্নর সাথে ১ গ্রাম মাত্রায় দুবেলা খাওয়া ভাল।
মূর্ছা রোগঃ মূর্ছা রোগে শিউলি পাতার রস ২ চামচ মাত্রায় অল্প গরম করে দুবেলা খেতে হবে। তবে মূর্ছা রোগের শুরুর দিকে খাওয়ালে ভাল ফল দেয়।
খাদ্যে বিষ ক্রিয়াঃ খাদ্যে বিষক্রিয়ার দরুন রোগী অত্যাধিক বমি করে রোগী দুর্ব্ল হয়ে পরলে, অল্প গরম জলে শিউলির রস ২ বেলা খেলে দূর্ব লতা কেটে যায়।
শিউলি পাতার রস খুবই তিতা। তিতা খেতে অভ্যস্ত ব্যক্তি ছাড়া অন্য লোকদের এই রস খাওয়া খুবই কঠিন, তবে শিউলির তিতার আড়ালে লুকিয়ে থাকা নানা রোগ মুক্তির অষূধ যা পরিমান মত খেলে উপকার ছাড়া অপকার হবার আশংকা থাকেনা
উৎসর্গঃ প্রিয় ইমন ভাইকে না থেকেও যিনি আছেন
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।